somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষকের লাশ

১৭ ই মে, ২০১২ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শিক্ষকের লাশ
----- ড: রমিত আজাদ


নিকষ কালো অন্ধকারে সংবাদ ভেসে এলো,
মৃত্তিকা আর মহাকালের অংশ হয়ে গিয়েছেন একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক।
সেই দুটো পুরনো পান্জাবী অদল-বদল করে পড়ে,
যিনি প্রতিদিন স্কুলে আসতেন,
মধুর স্নেহে, পরম মমতায় যিনি
কচি-কচি মুখগুলোকে শেখাতেন অ আ ক খ,
'মোদের গর্ব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা',
পড়াতে পড়াতে যার চোখে ভেসে উঠত মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি,
খালি পায়ে, পুরনো লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেন্জী গায়ে দিয়ে,
কি দোর্দন্ড প্রতাপে হাতের অস্ত্রটি চালিয়ে ঘায়েল করতেন
ভারী বুট আর জ্বলজ্বলে ইউনিফর্ম পরিহিত সুপ্রশিক্ষিত শত্রুসেনাকে।
এক একটি সফল অপারেশনের পর কেমন উল্লাসে চিৎকার করে বলতেন,
"আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি"।

'দেশ মানে জনতা, দেশ মানে মানুষ, ঐ ছোট্ট শিশুগুলো,
ওদের যখন শিখিয়ে দেব, পড়িয়ে দেব,
তখনই তো গড়ে উঠবে সুশিক্ষিত জাতি!'
এমনই তো ভাবনা ছিল তার,
তাই নিজের হাতে স্বাধীন করা দেশে তিনি শিক্ষক হলেন।
শিশুরা গর্বিত হলো বীরের সান্নিধ্য পেয়ে,
বীরের শিষ্য, বীরই তো হবে।
সেই বীরেরা আজ কোথায় আছে জানিনা,
কখনো কখনো মনে হয়,
আমরা সবাই হয়ে উঠেছি এক একটি ফ্রাংকেনস্টাইন।


রাত্রির দীর্ঘ সাধনা শেষে এখনো আসেনি ভোর,
আর আমাদের দানবীয় নিষ্পেষণে তিনি হারিয়ে গেলেন,
যেমন করে প্রতিদিন হারিয়ে যায় নাম-কূলহীন কীট-পতঙ্গেরা।
আমাদের লজ্জ্বা নেই, বোধ নেই, বিবেক নেই,
তাই আমাদের শিক্ষকদের
অর্থ নেই, সম্মান নেই, জীবনের কোন মূল্য নেই,
নেই নেই নেই, এই এতো নেই এর ভীড়ে, তিনিও আর নেই,
বিলুপ্ত বিবেক স্থান দিল না তাকে বিপন্ন সমাজের মাঝে,
কেবল যেই মাটিকে পবিত্র মনে করে
তিনি একদিন তাকে রক্ষা করেছিলেন,
সেই মাটি আজ পরম যত্নে তাকে ঠাঁই দিয়েছে আপন বুকে।



(আজিজুর রহমান।প্রধান শিক্ষক, চর বাটিয়ানি রেজিস্টার্ড
বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামালপুর।১৫ই মে, ২০১২ তারিখে শিক্ষকদের বেঁচে থাকার অধিকার
নিয়ে দাবি জানাতে গেলে শাহবাগে পুলিশী হামলায় আহত হন।প্রথমে ঢাকা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে রাতে বাড়ি নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
১৯৭১ সালে এই দেশ স্বাধীন করতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন! স্যার ক্ষমা করবেন।
আমরা মানুষ হতে পারিনি।)






সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১২ সকাল ৮:৫৭
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×