অতি দূর থেকে দেখা একজন হুমায়ুন আহমেদ
--------------------------------------------- ডঃ রমিত আজাদ
হুমায়ুন আহমেদ নামটার সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে আমাদের পারিবারিক লাইব্রেরীতে। তিন জেনারেশন ধরে গড়ে তোলা মোটামুটি বড়সড় একটা লাইব্রেরী ছিলো আমাদের বাড়ীতে। ছোটবেলা থেকেই এই লাইব্রেরীটি ছিলো আমার জ্ঞান আহরণ ও বই পড়ে আনন্দ পাওয়ার একটা ভালো যায়গা। প্রায়ই অবসর সময়ে ওখান থেকে কোন একটা বই টেনে নিয়ে পড়তাম। একদিন সেখান থেকে টেনে নিলাম একটা বই, যার উপরে বইয়ের নাম লেখা ছিলো 'নন্দিত নরকে', আর তার পাশাপাশি লেখা ছিলো আরেকটি নাম, 'হুমায়ুন আহমেদ'। তখন বছর বারো বয়স হবে আমার, ঐ বয়সেই বইটি পড়ে আমি অভিভুত হয়েছিলাম। বই পড়া শেষ হলে আরেকবার লেখকের নাম পড়লাম, 'হুমায়ুন আহমেদ'। নামটি তখনও খুব বেশী পরিচিত হয়ে ওঠেনি।
তার কিছুকাল পরে আরেকটি উপন্যাস পড়লাম কোন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়, 'সবাই গেছে বনে'। পুরো উপন্যাসটা শেষ করে আমার মন আবেগ আপ্লুত হয়েছিলো (আমার জীবনে এই উপন্যাসটির প্রভাব রয়েছে)। নির্ঝন্ঝাট ভদ্র বাঙালী ছেলেটি কেমন প্রেমে পড়ে গেলো মালিশা নামের স্ট্রেন্জ এ্যামেরিকান মেয়েটির। ফার্গো শহরটি বরফে ঢেকে কেমন সাদা হয়ে উঠতো। আমেরিকার কালচারে বড় হয়ে ওঠা এ্যামেরিকান বর্ন বাঙালী মেয়েটি হোয়াইট যুবকটিকে ভালোবেসে কেমন ঘর ছেড়েছিলো! তরুণ-তরুণীদের মনে কি এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে, তখন তাদের আর ভালো লাগেনা এই বাধা ধরা গতানুগতিক জীবন। তাদের বনে যেতে ইচ্ছে করে। সব কিছুই মনে দাগ কাটার মতো! পাতা উল্টে পিছনে ফিরে লেখকের নাম পড়লাম, 'হুমায়ুন আহমেদ'। সেই থেকে উনার ভক্ত হয়ে গেলাম।
ক্যাডেট কলেজে পড়ার কারণে উইক এন্ড ছাড়া টেলিভিশন দেখার সৌভাগ্য হতোনা। একবার ছুটিতে বাড়ী ফিরে শুনলাম একটি ধারাবাহিক নাটক খুব হিট করেছে। কি নাম নাটকের? সবাই বললো, 'এই সব দিনরাত্রী'। নির্দিষ্ট দিনে বসে গেলাম টিভি সেটের সামনে, নাটকের শেষে বললো, ' ----- আশা আনন্দ দুঃখ বেদনা এই সবকিছু নিয়ে আমাদের এই সব দিনরাত্রী'। নাটক দেখা শেষ হলে আপন মনেই বললাম, "বাহ্ বেশতো!"। পাশাপাশি এই মনে করেও মন খারাপ হয়ে গেলো, ভ্যাকেশন শেষ হলে তো আর নাটকটি দেখা হবে না। আদর্শবান অধ্যাপকের দুই ছেলে এক মেয়ে, টুনি, যাদুকর, ফানি সাদেক আলী, আবুল খায়েরের 'সুখী নীলগন্জ'। সবকিছু মিলিয়ে দারুণ লেগেছিলো নাটকটি। আমাদের বাংলার অধ্যাপক প্রিন্সিপাল বলেছিলেন, " এই নাটকে কাহীনি কিছু আছে কিনা আমি জানিনা, তবে দেখলে মনে হয় অবিকল আমার ঘরের ভিতর সবকিছু ঘটছে!"
এরপর থেকে 'হুমায়ুন আহমেদ'-এর যেকোন বই হাতে এলেই পড়তাম, বাদ দিতাম না। 'শঙ্খনীল কারাগার' উপন্যাসটিও মনে দাগ কেটেছিলো ভীষণ। আরো ভালো লেগেছিলো যখন জানলাম, উপন্যাসটির নাম 'হুমায়ুন আহমেদ'-এর দেয়া না, নামটি দিয়েছিলেন আমার প্রিয় শিক্ষক রফিক কায়সার - বাংলা সাহিত্যের জগতে আরেকটি নক্ষত্র।
গোগ্রাসে গিলেছিলাম 'হুমায়ুন আহমেদ'-এর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহীনিগুলো। এর আগে পড়তাম সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কুর কাহীনি। পরে বুঝতে পেরেছিলাম, ঐ লেখাগুলো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ছিলো না, ছিলো রূপকথা। এছাড়া রাশিয়ান বৈজ্ঞানিক কল্পকাহীনিরও আমি একান্ত ভক্ত ছিলাম। এগুলোই ছিলো সত্যিকারের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহীনি। বাংলা ভাষায় প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহীনি লেখেন 'হুমায়ুন আহমেদ'। অবশ্য তিনি নিজে স্বীকার করেছিলেন যে, রাশিয়ান বৈজ্ঞানিক কল্পকাহীনি পড়েই তিনি অনুপ্রানিত হয়ে বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহীনি লিখতে শুরু করেন। 'হুমায়ুন আহমেদ'-এর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহীনি 'ইরিনা' ও 'তোমাদের জন্য ভালোবাসা'-র প্রতিটি পংক্তি আমার এখনো মনে আছে। আমার অনেক বিদেশী বন্ধুদের আমি শুনিয়েছিলাম এই গল্পদুটো। তারাও প্রশংসা করেছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোন এক ক্রিস্টালোগ্রাফীর ক্লাসে, লেকচার শোনা শিকেয় তুলে দিয়ে, আমার পাশে বসে থাকা ইউক্রেণীয় সহপাঠিনীকে শুনিয়েছিলাম 'ইরিনা' গল্পটি। সেও প্রবল আগ্রহ নিয়ে পুরো গল্পটা শুনেছিলো।
মহান মুক্তিযু্দ্ধ নিয়ে তাঁর লেখা যেই গল্পটি আমার সবচাইতে বেশী ভালো লেগেছিলো সেটি হলো, 'সৌরভ'। স্বাধীনতার চমৎকার একটি সংজ্ঞা সেখানে দেয়া ছিলো। আমার বড় বোন রেডিও বাংলাদেশে প্রচারিত 'সৌরভ' নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন। আমার বড় বোনকে হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন তার নিজের লেখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে তার সবচাইতে প্রিয় 'সৌরভ'।
১৯৮৮ বিটিভিতে শুরু হলো একটি ধারাবাহিক নাটক, 'বহুব্রীহি'। একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, সেই সময় এই নাটকটিই ছিলো সেরা। নির্দিষ্ট দিনে টিভি সেটের সামনে বসতো পুরো বাংলাদেশ। হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে আমাদের সমাজের অনেক বাস্তব চিত্র তিনি সেখানে তুলে ধরেছিলেন। নাটকটির অনেক ডায়লগ এখনো আমাদের জেনারেশনের মুখে মুখে ফেরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যখন কোচিং-এ ভর্তি হয়েছি। সেখানে কেমিস্ট্রির ক্লাস নিতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের একজন সিনিয়ার ছাত্র। তিনি একদিন বললেন, " হুমায়ুন আহমেদ আমাদের শিক্ষক তোমরা জানোতো? তো একদিন একটা অনুষ্ঠানে আমরা উনাকে রিকোয়েস্ট করেছিলাম, আমাদেরকে উনার জীবনের দুয়েকটা মজার ঘটনা বলতে ও তারপর উনার নাটকের দুয়েকটা ডায়লগ বলতে। তা উনি উনার জীবনের দুয়েকটা মজার ঘটনা যা বললেন তাতে আর নাটকের ডায়লগের প্রয়োজন হলোনা।" আমরা প্রশ্ন করলাম, "কি বললেন তিনি?" সিনিয়র ছাত্রটি বললেন, " হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন যে, তার সময়ে ভালো ছাত্ররা ভর্তি হতো ইকোনমিক্সে। তিনি নিজেকে ভালো ছাত্র মনে করতেন, এবং তিনিও প্রথমে ইকোনমিক্সেই ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর একদিন তিনি বেড়াতে এলেন কার্জন হলে। আর সেখানে হঠাৎ দেখলেন একজন অধ্যাপককে। অপূর্ব সুন্দর দেখতে সেই অধ্যাপক একেবারে প্রিন্সের মতো! সেই দেখেই তিনি ইকোনমিক্স ছেড়ে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়ে গেলেন। তারপরে ডিপার্টমেন্টে বায়োডাটা ফিল আপ করার সময় সখের জায়গায় তিনি চট করে লিখে দিলেন যে, তিনি ম্যাজিক জানেন। নিছক কৌতুক করেই লিখেছিলেন। বুঝতে পারেননি কি অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। কিছুদিন পরে তিনি ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা চিঠি পেলেন যে, টিএসসি-র এক অনুষ্ঠানে তাঁকে ম্যাজিক দেখাতে হবে। এবার ফাঁপরে পড়লেন তিনি। ম্যাজিক তো আসলে তিনি জানেন না, কি রে দেখাবেন? আবার স্যারের কাছে গিয়ে তা বললে উল্টা ধমক খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কি করা যায়, কি করা যায়? ব্যাস ঘুরতে শুরু করলেন ম্যাজিশিয়ানদের পিছনে পিছনে। বেশ কিছু খরচ করার পর এক ম্যাজিশিয়ান তাঁকে তিনটি ম্যাজিক শেখালো। এখন পর্যন্ত ঐ তিনটি ম্যাজিকই তিনি জানেন।
কয়েকদিন পরে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট-এর অধ্যাপক ছিলেন তিনি। আমরা বন্ধুরা মনে মনে খুব চাইছিলাম হুমায়ুন আহমেদ-কে এক নজর দেখতে। সৌভাগ্য হলো, কার্জন হলের বারান্দায় দূর থেকে দেখলাম কিংবদন্তির লেখক হুমায়ুন আহমেদ-কে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলতে দেবতাতুল্য কিছু একটা মনে করতাম তখন, তার উপর খ্যাতিমান লেখক! ঐ কাঁচা বয়সের সংকোচের কারণে কাছে গিয়ে কথা বলা আর হয়নি। অতি দূর থেকেই দেখা হলো কেবল।
এরপর বিদেশে চলে যাই। উনার নাটক 'কোথাও কেউ নেই' সেখানে বসে ভিডিওতে দেখেছিলাম। বই-পত্র হাতে এলে পড়তাম। উনার একটা বই সবসময় আমার সাথেই রাখতাম, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহীনি -১। মন খারাপ লাগলে ঐ বইটা পড়ে মনটা হাল্কা করতাম। বিদেশে থাকতেই মিসির আলী সংক্রান্ত বইগুলো হাতে এসেছিলো। বিদেশে থাকার কারণে ওখানকার ফিল্ম ও লেখার কল্যাণে ঐ জাতীয় কাহিনীর সাথে আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম, তবে বাংলা সাহিত্যে মিসির আলী টাইপ চরিত্র হুমায়ুন আহমেদই প্রথম ইনট্রোডিউস করেছিলেন। তাছাড়া ছিলো হিমু। মিসির আলী-র একেবারেই বিপরীত। খুব সম্ভবতঃ ফিলোসফি অফ একসিসটেনসিয়ালিজম-এর প্রতিগলন রয়েছে সেখানে। কেবল লেখকই নয়, তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। একসাথে এতগুলো গুনের সমন্বয় বাংলা সাহিত্যে খুব কম লেখকেরই ছিলো। আবার হুমায়ুন আহমেদ পাশাপাশি একজন বিজ্ঞানীও ছিলেন ।
হুমায়ুন আহমেদ উদ্ভট জিনিস পছন্দ করতেন তাই অতিবাস্তব ঘটনাবলী নিয়ে তিনি অনেক লিখেছিলেন। তাঁর এই লেখাগুলো আমি বেশ উপভোগ করেছি (দেবী, নিশিথিনী, ইত্যাদি) ।
হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত ছায়াছবি 'আগুনের পরশমনি' আমার এতো ভালো লেগেছিলো যে আমি নিজ উদ্যোগ নিয়ে মস্কোতে ছবিটি আমাদের বিজয় দিবসে বড় পর্দায় দেখিয়েছিলাম। বিদেশী বন্ধুরাও প্রশংসা করেছিলো ছবিটির।
ভ্যাকেশনে একবার দেশে এসে শুনলাম আমার বড় ভাই উনার 'নক্ষত্রের রাত' ধারাবাহিক নাটকটিতে অভিনয় করেছেন। ভাইকে বললাম, "আপনার সাথে তো হুমায়ুন আহমেদ-এর খুব ভালো সম্পর্ক, আমার সাথে একবার পরিচয় করিয়ে দেবেন?" "দেবো অবশ্যই, একটু সময় করে নেই, তারপর তোকে বলবো", বললেন বড় ভাই। অপেক্ষায় রইলাম, কিন্তু নানা কারণে আর হলোনা।
একবারে যখন দেশে ফিরলাম, তখন নিজের অধ্যাপনা নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। মনের অনেক ছোট ছোট ইচ্ছাই আর ব্যাস্ততার কারণে পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এমন একটি ইচ্ছা ছিলো কিংবদন্তির লেখক হুমায়ুন আহমেদ-এর সাথে সাক্ষাৎ। দেখা হলে বলতাম, "আপনার অনেক লেখার প্রভাব আমার জীবনে রয়েছে।"
তারপর গত বৎসর ১৯শে জুলাই তিনি হঠাৎ করেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন অজানার দেশে। কাছ থেকে তাঁকে আমার আর দেখা হলোনা। অতি দূর থেকে দেখা হুমায়ুন আহমেদ দূরেই রয়ে গেলেন। তিনি কোথায় গেলেন? বহুব্রীহি নাটকের একটি সংলাপ আছে, "কোথায় যে গেলেন, এখনো ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে পৃথিবীতে যে নেই এটা বেশ বুঝতে পারছি।"
আলোচিত ব্লগ
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।
মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হার জিত চ্যাপ্টার ৩০
তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবনাস্ত
ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে
প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?
আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন