দিল্লী দূর অস্ত
সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজী দিল্লীর একপ্রান্তে একটি মসজিদ তৈরী করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর দীর্ঘকাল পরে একদা এক আউলিয়া এলেন সেই মসজিদে। ফকির নিজামউদ্দিন আউলিয়া। স্হানটি তাঁর পছন্দ হলো। সেখানেই রয়ে গেলেন এই মহাপুরুষ। ক্রমে প্রচারিত হলো তাঁর পূণ্যখ্যাতি; অনুরাগী ভক্তসংখ্যা বেড়ে উঠল দ্রুত বেগে।
স্হানীয় গ্রামের জলাভাবের প্রতি দৃষ্টি আকৃস্ট হলো। মনস্হ করলেন খনন করবেন একটি দীঘি। যেখানে তৃষ্ণার্ত পাবে জল, গ্রামের বধুরা ভরবে ঘট, নামাজের পূর্বে অযু করে পবিত্র হয়ে মসজিদে প্রবেশ করবে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। কিন্তু সংকল্পে বাধা পড়ল অপ্রত্যাশিতভাবে। উদ্দীপ্ত হলো রাজরোষ। প্রবল পরাক্রান্ত সুলতান গিয়াসউদ্দিন তোগলকের বিরক্তিভাজন হলেন এক সামান্য ফকির, নিজামউদ্দিন আউলিয়া।
গিয়াসউদ্দিন তোগলকের দৃঢ়তা ছিল, শক্তি ছিল, রাজ্যশাসনের দক্ষতা ছিল। কিন্তু সে অনুপাতে তার নিস্ঠুরতাও ছিল ভয়াবহ। এই দক্ষ ও নিস্ঠুর সুলতানের প্রয়োজন পরল নতুন নগরী নির্মাণের। বহি:শত্রুদের আক্রমণ ঠেকাতে প্রাচীরবেস্টিত এক নতুন রাজধানী।
ফকির সুলতানে সংঘর্ষ ঘটল এই নগরী নির্মাণকে কেন্দ্র করে।
নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দীঘি কাটাতে মজুর চাই প্রচুর। গিয়াসউদ্দিনের নগর তৈরী করতেও মজুর আবশ্যক সহস্র সহস্র। অথচ দিল্লীতে মজুরের সংখ্যা অত্যন্ত পরিমিত, দু'জায়গায় প্রয়োজন মিটানো অসম্ভব। সুলতান চাইলেন নজুরেরা তার কাজ আগে শেষ করবে, ততক্ষণ অপেক্ষা করুক ফকিরের খয়রাতি খনন। কিন্তু রাজার জোর অর্থের সেটার পরিমাপ করা যায়। ফকিরের জোর হৃদয়ের, তার সীমা নেই। মজুরেরা বিনা মজুরিতে দলে দলে কাটতে থাকলো ফকিরের দীঘি। সুলতান হুংকার ছেড়ে বললেন, তবে রে -।
কিন্তু তার ধ্বনি আকাশে মিলাবার আগেই এত্তালা এলো আশু কর্তব্যের। বাংলাদেশে বিদ্রোহ দমন করতে সুলতানকে ছুটতে হলো সৈন্য সামন্ত নিয়ে।
শাহজাদা মোহম্মদ তোগলক রইলেন রাজধানীতে রাজ-প্রতিভূরূপে। শাহজাদা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার অনুরাগীদের অন্যতম। তাঁর আনুকূল্যে দিবারাত্রি খননের ফলে পরহিতব্রতী আউলিয়ার জলাশয় জলে পূর্ণ হলো অনতিবিলম্বে। গিয়াসউদ্দিন তোগলকের নগরী তোগলকাবাদ রইলো অসমাপ্ত।
অবশেষে নিস্ঠুর সুলতানের ফেরার সময় হলো নিকটবর্তী। প্রমাদ গণনা করলেন আউলিয়ার ভক্তরা। তারা ফকিরকে দীল্লি ত্যাগ করে পলায়নের পরামর্শ দিল। ফকির মৃদু হাস্যে তাদের নিরস্ত করলেন, - দিল্লী দূর অস্ত। দিল্লী অনেক দূর ।
(চলবে)
(যাযাবরের দৃষ্টিপাত থেকে নেয়া)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




