somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সক্রেটিসের এ্যাপোলজি – পর্ব ৬

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সক্রেটিসের এ্যাপোলজি – পর্ব ৬

মূল বক্তৃতাঃ মহাজ্ঞানী সক্রেটিস
লিখেছেনঃ প্লেটো

অনুবাদঃ ডঃ রমিত আজাদ


(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)...

হে বিচারকগণ! আমি চাই, আপনারা আমার সাথে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহন করুন, যেখানে আমি তাঁর (মিলেটাসের) অসঙ্গতি সম্পর্কে ধারণা করছি; আর আপনি মিলেটাস, উত্তর দিবেন। আর শ্রোতাবৃন্দ আমি আপনাদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমার সেই অনুরোধ সম্পর্কে যে, আপনারা অনুগ্রহপূর্বক হইচই করবেন না, যদি আমি আদালতের রীতি অনুযায়ী না বলে আমার স্বভাবসুলভ ধাঁচেই বলি:
মিলেটাস, এমন কেউ কি আছে, যে মানুষের কর্মগুলোর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে কিন্তু মানুষের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না? হে এথেন্সবাসীগণ, আমি চাই, তিনি বরাবরের মত হইচইয়ের মধ্যে দিয়ে একটা ইন্টারাপ্শনের অপেক্ষা না করে উত্তর দিন। এমন কেউ কি আছে যে ঘোড়া সংক্রান্ত সব কিছুতে বিশ্বাস করে কিন্তু ঘোড়ায় বিশ্বাস করে না? অথবা বাঁশির সুরে বিশ্বাস করে কিন্তু বাঁশির বাদকে বিশ্বাস করেনা? না বন্ধু; যেহেতু আপনি উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন, অতএব আমি আপনাকে এবং আদালতকে উত্তর দিব। এমন কেউ এই পৃথিবীতে নাই। যাহোক এখন পরবর্তি প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে হবে: এমন কেউ কি আছে যে আধ্যাত্মিকতা ও আধ্যাত্মিক প্রতিনিধিত্বে বিশ্বাস করে কিন্তু উপদেবতা (ডেমিগড)-সমূহে বিশ্বাস করেনা?

এমন হতে পারেনা। (মিলেটাস উত্তর দিলেন)

পরিশেষে আদালত আপনার মুখ থেকে উত্তর বের করে আনলো, কি সৌভাগ্যবান আমি! তাহলে অভিযোগপত্রে আপনি দাবী করছেন যে, আমি বিশ্বাস করি ও শিক্ষা দেই আধ্যাত্মিকতায় ও আধ্যাত্মিক প্রতিনিধিত্বে (হোক সে নতুন অথবা পুরাতন তাতে কিছু যায় আসেনা): যেভাবেই হোক আমি আধ্যাত্মিক প্রতিনিধিত্বে বিশ্বাস করি, -- এমনই আপনি বলেছেন আপনার হলফনামায়; এবং এইভাবেই আমি ঐশ্বরিক সত্তায় বিশ্বাস করি, আর যেহেতু আমি ঐশ্বরিক সত্তায় বিশ্বাসই করি সুতরাং আমার পক্ষে উপদেবতায় বিশ্বাস না করা কি সম্ভব? নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, আমি বিশ্বাস করি, অতএব আমি ধরে নিচ্ছি যে, আপনার মৌনতাই আপনার সম্মতি। এবার আত্মা (spirits) বা উপদেবতা (demigods) কারা? তারা কি দেবতা বা দেবতাদের পুত্ররা নয়?

অবশ্যই তারা তাই।

- সুতরাং, উপদেবতাদের যদি আমি স্বীকার করি, আপনারা যেরকম বলেন, উপদেবতারাও দেবতা, তাহলে বিষয়টা দাঁড়ালো এই যে, যা আমি আগেই বলেছি, আপনি তামাশা করছেন ও ধাঁধাঁ দিচ্ছেন, এই কথা বলে যে, আমি একইসাথে ইশ্বরে বিশ্বাস করি আবার করিনা, কেননা অন্ততপক্ষে উপদেবতাদেরতো আমি স্বীকার করি। অপরপক্ষে, উপদেবতারা যদি পরী বা অন্য কোন সত্তার মায়েদের গর্ভজাত দেবতাদের অবৈধ সন্তান হয়, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এরকমই মনে করা হয়, তাহলে এমন কোন মানুষ আছে যে উপদেবতাদের স্বীকৃতি দেয় কিন্তু দেবতাদের স্বীকৃতি দেয়না? এটা তেমনই হাস্যকর হবে যদি কোন মানুষ ঘোড়া ও গাঁধার সমন্বয়ে যে খচ্চরের জন্ম সেই খচ্চরকে স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু ঘোড়া ও গাঁধাকে স্বীকৃতি দেয়না। একেবারেই ননসেন্স! মিলেটাস, সম্ভবত আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানোটাই আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো। আপনি অভিযোগনামায় পয়েন্টটি এই কারনে অন্তর্ভুক্ত করেছেন যে, আমাকে দোষী সাব্যস্ত করার খাঁটি কোন পয়েন্ট আপনার হাতে ছিলোনা। কিন্তু যার বিন্দুমাত্র বোধশক্তি আছে এমন কেউ আপনার এই কথা কোনদিনই বিশ্বাস করবে না যে, একই মানুষ দৈব ও অলৌকিকতায় বিশ্বাস করে অথচ ইশ্বর, উপদেবতা ও অলৌকিক সত্তায় বিশ্বাস করেনা।

হে বিচারকগণ, মিলেটাস আমার বিরুদ্ধে যেইসব অভিযোগ আনছে, সেইসব অপরাধে আমি অপরাধী নই, আমার মনে হয়না যে এর চাইতে বেশি আর কিছু প্রমান করার প্রয়োজন আছে, এতক্ষণ যা বলেছি সেটাই যথেষ্ট। যে সম্পর্কে আমি শুরুতেই বলেছিলাম, অনেকেরই যে আমার বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্নতা রয়েছে, এটা নির্ভেজাল সত্য। আমার যদি ধ্বংস হয় তবে আমার ধ্বংস ডেকে আনবে, মিলেটাসও নয় এনিটাসও নয়, বরং একটি বিরাট অংশের ঘৃণা ও নিন্দা, যা ইতিপূর্বে অনেক সৎ ব্যক্তিকেই হত্যা করেছে, মনে হয় আরো অনেককেই হত্যা করবে, মনে করবেন না যে, এই জাতীয় হত্যার তালিকায় আমিই সর্বশেষ ব্যক্তি হবো।

অনেকে বলতে পারেনঃ সক্রেটিস, যে কাজ করার জন্য অতঃপর আপনার অকাল মৃত্যু হতে যাচ্ছে, সেইসব কাজ করার জন্য আপনি কি লজ্জ্বিত নন? তাকে আমি ন্যায্যভাবে উত্তর দিবোঃ এখানেই আপনি ভুল করছেন, যে ব্যক্তি মানুষের মঙ্গল সাধনের জন্য মাঠে নেমেছে, তাকে নিহত হবার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতেই হয়, এই নিয়ে তিনি তেমন চিন্তিত নন, তিনি ভাবেন কেবল একটি বিষয় - যা করছেন তা ঠিক করছেন না ভুল করছেন, ভালো মানুষের কর্ম সম্পাদন করছেন না খারাপ মানুষের কর্ম সম্পাদন করছেন। এদিকে, আপনার দৃষ্টিকোন থেকে, ট্রয়ের যুদ্ধে যেসব বীরদের পতন ঘটেছিলো তারা খারাপ, এবং থেটিসের পুত্রও তাদের মধ্যে একজন, যে বিপদের চাইতে মর্যাদাহানীকে বেশি ভয় পেত, এবং যখন তিনি হেকটরকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলেন, তখন তাঁর দেবী মাতা তাকে বলেছিলেন, "পুত্র আমার, তুমি যদি তোমার বন্ধু পেট্রোক্লাসের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে হেকটরকে হত্যা করো, তবে তুমি নিজেই মারা যাবে।" 'ভাগ্য', দেবী বলেছিলেন এই জাতীয় ভাষায়, "প্রায়ামের পুত্র হেকটরের পর তোমার নিহত হবার পালা", এই সাবধানবাণী শোনার পরেও তিনি বিপদ বা মৃত্যু কোনটিকেই ভয় পেলেন না, বরং বন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে কাপুরুষের মতো বেঁচে থাকার লজ্জ্বাটাকেই বেশি ভয় পেলেন। 'আমি তৎক্ষণাৎই মরতে চাই', তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, "শত্রু আমাকে হত্যা করুক, এখানে জাহাজের পাশে বসে প্রতীক্ষা করা, বা সকলের বিদ্রুপের পাত্র হয়ে পৃথিবীর একটা বোঝা হওয়ার চাইতে সেটাই ভালো হবে।" সেইসময় একিলিসের কি মৃত্যু ও বিপদ সম্পর্কে কোন চিন্তা ছিলো? হে বিচারকগণ! বাস্তবে এমনই হয় কিন্তু: কোন ব্যক্তি নিজেকে যে অবস্থানে বসিয়েছে, এই ভেবে যে, এটাই তার জন্য সব চাইতে ভালো জায়গা, অথবা তার কমান্ডার তাকে যেখানে বসিয়েছে, সেখানে বসেই তাকে বিপদ মোকাবেলা করতে হবে, না মৃত্যু না অন্য কোন বিপদ কোন কিছুর ভয়ই তার তখন পেলে চলবে না, ভয় যদি পেতেই হয় তবে একটাই ভয়, তা হলো মর্যাদাহানির ভয়। এবং হে বিচারকগণ! এটাই হলো সত্য।

(চলবে)

সক্রেটিসের এ্যাপোলজি - পর্ব ৫ এখানে পাবেন
Click This Link
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×