উচ্চশিক্ষার উপর ভ্যাট কখনই গ্রহন যোগ্য নয়। আমার বাপের মাসিক আয় কোটি টাকা হোক, শিক্ষায় ভ্যাট কেনো? উচ্চশিক্ষায় ভ্যাট আরোপ করা হলে দেশের সকল প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ন্ত্রিত অবরোধ যখন অবাধ্য যখন প্রানের শহর ঢাকাকে অচল করে দিলো তখন সরকার বাধ্য হয় ভ্যাট প্রত্যাহার করতে। আসলে বাংলাদেশে এধরনের আন্দোলন খুব রেয়ার যেখানে কিনা একটা গাড়ি ভাংচুর হয় নি। একটা ইট/ পাটকেল ছোড়া হয় নি কিন্তু রাজপথ দখলে নিয়ে সরকারকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এ আন্দোলনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রছাত্রী মৌন সমর্থন জানিয়েছেন। কেউবা আন্দোলনেও অংশগ্রহন করেছেন কিন্তু খুব কম পরিমানে। আবার কেউ কেউ সরকারের ভ্যাট এর পক্ষ নিয়ে প্রাইভেট ভার্সিটির পোলাপাইনের আন্দোলনের গালিও দিয়েছেন।
▒▒▒▒▒
আমি ২০১৪ সালে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েছি। প্রশ্নপত্র যে ফাঁস হয় তা কেবল শুনেছি, জীবনেও বিশ্বাস হয় নি। পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষার পর শুনলাম প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, ২য় পত্র পরীক্ষা হলো শুনলাম প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে আর সবার খুব ভালো পরীক্ষা হয়েছে। তারপর কম্পিউটার শিক্ষা পরীক্ষা দিলাম। এই সাবজেক্টে সেই রকম পোক্ত ছিলাম তাই আমার এক ফ্রেন্ড আমার কাছ থেকে পুরো ফটোকপিই করেছিলো। বলা যায় মার্জিনও। পরীক্ষা শেষে বললো, দোস্ত খুব কঠিন প্রশ্ন। ক্যান্ডিডেট কম তো তাই প্রশ্ন পায়নি। অবশ্য আগেই বলে রাখি, কেবল কম্পিউটার পরিক্ষার দিনেই গার্ড নরম্যাল ছিলো। অন্যান্য পরীক্ষার দিন, ঘাড় ঘুড়াতে তো দুরের কথা চুল্কাতেও দেয় না। যাইহোক, আমি আমার বন্ধুকে প্রশ্ন করলাম, এই সত্যি কি প্রশ্ন পাওয়া যায়? কেন, জানিস না? কোন দুনিয়ায় থাকিস? আমিঃ আরে ধ্যাত, যা জিজ্ঞাসা করেছি তাই বল। আমার বন্ধুঃ (সবাইকে ডেকে বললো) সিনবাদ আমার কাছে শুনতে চাচ্ছে প্রশ্ন সত্যি ফাঁস হয় কিনা? ও মনে হয় ফিজিক্সের প্রশ্ন একটাও পায় নি। ( সে এক অট্টহাসি আমাকে উপহাস করার জন্য)। তারপর বলল, আচ্ছা আমি তোকে রসায়নের প্রশ্ন পেলে জানাবো। আমি বলছি থাক, (কারন এখনও আমার বিশ্বাস আসে নিই যে প্রশ্ন সত্যি পাওয়া যায়। যাই হোক, আমার বন্ধু রসায়ন পরীক্ষার ২ দিন আগে আমাকে দেখা করতে বলল, ওর সাথে দেখা করতে পারবো না বললাম, ও রেগে গেলো এবং বলল, এখুনি দেখা কর। আমি দেখা করলাম। ও নিজের টাকায় ফটোকপি করে আমাকে কিছু কাগজ দিয়ে বলল, এটা বাসায় যেয়ে পড় আর কিছু পড়তে হবে না। আমি ওটা নিয়ে তিনটা প্রশ্ন পড়ার পর চেলে ফেলে দিলাম। রসায়ন ১ম পত্র পরীক্ষার দিন আমার চোখ ছানাবাড়া, আরে এতো হুবহু আমার বন্ধুর সেই ফটোকপি। নিজের উপর রাগ হচ্ছিলো, একটু সচেতন হলে পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্রগুলোও পেতাম। ধ্যাত, আমার কাজ হয় না।
▒▒▒▒▒
যশোর বোর্ডে এইচ এস সি পরীক্ষা- ২০১৫ তে পাসের হার ৪৬.৪৫%। আর আমার উপজেলা চৌগাছায় ৯৩%+ সাম্থিং, পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষা দিয়ে আমাদের ছোট ভাই ইমন বলছে ভাই পরীক্ষা খুব খারাপ হয়েছে। গোল্ডেনের আশা তো বাদ, এত কঠিন হয় আগে জানতাম না। এখন পাশ নিয়ে ভাবছি। ২য় পত্র খারাপ হলে মাইনাস ও রক্ষা হবে না ফিজিক্সে। আর কেমিস্ট্রি , বায়োলজি ও গনিতে এমন প্রশ্ন হলে তো আমি শেষ। এ মাইনাস হবে রেজাল্ট। অই ইমন পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র পরীক্ষা দিয়ে এসে বলছে ভাই চারজন একসাথে বসে পরীক্ষা দিছি। সামনে চেয়ার নিয়ে আমাদের স্যার বসে ছিলো বই হাতে। টাইম শেষ হবার আধা ঘন্টা পর খাতা জমা দিছি।
বুশরা আপু ফিজিক্স ১ম পত্র পরীক্ষা দিয়ে বলছে, ভাইয়া আমি ফেল করবো নিশ্চিত, আমি আর পরীক্ষা দেবো না।
ওরে বাপ রে, রেজাল্টের দিন দেখি সবার প্লাস, শুধু ফিজিক্সে নাই, চৌগাছা উপজেলার সব কলেজে এমনিই পরীক্ষা হয়েছে। যেখান থেকে ৫ টা প্লাস ধারনা করা সেখান থেকে চল্লিশ টা। অথচ এর আগে ৫ টা ধারনা করলে ৩ টা হতো আর দুইটা মিস ও যেতো ফেলের তালিকায় ও পড়তো। এদের রেজাল্টের পেছনের রহস্য কারো অজানা নয়। যশোর বোর্ড থেকে নোটিশ পরের বার স্পেশাল গার্ড এর মাধ্যমে চৌগাছায় পরীক্ষা হবে।
▒▒▒▒▒
মেডিকেল পরীক্ষার প্রশ্নফাস নিয়ে অনেকে অনেক মন্তব্য করেছেন। আমার এক ক্লাসমেট যারা মেডিকেল পরীক্ষার প্রশ্ন কিনে পড়ে চান্স পেয়েছে তাদের গালি দিয়েছেন। আর যারা মেডিকেল পরীক্ষার ক্যান্ডিডেট ছিলো তাদের তো কোন কথা মুখে আটকায় নি। এমনকি আমার বুশ্রা আপুও গালি দিচ্ছে যারা প্রশ্ন কিনে চান্স পেয়েছে তাদের। আর মেডিকেল পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে রেগুলার সবাইতো আপডেট প্রতিবাদ করছে। আচ্ছা, একটা ছোট্ট কথা বলি, " আমি যদি মেডিকেল পরীক্ষার প্রশ্ন পেতাম তাহলে আমি কি সুযোগটা নিতাম না।?? আমার যে বন্ধু আজ বড় বড় লেকচার দিচ্ছে ও এইচ এস সি পরীক্ষার সময় প্রশ্ন কিনেছিলো কেনো? বা ফ্রিতে হলেও তার সুযোগ নিয়েছিলো কেনো? আমার বুশরা আপু এক্সাম হলের গার্ড নরম্যাল থাকলে তার সুযোগ নিয়ে প্লাস করেছে কেনো? আমার আব্বু সরকারি চাকরি করে ঘুষ খেলে প্রতিবাদ করছি না কেনো? আমার ভাইয়ের ঘুষের কারনে চাকরি না হলে আমরা তার প্রতিবাদ করছি কেনো? আমার বোন ঘুষের মাধ্যমে চাকরি পেলে তার প্রতিবাদ কোথায়, আমি রাস্তায় নামছি না কেনো? শিক্ষার উপর ভ্যাট আরোপ অন্যায় কিন্তু আমি প্রাইভেটে পড়ি না বলে প্রতিবাদে যায় নি কেনো? মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস অন্যায় গেলে আমি মেডিকেলের ক্যান্ডিডেট বলে আজ প্রতিবাদী কেনো? "
▓▓▓▓▓
প্রতিবাদ করা একটা বেয়াদপের লক্ষন যদি স্বার্থবাদ লুকিয়ে থাকে। আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো, যেখানে নিজ স্বার্থ সেখানে কেনো? তুমি আমার শিক্ষায় ভ্যাট আরোপের সময় প্রতিবাদ করবা আমরা তোমার মেডিকেলের প্রশ্নফাসের প্রতিবাদ করবো। দেখতাম সত্য প্রতিষ্ঠা হয় কিনা? আজ ২০০ লোক নিয়ে প্রতিবাদ করে রামছাগলের মতো বকছিস কেন? যতই জিনিয়াসের মতো কথা বলিস তুই একটা রামছাগল বলেই আজ তোদের আন্দোলনের তীব্রতা নেই। তুই স্বার্থপর, তুই বেইমান। তুই যদি জিনিয়াস হতিস, তাহলে জিনিয়াসের মতো কথা না বলে ভ্যাট আন্দোলনসহ দেশের সকল অন্যায়ের প্রতিবাদে সমর্থন দিয়ে জিনিয়াসের মতো কাজ করতে পারতিস। তাহলে তোদের আন্দোলন সফল হতো।
ভাই রে, রাগ করিস না। হরিন ঘাস খেয়ে বাচতে পারে কিন্তু বাঘ মাংস ছাড়া পারে না। তুইও মাংস ছাড়া বাচতে পারবি কিন্তু বাঘ পারবে না। তুই বছরে কতগুলো গরু খাচ্ছিস? আর একটা বাঘ হরিন খেলে মায়া হয়। আরে, বাঘ তো জীবন বাচানোর জন্য খাচ্ছে কিন্তু তুই ?? তুই হরিনের পক্ষ নিচ্ছিস কারন হরিনের জন্য তোর কিছু করার নেই। মানুষ তখনই দুর্বলের পক্ষ নেয় যখন তার জন্য কিছু করার থাকে না। যে প্রশ্ন পেয়ে চান্স পেয়েছে সে গালির যোগ্য নয় সে জিনিয়াস। সবাইতো প্রশ্ন কিনতে পারে না। তোর বাপেরও টাকা আছে কিন্তু তুই প্রশ্ন পাবি না। প্রশ্ন পেতেও যোগ্যতা থাকা লাগে। আর প্রশ্ন নাগালে থাকলে তার সুযোগ না নেয়াটাই অন্যায়। যে চান্স পাইছে তাকে কেন গালি দিস? গালি শুধু সে পাবে যে প্রশ্নফাসের সাথে জড়িত আর এদেশের প্রসাশন। তদের আন্দোলন করা মানায় না। আগে মানুষ হ, প্রতিবাদী হতে শেখ, তারপর প্রতিবাদ করিস। সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে। তুই আমার ভাই, তুই বাঙালি আর আমি তোর সফলতা কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৫