এইতো দু 'দিন আগের কথা। যাচ্ছিলাম বাসে দাঁড়িয়ে কোনো একটা নিত্যনৈমিত্তিক কাজে। একেবারে পেছনের সিট ছাড়া বসার জায়গাও নেই। তাই পেছনের ঝাকুনি খাওয়ার ভয়ে দাঁড়িয়ে যেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলাম। কারণ গন্তব্যস্থল বেশি দূরে নয়। পরমুহুর্তেই দেখলাম আরো একজন রমনীও আমার মতোই আমার পাশেই দাঁড়িয়ে! আরো নতুন যাত্রী উঠায় আরো কাছে এসে দাঁড়ালো। পাশে সমবয়সী সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় স্বভাবসুলভ কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করলাম। একেতো মেয়েদের সাথে খুব বেশি কথা বলার অভ্যাস নেই, তারপর আবার কিছুটা লজ্জাবতীও বটে!অবশ্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বললে অস্বস্তিরভাবটা অনেকটাই কমে যায়। বললাম," পেছনে সিট খালি আছে। "
সীটকে পাত্তাই দিল না! বলল, "না, থাক, অসুবিধা নেই। "
খেয়াল হল, কিছুক্ষণ আগে যখন বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন আমার পাশে আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুও দাঁড়িয়ে ছিল গাড়ির অপেক্ষায়। তার সাথে দু 'চারটে কথাও বলেছিলাম। এই মেয়েটিও আমাদের মতোই আমাদের পাশে গাড়ির অপেক্ষায় ছিল!
জানতে চাইলো, ওই ছেলেটা আর আমি একই ইয়ারের কিনা। উত্তরে হ্যাঁ বলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। তখন পরিচয় দিল ওইছেলেটা তার ক্লাসমেট। আমি অন্য অনুষদের ছাত্র হওয়ায় হয়তো পরিচয় হয়নি আমার সাথে। নাম জানতে চাইলো। বলতে বাধ্য হলাম। নিজের নামও বলল। কিন্তু হট্টগোল আর হয়তো কানে খাটো হওয়ায় বুঝতে পারলাম না। তাই আবার জানতে চাইলাম। আরও স্পষ্ট করে শুনিয়ে দিল। কথা -বার্তায় আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। কিছুটা অবাক হলাম বটে। দাঁড়িয়ে যাচ্ছি বটে তবে আর দশদিনের মতো বিরক্তিকর মনে হচ্ছে না আজ! ব্যক্তিগত ব্যাপারেও বেশ কিছুক্ষণ কথোপকথন হলো। হঠাৎ পাশে একটা সিট খালি হওয়ায় তাকে বসতে অনুরোধ করলাম। কিন্তু সে আমাকে বসতে বলল। একজন রমনীকে দাঁড় করিয়ে রেখে নিজে বসব, ভাবতেই কেমন যেন লাগে! তাই তাকেই বসতে হল অবশেষে। পরমুহুর্তে তার পেছনের সিটটাও খালি হল। তাই আমিও বসার সুযোগ পেলাম। আর একটু পর পাশের দুটো সিট খালি হল। চাচার বয়সী এক লোক উঠতে উঠতে বলল, "আপনারা দু 'জন এখানে বসুন। "
হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম! তিনি কি ভেবেছিলেন জানি না। একটু পর আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম দু 'জনের ভাড়া দিয়ে। সে তার গন্তব্যের অপেক্ষায় বসে রইল। যদিও সে আমাকে ভাড়া দিতে নিষেধ করেছিল এবং নিজেই দিতে চেয়েছিল! কিন্তু পুরুষ মানুষ হয়ে নব্য পরিচিত বান্ধবীকে টাকা দিতে দেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত মনে হল না। তাই তার আপত্তি সত্বেও নিজেই দিলাম। এতে হয়তো সে খুশিই হয়েছে।আর কোনোদিন দেখা হবে কিনা জানি না।
নিজেকে নিয়ে চিন্তা করে নিজেই বিস্মিত হলাম! অল্পপরিচিত কোনো মেয়ের সাথে তো এত কথা বলিনি কখনও! কি এমন বিষয় থাকতে পারে যা এভাবে চঞ্চল মনকে উদ্বেলিত করতে পারে বা বিমোহিত করে! অবশ্য ভালোলাগা আর ভালোবাসা এক জিনিস নয়। দুটোর মাঝে খানিকটা দূরত্ব বিরাজ করে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯