somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষন্ন বিরিওজা - ৪

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিষন্ন বিরিওজা - ৪
---------------------------- ডঃ রমিত আজাদ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)

জানালা গলে আলো এসে চোখে পড়ল, নতুন রূমের প্রথম ভোরের আলো। ভোরের কচি রোদ এসে পড়েছে জানালার টবে রাখা রঙিন অর্কিডগুলোর গায়ে। অর্কিডগুলোর কোন কোনটায় রাতের ঝরে পড়া দুএকটা শিশিরবিন্দু এখনো লেগে আছে। সুর্যের সোনালী আলো প্রতিফলিত হয়ে রংধনুর সাত রং ঠিকরে দিচ্ছে ঐ শিশিরবিন্দুগুলো। খোলা জানালা দিয়ে বয়ে আসছে ঝিরঝিরে দক্ষিণা হাওয়া। দূরের আকাশে কিছুক্ষণ আগে উঠেছে গনগনে লাল সূর্যটা। গতরাতটা মোটেও আতঙ্কে কাটেনি, বরং ঘুম হয়েছে বেশ নির্বিঘ্ন। ফুরফুরে মন নিয়ে উঠেছি বলেই বোধহয় সূর্যটাকে এত সুন্দর মনে হলো।

এখানেও জানালার একপাশে কিছু গাছের পাতা চোখে পড়লো। ইন ফ্যাক্ট, পাতাগুলো জানালার উপর হুমরি খেয়ে পড়েছে, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। কাছে এগিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম কি গাছ। যা ভেবেছিলাম তাই, একটি বড়সড় বিরিওজা গাছ। এই বিরিওজা গাছ কি আমার পিছু ছাড়বে না? মনে মনে অবশ্য খুশিই হয়েছি। জানালার বাইরে আকাশ অথবা গাছ না থাকলে মন ভালো লাগেনা। এই রুমটির জানালার বাইরে দুটাই আছে।

রূমটার নাম্বার ৮৮ । শুধু নাম্বার দিয়ে চলবে? শুধু নাম্বারে কেমন কাটখোট্টা মনে হয়। রূমটার একটা নাম থাকা দরকার। তাহলে বেশ কাব্যিক হবে। আমাদের কলেজের মাজহারুল হক স্যার এটা শিখিয়েছিলেন, কলেজের যে হোস্টেলের তিনি হাউস মাস্টার ছিলেন, তার প্রত্যেকটা রূমের একটা নাম দিয়েছিলেন। খুব সুন্দর সুন্দর নামে উনার হাউসটা একেবারে কাব্যিক হয়ে উঠেছিলো। আমারও সখ জাগলো এই রূমটির একটা নাম দেয়ার। কি নাম দেয়া যায়? বাস্তবতার সাথে মিল রেখে নামটা দেব? ঢাকায় একটা জায়গার নাম ভুতের গলি। শুনেছিলাম, কোন এক কালে নাকি সেখানে ভুতের উপদ্রব ছিল। আমার আগের রূমটার নাম 'ভুতের রূম' দিলে মোক্ষম হবে। এই রূমটার নাম 'অভুতের রূম' দিব? হাঃ, হাঃ, হাস্যকর মনে হবে। বাইরে বিরিওজা গাছ আছে, এর সাথে মিলিয়ে নাম দিয়ে ফেলি, 'জানালার বাইরে বিরিওজা', না বেশ বড় নাম হয়ে যায়। আরেকটু ছোট করা দরকার। এই কয়দিনের ভয়-ভীতি উৎকন্ঠার পর, এখন মনটা বেশ উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। তাহলে নাম দিয়ে ফেলি - 'উৎফুল্ল বিরিওজা'। খারাপ না আপাততঃ এই নামে চলবে, প্রয়োজন হলে পরে নাম পাল্টে ফেলা যাবে, এতো আর মানুষের নাম না যে পাল্টানো যাবেনা।

টুক টুক টুক। দরজায় নক করার শব্দ পেলাম। কে হতে পারে? এত সকালে! পরিচিত কেউই হওয়ার কথা। বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুললাম। হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাশা কাসতুচেনকা।

সাশাঃ কি, কেমন ঘুম হলো?
আমিঃ সাউন্ড স্লীপ।
সাশাঃ খারাশো! এতা রাদুয়েত (ভালো, এটা আনন্দের ব্যাপার)।
আমিঃ আসো ভেতরে আসো।
সাশা ভিতরে ঢুকে একটা চেয়ারে বসলো। আমি ডিভানটা গুছানো শুরু করলাম।

আমিঃ ব্রেকফাস্ট করেছ?
সাশাঃ করেছি।
আমিঃ না করলে আমার সাথে কর।
সাশাঃ না না, আমি ব্রেকফাস্ট করেছি।
আমিঃ তাহলে আমার সাথে চা খাও।
সাশাঃ তা খাওয়া যেতে পারে। চা খাওয়ায় আমার কখনো অরুচী হয়না।
আমিঃ হু, হু, তোমাদের রাশানদের বেশীরভাগই বলে, 'ভদকা খাওয়ায় আমার কখনো অরুচী হয়না'।
সাশাঃ হ্যাঁ, তা ঠিক। তবে আমি যেহেতু এ্যলকোহল খাইনা। সুতরাং ঐ কথা বলার সুযোগ নাই।
আমিঃ এ্যলকোহল শব্দটা কিন্তু আরবী।
সাশাঃ তাই নাকি?
আমিঃ হ্যাঁ। কোহল শব্দের সাথে আল আর্টিকেলটি ব্যবহৃত হয়েছে। পরবর্তিতে শব্দটি বিভিন্ন ভাষায় ঢুকে গিয়েছে। ইংরেজী ও তোমাদের ভাষায় যেমন।
সাশাঃ ইন্টারেস্টিং, জানতাম না।
আমিঃ তুমি কিন্ত বেশ একসেপ্‌শন।
সাশাঃ এ্যলকোহল পান করিনা বলে?
আমিঃ সেরকমই। তোমাদের মধ্যে তো এরকম নেই। কম পান করে এমন অনেককেই জানি। কিন্তু একেবারেই পান করেনা, এরকম তোমাকেই প্রথম দেখলাম।
সাশাঃ আমার বাবাও এ্যলকোহল পান করেন না।
আমিঃ বাহ্‌। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান।
সাশাঃ অবশ্য আমার ছোটভাইটি পান-টান করে।
আমিঃ তোমার ছোটভাই আছে নাকি?
সাশাঃ আছে তো।
আমিঃ কোথায় থাকে?
সাশাঃ গ্রামেই। ওখানে কাজ করে।
আমিঃ পড়েনা?
সাশাঃ না। স্কুল শেষ করেছে। তারপর আর পড়েনি। চাকরীতে ঢুকে গেল।
আমিঃ হায়ার এডুকেশন নিলে ভালো হতোনা?
সাশাঃ আমি মনে করি ভালো হতো। ওতো মনে করেনা। চাকরীতে ঢুকে গেল। একটা মেয়ের সাথে প্রেম হয়েছে। বিয়ে করবে সামনের সামারে।
আমিঃ হায়ার এডুকেশন ছাড়া কি চাকরীতে ভালো বেতন হয়?
সাশাঃ তেমন পার্থক্য নেই। তুমিতো জানো, মাত্র সমাজতন্ত্রের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি আমরা। সমাজতান্ত্রিক সমাজে শিক্ষিত আর অল্পশিক্ষিতদের মধ্যে বেতনের পার্থক্য কম। তাই কেবল মাত্র অর্থনৈতিক কারণে হায়ার এডুকেশনের দিকে ঝোঁক নাই কারো।
আমিঃ এতে তো সমাজের ক্ষতি হয়।
সাশাঃ তা তো হয়েছেই। তুমি কি ভাবো, এদেশের সবাই সমাজতন্ত্রকে সমর্থন করতো?
আমিঃ করতো না?
সাশাঃ অবশ্যই না। যেমন আমার দাদা করতেন না। কম্যুনিস্টদের দ্বারা নির্যাতিতও হয়েছিলেন আমার দাদা। আমরা পুরো পরিবার তাই সমাজতন্ত্র বিরোধী ছিলাম।
আমিঃ আশেপাশের লোকে জানতো?
সাশাঃ ওরেব্বাস! সে কথা ওপেনলি বলার কি আর জোঁ ছিল! টিকটিকির কোন অভাব ছিলনা তখন। জানলে পরে সোজা চৌদ্দ শিকের ভিতর নিয়ে ঢোকাতো কম্যুনিস্ট সরকার।
আমিঃ এখন তোমরা খুশী?
সাশাঃ অবশ্যই খুশী। এট লিস্ট, মন খুলে কথা বলতে পারছি। যাহোক বাদ দাও। দেখি তোমার রূমটার পজিশন কেমন।
সাশা এগিয়ে গেল জানালার দিকে। বাহ্‌! এখান থেকে ভিউটা তো চমৎকার! আমার রূমটাও এই সাইডে, কিন্ত দোতলা বলে কোন সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়না।
আমিঃ বসো, টেলিভিশন দেখো। আমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নেই। তারপর চা-নাশতা খাব।
সাশাঃ ওকে।
আমি অল্প সময়েই ফ্রেশ হয়ে নিলাম। দ্রুত ব্রেকফাস্ট আর চা রেডী করলাম। ব্রেকফাস্ট বলতে ডিমভাজী, ব্রেড, বাটার, স্মিতানা আর চা।
আমিঃ আয়োজন সামান্য। স্টুডেন্টস ব্রেকফাস্ট ।
সাশাঃ রিমন! আমি তোমার রুমে এই প্রথম? যা আছে ভালোই আছে। আমি কি এর চাইতে ভালো খাই? (একটু লাজুক হেসে বললো) তবে পরিমানে একটু বেশী খাই, আরকি।
আমিঃ তোমার এই বিশাল শরীরে (আমার তিনগুন হবে) বেশী খাবার তো লাগবেই।
সাশাঃ হা হা হা, তাঠিক।
আমিঃ তোমাদের ফুড প্রোডাক্টগুলো কিন্তু খুবই ভালো। আমাদের দেশে সব ভেজাল।
সাশাঃ কি বলো? ট্রপিকাল কান্ট্রিতে তো ফ্রেশ খাবার-দাবার থাকার কথা।
আমিঃ থাকার কথা, কিন্তু আমাদের গুনধর রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের কারণে, আমরা ভেজালের যুগে বসবাস করি।
সাশাঃ নট গুড।
আমিঃ এই যে বাটারটা দেখছ। এটার পুস্টিগুন অনেক বেশী, তাই এর রং গাঢ় হলুদ এমনকি অনেকটা কমলা রঙের। আমাদের দেশে বাটার ফ্যকাশে। তারপর এই স্মিতানা, এটা আমাদের দেশে নাইই।
সাশাঃ নাই মানে?
আমিঃ নাই মানে, নাই। আমি এই দেশে এসে প্রথম দেখলাম। আমাদের দেশে দই নামে কাছাকাছি একটা কিছু আছে, সেটা স্বাদ চমৎকার হলেও পুস্টিগুন তোমাদের স্মিতানার ধারে কাছেও না।
অনেকটা মর্মাহত ভঙ্গিতে চায়ে চুমুক দিলো সাশা।

টুক টুক টুক। আবারো দরজায় আবারো আওয়াজ। কামিং (বললাম আমি) দরজা খুলে ঢুকলো প্যালেস্টাইনের খালেদ ।

আমিঃ ওহহো, ওয়েল কাম, ওয়েল কাম।
খালেদঃ কেমন লাগছে নতুন রূম? নাকি ভুত তোমার পিছু পিছু এখানেও চলে এসেছে?
সাশাঃ হাঃ হ্‌ হাঃ! রিমনের প্রেমে পড়লে ভুত এখানেও চলে আসবে।
আমিঃ আপাততঃ মনে হচ্ছে প্রেমে পড়েনি। রাতে সাউন্ড স্লীপ হয়েছে।
সাশাঃ প্রেমে পড়লেই ভালো হতো। ভুতের সাথে প্রেম তো আর সচরাচর হয়না। একটা কাহিনীই হতো বটে!
আমিঃ হাঃ হাঃ হাঃ! ভালো বলেছ। তোমার প্রেমের খবর কি? ছোট ভাই প্রেম করে বিয়ে-শাদি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর তোমার এখন পর্যন্ত কোন গার্ল ফ্রেন্ডই নেই।
খালেদঃ কি বলো! সাশা তোমার গার্ল ফ্রেন্ড নেই! রেয়ার, রেয়ার, রাশানদের মধ্যে ভেরি রেয়ার কেস।
সাশাঃ তোমারও তো নেই রিমন। তোমার সাথে আমার কিন্তু বেশ মিল আছে। আমি মদ্যপান করিনা, তুমিও করোনা, আমার গার্ল ফ্রেন্ড নেই, তোমারও গার্ল ফ্রেন্ড নেই।
খালেদঃ হ্যাঁ, দুজনেই সহজ-সরল, সাদা মনের মানুষ। আমি অবশ্য তোমাদের মত না। স্বাভাবিক মানুষ, মদ খাই, গার্ল ফ্রেন্ড আছে।
আমিঃ গার্ল ফ্রেন্ড আবার বানিয়েছ নাকি?
খালেদঃ (লজ্জ্বা পয়ে) না, মানে, গার্ল ফ্রেন্ড ছিল, সে এখন স্ত্রী হয়ে গিয়েছে।
সাশাঃ স্ত্রী-র অজান্তে গোপনে আবার গার্ল ফ্রেন্ড-ট্রেন্ড বানাও নাই তো?
খালেদঃ না ভাই! বিয়ের পর ঐ অভ্যাস পরিত্যগ করেছি। এখন একান্ত পত্নিনিষ্ঠ ভদ্রলোক।
আমিঃ বাহ্‌, বেশ। এটাই ভালো।
খালেদঃ ভাবলাম, বিয়ের আগে যা হয়েছে হয়েছে। বিয়ের পর ক্লীন থাকবো।
সাশাঃ চা খাওয়া শেষ। চলো বাইরে বের হই।
খালেদঃ কোথায়?
আমিঃ এই আশেপাশেই।
খালেদঃ সুন্দরীদের খোঁজে?
সাশাঃ না জাস্ট ঘোরাফেরা আরকি।
খালেদঃ আর কত একা একা ঘোরাফেরা করবে, এবার জালে দু একটা আটকাও।
আমিঃ সাশা জাল ফেলতে পারেনা। সবাই কি আর জেলে! (কপট হাসি হাসলাম)।
খালেদঃ হু, আমাকে কটাক্ষ করা হচ্ছে। তা একসময় জাল ফেলেছি অনেক। এখন স্টপ, একদম স্টপ। এবার তোমাদের পালা। জাল ফেলতে না পারলে প্র্যাকটিস করো। আস্তে আস্তে রপ্ত হয়ে যাবে।
সাশাঃ মাছ যদি ধরা না দেয়?
খালেদঃ তোমরা অভিজ্ঞতাহীন। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। মাছ কিন্তু ধরা পড়ার জন্যই সাঁতরে বেড়ায়।
হাঃ হাঃ হাঃ, সবাই কোরাসে হাসলাম। এরপর আমরা বাইরে বের হলাম। খালেদ আমাদের সাথে এলো না। আমরা দুজনে ঘুরতে বের হলাম।

খারকভ শহরটি অনেক বড়। ৩১০ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফলের শহরটিতে মোট জনসংখ্যা দেড় মিলিয়ন। শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৬৫৪ সালে। এক সময় এটি সোভিয়ত ইউক্রনের রাজধানী ছিল। এখানে মোট ৬০ টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ৩০ টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৬ টি যাদুঘর, ৭ টি থিয়েটার ও ৮০ টি লাইব্রেরী রয়েছে। এত বেশী সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাও এখানে অনেক, তাই একে তারুণ্যের শহরও বলা হয়। খারকভ শহরের আরেকটি খ্যাতি রয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম জেলখানা এখানে আছে।

সোভিয়েত শহরগুলোর রাস্তাগুলো অদ্ভুত সুন্দর। চওড়া রাস্তা তার দুপাশে গাছের চওড়া ফুটপাত। দুপাশের দুই ফুটপাতের পাশেই দুই সারিতে অর্থাৎ পুরো রাস্তায় মোট চার সারিতে গাছ। পথচারিরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। ফলে পথও অত্যন্ত নিরাপদ। শহরের যোগাযোগের ব্যবস্থা সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য শহরের মতই চমৎকার। মাটির উপরে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হিসাবে চলছে বাস, ট্রলিবাস (বিদ্যুৎ চালিত), ট্রাম, আর মাটির নীচে রয়েছে ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো (সাবওয়ে), যার স্টেশন সংখ্যা ২৯ টি। যোগাযোগের খরচও খুব কম। কম্যুনিস্ট আমলে মাত্র তিন রুবল দিয়েই একটা মান্থলি কার্ড পাওয়া যেত, তাই দিয়ে আপার ও আন্ডারগ্রাউন্ড সকল পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সারা মাস চলা যেত। এখন কিছুটা বেড়েছে তারপরেও খুবই কম। তাই আমরা মনের আনন্দে ঘুরতে পারি, যেখানে খুশী যেতে পারি।

আমি আর সাশা ঠিক করলাম আজকে মেট্রোতে চড়ে কয়েকটি স্টেশনে যাব, ঐ এলাকাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখবো। সারাদিন ঘোরাঘুরি করলাম। বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে নামলাম। আশেপাশে ঘুরলাম। লাঞ্চ টাইমে একটা ক্যাফেতে বসে মুরগীর গ্রীল খেলাম। ইদানিং ক্যাফেগুলো ভালো চলতে শুরু করেছে। মাঝখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের ঠিক পরপর করুণ অবস্থা হয়েছিলো। কোথাও কোন ক্যাফে বা ক্যন্টিন ঠিকমতো কাজ করছিলো না। যাহোক ঘোরাঘুরি বেশ হলো। সন্ধ্যার দিকে মেট্রোতে চড়ে ডরমিটরির দিকে রওয়ানা হলাম। যেতে যেতে আলাপ হচ্ছিলো
আমিঃ আজ বেশ ঘোরাঘুরি হলো।
সাশাঃ হ্যাঁ, আমিও বেশ এনজয় করেছি। সাইট সিয়িং ভালো লেগেছে।
আমিঃ তুমি তো এদেশেরই, তোমার জন্য তো নতুন কিছু না।
সাশাঃ না ঠিক তা না। আমি এদেশের হলেও খারকভের না। আমি গ্রামের ছেলে। তাই খারকভে যা দেখছি তা তো আমার কাছে নতুনই।
আমিঃ সব চাইতে বেশী কি এনজয় করেছো?
সাশাঃ বলবো?
আমিঃ বলো।
সাশাঃ মেয়েদেরকে দেখা।
আমিঃ হাঃ হাঃ।
সাশাঃ কেন তুমি এনজয় করো নাই?
আমিঃ কেন এনজয় করব না? আমি তো তোমার মতই পুরুষ মানুষ। তাছাড়া যা সুন্দরী তোমার দেশের মেয়েরা। তার উপরে স্মার্ট, পোষাক-আশাক ফ্যাশনেবল।
সাশাঃ তারও উপরে এখন, সামার। মেয়েরা বেশ শর্ট ড্রেসে চলাফেরা করে। বেশীরভাগই তো মিনি স্কার্ট পড়া।
আমিঃ হু।
সাশাঃ হু কি? লক্ষ্য করোনাই?
আমিঃ চোখ যেহেতু আছে লক্ষ্য তো করবোই।
সাশাঃ হাঃ হাঃ, চলো নেমে যাই, আমাদের স্টেশন চলে এসেছে।

ডরমিটরিতে ফিরতে ফিরতে অন্ধকার হয়ে এলো। রূমে ফিরে এসে দেখলাম আমার রূমের সামনে অপু আর কবীর ভাই দাঁড়িয়ে আছে।
এই অপু ছেলেটাকে আমি ভীষণ অপছন্দ করি। ছেলেটা খারকভে থাকে কিন্তু পড়ালেখা কিছু করেনা। ওর বড়ভাই কার্তিক সিভিল ইন্জিনিয়ারিং পড়ে। ছোট ভাইকে এখানে নিয়ে এসেছে। দেশে সম্ভবত বখে যাচ্ছিল, কোন গতি করার জন্য এখানে এনেছে। এখানেও পড়ালেখা ও করতে পারছে না, পারার কথাও না, বাংলাদেশেই পারলো না, আর এই উন্নত দেশের পড়ালেখা বোঝার যোগ্যতা ওর কোথায় ঘটে কিছু থাকতে হবে তো।ও টুকটাক কাজটাজ কিছু করে। জিজ্ঞেস করলে বলে, "বিজনেস করি"। কি বিজনেস যে করে কে জানে। কয়েক বছর যাবৎ খারকভে এই সমস্যা হচ্ছে। একসময় ভালো ছাত্র ছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নে স্কলারশীপ নিয়ে আসা সম্ভব ছিলনা। একেবারে ব্যতিক্রম কিছু যে ছিল না তা নয়। কম্যুনিস্ট পার্টি বা মিনিস্ট্রির মামা চাচার জোরেও দুএকজন এসেছিলো তারপরেও মিনিমাম একটা লেভেল ছিলো। এখন সেল্ফ ফাইনান্স বেসিসে পড়ালেখা চালু হওয়ায়, অনেক গরু-গাধাও প্রবেশ করছে। আবার কেউ কেউ দেশ থেকে শুধু এক বছরের টাকা নিয়ে এখানে আসে, আশা করে বাকী খরচ এখান থেকেই তুলতে পারে। যেটা আদতে সম্ভব হয়না। এবং ওদের শিক্ষা জীবনও ফার্স্ট ইয়ারেই শেষ হয়ে যায়।

কবীর ভাই বয়সে আমার বড়। কিন্তু পড়ালেখায় আমার জুনিয়র। দেশে থাকতে বাম রাজনীতি করতেন। রাজনীতিতে এতই বুদ হয়ে ছিলেন যে এইচ, এস, সি, পরীক্ষায় পেয়েছেন তৃতীয় বিভাগ। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল না। ইচ্ছাও ছিল বলে মনে হয়না। পড়ালেখা সব শিকেয় তুলে দিয়ে রাজনীতি করতেন। বাবার হোটেলে খেয়ে বনের মোষ তাড়াতেন। কোন এক নেতার দ্বারা সম্মোহিত হয়েছিলেন, যিনি তাদের বোঝাতে এইসব প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা কিছুনা। আসল পড়ালেখা হয় আমাদের লাইব্রেরীতে। কম্যুনিস্ট বিপ্লবের উপর পড়ালেখা হয় এখানে। তোমরা বিপ্লব করবে, সমাজ পরিবর্তন করবে, সেই বিষয়ে মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবে আমাদের লাইব্রেরীতে। চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে কবীর ভাই ও তার বন্ধুরা সেই পড়ালেখা করতেন। এদিকে তাদের পুরাতন ক্লাসমেটরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী কমপ্লিট করে, মাস্টার্স-এ ভর্তি হয়েছে। এসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলো। সারা বিশ্বের বামপন্থীরা হতবাক হয়ে দেখলো, কেমন তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল তাদের আদর্শের প্রিয় রাস্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন। কবীর ভাইয়ের মত কর্মীরা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন - তাহলে কি এতকাল তারা যা বিশ্বাস করে এসেছেন সব ভুল? তাদের নেতারা কি তাদের সব ভুল শিখিয়েছে? নাকি তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই দাবার গুটির মত তাদের ব্যব হার করেছে? হায়রে যে বিপ্লবের জন্য আমরা সব কিছু বিসর্জন দিলাম, সেই বিপ্লবও হলোনা, আর নিজের তো কিছু হলোইনা।

অপু ও কবীর ভাই আমাকে দেখে উল্লসিত হয়ে উঠলো।
কবীর ভাইঃ কেমন আছেন?
অপুঃ অনেকক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছি বস।
আমিঃ বাইরে গিয়েছিলাম। কেমন আছেন আপনারা?
কবীর ভাইঃ ভালো, আপনি কেমন আছেন?
অপুঃ আমি আছি কোনরকম। যে অবস্থা।
আমিঃ আসুন ভিতরে আসুন।

রূমের দরজা খুলে সবাই ভিতরে ঢুকলাম। উনারা ডিভানে বসলেন। আমি ইলেকট্রিক কেট্‌লে পানি চাপালাম, চা বানানোর জন্য।
স্রেফ আড্ডা দিতে উনারা এসেছেন, শুরু হলো নানা কথাবার্তা। আমরা বাংলাদেশীরা এক জায়গায় হলে রাজনীতির আলাপ না করে পারিনা।

কবীর ভাইঃ কি অবস্থা বলেন তো? এদেশের রাজনৈতিক অবস্থা কিরকম?
অপুঃ দুরো রাজনৈতিক অবস্থা! আপনি আছেন রাজনীতি নিয়ে। এদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ।
আমিঃ রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দুটা অবস্থাই খারাপ।
কবীর ভাইঃ কম্যুনিস্টারা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পরিস্থিতি কেবল খারাপের দিকেই যাচ্ছে, তাইনা?
অপুঃ শুনেন কম্যুনিস্ট-ফমুনিস্ট না, অবস্থা এম্নিই খারাপ।
কবীর ভাই বিরক্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। আসলে অপু নির্জ্ঞান একটা ছেলে। লিটারারী আলাপে ওর অংশগ্রহন বেমানান। কিন্তু ও ওর লিমিটেশন বোঝেনা। বুদ্ধিমান মানুষ সেই যে নিজের লিমিটেশন বোঝে। অপু বোকা তাই নিজের লিমিটেশন বোঝনা, উপরন্তু বুদ্ধিমান সাজার চেষ্টা করে।

আমিঃ আপনি কম্যুনিস্ট মানুষ, কম্যুনিস্টদের প্রতি আপনার সফ্‌ট কর্ণার থাকারই কথা। আসলে বিষয়টা বোধহয় সেখানে না।
কবীর ভাইঃ তাহলে কোথায়?
আমিঃ এদেশে এখনঝাই করাপশন। লুটতরাজ বেশী হচ্ছে।
কবীর ভাইঃ কে করছে লুটতরাজ? কি করে করছে?
আমিঃ ক্ষমতাসীনরাই লুটতরাজ করছে। তাদেরই সুযোগটা বেশী থাকে।
কবীর ভাইঃ কিভাবে করছে?
আমিঃ নানা পথে করছে। ক্ষমতাসীনরা বুদ্ধিমান হয়, পথঘাট তাদের জানা থাকে, অনেক সময় নিজেরাই পথ তৈরী করে নেয়।
কবীর ভাইঃ ডিটেইলস বলতে পারবেন?
আমিঃ আমি একজন সাধারণ ছাত্র, তাও বিদেশী, কতটুকুই আর বুঝি বলেন।
অপুঃ আরে, বাঙালী যত ছাত্র আছে খারকভে, এদের মধ্যে আপনার মাথায়ই কিছু মাল-মশল্লা আছে।
আমিঃ অপু আবার বেশী বলে ফেলছে। যাহোক, আমি যা বুঝি, লুটতরাজের একটা উপায় হচ্ছে প্রাইভেটাইজেশন।
কবীর ভাইঃ কম্যুনিজম যেহেতু নাই প্রাইভেটাইজেশন তো হবেই।
আমিঃ হ্যাঁ, এখানেই লুটতরাজের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা, একটা বিশেষ কৌশলে সবকিছু নিজেদের নামেই করে নিচ্ছে।
কবীর ভাইঃ কিন্তু সেটা করছে কি করে?
আমিঃ অনেকটা আমাদের দেশের এরশাদী স্টাইলে।
কবীর ভাইঃ কি রকম?
আমিঃ এরশাদ যেমন বিজাতীয়করণের নামে রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক প্রতিষ্ঠান নাম মাত্র মূল্যে তার চামচাদের হাতে তুলে দিয়েছিলো, সেরকম আরকি।

কবীর ভাই একটু বিমর্ষ হলেন। কিছু বলতে যাবেন এই সময় অপু বললো,

অপুঃ হা হা হা এরশাদ! এই এরশাদ বুঝলেন, যা করছে! কবীর ভাই আবারো বিরক্ত চোখে ওর দিকে তাকালেন। তবে এবার মনে হলো তিনি আক্রমণাত্মক কিছু বলবেন।

কবীর ভাইঃ কি, এরশাদ আবার কি হলো?
অপুঃ আরে এরশাদকে নিয়ে কত কাহিনী!
কবীর ভাইঃ কিসের আবার কাহিনী?
অপুঃ না, মানে কত কিছু শোনা যায়না?
কবীর ভাইঃ কি শোনা যায়?
অপুঃ ঐ যে নারী ঘটিত কত কিছু।
কবীর ভাই মনে হলো মনে মনে একটু ক্ষেপেই গিয়েছেন। কারণ অপু নিজেই ঐ চরিত্রের। সোভিয়েত ইউনিয়নে আসার পর থেকে, যত সব বাজারের মেয়েমানুষ নিয়ে ওর কেচ্ছা-কাহিনী। তার মুখেই আবার সমালোচনা শুনে কবীর ভাইয়ের মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল।
কবীর ভাইঃ তা এরকম মানুষ কি কম আছে নাকি? (সরাসরি অপুকে আক্রমণ না করে ইনডায়েরেক্টলি বললেন)
অপুঃ না মানে অনেক কিছু সোনা যায় এরশাদ সম্পর্কে।
কবীর ভাইঃ তা এরকম মানুষ কি কম আছে?
অপুঃ কিন্তু এরকম করা তো ঠিক না।
(ভুতের মুখে রামনাম শুন মনে মনে আমিও বেশ কৌতুক অনুভব করলাম। এবং নীরবে শুনতে লাগলাম, তাদের কথপোকথন কোনদিকে যায়।)

কবীর ভাইঃ শুনেন অপু। এরশাদের কাছে মেয়েরা যাবেনা কেন বলুন? প্রথমতঃ এরশাদ অত্যন্ত ক্ষমতাবান একজন ব্যক্তি। দ্বিতীয়তঃ তিনি সুদর্শন। তৃতীয়তঃ তিনি অসম্ভব ধনী। সুতরাং তার কাছে মেয়েরা যাবেই। এই নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে।
কবীর ভাইয়ের এরকম ঝটিকা আক্রমণে, অপু একেবারে হাবুগবু হয়ে গেল। তবু ওর ক্ষুদ্র মস্তিস্কে কবীর ভাইয়ের মিশ্রির ছুড়ি ধরতে পেরেছে কিনা সেটা হলো কথা।

পাঁচতলার ৮৮ নং রূমটা ভালোই লাগছে। এক সপ্তাহের মত হয়ে এলো ভুতের ভয় এতদিনে দূর হয়ে গেছে। সামার ভ্যাকেশন চলছে ক্লাস-ট্লাস কিছু নাই। দিনের বেলা বাইরে ঘোরাঘুরি করি। রাতে কিছু সময় টেলিভিশনে ফিল্ম দেখে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে কাটে। সাশা আসে, খালেদ আসে, ইউরা আসে, মেক্সিকোর খোসে আসে, এঙ্গোলার দানিয়েল আসে, পেরুর মারিতা আর কলাম্বিয়ার খোরকে (ওরা দম্পতি) আসে। এরকম অনেকেই আসে। সবার সাথে বসে চা-টা খাই গল্প-গুজব করি, টেলিভিশন দেখি। আমার রুমটা একটা ক্লাবের মতই হয়ে গিয়েছে।

একদিন খুব ভোরে ছাদে কিসের যেন আওয়াজ শুনলাম। ঘুম ভেঙে গেল। প্রথম ধাক্কায় ভড়কে গিয়েছিলাম। আবারো ভুত নয়তো? ঘুমটা ভালোভাবে ভাঙার পর বুঝলাম, না ভুত-টুত না। সম্ভবত উপরে কেউ কিছু করছে। ছাদে তো ওঠা নিষেধ। তাছাড়া ছাদে ওঠার এক্সিটটা সবসময় বন্ধই থাকে। তাহলে বোধহয় কোন কাজটাজ চলছে। সামারে ডরমিটরিতে অনেক রকম মেরামতের কাজ চলে। কৌতুহল চেপে না রাখতে পেরে, হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে সিঁড়িঘরের দিকে গেলাম।

ডরমিটরির যে দুটো সিঁড়ি আমরা ব্যবহার করি সেগুলো পাঁচতলা পর্যন্ত। সিঁড়ি দুইটি ছাদ পর্যন্ত যায়নি। ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়েছে, কারণ আইনতঃ ছাদে ওঠা নিষেধ। তাহলে কি ছাদে ওঠার কোন ব্যবস্থাই নেই? না, আছে। তার শেষ মাথায় একটা এক্সিট আছে। স্কয়ার সাইজ একটি দরজা এক্সিটটিকে আটকে রাখে। সবসময়ই দরজাটা তালাবদ্ধ থাকে। আজ আমি ঐ দিকে তাকিয়ে দেখলাম, কোন তালা নেই বরং দরজাটি খোলা, আর সেই ফাক গলে অঝোর ধারায় সোনালী রোদ ঝরে ঝরে পরে সিঁড়িঘরের আলো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।খুব সিডাকটিভ মনে হলো। ভাবলাম উঠে যাই ছাদে। ছাদে ওঠা অনিয়ম, আইনে নাই, দুরো গুল্লি মারি আইনের। উঠব ছাদে, দেখবো, ডরমিটরির ছাদ থেকে চারপাশের দৃশ্যটা কেমন সুন্দর দেখা যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। ঝটপট মই বেয়ে উঠে এক্সিটের ফাঁক গলে বেরিয়ে এলাম ছাদে।

বাহ্‌ বেশ সুন্দর তো! সামনে ছবির মত দৃশ্য। ডরমিটরির উত্তর দিকে অর্থাৎ ফ্রন্ট সাইডের একপাশে আছে একঝাক গাছপালা যার প্রথম দ্বিতীয় সারিতে আছে ঐ বিরিওজা গাছগুলো। তার পিছনে আছে আরো কিছু পাঁচতলা ডরমিটরি ও এ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং। তারও পিছনে হালকা দেখা যাচ্ছে লেকের দৃশ্য। ঐ লেকেই কয়েকদিন আগে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হয় ওটাই খারকভের সব চাইতে মনোরম জায়গা। উঁচু-নীচু ছোট-ছোট টিলায় ভরা খারকভ শহর। লেকের পিছনে টিলার পিছনে হালকা বনের দৃশ্য চোখে পড়ে কেমন স্বপ্নিল মনে হয় দিগন্তকে। দক্ষিণ দিক অর্থাৎ যেদিকটায় আমার বর্তমান রূম, সেখানে ডরমিটরির ঠিক পিছন দিকটা খালি। আসলে ওখানে একটা আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজ রয়েছে। খারকভ শহরের পশ লোকজন ওখানে তাদের গাড়ী রাখেন। তার পিছনে সারি সারি এ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং। তবে দালান গুলো পর্যাপ্ত পরিমানে জায়গার ব্যবধান রেখে করা, ঢাকার মত গায়ের উপর গা এসে পরা দালানের মত না। দালানগুলোর ফাকে ফাকে রয়েছে বিভিন্ন রকম গাছের সারি। পূর্ব দিকেও অনুরূপ দৃশ্য, আর ঐ দিকটায় শহর অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত আমি জানি। পশ্চিম দিকে দেখা যাচ্ছে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত গীর্জা, কম্যুনিস্ট শাসনামলে এই গীর্জা ধ্বংস করা হয়েছে। নাস্তিক শাসক ইউজেফ স্তালিন (যোসেফ স্ট্যালিন)-এর নির্দেশে এটা করা হয়েছিল। ধর্মের প্রতি কি প্রবল আক্রোশ ছিল এই কম্যুনিস্টদের। আমি মাঝে মাঝে ভাবি এই কম্যুনিস্টরা বাক স্বাধীনতার পূর্ণ সুযোগ গ্রহন করে কিন্তু ক্ষমতার আসনে বসার সাথে সাথে প্রথম সুযোগেই তারা বাক স্বাধীনতাকে হরণ করে। এত আঘাতের পরেও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব কারুকাজ করা গীর্জার চূড়াটা।

আমি আগে কখনো কবীর ভাইয়ের ডরমিটরিতে আসিনি। উনি অনেকবার বলেছিলেন। ঠিকানা দিয়েছেন কয়েকবার। আজ ঠিক করলাম কবীর ভাইয়ের ডরমিটরিতে যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। আতাকারা ইয়ারোশা থেকে ট্রলিবাসে উঠে গেলাম। শহর ও গাছপালার মনোরোম দৃশ্য দেখতে দেখতে দশটি স্টপেজ পর পৌঁছে গেলাম আলেকসিয়েভ্‌সকায়ার স্টুডেন্টস্‌ টাউনে। উনাদের ডরমিটরিটা হাই রাইজ। ১১ তলা। অনেকগুলো ব্লক। লিফটে করে আটতলায় উঠে গেলাম। আটটি রুমের মাঝখানে একটি কমন কিচেন আছে। ওখানে দেখলাম কবীর রান্না করছেন। আমাকে দেখে ছুটে এলেন তিনি।

কবীর ভাইঃ আরে রিমন ভাই দেখছি!
আমিঃ চলে এলাম।
কবীর ভাইঃ এযে মেঘ না চাইতে জল! কি সৌভাগ্য আমার!
আমিঃ আরে কি যে বলেন! আমরা সবাই সাধারণ মানুষ। কোনটা আপনার রুম?
কবীর ভাইঃ এই তো ডান পাশে চলুন।
রূমের ভিতরে ঢুকে দেখলাম, আশরাফ ভাই বসা। তিনিও এই ডরমিটরিতেই থাকেন। কবীর ভাইয়ের বন্ধু, একসাথেই পড়েন। আমাকে দেখে বললেন
আশরাফ ভাইঃ কি আস্চর্য্য!
আমিঃ আস্চর্য্যের কি হলো?
আশরাফ ভাইঃ ভাবছিলাম আজ একফাকে আপনার রুমে একটু যাব।
আমিঃ যাওয়া আর হলোনা, আমি নিজেই চলে এলাম।
আশরাফ ভাইঃ তাই তো দেখছি, আমাদের সৌভাগ্য!
কবীর ভাইঃ আমি ভাবতেই পারিনি যে, আপনি কখনো আমাদের রুমে আসবেন!
আমিঃ এটা বেশী হয়ে গেল কবীর ভাই। আমি কি মানুষ নই? বাহ্‌ আপনার জানালা দিয়ে বাইরের ভিউ খুব সুন্দরতো। বিল্ডিং-টিল্ডিং কিছুই তো নেই। শুধু বন আর টিলা। বেশতো!
কবীর ভাইঃ হ্যাঁ, এদিক থেকে এটাই খারকভের শেষ মাথা।
আমিঃ আমি জানতাম, এখন নিজের চোখে দেখলাম।
কবীর ভাইঃ আজ না খেয়ে যেতে পারবেন না। আপনার রুমে আমরা অনেক বার খেয়েছি। আজ আমাদের একটু খেদমত করার সুযোগ দিন।
আমিঃ আরে ওটা কিছু না। ঠিক আছে খেয়েই যাবো। আপনার রুমটা আমার ভালো লেগেছে।
কবীর ভাইঃ এভাবে একা একটা রুম আমার পাওয়ার কথা ছিল না। একা রুম পাওয়ার বুদ্ধিটা আপনিই কিন্তু আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
আমিঃ হু আমার মনে আছে।
আশরাফ ভাইঃ সুখে-দুঃখে আপনার পরামর্শই তো আমরা বরাবর পেয়েছি।
আমিঃ থাক, সেটা কিছুনা। এই বিদেশ বিভুঁয়ে আমরা যদি একে অপরের হাত ধরে হাত ধরে চলতে না পারি, তাহলে বাঁচবো কি করে।

রান্না-বান্নার আয়োজন শুরু হয়ে গেল। উপর তলায় শিশির ভাইকেও দাওয়াত দেয়া হলো। কবীর ভাইয়ের রূমে জমিয়ে আড্ডা বসালাম আমরা।
একটু পরে মিনহাজ ভাই এসে উপস্থিত। খারকভ কালচারাল ইনস্টিটিউটে পি, এইচ, ডি করেন। তিনি সোভিয়েতে আন্ডারগ্র্যাড করেননি। দেশে পড়ালেখা করেছেন চিটাগাং ইউনিভার্সিটিতে, এখানে পি, এইচ, ডি করতে এসেছেন, লাইব্রেরী সায়েন্সে। যারা সোভিয়েতে আন্ডারগ্রেড করেনি বাংলাদেশে করেছে, ইনাদের নিয়ে বেশ সমস্যা হয়। দেশে লেখাপড়ার মান নীচু হওয়ায়, এখানে এসে খাবি খায়। তিন বছরের জায়গায় ছয়-সাত বছর লাগে পি, এইচ, ডি করতে। মিনহাজ ভাইয়েরও একই অবস্থা, সাত বছর হয়ে গেল এখনো শেষ করতে পারছেন না। স্কলারশীপটাও জোগার করেছিলেন মিনিস্ট্রিতে কোন এক আত্মীয় ধরে। ঘুষ দিয়েছেন বলেও সোনা যায়। তবে কথা বলেন খুব বড় বড়। বাকপটুতায় ওস্তাদ। তার সাথে বসলে দুয়েক মিনিট পরেই রাজনীতির আলাপ জুড়ে দেন। চিটাগাং ইউনিভার্সিটিতে থাকাকালীন সময়ে কি কি রাজনীতি করে দেশোদ্ধার করেছেন। কোন হরতালের সময় কয়টা গাড়ী ভেঙেছেন, কোন নেতার সাথে তার কত পেয়ারের সম্পর্ক ইত্যাদি, ইত্যাদি। তথাকথিত প্রগতিশীলতার একটা ভান ধরেন।

আমাদের গল্পগুজব চলা কালে প্রিন্স ভাই এলো। বেশ ভদ্র। দাড়িওয়ালা পরহেজগার মানুষ। আমরা ঠাট্টা করে বলি, "বাবা নাম রেখেছে প্রিন্স আর আপনি হয়ে গেলেন মোল্লা। আবার খোঁজ নিলে হয়তো দেখা যাবে কারো বাবা হয়তো নাম রেখেছে মোল্লা, কিন্তু সে হয়ে গেছে প্রিন্স "। প্রিন্স ভাই হাসেন, কিছু বলে না। বুঝতে পারেন, আমরা ঠাট্টা করছি। প্রিন্স ভাই বয়সে মিনহাজ ভাইয়ের সমানই হবে। সেও দেশে পড়ালেখা করেছে । দু বছর হয় এখানে এসেছেন, তবে পড়তে আসেননি। কোন একটা ইনস্টিটিউটে নামমাত্র ভর্তি হয়ে আছেন, ভিসা ঠিক রাখার জন্যে। মূল উদ্দেশ্য ইউক্রেনকে ট্রান্‌জিট হিসাবে ব্যবহার করে জার্মানী বা ওয়েস্ট ইউরোপের কোন দেশে যাবেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায়, স্রেফ ভাগ্যের অন্বেষণে, আজকাল অনেকেই এটা করছে। খারকভ শহরেই বিশ-পচিশজন এরকম বাংলাদেশী পাওয়া যাবে।

আমরা নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। ছেলেরা একসাথে গল্প-গুজবে বসলে সাধারণতঃ দুটো টপিক সেখানে প্রাধান্য পায়, মেয়ে আর রাজনীতি। আমাদের এই আড্ডায় সিনিয়র-জুনিয়র একসাথে আছি তাই মেয়েমানুষ নিয়ে আলাপ করা সম্ভব না। সেকারণে রাজনীতিই প্রাধান্য পাচ্ছিলো।
মিনহাজ ভাই কথায় কথায় প্রগতিশিলতার ভাব দেখানোর জন্য ধর্মকে আক্রমণ করে কথা বলে উঠলেন। এতে পরহেজগার প্রিন্স ভাই একটু বিরক্ত হলেন
প্রিন্স ভাইঃ এভাবে কথা বলা তো ঠিক না। মানুষের আবেগ অনুভূতিকে সম্মান করা উচিৎ।
মিনহাজ ভাইঃ ফ্রীডম দরকার, ফ্রীডম
প্রিন্স ভাইঃ ফ্রীডম বলতে আপনি কি বোঝেন?
মিনহাজ ভাইঃ ফ্রীডম, আমার খুশী মত কাজ করতে পারা।
প্রিন্স ভাইঃ তাই? মনে করেন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, আমি আপনার পায়ের উপর একটা পারা দিলাম। আপনি প্রশ্ন করলেন, পায়ে পারা দিলেন কেন? আমি বললাম এটা আমার ফ্রীডম, আপনি কি মনে করেন যে আমি কাজটা ঠিক করেছি
মিনহাজ ভাইঃ (একটু আমতা আমতা করে) না না। ব্যপারটাতো ফিজিকাল। এখানে পুরোপরি ফ্রীডম দেয়া যায়না।
প্রিন্স ভাইঃ ও আচ্ছা এখন আপনি ফ্রীডমকে কনফাইনড্‌ করতে চাচ্ছেন। তাহলে কোন ফ্রীডম আপনি চান।
মিনহাজ ভাইঃ আমি ফ্রীডম অব স্পীচের কথা বলছি।
প্রিন্স ভাইঃ ফ্রীডম অব স্পীচ মানে কি? যা খুশী তাই বলতে পারা?
মিনহাজ ভাইঃ হ্যাঁ তাইতো।
প্রিন্স ভাইঃ যা খুশী তাই বলা কি ঠিক?
মিনহাজ ভাইঃ হ্যাঁ ঠিক
এবার প্রিন্স ভাই একটু আক্রমণাত্মক হয়ে বললো।
প্রিন্স ভাইঃ মাফ করবেন, আমি যদি বলি, আপনার বাবা একটা কুত্তার বাচ্চা ছিল, আর আপনার দাদা ছিল একটা শুয়োরের বাচ্চা, আর আপনার বৌ কি করতে জানেন?............।
প্রিন্স ভাইকে মিনহাজ ভাই আর কথা শেষ করতে দিলেন না। চোখ-মুখ লাল করে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন,
ঃ কি যাতা বলছেন?
প্রিন্স ভাইঃ বাহ্‌, আপনিইতো এলাউ করেছেন, 'ফ্রীডম অব স্পীচ'!
উভয়ের এরকম আক্রমণাত্মক আচরণে আমরাও একটু হকচকিয়ে গেলাম, আবার না হাতাহাতি বেধে যায়। এরপর আমি একটু নরম সুরে বললাম।
আমিঃ শুনুন, মিনহাজ ভাই কালজয়ী লেখক লেভ তলস্তয় বলেছেন, 'লিভিং ইন দ্যা সোসাইটি, উই কান্ট এনজয় এ্যাবসোলুট ফ্রীডম'।
এবার মিনহাজ ভাই উঠে দরজা খুলে গটগট করে বেরিয়ে গেলেন।

এরমধ্যে একদিন স্টুডেন্ট টাউনে অনেক নতুন ছেলেমেয়েদের দেখতে পেলাম। প্রতি বছরই এটা ঘটে। ইউক্রেণের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলেমেয়েরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে। আমাদের ডরমিটরিতেও অনেককে দেখলাম। সামারে বেশীরভাগ সময় ডরমিটরি খালিই থাকে যেহেতু ছুটি কাটাতে সবাই বাড়ী চলে যায়। কিন্তু দুতিনটা দিন ভর্তিচ্ছুদের কলকাকলীতে মুখর থাকে ডরমিটরি । এদের মধ্যে থেকে যারা কোয়ালিফাই করবে তাদেরকেই এখানে দেখা যাবে সেপ্টেম্বর থেকে।

সাশা এরমধ্যে সাতদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে গেল। আমাকে বললো, "যাবে নাকি আমার সাথে, চলো দেখে আসি আমাদের গ্রাম"। আমি বললাম এবার থাক, " পরে যাব কোন একসময়"। ও ঘুরে এলো। আমার জন্য নিয়ে এলে এক ব্যাগ ফল, চেরি, ভিশনা, পেরসিক, স্লিভা, ইত্যাদি। চেরি ফলটা আমি খুব বেশী পছন্দ করি। সাশা শ অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে বেশ মজা করে খেলাম। দেখতে দেখতে সামার ভ্যাকেশন শেষ হয়ে গেল।

এখানে ক্লাশ শুরু হয় পহেলা সেপ্টেম্বর। সারা ইউক্রেণ জুড়ে, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দিনটিকে নাম দিয়েছে 'নলেজ ডে'। আমি এই দিনটাতে ক্লাশ মিস দেইনা। খুব এনজয় করি আমি দিনটা। সবচাইতে বেশী এনজয় করে যারা নতুন ভর্তি হয়েছে তারা। সদ্য স্কুল সমাপ্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছে, বড় হয়ে গিয়েছে, সেই আনন্দ। নতুন জগত দেখার আনন্দ। সবচাইতে বেশী আনন্দ ঝিকিমিক করে ওঠে চোখের নতুন স্বপ্নে।

আমাদের ডরমিটরিতে স্টুডেন্ট সব ছুটি শেষে চলে এসেছে। আরও এসেছে নতুন ছাত্র-ছাত্রীরা। এই সময়টায় অনেক সিনিয়র ছাত্র বেশ তৎপর হয়ে ওঠে নতুন মেয়েদের সাথে খাতির জমাতে। রাফ ল্যগুয়েজে ওরা বলে ফ্রেশ গার্লস। ওদের মধ্যে উদ্যম থাকে কম না। ওরাও ছুটোছুটি শুরু করে ডিসকোতে যায়। এর ওর সাথে পরিচিত হয়। ধীরে ধীরে রূমে যাতায়াত শুরু হয়।

আমার উল্টা দিকের রুমে থাকে এ্যঙ্গোলার দানিয়েল। ছেলেটি খুব ভদ্র, তবে আলুর দোষ আছে। প্রায় সময়ই ওর রূমে নতুন নতুন মেয়ে দেখতে পাই। পহেলা সেপ্টেম্বরের পর প্রথম উইক এন্ড। বিকালের দিকে আমার রূমে কোন গেস্ট ছিলনা। বোরিং ফীল করছিলাম। ভাবলাম যাই একটু দানিয়েলের রূমে। দরজা নক করতেই ও দরজা খুলে আমাকে দেখেই বললো, "ওয়েলকাম, ওয়েলকাম"। আমি ভিতরে ঢুকে দেখলাম, নতুন একটি মেয়ে ওকে আগে কখনো দেখিনি। ভাবলাম এ আর এমন কি? দানিয়েলের রুমে তো প্রায়ই নতুন মেয়ে দেখা যায়। পরক্ষণেই মনে হলো। ময়েটা সেরকম নয়। খুব অল্প বয়স, এবং বেশ ভদ্র। নতুন ছাত্রী হবে বোধহয়। যা ভেবেছিলাম তাই। দানিয়েল আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো, "তাতিয়ানা ও রিমন, রিমন ও তাতিয়ানা। নতুন ছাত্রী ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে, আমাদের ডরমিটরিতেই রূম পেয়েছে "। ইউক্রেনীয় ললনা তাতিয়ানা ডাগর দুটি চোখ মেলে আমার দিকে তাকালো। পরক্ষণেই ও চোখ দুটি নামিয়ে নিল। একটি চঞ্চল হরিনী যেন হঠাৎ লজ্জ্বাবিধুর জড়োসড় হয়ে গেল। এদেশের মেয়েরা বেশ স্মার্ট, সাধারণত এমন করেনা। প্রথম দেখায়ই ও হঠাৎ কেন এমন লাজুকলতা হয়ে গেল? হঠাৎ কাব্য চলে এলো আমার মনে। ভাবলাম মেয়েটার একটা নাম দেয়া যাক। কি নাম দেয়া যায়? মেয়েটি বসেছিলো দানিয়েলের রূমের জানালার পাশে। ঠিক ওর পিছনেই ছিল এক সারি বিরিওজা গাছ। ইংরেজীতে এই গাছগুলোকে বার্চ গাছ বলে। সদ্য যৌবনা বালিকা বসে আছে, তার পিছনে বার্চ তরুর সারি, দৃশ্যটা খুব অপরূপ মনে হচ্ছিলো, তার সাথে মিল রেখে ওর নাম দিয়ে ফেললাম - বার্চ বনের প্রণরেনী।

(চলবে)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×