somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যকা
রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সবুজ প্রাকৃতির স্পর্শে বাঁধনহারা কাটুক কয়েকটি ঘন্টা

২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহরের ইট পাথরের অট্টালিকায় বন্দি জীবন, অবিরাম চলতে থাকা যন্ত্রের চাকার সাথে তাল মিলাতে কিংবা যানবাহনের কান ফাটানো ভেঁপু আমাদের প্রত্যাহিক জীবনাচারকে অতিষ্ঠ করে তোলে । তবুও আমরা নিরুপায় কেননা জীবন ও জীবিকার তাগিদে মনের বিরুদ্ধে আবদ্ধ থাকতে হয় শহরের গন্ডিবদ্ধ জীবনে । একসময় যান্ত্রিক গতির সাথে তাল মিলাতে মানুষও রোবটিক আচরণ করতে শুরু করে । কিন্তু এভাবে কতক্ষণ ? মানুষের দ্বারাই যন্ত্রের আবিষ্কার তবুও যন্ত্রের প্রচন্ড গতির সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের চলার প্রাণশক্তি অবিরামভাবে কতক্ষণ অবশিষ্ট থাকে ? সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শুধু খাদ্য গ্রহনই যথেষ্ট নয় । ক্রম স্থূলতায় ধাবমান দেহতে নতুন করে প্রাণশক্তি সঞ্চারের জন্য ভ্রমন কিংবা বায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা অনস্বীকার্য । আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও চিকিৎসকরা রোগীকে সুস্থতা ফিরে পেতে বায়ু পরিবর্তনের পরামর্শ দেন । তাছাড়া কিছু কিছু বিশেষ বিষয়ের জ্ঞান অর্জনে পুস্তিকা অধ্যয়ণের চেয়ে প্রাকৃতির সঙ্গ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । শহরের গদবাধা জীবনকাঠামো যখন জীবনকে হাঁসফাঁস করে তোলে তখন কিছু সময় প্রাকৃতির সঙ্গ শুধু দেহের মধ্যে কাজ করার নতুন উদ্যমতা ফিরিয়ে দেয়না বরং মন-মেজাজকে সতেজ-ফুরফুরে করে তোলে । প্রত্যেকটি শহর থেকে কিছু দূরত্বে মানুষ সৃষ্ঠ কিংবা প্রাকৃতির অপার লীলাভূমি আমাদেরকে আনন্দ দিতে সদা প্রস্তুত । আমাদের দায়িত্ব শুধু এগুলো খুঁজে বের করে সেখান থেকে উপকার লাভ করা । শহরের জীবনের অত্যাচার থেকে সামান্য সময় বিশ্রাম পেলে মানুষকে যে জায়গাগুলো সাধারণত আকর্ষণ করে তার মধ্যে অরণ্য, পাহাড়, সাগর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । শহরের রুক্ষ বায়ুর প্রাণহীন জীবন ছেড়ে কয়েক ঘন্টার জন্য শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে আজ যে প্রশান্তি পেলাম তা ভালোথাকার শুণ্য ভান্ডারটিকে ভালোলাগায় পূর্ণ করে দিয়েছে । আফসোস হয়েছে, অতীত সময়ের জন্য যখন খুঁজে পাইনি এমন আনন্দের মূহুর্ত । ছুটির দিনে, স্বল্প খরচে যে এত আনন্দ হৃদয়ে জাগিয়ে তোলা সম্ভব তা সত্যিই এতদিন অকল্পনীয়ের চাদরাবৃত ছিল । তবুও বাস্তবতায় যে পেয়েছি তাকে আর কল্পনার জগতে ঠাঁই দিতে চাই না ।
.
.
বাংলার ভেনিস খ্যাত শহর বরিশাল । দেশের ভৌগলিক সীমারেখায় সর্ব দক্ষিণের এটি একটি বিভাগীয় শহর । কীর্ত্তনখোলা নদীর তীরে বিভাগীয় শহরের প্রাণ কেন্দ্রটি গড়ে উঠলেও অসংখ্য বিখ্যাত ও বৃহৎ নদী-খাল জালের মত ছড়িয়ে আছে বরিশালের সর্বত্র । প্রাকৃতির অপার লীলাভূমি তথা সাগরকণ্যা খ্যাত কুয়াকাটার সুনাম শুধু দেশের গন্ডীতে নয় বরং গোটা বিশ্বজুড়ে । এছাড়াও এ বিভাগে আরও হাজারও দর্শণীয় স্থান রয়েছে যেখানে প্রত্যহ হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণা ঘটে এবং তারা তৃপ্তিভরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হয় । বিভিন্ন দিক বিবেচনায় সমগ্র বিভাগটিকেই প্রাকৃতিক ও কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট সৌন্দর্যের তীর্থভূমি বলা চলে তবুও কিছু কিছু স্থানের বিশেষ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যেই সেগুলোকে আলাদাভাবে সুন্দরের দাবীদার বানিয়েছে । আজ বরিশাল সদর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত তিনটি বিখ্যাত ও নান্দনিক স্থানের সৌন্দর্য তুলে ধরবো যে স্থানগুলোকে আমি মাত্র কয়েকঘন্টা পূর্বে পরখ করে এসেছি । যদিও উপভোগ করা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করে বোঝানোর ব্যাপার নয় তবুও সাধ্যমত চেষ্টা থাকবে । তবে আমার কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য হলেও একবার নিম্নে উল্লিখিত স্থান তিনটি ভ্রমন করুন । নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার মধ্যে যদি বিন্দুমাত্র প্রেম, প্রকৃতির প্রতি টান থাকে তবে ভালো না লেগে কোন উপায় নাই ।
.
.

এক. চাখারে শেরে বাংলা জাদুঘর-

.
.
বরিশাল শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল তথা নথুল্লাবাদ বাস স্টপেজ থেকে বাস কিংবা মাহিন্দ্রাসহ সকল প্রকার যান্ত্রিকবাহনে বরিশাল-বানারীপাড়া রুটে মাত্র ৩০-৪০ মিনিটে চাখারে পৌঁছা যায় । এজন্য যানবাহনে চরে গুয়াচিত্রা নামক স্থানে নেমে রিকশা কিংবা ভ্যান যোগে শেরে বাংলা জাদুঘরে যেতে হবে । যদিও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এ জাদুঘরটির স্বীকৃতি মেলেনি কিংবা আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধনও হয়নি তবুও খুলনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ জাদুঘরটি নিয়ন্ত্রন করছে । শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের বাসভূমি অবলোকন করতে এবং চাখার কলেজ উদ্ভোধন করতে এসে বাংলার বাঘ খ্যাত ফজলুল হকের স্মৃতি চির অম্লান রাখার মানসে এ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন । বাংলার ভূমিতে জন্মগ্রহনকারী মাত্র ৩ জন গুরুত্বপূর্ণ, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ও নেতারও যদি তালিকা করা হয় তাতেও যে ব্যক্তির নামটি তালিকার শীর্ষের দিকে স্থান পাবে তিনি দক্ষিণ বাংলার গর্ব শেরে বাংলা একে ফজলুল হক । তাকে বাদ দিয়ে বাংলার ও বাঙালির ইতিহাস লেখার সাধ্য আছে এমনটা কেউ কোন কালেই দাবী করতে পারবে না । বিপুল দেহাকৃতির কারণে নয় বরং জ্ঞান-গরীমা, অনলবর্ষী ভাষণ তাকে বাংলার বাঘ খেতাবে ভূষিত করেছে । বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু শেরে বাংলার আবাসভূমি দেখা শুধু সৌন্দের্য দর্শনের দাবীতে নয় বরং এখানে আমাদের ইতিহাসেরও দায় রয়েছে । বৃটিশ শাসানামলের শেষাংশ, পাকিস্তানের শাসনামল জানতে হলে শেরে বাংলার ইতিহাসের ওপর অবশ্যই নির্ভরশীল হতে হবে । যদিও মহান ব্যক্তির স্মৃতি সংরক্ষনের কেন্দ্র হিসেবে এ জাদুঘরটি ততোটা সম্মৃদ্ধ নয় তবুও শেরে বাংলার নিজভূমিতে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র, হাতের লেখা ও পারিবারিক পরিচিতি দেখতে ও জানতে চাখারে ছুটে আসতে হবে । এখানে এলে একজন মহান শাসক ও নেতার কৃতীর সাথে সরাসরি পরিচয় ঘটবে । এদেশের প্রেক্ষাপটে উত্তরসূরী ছাড়া পূর্বসূরীরর অবদান স্থায়ীকরণ সম্ভব নয় । জাদুঘরের অসম্মৃদ্ধতা প্রমাণ করে, শেরে বাংলার বংশগতির সূত্রের উত্তরাধীকারীরা তার স্মৃতি টিকিয়ে রাখতে যত্নবান ছিলো না । অন্যদিকে রাষ্ট্রও শেরে বাংলা জাদুঘরকে সম্মৃদ্ধ করণে ততোটা গুরুত্বারোপ যে করেনি তা প্রায় স্পষ্ট । কেননা জাদুঘরে তথ্য ও চিত্রের স্বল্পতা, কাঠামোগত সংকীর্নতা ও এটাকে পর্যটন কেন্দ্রের স্বীকৃতি না দেওয়া, আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ভোধন না করা এবং দেশময় এর গুরুত্ব প্রচার না করাটা সত্যিই দূর্ভাগ্যের । সবকিছুর পরেও শেরে বাংলার কীর্তিকে জানতে হবে আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনের তাগিদেই । কেননা স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পিছনে তার অবদানকে খাটো করে দেখারমত কোন সামান্যতম সুযোগ আমাদের নাই ।
.
.
দুই. শৈল্পিক কারুকার্যের ছোঁয়ায় সম্মৃদ্ধ নান্দনিক গুঠিয়ার বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স-
.
.
বরিশাল শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স । যা এ অঞ্চলের মানুষ বিশেষত সৌন্দর্য পিপাসুদের নিকট গুঠিয়া মসজিদ নামে সমধিক খ্যাত । দক্ষিণাঞ্চলের স্বণামধন্য শিক্ষানুরাগী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর এ মসজিদের নির্মানকাজ শুরু করেন । ২ লাখ ১০ হাজার শ্রমিকের দীর্ঘ তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০০৬ সালের ২০ আগষ্ট এ মসজিদটি উদ্ভোধন করা হয় । তখন থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এখানে ভ্রমনে আসে । শিকাসফরের আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে এটির গ্রহনযোগ্যতা দিন দিন বাড়ছে । ১৯৩ ফুট সুউচ্চ মিনারটি যেন প্রতি মুহুর্তে দর্শনার্থীদেরকে সৌন্দর্য আস্বাদনের নিমন্ত্রন জানিয়ে চলছে । নারী-পুরুষের আলাদা নামায আদায়ের স্থানসহ এখানে ৮ হাজার লোক একত্রে নামায আদায় করতে পারে । নিঁখুত শিল্পের ছোঁয়া ও নির্মান শৈলীর অনবদ্যতা এ মসজিদটিকে বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ দর্শণীয় মসজিদের মর্যাদায় আসীন করেছে । প্রতি বছর বিশেষ দিনগুলোতে এখানে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এ স্থানটি মুখরিত হয়ে ওঠে । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পবিত্র স্থানের মাটি দিয়ে এ মসজিদটি নির্মান করা হলেও এ স্থাপণায় কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি । মসজিদ কমপ্লেক্সটি উদ্ভোধনের সময় বিশ্বের বিখ্যাত মসজিদগুলোর ঈমামদেরকে আমন্ত্রন করে উপস্থিত করা হয়েছিল । শুধু একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয় বরং সামগ্রিক বিবেচনায় গুঠিয়া মসজিদটি স্থাপত্য শিল্পের এক অনুপম দৃষ্টান্ত ধারণের দাবীদার । যদিও এখনো এ স্থানটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি তবুও প্রত্যহ দূর-দূরান্তের সহস্র দর্শনার্থীর পদধ্বণি এ স্থানের প্রতি মানুষের আকর্ষণমূলক আবেদনের স্বাক্ষী বহন করছে ।
.
.
তিন. মাধবপাশার দূর্গা সাগর-
.
.
কোন বিশেষণে এ স্থানটিকে বিশেষায়িত করা চলে তা উদ্ধৃত করা মুশকিল । সর্বদা যাদের মন বিষন্ন থাকে তারাও যদি বিশাল দিঘীর ঘটলায় কিংবা জলাধারে এসে দু’দন্ড বসে তবে নিশ্চিত করে বলতে পারি তার মন ভালো না হয়ে কোন উপায় থাকবে না । পড়ন্ত বিকেলের ক্লান্ত সূর্যের নিস্তেজ আলো যখন জলের বহির্ভাগে ঝিকিমিক রূপচ্ছটা ছড়ায় তখন তার ফাঁক গলিয়ে নির্মল ঝিড়ঝিড়ে বাতাসের ছোঁয়া যেন স্বর্গীয় আনন্দের অনুভব দেয় । প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে সমবেত হওয়া অগণন মানুষের নিরব ভাষা, সম্মুখ দৃষ্টি এবং শখের মৎস শিকারীদের ছিপের পানে নিশ্ছিদ্র চাহনি-সব কিছু মিলে সে এক অন্যরকম পরিবেশ যা বর্ণনার মাধুর্য্যে জ্ঞাত করা সম্ভব নয় বরং উপস্থিত হয়ে উপলব্ধি করার বিষয় । বরিশাল শহর থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে ২৫০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে এ মর্ত্যের স্বর্গটুকরা অবস্থিত । ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা শিব নারায়নের প্রজাবাতসল্য স্ত্রী রানী দূর্গাদেবীর তত্ত্বাবধানে এ দীঘিটি খনন করা হয় বলে এটা দূর্গা সাগর নামেই পরিচিত । দীঘি হয়েও সাগর নামে নামকরণ হওয়ার পেছনে দীঘির বিশাল আকারকে ইঙ্গিত করা হয়েছে । অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে যখন চন্দ্রদীপ রাজবংশের রাজা তার পরিবার ও রাজন্যবর্গসহ পটুয়াখালি ছেড়ে মাধবপাশায় বসতি স্থাপন করে তখন তাদের ও তাদের প্রজাদের খাবার পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করে । খাবার পানির সংকট দূর করতেই মূলত এ দীঘিটি খনন করা হয় বলে বিধৃত হয়েছে । দূর্গা সাগরের সীমানায় প্রবেশ করলেই সামনে যে বৃহৎ বট গাছটি দেখা যায় সেটা যেন মৌনভাবে স্বাক্ষী দেয়, এখানে আগমন বৃথা যাবে না । স্থলভাবে অসংখ্য প্রজাতির গাছ ও গাছের ছায়ায় নির্মিত বসার আসনগুলি যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মিছিল দিয়ে প্রাকৃতির রহস্য ও প্রেম পিপাসুদের হাতছানি দিয়ে বসতে বলছে । চারদিকে ঘুরিয়ে নির্মিত পাকা রাস্তাটি যেন নিভৃতে বলেই যাচ্ছে, সামনে অগ্রসর হও ! এখানে অবারিত প্রশান্তি তোমার অপেক্ষায় পেখম বিছিয়েছে ! বিশাল দীঘির দু’পাশে দুটো পাকা ঘটলা ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে এখনও অক্ষত আছে । দীঘির মধ্যখানের ছোট্ট দ্বীপটি সমগ্র দূর্গা সাগরের সৌন্দর্য্য নিযুত গুন বৃদ্ধি করেছে । পরিবার-পরিজন, সহৃদ-বন্ধুজন নিয়ে প্রকৃতির অকৃত্রিম ছোঁয়া নিতে যেন সমস্ত খাজানা সাজিয়ে রেখেছে এ স্থানটি। যদিও দূর্গা সাগরকে বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে কিছুটা আধুনিক ধাঁচে সংস্কার করা হয়েছে তবুও প্রজাদের প্রতি রাণী দূর্গার ভালোবাসা যেন শত শত বছর পরেও আজও একটুও কমেনি ! বর্তমানে দেশের এ অমূল্য স্থানটি বরিশাল জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ।
.
.
চাখারের শেরে বাংলা জাদুঘর, গুঠিয়া মসজিদ এবং মাধবপাশার দূর্গা সাগর একই রোডে কিছু দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় দর্শনার্থীদের জন্য যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে কেননা এক যাত্রায় ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক তিনটি স্বতন্ত্র স্থান ঘুরে দেখা যাচ্ছে । বরিশাল থেকে যাত্রাপথে প্রথমে দূর্গা সাগর, পরে গুঠিয়া মসজিদ এবং সর্বশেষ শেরে বাংলা জাদুঘর দেখে আবার গন্তব্যে ফিরে আসা যায় কিংবা জাদুঘর থেকে শুরু করে গুঠিয়া মসজিদ হয়ে দূর্গা সাগরের দর্শন নিয়েও ভ্রমন শেষ করা যায় । তবে যাত্রার শেষ প্রান্ত অর্থ্যাৎ জাদুঘর থেকে শুরু করে সর্বশেষ দূর্গা সাগরের কাছে ফিরলে সেটা সবেচেয়ে উত্তম হয় কেননা পড়ন্ত বিকেলে দূর্গা সাগরের রূপ দর্শনের মত তৃপ্তি আর কোনটাতেই পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না । যারা শুধু একটি স্থানে ঘুরতে চান তাদের অতি অবশ্যই দূর্গা সাগরকেই লক্ষ্য বানানো উচিত । তবে ব্যক্তিগত ভালোলাগা এক্ষেত্রে প্রধান গুরুত্বের দাবীদার হতে পারে । ভ্রমনের যায়গা যেটাই হোক অন্তত আনন্দ ভ্রমন যেন হয় । শহর ছেড়ে কোথাও একটু দূরে-অরন্য, পাহাড় কিংবা জলের ধারে । সু-স্বাস্থ্য নিয়ে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চাইলে প্রকৃতির সাথে অবশ্যই গভীর যোগাযোগ রাখতে হবে । সবুজ প্রকৃতি আমাদের প্রাকৃতিক ভাবেই ভালোবাসে; যে মুক্ত দানে কৃত্রিমতার ছিটেফোঁটাও নাই । শহরের শীসাযুক্ত বাতাস নাকের ছিদ্র প্রবেশ করতে করতে যেন আমাদের ভেতরটাও শীসার মত শক্ত হয়ে যেতে না পারে সেজন্য নিয়মিত প্রকৃতির কাছে আসতে হবে, প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে । নির্মল প্রকৃতির সাথে অকৃত্রিম সংস্পর্শ আমাদের পূর্ব পুরুষদের দীর্ঘদিন সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে থাকার রহস্য ছিল । আমরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হব কেন ? শরীরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেমন রুটিণ করে খাদ্য ভক্ষন করছি তেমনি মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য রুটিণ তো নির্ধারিত থাকবেই । সাথে যেন সর্বদা সুযোগের সন্ধানে থাকি, কখন স্পর্শ পাবো সবুজের, খাঁটি মাটি আর বিশুদ্ধ জলের ।

.
.
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×