সকালে ঘুম থেকে উঠেই সিএনজি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রহিম। সিএনজির হেন্ডেলে হাত দিয়েই মনে মনে বলল; “হে আল্লাহ্ আগামীকাল ঈদ, আজকে যেন অনেক ভাড়া মারতে পারি”।
রহিমের টার্গেট রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত শপিংমল। শপিংমলে যাত্রী অনেক দেরীতে পাওয়া গেলেও ভাড়া পাওয়া যায় মোটা অংকের।
রহিম বসুন্ধারা সিটির সামনে তার সিএনজি দাঁড় করিয়ে রেখে মনে মনে ভাবতে লাগল; আজকে যদি বেশি টাকা পায়, তাহলে কাল বউয়ের জন্য একটা শাড়ি, মেয়ের জন্য একটা থ্রি-পিছ ও দুই ছেলের জন্য দুইটা প্যান্ট কিনে নিয়ে যাবে। আর নিজের যে প্যান্ট আছে সেটাই ঈদের দিন স্ত্রি করে পড়বে সে।
তেমন জমানো টাকাও নেই তার হাতে। যতটুকু আছে তা দিয়ে শুধু মেয়ের একটা থ্রি-পিছ হবে। বাকি সদস্যদের কিছুই দিতে পারবে না সে। এইধরনের নানান চিন্তা তার মাথার মধ্যে ঘোরপাক খাচ্ছিল। সেই সাথে সে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করছিল, যেটা তার নিত্যদিনের স্বভাব।
সিএনজির বাহিরে চোখ পড়তেই দেখে একটা মধ্যবয়সী মহিলা দামী মোবাইল ফোন হাতে কথা বলছিলেন, হাতে তার অনেকগুলো ব্যাগ। ব্যাগ নিয়ে দাঁড়াতে মহিলাটি রীতিমত হাঁপিয়ে উঠছিলেন। ফোনের কিছু কথা রহিমের কানে গিয়ে পৌছায়।
তা হল;
“তুমি এখনও গাড়ি পাঠাও নি?
আমি কিভাবে এতগুলো জিনিসপত্র নিয়ে যাব?
কি বললে? গাড়ি আসতে এখনও ১ ঘন্টা বাকি?
কিছুক্ষণ পরেই মহিলাটি রহিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন; “এই সিএনজি গুলশান যাবা?” রহিম বলল; “যাব ম্যাডাম” সিএনজির ভাড়া না মিটিয়েই মহিলাটি তার অনেকগুলো ব্যাগ নিয়ে অনেক কষ্টে সিএনজির ভেতর ঢুকে বসে পড়ল। রহিম সিএনজির দরজা বন্ধ করতে করতে ভাবল, “বড়লোক মানুষ এদের কি টাকার অভাব আছে? ভাড়া আর কি মেটাবে!!”
মহিলাটি কিছু ব্যাগ রাখল তার পাশে, আর কিছু সিএনজির পেছনে। অতঃপর গুলশান তার বাসার নিচে গিয়ে ৪০০ টাকা বের করে দিয়ে মহিলাটি সিএনজি থেকে নেমে পড়লেন। রহিম প্রত্যাশার তুলনায় বেশি ভাড়া পেয়ে খুব খুশি।
সিএনজি নিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পরেই হঠাৎ তার চোখ পড়ল সিএনজির পেছনে এক কোণায় পড়ে থাকা একটা ব্যাগের উপর। রহিম সিএনজি দাঁড় করিয়ে ব্যাগটা খুলার সাথে সাথেই ওর চোখ কপালে উঠে গেল। এক ব্যাগ ভর্তি স্বর্ণের গহনা, তার চোখ ঝলকানি দিয়ে উঠল। অভাবের সংসার, সেই সাথে এতগুলো গহনা সে লোভ শামলাতে পারল না। তাই ব্যাগ নিয়েই গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে যাত্রা শুরু করল তার বাড়ির দিকে।
এইদিকে বাসায় গিয়ে গহনার ব্যাগ না পেয়ে মহিলাটি উত্তেজিত হয়ে তার স্বামী মিঃ চৌধুরীকে ফোন দিলেন। মিঃ চৌধুরী ঢাকার নামকরা শিল্পপতি। তিনি তার পুলিশ কমিশনার বন্ধুকে ফোন দিলেন এবং পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে ৩০ মিনিটের মধ্যেই ব্যাগসহ রহিমকে আটক করে জেলে পাঠিয়ে দেয়।
গল্পটার শেষ এভাবেই হতে পারত, কিন্তু না...
রহিম সিএনজির পেছনে পাওয়া ব্যাগটি তার সব লোভ-লালসা বিসর্জন দিয়ে, তার অভাবের সংসারের কথা না ভেবে, তার নিজের কথা, পরিবারের কথা না ভেবে, মিসেস চৌধুরীর বাসায় পৌঁছে দিল। ব্যাগ হাতে পেয়ে এবং ব্যাগের ভেতর সবকিছু ঠিকঠাক বুঝে পেয়ে তারা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, এখনও এমন সৎ মানুষ আছে পৃথিবীতে!! যে এক ব্যাগ ভর্তি স্বর্ণের গহনা পেয়েও ফিরিয়ে দিল? রহিমের এই সততার জন্য তাকে অনেক টাকা উপহার দিলেন মিঃ চৌধুরী ও সেই সাথে তার গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দিলেন।
রহিম উপহারের টাকা দিয়ে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও নিজের জন্য সবকিছু কেনার পাশাপাশি খুব ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করল।