২য় পর্ব
আজকের সকালটাই জানি কেমন কেমন! ঘুম থেকে উঠতেই ইচ্ছা করছ না, খুবই আলসেমি লাগছে। অফিসের তারনায় শেষ পর্যন্ত উঠলাম কিন্তু হায় একি! ঘড়িতে সময় ৮.২৫। বাসা ফার্মগেট, অফিস মতিঝিল। অফিস টাইম শুরু হবে ৯টায়!!! খাইছে আমারে। তারাতারি কোনমতে নামমাত্র গোসল সেরে ৮.৩৫ মিনিটে নাস্তা না করেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। হাতে সময় মাত্র ২৫ মিনিট। আজকেও লেট আজকেও বসের ঝাড়ি !!! ফার্মগেট থেকে আমার বাসা পায়ে হাটা দুরত্ত। মধ্যবিত্তের যানবাহন পাবলিক বাসের কথা চিন্তা করে মাথা আরো গরম হতে লাগলো। এই গরম মাথা নিয়ে হাটছি আর ভাবছি এখন বাসে উঠলে মতিঝিল যেতে কত সময় লাগবে? বসকে কি বলে বুঝাবো? ভুং ভাং বুঝানোরও কোন উপায় নাই। আরো নানান কিছু।
যাই হোক হাটতে হাটতে যখন ফার্মগেট এসে পৌছালাম আমার চক্ষু কপালে উঠে গেলো। এ আমি কি দেখছি? সব কিছু কেমন জানি আজব আজব লাগছে!!! রাস্তা ভর্তি কোন ভাঙ্গাচোরা মুড়িরটিন মার্কা বাস নাই। সব দেখতাছি BRTC এর এসি বাস। ৩ টা লাইন ধরে সবাই সবার গন্তব্য অনুযায়ী বাসে উঠছে। বাস কাউন্টারটাও কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে। সামনের দিকটা গ্লাস দিয়ে খুব সুন্দর করে বানানো মনে হচ্ছে ভালো কোন প্রাইভেট ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার। অবাক নয়নে দেখতে দেখতে টিকেট কেনার জন্য কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম মতিঝিল এর একটা টিকেট দেন, ভেতর থেকে এক অপরূপা স্মার্ট মহিলা জবাব দিলেন এক্সকিউজ মি স্যার, এখানে কোন টিকেট হবে না। এই কথা শুনে মেজাজ ১০০ তে ১০০ গরম হয়ে গেল। সুন্দরী মহিলাকে প্রতিউত্তর দেয়ার আগেই তিনি আমার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলেন, স্যার আপনি সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বাৎসরিক ট্র্যাভেল পাস কার্ড কিনতে পারেন। এই কার্ডের রয়েছে অনেক সুযোগ সুবিধা যেমন, আপনি এই কার্ড দিয়ে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, সিএনজি, এমন কি রিকশা ভ্রমণও করতে পারবেন এবং সারা দেশে যেখানে খুসি যখন তখন। এই কার্ডের ব্যাবহার খুবই সহজ এবং ঝামেলা মুক্ত। সবকিছু শুনে আমিতো পুরা বলদ হয়ে গেলাম, আমি তারাতারি করে ১ মাসের জন্য ৩৫০ টাকা দিয়ে একটা কার্ড নিয়ে টাকা দিয়ে কাউন্টার ত্যাগ করে বাসের দিয়ে এগিয়ে গেলাম। বাসের গেট দিয়ে ঢুকেই দেখি একটা মেশিন বসানো ওই মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করলে সামনের বেরিগেট খুলে গেল আমিও ভেতরের দিকে এগোলাম। এখনো কয়েকটা সিট ফাকা বিশেষ করে মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্ধকৃত সিটে কেউ নেই। আমার পিছনে পিছনে আরো চার পাচজন লোক উঠলো একই নিয়মে। মিনিট খানেকের মাথায় বাস ছেড়ে দিল। ওমা বাসে কোন হেল্পার নাই, কোন কন্ডাকটারও নাই শুধুমাত্র ড্রাইভার!!! এতো কিছুর পরিবর্তন দেখে অভিভূত হয়ে যখন জানালা দিয়ে বাহিরে চোখ রাখলাম আর তখনই মনে পরে গেলো অফিসে বসের কথা, গতকাল যেই রকম ঝাড়ি খাইছি সেই ঝাড়ির কথা। নির্ঘাত বস এতোক্ষনে অফিসে চলে এসেছেন এবং আমার জন্য মনে মনে ঝাড়িবানী তৈরি করছেন। মনে মনে ভাবছি যে আজকের ট্র্যাভেল পাস, বাসে উঠার অভিজ্ঞতা, ইত্যাদি ইত্যাদি বলে আজকের ঝাড়িটা কোন মনে এড়িয়ে যাওয়া যায় কিনা।
কিন্তু আজকে সবকিছুর এ কি হাল দেখছি? রাস্তা প্রায় ফাকা, প্রাইভেটকার চলছে এক লেন ধরে, বাস চলছে অন্য এক লেন ধরে, কাওরান বাজার সিগন্যালে মাত্র ১ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো অনান্য দিন যেখানে কোন ধরা বাধা সময় থাকেনা। পুরো রাস্তা জুড়েই অন্য চেহারা, এইটা কি বাংলাদেশের ঢাকা শহর? আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে!!! ভাবতে ভাবতে কখন যে মতিঝিল এসে পৌছালাম তা টেরই পাইনি! বাস থেকে মতিঝিল নেমেই ঘড়ির দিকে তাকালাম, ও আল্লাহ ঘড়িতে ৮.৫৩ আমি মতিঝিলে !!! খুসিতে তিনটা লাফ দিতে ইচ্ছা করতাছে !!
::চলবে.....
২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





