somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসাধারণ অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি ও আমার টুকরো কিছু স্মৃতি

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অসাধারণ অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি ও আমার টুকরো কিছু স্মৃতি

------------------------------------------------- ড, রমিত আজাদ

একদিন স্কুল থেকে বাড়ী ফিরছিলাম রিক্‌সায় চড়ে, আমি এবং আমার সাথে ছিল স্কুলেরই আরেক বন্ধু। ঘটনাটি ১৯৮০ সালের। তখন ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম বলে কিছু ছিল না। গাড়ী ছিল খুব কম। মন্থর গতিতে রিকসা চলত নির্বিঘ্নে। হঠাৎ করে পাশের রিক্‌সায় কাকে যেন দেখলাম। ভালো করে তাকিয়ে দেখি তিনি আর কেউ নন, জনপ্রিয় অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি। বিস্ময় আর আনন্দ একই সাথে ঘিরে ধরল আমাকে। দশ বছরের শিশু আমি, আচরন বিধি জানিনা, হা করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। আমার অনুভূতি তিনি বুঝতে পারলেন, মৃদু হেসে সাড়া দিলেন এই পর্দা কাঁপানো অভিনেতা । তার হাসি দেখে আমি পুলকিত হয়ে উঠলাম। রিকসার চলাচলে কখনো তার রিকসা আগে, আবার কখনো আমাদের রিকসা আগে এভাবে চলছিল। মৃদু হাসির পর এবার তিনি ভেংচি কাটতে লাগলেন আমাকে। ঐ বয়সে ভেংচি দেখে রাগ করার কথা, কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম আমাকে আনন্দ দেয়ার জন্য এমন করছেন তিনি। আনন্দে মন ভরে উঠল। দুটো রিক্‌সা পাশাপাশি চলে আসলে এবার তিনি কথা বলতে শুরু করলেন, তোমার নাম কি? কোন স্কুলে পড়? ইত্যাদি। পুরো পথ আমার শিশু মনকে তিনি আনন্দে ভরে রাখলেন। বেশ কিছুক্ষণ দুটো রিকসা পাশাপাশি চলার পর, একসময় আমাদের রিকসা বামে আর উনার রিকসা সোজা চলে গেল। ধীরে ধীরে উনাকে নিয়ে রিকসা দূরে চলে গেলেও মনের গভীরে উনি দাগ কেটে গেলেন।

এরপরেও উনাকে আরো অনেকবার দেখেছি। আমার ফুপা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। সেই সুবাদে মাঝে মাঝে সেখানে বেড়াতে যেতাম। টিচার্স কোয়ার্টার থেকে হলের দিকে এগুলে এক জায়গায় দুদিকেই লেক পরে। এক ছুটির দিনে ঐ দিকে গেলাম। পথে ছাত্র-ছাত্রী প্রায় ছিলনা। হঠাৎ পাশের লেকে দুজন তরুণকে দেখলাম। লেকে ঝাপ দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন আর কেউ নয়, অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি। দাঁড়িয়ে পড়লাম অভিনেতাকে দেখার জন্য। ঝাপ দিয়ে লেকে পড়লেন আর হুটোপুটি শুরু করেলেন। আবার পারে উঠেন আবার ঝাপিয়ে পড়েন। তারুণ্যের সেকি উন্মাদনা। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখলাম।

এই বরেণ্য অভিনেতাকে পরেও আরো অনেকবার দেখেছি, কখনো বিটিভির ভবনে, কখনো মহিলা সমিতির মন্চে অথবা বাইরে। বেশিরভাগ সময়েই উনার চারদিকে উৎসুক্যদের ভীড় দেখেছি। একবার জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের একটি বই দেখলাম উৎসর্গ করা হয়েছে হুমায়ূন ফরীদি-কে। চমৎকার লিখেছেন লেখক, "মহিলা সমিতির সামনে দেখলাম ছোটখাট একটি জটলা, এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, এক যুবক চা খাচ্ছে, আর একদল যুবক তাকে ঘিরে ধরে তার চা খাওয়া দেখছে, যুবকটি হুমায়ূন ফরীদি। আমার এই বইটি সেই যুবককে উৎসর্গ করলাম।"

হুমায়ুন ফরিদি স্মরণে বিটিভি ও অন্যান্য চ্যানেলে এবং এই ব্লগেও দেখেছি বেশিরভাগই সংশপ্তক নাটক থেকে তার প্রশংশা শুরু করেছেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তার অভিনিত বিটিভির প্রথম নাটকটি দেখার। নাটকটির নাম এখন আর মনে নেই। সামান্য কয়েকটি দৃশ্য, অল্প কয়েকটি ডায়লগ, একজন বেকার যুবকের ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। এত চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছিলেন সেই চরিত্র, যে প্রজোযকরা সাথে সাথেই তাকে লুফে নেয়। এর পর থেকেই চলে হুমায়ূন ফরীদি জয়যাত্রা। টিভি সিরিয়াল 'ভাঙ্গনের শব্দ শুনি'-তে তার অপূর্ব অভিনয় সবার মনে চিরস্থায়ী দাগ কেটেছে। "আরে আমি তো জমি কিনিনা, পানি কিনি, পানি" - এটা ছিল সে সময়ের জনপ্রিয় ডায়লগ। ডাবল পার্ট করতে দেখেছিলাম একটি নাটকে, একজন ভালো মানুষ, আর একজন খারাপ মানুষ। দুটি চরিত্রই এত সুন্দর ফোটালেন, দর্শকরা বিস্মিত। বিদেশের মাটিতে বসে দেখছিলাম, 'কোথাও কেউ নেই', কি দুর্দান্ত অভিনয় ফরীদি ভাইয়ের!


সুবর্ণা আপা আমাদের ঠিক উপর তলায় থাকতেন। সে সময় তিনি কলেজের ছাত্রী। একদিন আপা বললেন, "নতুন একজন অভিনেতা এসেছে ফরিদি নামে, বেশ সুন্দর অভিনয় করে!" ঐ আপাই যে একদিন ফরিদি ভাইয়ের কাছে বাঁধা পড়ে যাবেন, তা সেদিন বুঝতে পারিনি।


বেলী ফুলের মালার বিয়ে, দুয়েকটি পত্রিকা প্রচ্ছদ কাহিনী করেছিল। এদেশের মানুষ কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনা। হুমায়ুন ফরিদি ও তার প্রথম স্ত্রী কথা রেখেছিলেন, বেলী ফুলের মালার দিয়েই বিয়ে করেছিলেন। অনুপ্রানিত হয়েছিলাম এই বিয়ে দেখে। এই দীর্ঘ জীবনে চলার পথে অনেক ঘটনাই ঘটে। সেই বিয়েটি টিকল না। এদেশেরই পত্র-পত্রিকা আবারো প্রচ্ছদ কাহিনী করেছিল, 'ভেঙ্গে গেল বেলী ফুলের মালার সেই বিয়ে'। সমালোচনার ঝড় উঠেছিল দেশ জুড়ে। কে ভালো কে মন্দ, কেন টিকল না এই বিয়ে, ইত্যাদি। আসলে মানুষের মন, মানুষেরই মন, এই মন বড় বিচিত্র। দুটি মন বাঁধা পড়ে, আবার দুটি মনের বিচ্ছেদও হয়। সেটা একান্তই তাদের ব্যপার। সেখানে তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশ করা ঠিক নয়।

এইচ এস সি পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে চলে যাই। দীর্ঘ সতের বছর বিদেশে ছিলাম। এই সময়ের মধ্যে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গন বিকশিত হয়েছে, নতুন শিল্পি অভিনেতাদের উথ্যান হয়েছে, তাদের খোঁজ পেয়েছি কম। বিদেশের মাটিতে, আমাদের জেনারেশনে হুমায়ুন ফরিদি-কে নিয়েই আলোচনা ছিল সবচাইতে বেশী। বিদেশ থেকে ফিরে দেখলাম, জনপ্রিয় অভিনেতার জনপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি। সেই বরেণ্য অভিনেতা আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। তার মৃত্যু সংবাদে ব্যথিত হয়েছি ভীষণ। আর যে কটা দিন বেঁচে থাকব তার অভাব বোধ করব।









সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৩৪
১৫টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×