somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেইনা ১ : একটি প্রেমের গল্প

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রেইনা ১

ডঃ রমিত আজাদ

কবরস্থানের খুব কাছেই হোষ্টেলটি। এই বিষয়টি আমার ভালো লাগেনি। জর্জিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দয্য অপূর্ব। এর রাজধানী ‘তিবিলিসি’। মানুষের হাতে গড়া নিখুঁত পুরাতন ও আধনিক দালান-কোঠা, রাস্তা-ঘাট আর বিধাতার হাতে গড়া মনোরম নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য এই দু'য়ের সমন্বয়ে শহরটি হয়ে উঠেছে অপরূপ। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নে আসা। তারই একটি রিপাবলিক জর্জিয়া পার্বত্য অঞ্চল, ঠিক ...। মস্কো থেকে চার রাত্রি, তিন দিনের ট্রেন ভ্রমন শেষে তিবিলিসি শহরে পৌঁছানোর পর, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস যখন আমাদের রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে শহরের সড়ক বেয়ে নিয়ে যাচ্ছিল শহরের এক প্রান্তে থাকা বাগেবী ষ্টুডেন্টস্ টাউনের দিকে, বাসের জানালা দিয়ে দু’পাশের শহরের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। উঁচু নিচু পাহাড়ী পথ বেয়ে বাস যখন পৌঁছাল শহরের এক প্রান্তে। হঠাৎ করেই শুরু হলো কবরস্থান। খুব পরিচ্ছন্ন, টিপ-টপ, সাজানো-গোছানো হলেও কবরস্থান কবরস্থানই। কবরস্থান শব্দটির সাথে নিস্তদ্ধতার গভীর সম্পর্ক। যেখানে জীবন নাই, তাই কোন গতিও নাই। গতিহীনতা আর শব্দহীনতার নিস্তদ্ধতা। কবরস্থান শেষ হতে না হতেই ফুটে উঠল ’বাগেবী ষ্টুডেন্ডস্ টাউন। এদেশে গাড়ী চলে রাস্তার ডান দিক দিয়ে। ডানে মোড় নিয়ে বাসটি ঢুকে গেল ষ্টুডেন্টস্ টাউনে। রাস্তার ডানে ষ্টুডেন্টস্ টাউন বামে পাহাড়ী বন। সত্যিই চমৎকার। কিন্তু কবরস্থানের খুব কাছে বলে মনটা খারাপ হয়ে গেল। যদিও জীবন আর মৃত্যূ খুব কাছাকাছি, তারপরেও যতক্ষন জীবিত আছি মৃত্যুকে স্বাগত জানাতে ইচ্ছা হয় না। ষ্টুডেন্টস্ টাউনটা শহরের বাইরে বলে, ট্রান্সপোর্টের সামান্য সমস্যা হয়। সিটি সার্ভিসের বাসগুলো প্রায় সবই শহরের শেষে এসে যায়, অর্থাৎ কবরস্থানটাই তাদের সীমানা। কেবল একটি নান্বারের বাস এবং একটি নাম্বারের মাইক্রোবাস ষ্টুডেন্টস্ টাউন পর্যন্ত যায়। শহর থেকে ফেরার পথে কখনো এই দু’টা ট্রান্সপোর্ট না পাওয়া গেলে, যে কোন বাস বা ট্রলিবাসে চড়ে শহরের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত আসা যায়। এরপর বাকী পথটুকু পাহাড়ের মধ্যে উপভোগ করতে করতে হেঁটে হেঁটেই চলে আসা যায়। কিন্তু আজ একটু সমস্যা হয়ে গেলে। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ট্রলিবাস থেকে নেমে বুঝতে পারলাম আমি একাই এই বাস ষ্টপেজে নেমেছি। আশে-পাশেও কাউকে দেখতে পেলাম না। এদেশে এম্নিতেই মানুষ কম, এই মুহুর্তে আমার মনে হলো, এদেশে বোধ হয় কোন মানুষই নেই। এখান থেকে হেটে আমাকে হোষ্টেলে যেতে হবে। ঠিক করবস্থানের পাশ দিয়ে। ভাবতেই গাটা ছমছম করে উঠল। ভুত আমি কখনো দেখিনি, তারপরেও ভুতের ভয় মনে ঠিকই আছে। কোন লেখক যেন বলেছিলেন যে, ভূতকে অ¯বীকার করা যায় কিন্তু ভুতের ভয়টাকে অ¯বীকার করা যায় না। মোক্ষম বলেছেন, উনিও বোধ হয় আমার মত ভুতের ভয় পেতেন। আমি এখন ভাবছি, আমাকে এখন হোষ্টেলে ফিরতে হবে। বাস ষ্টপেজে তো আর রাত কাটানো যাবে না। হোষ্টেলে বন্ধু-বান্ধবেরা হয়তো এতখনে দুশ্চিন্তা করছে। সবচাইতে বেশী অস্থির হয়ে উঠছে রেইনা, আমার বিদেশিনী বান্ধবী। কি আর করা, বাস ষ্টপেজ ছেড়ে হোষ্টেলের দিকে হাট্তে শুরু করলাম। দু’তিন মিনিট পরেই হাতের ডানে কবরস্থান শুরু হলো। গা ছমছম করছে বা পাশে ঘন পাহাড়ী বন আর ডানপাশে কবরস্থান তার মধ্যে দিয়ে হেটে চলছি আমি একা। মনে মনে দোয়া-দরূদ পড়ছি আর চোখ-কান খোলা রেখে চলছি। চোখ-কান বন্ধ থাকলেই বোধ হয় ভালো হতো। কিন্তু তাতো আর হবার না। কানতো প্রকৃতিগত ভাবেই খোলা থাকে আর চোখ বন্ধ রাখলে চলা যাবে না। মিনিট পাঁচেক চলার পর যা দেখলাম তাতে গায়ের রক্ত হীম হয়ে গেল। একটি কবরের কাছে কালো একটি ছায়া মুর্তি নড়ে উঠল। থমকে গেলাম। কি করব বুছে উঠতে পারছি না। এখনই কি মুর্ছা যাব ? হঠাৎ করে ছায়া-মুর্তিটি স্পষ্ট রুশ ভাষায় বলে উঠল, “হে যুবা তোর কাছে সিগারেট হইবে ?” মনে প্রাণ ফিরে পেলাম। কবর থেকে উঠে আসা অশরীরি কিছু নয়। একেবারে রক্ত-মাংসের মানুষ। সন্ধ্যায় নির্জন কবরস্থানে ও করছে টা কি ? টলতে টলতে ও আমার দিকে এগিয়ে এলো, কথা বলার সময় শুনেছি ওর কন্ঠস্বরও জড়ানো ছিল। মাতাল! এবার বুঝলাম, মদ খেয়ে চুড় হয়ে কবরস্থানে বসে আছে। দিন-রাতের জ্ঞানও বোধ হয় এই মুহূতে নেই। তাকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে এবার অন্য ভয় ধরে বসল। ব্যাটা না আবার আমার উপর চড়াও হয়। মদ খেলে তো আর কান্ডজ্ঞান থাকে না। মাতাল অবস্থায় ভাই ভাইকে, স্বামী-স্ত্রীকে হত্যা করেছে এমন তো হর হামেশাই শোনা যায়। ইসলাম ধর্মে মদ্যপান শুধু শুধু হারাম করা হয় নি। আমার কাছাকাছি এসে আরেকবার জড়ানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করল “তোর কাছে সিগারেট হইবে?” আমি উত্তর দিলাম, “না আমি সিগারেট খাই না”। ওহ, তুইতো বিদেশী দেখিতেছি, সিগারেট খাস না কেন? যোগী সাধক নাকি! ” যা ভেবেছিলাম তাই, ওর কন্ঠস্বর এগ্রেসিভ, যে কোন মূহুর্তে মারমূখী হয়ে উঠতে পারে। রুশ বা জর্জিয়ানরা দীর্ঘকায়, আমার তিনগুন তো হবেই। এর সাথে হাতাহাতি শুরু হলে রক্ষা নাই । কোন কিছু ঘটার আগেই ঝেড়ে দৌড় দিলাম। পিছন থেকে ও ডাকছে, কি কি যেন বলছে কিন্তু টলায়মান পা নিয়ে আমার পিছনে পিছনে আসতে পারলো না। কিছু দূর এসে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। এবার আমার কাছে ¯পষ্ট হলো ম্ত না, জীবিত মানুষই ভয়ংকর। হোষ্টেলে ফিরে দেখলাম সবাই মোটামুটি চিন্তিত। রেইনা উৎকন্ঠিত হয়ে আমার রুমে এসে বসেছিল। আমার রুমমেট সাইফুল আর বিদ্যুৎ তাকে অভয় দিচ্ছিল। আমাকে দেখে ওর মুখে হাসির ঝিলিক খেলে গেল। ‘তুমি ফিরিয়াছ।’
ঃ হ্যাঁ
ঃ কোন সমস্যা হয় নাই তো ?
ঃ উঁ, কিছুটা। না, তেমন কিছুনা । তোমাকে পরে বলব।

রেইনা দক্ষিণ আমেরিকার মেয়ে। দেশের নাম বলিভিয়া। ছোট-খাট গড়নের, কিন্তু অদ্ভূত সুন্দরী। গায়ের রঙ ইউরোপীয়ানদের মত সাদা নয় আবার আমাদের মত শ্যামবর্ণও নয় এই দু'য়ের মাঝামাঝি। দীঘল চুলের রঙ কালো। আমার আগে ধারণা ছিল বিদেশী মেয়েরা লম¦া চুল রাখেনা, বিদেশে এসে ধারণা পাল্টেছে। অনেক মেয়েরই বেশ লম্বা চুল আছে। রেইনা এমন একজন। চোখ দু’টো বেশ বড় বড়। ও আমাকে বলেছে বাড়ীতে ওর ভাই-বোনরা ওকে বলত গরুর চোখী। আমি হেসে বলেছি, তাই নাকি এরকম কথা তো আমাদের দেশেও প্রচলিত আছে। আমি জানিনা ওর রূপের প্রশংসা আমি খুব বাড়িয়ে বলছি কি না। তবে ও যে মন কেড়ে নেয়ার মত সুন্দরী এই বিষয়ে সবাই আমার সাথে একমত হয়েছে। তবে ওর রূপ যে আমাকে আকৃষ্ট করেছে ব্যাপারটা সেরকম নয়। ওর মনই আমার মন কেড়েছে। দেশে থাকতে একটা গান শুনতাম ‘এ মন শুধু মন ছুঁয়েছে’। রেইনার সাথে পরিচিত হওয়ার পর গানটির মর্ম বুঝতে পেরেছি।

বিদেশীনিদের মন যে এত সুন্দর হয় তা আগে ধারনা করতে পারিনি। দেশে থাকতে মনে হতো আবেগ, অনুভুতি, ভালোবাসা এগুলো কেবল বাঙালীদেরই আছে, বড়জোর ভারতীয় বা পাকিস্তানীদের । আমার সে ভুল ভেঙেছে। মানবীয় আবেগ অনুভুতি কোন ভৌগলিক সীমারেখায় সীমাবদ্ধ নয়। ওকে প্রথম দেখেছিলাম মস্কোর একটি রেলওয়ে ষ্টেশনে। সারা পুথিবীর ছেলে-মেয়েরা সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়তে আসে। প্রথম ল্যান্ড করে মস্কোতে । দু’একদিন মস্কোতে থাকতে হয়। তারপর মস্কো থেকে তাদের ছড়িয়ে দেয়া হয়। সারা সোভিয়েত জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন শহরে। মস্কো বিশাল নগরী এখানে ৮/১০ টি রেলষ্টেশন আছে। এই ষ্টেশন গুলো থেকে ট্রেনে চেপে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীরা চলে যায় তাদের গন্তব্যে। মস্কোতে যখন দ্বিতীয় দিন কাটাচ্ছি, দু’জন রুশ মেয়ে এসে আমাকে জানালো, “আজ রাতের ট্রেনে তোমাকে তিবিলিসি যেতে হবে।” দেশে থাকতে শুনেছিলাম যে, রুশরা ইংরেজী জানেনা, আমার ধারনাা ভুল ছিল, এই দু’টি মেয়ে চমৎকার ইংরেজী বলে। সন্ধ্যা আটটার দিকে একটি বাস এসে হোটেল থেকে আমাকে তুলে নিল। আমার সাথে আরো কয়েকজন বাংলাদেশী ছিল। দু’জন ছাত্রী আর চারজন ছাত্র। সুমন নামে আরেকজন সিনিয়র ছাত্র আমাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের সাথে বাসে চড়ে ষ্টেশনে এসে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছিলেন। আমাদের এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রেখে তিনি খোঁজ-খবর করে এলেন, আমাদের ট্রেন কখন কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে। এ সময় আমার চোখে পড়ল কিছুদূরে বাঙালী মেয়েদের মতই দেখতে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে এক ভদ্রলোক দাঁড়ানো। ওই মেয়েটিরই দেশী হবে হয়তো। এমসয় সুমন ভাই এগিয়ে গিয়ে তাঁর সাথে কথা বললেন। ফিরে এসে বললেন ঐ মেয়েটি তোমদের সাথেই তিবিলিসি যাবে, ওর সাথে ওর দেশী আর কেউ নেই। তোমরা ওকে দেখে রেখ। আমি বললাম, “আর ঐ ভদ্রলোক ?” সুমন ভাই বললেন উনি ওদের এ্যাম্বেসীর, ওকে ষ্টেশনে পৌঁছে দিতে এসেছেন। ষ্টেশনটি বিশাল আকৃতির এবং বেশ ঝকঝকে । আমরা ঘুরে ফিরে দেখছিলাম আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম। এরমধ্যেই বারবার আমার চোখ যাচ্ছিল ঐ মেয়েটির দিকে। কেন এমন হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম না। ও কি এমনি রূপসী, যার থেকে চোখ ফেরানো যায় না । মনে তো হয় না। তারপরেও কেন এমন হচ্ছে ? একটা গানের কলি মনে পড়ল ‘হঠাৎ দেখে চমকে. নির্বাক হয়ে গেছি থমকে, মনে হলো তুমি যেন অনেক দিনের চেনা।’ এই পৃথিবীতে কত মেয়েই তো আছে, তারপরেও একটি মেয়েকে দেখামাত্রই অনেক দিনের চেনা মনে হবে কেন ? আধুনিক চিকিৎসা শা¯ত্র বলে এই দু’জনের হরমোন লেভেলে কিছু একটা কোইনসাইড করে, ফলে এরকম হয়। হবে হয়তোবা। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হয়তো এমনই । আবার না হলেই বা কি? সবকিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকতেই হবে এমন তো কোন কথা নেই।

রাত দশটার দিকে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে সুমন ভাই খুঁজে-খাজে আমাদের সঠিক ট্রেনে, সঠিক ট্রেনটিতে তুলে দিয়েছিলেন। রুশদের অনেকেই চমৎকার ইংরেজী বলে, কিন্তু বেশীরভাগই ইংরেজী বলতে পারেনা। প্রথমে অবাক হয়েছিলাম, প্রাক্তন বৃটিশ শাসিত দেশে থেকে ধারনা হয়েছে। শিক্ষিত মানুষ মাত্রেই ইংরেজী জানবে। ভালো ইংরেজী জানা তো শিক্ষারই একটি ইন্ডিকেটর । বিদেশে এসে এই ভুল ভেঙেছে। উন্নত সবগুলো দেশেই তাদের মাতৃভাষায়ই শিক্ষা প্রদান করা হয়। এর পাশাপাশি তারা অন্যান্য বিদেশী ভাষাও শিখে থাকে। রাশিয়ার স্কুলগুলোতে বিদেশী ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামুলক, তবে অপশোন থাকে। ইংরেজী, জার্মান, ফ্রেঞ্চ ও ষ্প্যানিশ এইগুলোর যে কোন একটি বেছে নিতে হয়। ফলে কেউ জানে ইংরেজী, কেউ জার্মান, কেউ ফ্রেঞ্চ বা ষ্প্যানিশ জানে। আমরা যেহেতু তখনো রুশ ভাষা জানতাম না, তাই সুমন ভাই আমাদের সাথে থেকে সবরকম সাহায্য করে একবারে ট্রেনে তুলে দিলেন। উনি পুরো কাজটি করেছিলেন একেবারে নিঃস্বার্থে। এই দূরদেশে একদল বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীর যেন কোন কষ্ট না হয় সেই উদ্দেশ্যে তিনি তা করেছিলেন । আমি ট্রেনে উঠে উনাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছলাম। এই দূরদেশে এমন একজন হৃদয়বান বাংলাদেশীকে দেখে মন ভরে গিয়েছিল। কম্পার্টমেন্টে উঠে দেখলাম চারটি টিকিট একটি বার্থের, বাকী চারটি টিকিট, চারটি ভিন্ন ভিন্ন বার্থের। এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে ভেবে মন খারাপ হয়ে গেল। আমাদের সাথের মেয়ে তিনজনার জন্য দায়িত্ববোধ জেগে উঠল। বললাম, “ওরা তিনজন এক বার্থে থাকুক।” আর সালমান নামে আমাদের মধ্যে একজন ছিল, মাত্র দু’দিন হলো বিদেশে এসেছি এর মধ্যেই ও হোম সিকনেস ফীল করে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, সালমানকে ওদের সাথে দিলাম। সাইফুল খুব লম্বা-চওড়া, প্রায় রুশদের মতই, পাহাড়াদার হিসাবে ওকে পাশের বার্থেই দিলাম। আমি আর বিদ্যুৎ একটু দূরের বার্থ দু’টিকে স্থান নিলাম। ট্রেন ঘন্টাখানেক চলার পর মন খারাপ হয়ে গেল। আমার বার্থে যারা ছিলেন তারা ভালোই ছিলেন। তারপরেও আস্তে আস্তে এসে সালমানদের বার্থে এসে ঢুকলাম ভেবেছিলাম কিছুক্ষণ গল্প-গুজব করে, আবার নিজের বার্থে এসে ঘুমাবো। আমি ওদের বার্থে ঢুকে দেখি সাইফুল আর বিদ্যুৎ আগে থেকেই ওখানে বসে আছে। সবার মনেই এক্ অবস্থা। মনে হচ্ছিল এই ট্রেনটা জুড়ে সব্ইা আমাদের পর, সবাই ভিন জগতের মানুষ। কেবল আমরা সাত জনই একে অপরের আপন। হঠাৎ করে রেইনার দিকে নজর পড়ল। আরে আমরা তো তাও ছয়জন একই দেশের, ও তো একেবারেই একা। ওর কথা ভেবে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল। তবে ওর মুখভাব দেখে মনে হচ্ছিল না যে ওর মন ততটা খারাপ। বুঝলাম বেশ শক্ত মেয়ে, ওর সাথে কথা বলতে চাইলাম। কথা বলতে গিয়ে কথা আটকে গেল। কোন ভাষায় কথা বলব ওর সাথে ? এদের ভাষা কি ? ও কি ইংরেজী বুঝবে ? আমি তো এর বাইরে কোন বিদেশী ভাষা জানিনা। কাছে এগুতে গিয়েও এগুতে পারব না। ভাষার ব্যবধান খুব বড় ব্যবধান, আমাদের মধ্যে সেই ব্যবধান আছে। নানা জাতির ভাষা বৈচিত্র্য সম্পর্কে বাইবেলে একটি কাহিনী বর্ণিত আছে ঃ এক সময় মানব জাতির একটিই ভাষা ছিল। তারা একবার ঠিক করল, একটি উচু টাওয়ার তৈরী করে ইশ্বরের কাছে পৌছে যাবে। যখন তারা টাওয়ারটি তৈরী করে কাজ কিছুদূর এগিয়ে নিয়ে গেলে, ইশ্বর তখন টাওয়ারটি ভেঙে দিলেন আর মানবজাতিকে নানা ভাষা তথা নানা জাতিতে বিভক্ত করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিলেন, যাতে তারা খুব সহজে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। কাহিনীটির ঐতিহাসিক সত্যতা যাচাই করার ক্ষমতা আমার নেই, তবে ভাষাগত পার্থক্য যে জাতিতে জাতিতে বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি করেছে, তা ঐ মুহুর্তে তো বটেই, পরবর্তী জীবনেও বেশ বুঝতে পেরেছিলাম।

রেইনার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে একটা কবিতা লিখে ফেললাম

সুদূর নক্ষত্রলোক থেকে
শত বছরের নিস্তদ্ধতা এসে বলে গেল,
ধ্বনিরা জাগ্রত হও,
কোলাহলময় উৎসবের রাতে
প্রেয়সীর চোখে জমে থাকা জলে
জ্যোৎস্নার আলো জ্বলে উঠে বলে
প্রেমিক তুমি স্থবিরতা ভেঙে, চঞ্চল হয়ে ওঠো।

রেইনা হঠাৎ করে বলে উঠল, “ওয়ান্ট টু সে সামথিং ?” এবার আমি চমকে উঠলাম, বললাম, “ ডু ইউ স্পীক ইংশিল ?”, ও বলল “ইয়েস, এ লিট্ল বিট”। জানলাম, ওদের ভাষা ষ্প্যানিশ। ও ভাঙা ভাঙা ইংলিশ ও ভাঙা ভাঙা রুশ বলতে পারে। ভাঙা ভাঙা রুশ আমিও বলতে পারতাম। রাশিয়ায় আসব জেনে, রাশান কালচারাল সেন্টার থেকে ছোটখাট একটা কোর্স করে কিছু কিছু শব্দ, কিছু বাক্য শিখে নিয়েছিলাম। সেই ভাঙা রুশ আর কাজ চালানোর মত ইংরেজী এই দিয়ে ওর সাথে কথোপকথন চালাচ্ছিলাম। এ এক অদ্ভূত খেলায় আমরা মেতে উঠলাম। হৃদয়ের টানে ভাষার ব্যবধান মুছে ফেলতে চাচ্ছিলাম। মস্কো থেকে তিবিলিসি দীর্ঘ রেলপথ। আগে বই-পত্রে পড়েছি পৃথিবীর দীর্ঘমত রেলপথ রাশিয়ার ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলওয়ে। আমরা যে লাইনের উপর দিয়ে যাচ্ছিলাম এটা ‘ ট্রান্স ককেশিয়ান রেলওয়ে ’। চার রাত তিন দিন এ'্ রেলপথে ছিলাম। আমার জীবনে এটাই ছিল দীর্ঘতম ট্রেন ভ্রমণ। ট্রেনের দু’পাশের দৃশ্য ছিল চমৎকার। আমাকে সাইফুল বলেছিল যে, সে শুনেছে ট্রেন কৃষ্ণ সাগরের পাশ দিয়ে যাবে। এটা শুনে আমার উৎসাহ ভীষণ বেড়ে গেল। এই কৃষ্ণ সাগরের বর্ণনা ভূগোলে পড়েছি, পড়েছি বিভিন্ন গল্প-সাহিত্যে, এখন চোখের সামনেই দেখতে পাব !

মস্কো থেকে তিবিলিসি পর্য›ত দীর্ঘ রেলপথে সময় কাটছিল রেইনার সাথে কথা বলে । জানলাম দেশে ওদের বাবা-মা ও ছয় ভাই-বোন নিয়ে বড় পরিবার। ওর বাবা-মা সন্তানদের পড়ালেখার বিষয়ে ভীষণ উৎসাহী। ওর বড় ভাইও রাশিয়াতে পড়ালেখা করেছেন। ওর বাবা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার । পরবর্তিতে রেইনার কাছ থেকে জেনেছিলাম, যে ওর বাবার আরেকটি পরিচয় হলো, তিনি ওদের দেশের একজন কম্যুনিষ্ট নেতা। তিনিও বছর দুই রাশিয়াতে কাটিয়েছিলেন। কম্যূনিষ্ট আদর্শে এত বেশী উজ্জীবিত ছিলেন যে, ছেলে-মেয়েদের রাশিয়ায় পড়তে পাঠিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, তাদেরকেও কম্যূনিষ্ট আদর্শে গড়ে তোলা। আমার ঐ বয়সে রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, দর্শন আমি ভালো বুঝতাম না। যা বুঝতাম তা যৎসামান্য। তারপরেও মনে করতাম অনেক জানি, অনেক বুঝি। এটা বোধ হয় বয়সের দোষ। আরেকটি বিষয় আমার মনে বদ্ধমূল হয়েছিল, সেটি হলো ‘জাতীয়তাবাদ’ । এই জাতীয়তাবাদী চিন্তা-ভাবনার দ্বারা আমি এত বেশী প্রভাবিত ছিলাম যে তা অনেক সময় ফ্যাসিবাদের পর্যায়ে চলে যেত । বইয়ে পড়েছিলাম যে, এডলফ হিটলার মনে করতেন, ‘রাষ্ট্রের জন্য মানুষ, মানুষের জন্য রাষ্ট্র নয়’। আমার কাছে মনে হয়েছিল, হিটলার ঠিকই বলেছেন। যে দেশটায় আমার জন্ম , যে দেশটার আলো-বাতাসে আমি বড় হয়েছি, সেই দেশের জন্য কাজ করার চাইতে বড় কর্তব্য আর কি হয়ে পারে ? সে দেশের জন্য যদি জীবন দিতে পারি, এর চাইতে বড় সম্মান আর কিসে হতে পারে ? পরবর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দর্শনের ক্লাসগুলোতে আমার চিন্তা-ভাবনার ক্রটি বুঝতে পেরেছিলাম।

রাতে সমস্যায় পড়লাম। আমরা সাতজন এক বার্থে। বার্থে সীট আছে চারটি। আমরা ঘুমাবো কি করে ? আমাদের মধ্যে সাইফুল ছিল সবচাইতে বেশী লম্বা-চওড়া। লম্বায় প্রায় ছ’ফুট। সুঠাম দেহের বাংলাদেশীরা সাধারণত মাস্তান স্বভাবের হয়, কিন্তু সাইফুল মোটেও সেরকম নয়, অত্যন্ত নম্র-ভদ্র। দু’তিন দিনের পরিচয়েই ওকে ভালো লেগে গেল। ও বলল, “ আমার সীট তো পাশেই বার্থেই, আমি ওখানেই ঘুমাই ”। ওকে, একটা সমাধান পাওয়া গেল। বাকী ছ’জনের এ্যারেঞ্জমেন্ট কিভাবে করা যায় ? বিদ্যুৎ বলল, “ অত কিছু বুঝি না, আমার ঘুম পাইছে, আমি সালমানের পাশে ঘুমাই ”। এই বলে বার্থের উপরের সীটে সালমানের পাশে গুয়ে পড়ল। বাংলাদেশী মেয়ে দু’জন লিজা আর আফসানা ঠিক করল ওরা দু’জন এক সীটে ঘুমাবে। বাকী রইলাম আমি আর রেইনা। আমরা দু’জন কে কোথায় ঘুমাবো? তাকিয়ে দেখলাম লিজা আর আফসানা মুখ টিপে হাসছে। আমিই সমস্যার সমাধান করে দিলাম। সীটটাা যেহেতু রেইনার, অতএব ও ঐ সীটেই ঘুমাবে, আর আমি ওর পায়ের কাছে বসে থাকব। আফসানা বলল, “কতগুলো রাত পায়ের কাছে বসে কাটাবে ?” সবাই কোরাসে হেসে উঠল। বেশ লজ্জা লেগে গেল। রেইনা কিছু বুঝতে না পেরে আমার দিকে তাকালো। আমি চুপ করে রইলাম।

বসে বসে ঘুমিয়ে, প্রথম রাতটা পার করলাম। রাতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল। বার্থের মধ্যে সবাই বেশ নির্বিঘেœ ঘুমাচ্ছিল। রেইনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘুমন্ত একটি লিস্পাপ মুখশ্রী। যতবার ওর দিকে তাকাছিলাম ততবারই মন তোলপাড় হয়ে যাচ্ছিল। অনেকের মনে হতে পারে রাতের আলো-আধারীতে একটি রূপসী মেয়ের পাশে বসে আমার মধ্যে কামণা জাগ্রত হতে পারে। কিন্তু এমন কোন অনুভুতিই আমার হয়নি। বিন্দুমাত্রও না । আমার হৃদয়টাকে যদি ফুলের সাথে তুলনা করি, তবে যা হচ্ছিল তাকে বলা যায়, ফুলের পাঁপড়িতে আন্দোলন।

সকালে উঠে সবাই ক্ষুধার্ত । একটি গ্রামের ষ্টেশনে ট্রেনটি থামলে আমরা দুধ, রুটি আর কিছু ফলমূল কিনলাম। লিজা আর আফসানাকে দেখেছি সব সময়ই ছেলেদের উপর ডিপেনডেন্ট। কিছু লাগলে বলছে, এটা করে দাওনা, ওটা করে দাওনা। কিছু কিনতে চাইলে বলছে, এটা কিনে দাওনা, ওটা কিনে দাওনা। রেইনাকে দেখালাম সেরকম নয়। ওর কাজ ও নিজেই করে নিচ্ছে। কিছু কিনতে চাইলে ফেরিওয়ালা ডেকে নিজেই দরদাম করে কিনে নিচ্ছে। বুঝলাম এই মেয়ে স্বাবলম্বী, নিজের ভার নিজেই নিতে পারে। পরে বুঝতে পেরছিলাম সাউথ এ্যামেরিকান বা ইউরোপীয়ান মেয়েরা এরকমই হয়। ব্রেকফাষ্টে ফলমূল যা খাচ্ছিলাম তার প্রায় সবই অপরিচিত, ব্ল্যাক বেরী, পিচ, রাস্প বেরী, চেরী, ইত্যাদি। এতকাল কেবল এদের নাম শুনেছি, এই প্রথম স্বাদ গ্রহণ করলাম। খেতে খেতে খাবার প্রসঙ্গে আলাপ হলো। জানতে পারলাম ওদের দেশে আম, কলা, পেঁপে, জাম্বুরা, কমলা ইত্যাদি আছে। ওদের প্রধান খাদ্য ভুট্টা আর আলু। ওর কাছ থেকেই প্রথম জানলাম আলুর জন্মভুমি বলিভিয়া এবং পেরু। ভুট্টাও ওখানেই প্রথম আবাদ হয়। মরিচের জন্ম ভুমিও ঐ দুটি দেশ। পরবর্তিতে জানতে পেরেছিলাম নানা ধরনের ফল-মূল, শাক-সবজী, শস্য আমেরিকা মহাদেশ থেকে ইউরোপ-এশিয়ায় এসেছিল। চকলেটের জন্মস্থানও বলিভিয়া, ইনকারা প্রথম এই মিষ্টান্নটি তৈরী করে। ইন্কা, হ্যা ইন্কাদের সম্পর্কে বইয়ে পড়েছি। দক্ষিণ আমেরিকার সবচাইতে উন্নত জাতি ছিল ওরা। ষ্প্যানিশরা আমেরিকায় প্রবেশের পর ইনকাদের সভ্যতা দেখে বি¯ি¥ত হয়েছিল। ইন্কাদের কেবল একটি জিনিসেরই অভাব ছিল, সেটি হলো আগ্নেয়াস্ত্র। এই আগ্নেয়াস্ত্রের অভাবেই তারা আগ্রাসী ষ্প্যানিশদের কাছ পরাজিত হয়েছিল। বেচারা ইন্কাদের কি দোষ দেব ? আগ্নেয়াস্ত্র থাকা সত্ত্বেত্ত তো আমরা ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়েছিলাম। আমাদের সভ্যতা তো ইংরেজদের চাইতে বহুগুন উন্নত ছিল। এ কারনেই আমাদের নেতা সোহরাওয়ার্দী বলেছিলেন, “ এ কথা সত্য যে ইংরেজদের পাশবিক শক্তির কাছে আমরা হার মানতে বাধ্য হয়েছি কিন্তু সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যাগত গুনাগুন বিচার করলে আমরা কোন অংশেই তাদের চাইতে কম নই। ” তৃতীয় দিন সকালে লিজা হৈ চৈ করে সবাইকে ডাকতে লাগলো , ও বার্থের বাইরে করিডোরে জানালার পাশে দাড়িয়েছিল। সবাই ছুটে গেলাম। অদ্ভুদ সুন্দর দৃশ্য। ব্ল্যাক সী (কৃষ্ণ সাগর) ! খুব ধীর গতিতে ট্রেন যাচ্ছে সাগরের তীর ঘেসে, আর আমরা জানালা দিয়ে দেখ্ছি দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির অপূর্ব সৌন্দর্য্য। ব্ল্যাক সী আসলেই ব্ল্যাক। ট্রেনের জানালা দিয়ে পানির রঙ কালো মনে হচ্ছিল। পানির উপরে হালকা কূয়াশা ছিল। যে বিষয়টি আমাদের একটু লজ্জায় ফেলে দিয়েছিল তা হলো সাগর তীরে সবাই বিকিনি পরিহিত। আমরা বাংলাদেশী ছেলে-মেয়েরা সব একসাথে দাড়িয়ে ছিলাম, এরকম দৃশ্য দেখে তো অভ্যস্ত নই। আফসানা বলেই বসল, “ লজ্জার দৃশ্য ”।

দ্বীতিয় রাতে বসে বসে ঘুমাতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। মাঝরাতের দিকে একবার ঘুম ভেঙে গেলে, রেইনা উঠে বসল। আমাকে প্রশ্ন করল, “ বসে বসে ঘুমাতে তোমার কষ্ট হচ্ছে ?” আমি চুপ করে রইলাম। হ্যা না কোন কিছু বলাই ঠিক হবে না ভেবে। রেইনা বলল, “ তুমি আমার পাশে শুতে পারো ”। আমি চমকে উঠলাম। বলে কি ও ! এই ভরা বার্থে এতগুলো তরুন-তরুনীর মধ্যে আমরা দু’জন যদি পাশা-পাশি শুই, পরিস্থিতি কেমন হবে! “ তবে এক শর্তে ,” রেইনা বলল।
ঃ কি শর্ত ?
ঃ আমার যেখানে পা, তোমাকে সেখানে মাথা দিতে হবে, আর তোমার পা থাকবে আমার মাথার কাছে।
মনে মনে ভাবলাম বেশ ভালো বুদ্ধি বার করেছে তো। আমার কষ্টটা কমানো হলো, আবার আমাদের মধ্যে ব্যবধানও রইল। এভাবেই আমরা বাকী রাতগুলো কাটিয়ে ছিলাম। চতুর্থ দিনে আমরা জর্জিয়ার কাজধানী তিবিলিসি এসে পৌছালাম। আমাদের মালপত্র সবকিছু নিয়ে আমরা এক ঝাঁক পাখীর মত কল-কাকলী করতে করতে ট্রেন থেকে নেমে এলাম। হঠাৎ করে, অত্যন্ত সুদর্শন ও প্রীতিকর একজন ব্যক্তি এসে স্পষ্ট ইংরেজীতে প্রশ্ন করলেন “ আর ইউ ফ্রম বাংলাদেশ ?”
ঃ ইয়েস ।
ঃ আই এ্যাম সাশা, দ্যা ডেপুটি ডীন অব ইয়ার ফ্যাকাল্টি।
ভদ্রলোককে প্রথম দর্শনেই সবার ভালো লেগেছিল। একটি মাইক্রোবাসে করে তিনি আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন বাগেবী ষ্টুডেন্টস্ টাউনে। এখানেই আছে তিবিলিসি ষ্টেট ইউনিভার্সিটির রাশান ল্যাংগুয়েজ কোর্সের ফ্যাকালটি।

আমরা খুব ক্লান্ত ছিলাম। আমাদের খুব প্রয়োজন ছিল লম্বা একটি ঘুমের। তারপরেও ’সাশা‘ আমাদের নিয়ে গেলেন ফ্যাকালটির অফিস রুমে। রেজিষ্ট্রেশনের প্রয়োজনে। আমাদের সাথে তিনি চোস্ত ইংরেজীতে কথা বলাইলেন। হঠাৎ করে উনার চোখ গেল রেইনার দিকে।
ঃ ইউ আর নট ফ্রম বাংলাদেশ, আই গেজ।
ঃ নো ! বলিভিয়া।
ঃ ও !
এরপর সাশা চট করে ষ্প্যানিশ বলতে শুরু করলেন। রেইনার সাথে কথাপোকথন ষ্প্যানিশ ভাষায়ই চালালেন। আমরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছিলাম। লোকটা ষ্প্যানিশও জানে। পরবর্তিতে জেনেছিলাম, তিনি সবগুলো ইউরোপীয়ান ভাষাইই জানেন।

কিছুক্ষনের মধ্যে রুম বন্টন হয়ে গেল। নাতাশা নামের অদ্ভুদ সুন্দরী এক ম্যাডাম আমাদের হোষ্টেলে নিয়ে গিয়ে রুম দেখিয়ে দিলেন। ম্যাডামকে দেখলাম ইংরেজী ও ষ্প্যানিশ দুটোতেই খুব পারদর্শী। আমরা বাংলাদেশীরা রুম পেলাম দোতালায়। রেইনা পেল তিনতলায়, পরে বুঝতে পেরেছিলাম, বাংলাদেশী ও ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্ধানিত ছিল দোতলা, আর দক্ষিণ আমেরিকানদের জন্য তিন তলা। দীর্ঘ ক্লান্তিকর ট্রেন জার্নির পর, হোষ্টেল এসে হাপ ছেড়ে বাঁচলাম সত্যি, কিন্তু ঐ চারদিনের মধুময়তা কিছুতেই কাটছিল না। মনে বারবার উকি দিচ্ছিল সেই বার্থ, সেই ভোর, সেই ভাঙা-ভাঙা ইংরেজী আর রুশে আলাপন।

পরদিন সন্ধ্যাবেলা বসেছিলাম হোষ্টেল সামনের বেলকুনিতে। এই বেলকুনিটির একটি বিশেষত্ব ছিল। বাগেবী যেহেতু শহরের একপাশে, এখান থেকে দূরে পাহাড়ের ঢালে বিশাল শহরের একাংশ দেখা যায়। সন্ধ্যা বেলায় বিশাল বিশাল দালানগুলোর জানালায় যখন আলো জ্বলে উঠে তখন মনে হয় যেন পাহাড়ের ঢালে হাজার হাজার প্রদীপ জ্বলছে। আর এই দৃশ্য থেকে চোখ ফেরানো যায় না। আমার মত আরো অনেকেই ব্যালকুনিতে বসে ঐ দৃশ্য উপভোগ করছিল। এত সৌন্দর্য্য সত্ত্বেও আমার মন বারবার ছুটে যাচ্ছিল রেইনার কাছে হঠাৎ পাশ থেকে লিজা বলে উঠল “এতই যখন মন খারাপ তখন তিনতলা থেকে ঘুরে এলেই পারো।” ও যদিও আমার মনের কথা ধরতে পেরেছিল। তারপরেও বিরক্তি লাগলো মনে হলো এ আমার একান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপে করা । এ সময় তিনতলার ব্যালকুনিতে হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। চেনা হাসির শব্দ হৃদয় উদে¦ল করে গেল। একবার পত্রিকায় পড়েছিলাম, ‘মেয়েটিকে দেখলে যদি বুকে ধুকধুকানি হয়, বুঝবেন মেয়েটিকে আপনি ভালোবাসেন, আমার বুকে সেই ধুুুকধুকানি শুনতে úেলাম । তাহলে কি আমি ওকে ভালোবাসি ?

সম্মোহিতের মতো সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে গেলাম। রেইনা ওর বান্ধবীদের নিয়ে গল্প করছিল। আমাকে দেখে কয়েক সেকেন্ড নিস্তদ্ধ হয়ে গেল। আমার বুকে তখন প্রশান্ত মহাসাগরের আলোড়ন। সামনে জ্বলা হাজারো প্রদীপের আলোর পটভুমিতে দাড়ানো রূপসী রেইনাকে মনে হচ্ছিল রোমঞ্চিত হৃদয়ের পসারিনী। আমাকে দেখে ওর বান্ধবীরা চলে গেল। বিদেশীদের ভদ্রতাবোধ এদিক থেকে অনেক বেশী। বুঝতে পেরেছিল, এই দু’জনকে নিভৃতে থাকতে দেয়া প্রয়োজন। এরপর আমরা দু’জন হাত ধরাধরি করে ঐ আলো-আধারী বেলকুনীতে বসে, হাজার প্রদীপ জ্বলা দূরের তিবিলিসি শহরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করেছি। কথায় কথায়, রোমাঞ্চ আবেগে কখন যে মাঝরাত পার হয়ে গিয়েছে টেরই পাইনি।

এর পর থেকে আমাদের ঘনিষ্টতা বাড়তেই থাকে। আমরা দু’জন দুই বিষয়ে উপর পড়ালেখা করতে এসেছিলাম। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং আর ও বায়োকেমিষ্ট্রি। তাই ফ্যাকাল্টিতে আমাদের গ্র“প ছিল ভিন্ন ভিন্ন। এখানে আট-নয় জন নিয়ে একটা গ্র“প হয়। এক গ্র“পের একজন টিচার থাকেন। আমার টিচার ছিলেন মায়া তুখারিলি। তুখোর শিক্ষিকা হিসাবে তার নামডাক ছিল। সকাল নয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত আমাদের ক্লাস ছিল। মাঝে মাঝে ব্রেক হতো, ব্রেক টাইমে রেইনা আমার কাছে আসতো, আমরা এক সাথে কফি খেতে যেতাম। একদিন ম্যাডাম মায়া আমাকে বললেন, “বিদেশীনি বান্ধবী তোমার।” আমি লাজুক হাসলাম। মায়া ম্যাডাম বললেন “ক্লাসের আলাপ-আলোচনায় যা বুঝতি পারি, তোমার মধ্যে জাতীয়তাবাদী ফিলিং খুব বেশী। তাছাড়া তুমি তোমার সংস্কৃতির প্রতি অতিমাত্রায় আসক্ত। আমি বললাম “জ¦ী আপনার মূল্যায়ন সঠিক। তিনি বললেন, “সেই তোমারই বিদেশীনি বান্ধবী, এটা কন্ট্রডিকশন নয় কি ?” আমি কি উত্তর দেব বুঝতে পারছিলাম না। আসলে আমার মনেও প্রশ্নটি বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল। ম্যাডামই প্রশ্নটির উত্তর দিয়ে দিলেন, “হৃদয়ের উচ্ছাস কোন বাধাই মানে না ”।

আমার সাথে মেলামেশা করতে করতে আমাদের সাথের অন্যান্য বাংলাদেশীদের সাথেও ওর সখ্যতা গড়ে উঠল। ও আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যোগ দিত। রমজানের সময় একবার ইফতার পার্টির আয়োজন করলাম। ওকে বললাম, মাথায় কাপড় দিয়ে আসতে হবে কিন্তু। ও প্রথমে বলল, “উহু ! পারব না।” ইফতারের সময় দেখলাম ঠিকই মাথায় স্কার্ফ বেধে এসেছে। সাউথ আমেরকিানরা ইউরোপীয়ানদের মতই পোশাক-আশাক পড়ে। প্যান্ট-শাট, স্কার্ট-টপস ইত্যাদি। ওদের স্থানীয় কিছু পোশাক-আশাক আছে, তবে সেগুলো ওরা পড়ে বিশেষ উৎসবের দিনগুলোতে। প্যান্ট-শার্ট আর মাথায় স্কার্ফ পরিহিত রেইনাকে চমৎকার লাগছিল। আমি ওকে প্রশ্ন করলাম, “তোমার কি স্কার্ফ মাথায় অ¯¡স্তি লাগছে ?” ও বলল, “মোটেও না, আমরা তো এই পোশাকেই চার্চে যাই।” এরপর ও আমাকে আস্তে আস্তে বলল, “তোমাদের মেয়েরা যে শাড়ী পড়ে, ঐ পোশাকটি কিন্তু চমৎকার ! আমার খুব ইচ্ছা হয় শাড়ী পড়তে।”

ইতিমধ্যে মাস ছয়েক পেরিয়ে গেছে। রুশ ভাষা অনেকখানি রপ্ত করে এনেছি। এখন আমাদের কমন ল্যাংগুয়েজ রুশ। খুব ঠেকে গেলে ইংরেজী বলতাম। ও বলত, “ইংরেজী বলিতেছ আমিতো উহাও খুব ভালো পারিনা ।” আমি বলতাম, “তাও যা বল যথেষ্ট ভালো। আমাদের বাংলাদেশীদের অনেকে কিন্তু তোমার চাইতে অনেক খারাপ ইংরেজী বলে”। রেইনা হাসল, কিছু বলল না। বিদেশীরা ভদ্র হয়, সহজে মানুষের মনে কষ্ট দিতে চায়না। আমরা বাংলাদেশীরা মনে করি যে, আমরা খুব ভালো ইংরেজী জানি। বিষয়টি মোটেও সে রকম না, মোটামুটি ভালো ইংরেজী বলতে পারে এমন লোক হাতে গোনা। বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ গুলোত উচু মানের ইংরেজী তো দূরের কথা, স্পোকেন ইংলিশ শেখানোর মতও ভালো শিক্ষক নেই। সেরকম কোন রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপও নেই। ছাত্রদের দোষ দেয়া যাবে না, তাদের যা শেখানো হয়, তারা তাই শেখে। রাশিয়াতে একটা কথা প্রচলিত আছে, খারাপ ছাত্র হয় না, খারাপ শিক্ষক হয়। ষ্প্যনিশ ও ইংরেজী ভাষা কাছাকাছি। আসলে ®প্যনিসের রুট হলো ল্যাটিন ভাষা, আবার ইংরেজীর রুট জার্মান ভাষা হলেও সেখানে পঞ্চাশ পারসেন্ট ল্যাটিন শব্দ আছে। তাই ইংরেজী রেইনা দ্রুত ধরতে পারত। সমস্যা হতো কেবল ইংরেজী বানান নিয়ে। ষ্প্যানিশ ভাষায় যেমন উচ্চারণ, লেখ্য রূপটাও ঠিক তেমনি। রুশ ভাষাতেও তাই। কিন্তু ইংরেজীতে বলি এক, আর লিখি আরেক। বাংলা ভাষায়ও ঐ একই জাতীয় বানান সমস্যা। ছেলে-বেলায় তো ভীষন সমস্যা হতো। চেষ্টা করতাম লজিকাল চিন্তা করতে, কিন্তু বাংলা বানানে কোন লজিক নেই। তিনটি শ এর উচ্চারণ একই রকম, ‘শ’ এর মত, অথচ লেখা হয় নানা ভাবে। দন্ত ‘স’ এর উচ্চারন ল্যাটিন ‘ঝ’ এর মত হওয়া ঊচিৎ, অথচ তার উচ্চারণ কখনো ‘ঝ’ কখন ‘শ’। আমাকে একবার একজন বললেন, যে ‘স’ এর উচ্চারন সবসময়ই ‘শ’ এর মত হওয়া উচিৎ, আমরা ‘সালাম’ (ঝধষধস) বলি, এটা ভুল, বলা উচিৎ ‘শালাম’। আমি বললাম, ’আপনার সাথে একমত হতে পারছি না। মানুষের নাম সালাহউদ্দিন (ঝধষধযঁফফরহ) হবে, না শালাউদ্দিন হবে ? একথা শুনে উনি চুপ করে গেলেন।

ল্যাংগুয়েজ কোর্সের ছয়মাস পেরিয়ে গেল। প্রথম সেমিষ্টার শেষ হলো। আমার ও রেইনার দু’জনের ফলাফলই চমৎকার হয়েছিল। এদেশের গ্রেডিং সিষ্টেমে তিনটি গ্রেড আছে ‘সেটিসফেকটরি’, ‘গুড’ , ‘এক্সিলেন্ট’ । আমরা দু’জনেই এক্সিলেন্ট গ্রেড পেয়েছিলাম। বাংলাদেশে পারসেন্ট পদ্ধতিতে পড়ালেখা করে অভ্যস্ত ছিলাম। তাই প্রথম প্রথম গ্রেডিং সিষ্টেম মেনে নিতে পারতাম না। পরে বুঝতে পেরেছিলাম সিষ্টেমটি কত চমৎকার । যাহোক আমাদের ভালো ফলাফল দেখে, বন্ধু-বান্ধব ধরল পার্টি দিতে হবে। ঠিক আছে, এক সন্ধ্যায় একটি বড় কেক আর কিছু স্ন্যাকসের আয়োজন করলাম। সবাই জড়ো হলো। এবার কেক কাটার পালা। কেক কে কাটবে ? আমি বললাম, রেইনা কাটুক, নারীর অগ্রাধিকার। রেইনা আমাকে বলল, “তুমিই কাটো না।” এবার সবাই মিটিমিটি হেসে বলল, দু’জন একসাথে কাটো। শেষ পর্যন্ত তাই হলো লাজুক হেসে একটি ছুরিতে দু’জনে হাত রেখে একসাথে কেক কাটলাম খুব হৈ চৈ আর আনন্দ হয়েছিল ঐ সন্ধ্যায়।

রাতের দিকে হোষ্টেলের সামনের ব্যালকুনিতে রেইনাকে দেখলাম খুব মনমরা হয়ে বসে আছে। আমি তখনও বেশ উৎফুল্ল। ওকে বললাম। কি ব্যাপার হঠাৎ এত বিমর্ষ কেন? ও খুব ভার গলায় বলল, “তুমি কি বুঝতে পারছ পরিস্থিতি কত জটিল হয়ে গিয়েছে ?”
ঃ কি রকম ?
ঃ আমাদের ল্যাংগুয়েজ কোর্স শেষ হতে আর মাত্র এক সেমিষ্টার বাকী।
ঃ তা তো জানিই।
ঃ তুমি বুঝতে পারছ না।
ঃ কি ?
ঃ আর এক সেমিষ্টার পর আমরা দু’জন দু’জায়গায় চলে যাব।
বিদ্যুৎ খেলে গেল আমার শরীর দিয়ে। সত্যিই তো ! এতদিন তো একথা ভাবিনি। এটা তো ল্যাংগুয়েজ কোর্স। এখানকার নিয়ম অনুযায়ী, ল্যাংগুয়েজ কোর্সের পর যার যার সাবজেক্ট অনুযায়ী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আমাদের দু’জনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটবে যেহেতু আমাদের দু’জনের সাবজেক্ট ভিন্ন ভিন্ন, তাই আমাদের দু’জনকে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যেতে হবে। এই বিশাল দ
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×