somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সক্রেটিসের এ্যাপোলজি – পর্ব ৮

২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সক্রেটিসের এ্যাপোলজি – পর্ব ৮

মূল বক্তৃতাঃ মহাজ্ঞানী সক্রেটিস
লিখেছেনঃ প্লেটো

অনুবাদঃ ডঃ রমিত আজাদ (Dr. Ramit Azad)



(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)
..
আপনারা খুব সহজেই আমার মত আরেকজনকে পাবেন না, এই কারণে আমি আপনাদের উপদেশ দেব আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে। আমি সাহস করে বলছি যে, আপনারা রাগান্বিত হতে পারেন (হঠাৎ করে ঘুম থেকে জেগে ওঠা ব্যক্তির মত), এবং আপনারা চিন্তা করতে পারেন যে, এনিটাসের উপদেশ অনুসারে আমাকে সহজেই হত্যা করে আপনারা বাকী জীবন নিশ্চিন্তে ঘুমুতে পারবেন। তবে ঈশ্বর আমার স্থলে অন্য একজন গো-মাছি (gadfly) পাঠালে আপনাদের সেই নিশ্চিন্ত নিদ্রা আর হবেনা। যখন আমি বলি যে, আপনাদের প্রতি আমি ঈশ্বর প্রেরিত একজন, তখন আমার এই মিশনের প্রমানটি এইরূপ: -- যদি আমি অন্য সবার মতো হতাম, আমি নিঃসন্দেহে আমার ব্যাক্তিগত সব সুবিধা-অসুবিধাগুলোকে তুচ্ছজ্ঞান করতাম না, অথবা অন্যের তাচ্ছিল্যকে এই এতগুলো বছর ধরে এত ধৈর্যের সাথে অবলোকন করতাম না, এবং আপনাদের জন্য কাজ করতাম না, প্রত্যেকের কাছে পিতা অথবা বড় ভাইয়ের মত আলাদা আলাদাভাবে গিয়ে পূণ্য (সদ্গুন) সম্পর্কে প্রেরণাদান করতাম না; এমন আচরণকে আমি বলবো মানুষের সহজাত প্রকৃতির চাইতে ভিন্ন কিছু। এর দ্বারা আমার যদি কোন মুনাফা হতো, অথবা আমার এইসব প্রেরণাদান করার বিনিময়ে যদি টাকা-কড়ি নিতাম, তাহলেও আমার কাজের কিছুটা হলেও হিসাব-নিকাশ থাকতো; কিন্তু এখন আপনারা উপলব্ধি করবেন যে, আমার অভিযোগকারীরা নির্লজ্জতা সত্ত্বেত্ত এই কথা বলতে সাহস করবেন না যে, কখনো কারো কাছ থেকে আমি একটি কানা-কড়িও নিয়েছি; এর সপক্ষে তাদের কোন সাক্ষীও নেই, বরং পর্যাপ্ত পরিমানে সাক্ষ্য রয়েছে কেবল তার পক্ষে যা আমি বলছি -- আমার দারিদ্র্য।

লোকে অবাক হতে পারে, কেন আমি জনে জনে গিয়ে উপদেশ দেই, এবং অপরের সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাই, অথচ সর্বসাধারণের সমস্যার বিষয়ে রাষ্ট্রকে কোন উপদেশ দেইনা। আমি আপনাদের বলছি কেন আমি তা করি। আপনারা আমাকে বহুবার বহু জায়গায় এক দৈববাণী বা দৈব নিদর্শনের কথা বলতে শুনেছেন। এই দৈববাণী ঈশ্বরের নিকট থেকে আমার কাছে আসে, এবং এই ঈশ্বরকে মিলেটাস তার অভিযোগপত্রে বিদ্রুপ করেছে। আমি যখন শিশু ছিলাম তখন এই দৈব নিদর্শন, যা ছিলো এক ধরনের কন্ঠধ্বনি, আমার নিকট প্রথম আসা শুরু করে। এই দৈববাণী আমাকে অনেক কাজ করতে নিষেধ করেছে, কিন্তু কখনো কোন কাজ করতে নির্দেশ দেয়নি। এই দৈববাণীই আমাকে রাজনীতিবিদ হতে নিরুৎসাহিত করেছে। এবং আমি মনে করি এটাই ঠিক হয়েছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, হে বিচারকগগণ! যদি আমি রাজনীতিতে নামতাম আমি অনেক আগেই উচ্ছন্নে যেতাম, এবং নিজের ও আপনাদের কারো জন্যই ভালো কিছু করতে পারতাম না। এবং অনুগ্রহপূর্বক আমার সত্য ভাষণ শুনে আপনারা রাগান্বিত হবেন না: সত্য কথাটি হলো এই যে, এমন কোন সৎ ব্যক্তি নাই যিনি আপনাদের বিরুদ্ধে অথবা কোন জনদলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করে, রাষ্ট্র কর্তৃক কৃত অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবে; যে ব্যক্তি ন্যায়ের জন্য লড়াই করবে, তার জীবন সংক্ষিপ্ত হলেও, তার উচিৎ হবেনা সর্বসাধারণের সমস্যায় জড়িয়ে পড়া বরং ব্যক্তিগতভাবে কাজ করাটাই ঠিক হবে।


আমি যা বলছি তার কনভিন্সিং প্রমান আমি উপস্থাপন করতে পারি, শুধু কথা নয়, বরং কাজের মধ্যে দিয়ে- যেটাকে আপনারা অনেক বেশি মূল্যায়ন করেন। আমার জীবনের একটি ঘটনা শুনুন, তাহলে আপনারা বুঝতে পারবেন কেন আমি মৃত্যুভয়ে ভীত নই, এবং সেই ভয়ে ন্যায়ের পথ থেকে দূরে সরে থাকিনা, এবং মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ন্যায়ের পথটাকে আঁকড়ে ধরে আছি। আমি এই আদালতের একটা ঘটনা বলবো, আমি যা বলবো তা হয়তো ক্রোধ উদ্রেককারী ও বিরক্তিকর হবে, তবে সত্য নিঃসন্দেহে। এই এথেন্স রাষ্ট্রের কোন সরকারী পদই আমি কখনো অলংকৃত করিনি তবে আমি সিনেটর ছিলাম: আন্টিওকিস (Antiochis) ট্রাইব যেটা কিনা আমার নিজের ট্রাইব, একবার বিচারের সভাপতি হলো, বিচারটি ছিলো আরগিনুসায়ে (Arginusae)-র যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছিলো তাদের মৃতদেহ যে জেনারেলরা আনেনি তাদের বিচার। এবং আপনারা প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, তাদের সকলের একত্রে বিচার করা হবে, এটা ছিলো বেআইনি, পরবর্তিতে আপনারাও এটা স্বীকার করেছেন। কিন্তু সেই সময়ে প্রিটানেসদের মধ্যে থেকে আমিই একমাত্র ছিলাম যে বেআইনী কাজের বিরোধিতা করেছিলাম, এবং আমি আমার ভোট আপনাদের বিরূদ্ধে দিয়েছিলাম; এবং যখন ওরেটররা আমাকে ইমপীচ করার ও গ্রেফতার করার হুমকী দিলো, এবং আপনারা নিজেরাই এটা দাবী করে চিৎকার করতে থাকলেন, আমি তখন মনস্থির করলাম যে আমি ঝুঁকিটা নেবো, আমি মৃত্যুভয় বা কারারূদ্ধ হওয়ার ভয় না করে, আপনাদের বেআইনী কাজের ভাগীদার না হয়ে, আইন ও ন্যায়বিচারের পক্ষে থাকবো। এই সব কিছু ঘটেছিলো গণতন্ত্রের শাসনামলে। কিন্তু যখন ত্রিশজন শাসকের শাসনামল এলো, তারা আমাকে ও আরো চারজনকে গম্বুজ-সংবলিত গোলাকার অট্টালিকা-য় ডেকে পাঠালেন, এবং আমাদের বললেন সালামিসের সালামানিয়ান লিওন-কে সাথে নিয়ে আসতে, যেহেতু তারা তাকে মৃত্যুদন্ড দিতে চাচ্ছিলেন। তারা এই জাতীয় অনেক আদেশই অনেককে দিয়েছিলো যত বেশি সম্ভব অভিযুক্তদের খুঁজে বের করার জন্য। তখন আমি কথায় না আমার কাজের মধ্যে দিয়ে দেখালাম, মৃত্যু আমার জন্য - একটা ফালতু বিষয় (একটু রুক্ষভাবেই বলে ফেললাম!), আমার জন্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো অন্যায় ও অধর্ম থেকে বিরত থাকা। সরকারের অত্যাচারী হাত যত শক্তিশালীই হোক না কেন আমি তার ভয়ে মোটেও ভীত নই, তা কোনক্রমেই আমাকে অন্যায়ের পথে নিতে পারবে না; এবং যখন আমরা গম্বুজ-সংবলিত গোলাকার অট্টালিকা (rotunda) থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম, অন্য চারজন সালামিসে গিয়ে লিওনকে ধরে নিয়ে আসলো, কিন্তু আমি শাসকদের কথা না শুনে শান্তভাবে বাড়ী চলে গেলাম। আর এই অবাধ্যতার কারণে আমার মৃত্যুদন্ড হতে পারতো, কিন্তু খুব শীগগীরই ঐ ত্রিশজন শাসকের পতন ঘটে ও ঐ শাসনের অবসান হয়। আপনাদের এখানে উপবিষ্ট অনেকেই আমার কথার সাক্ষ্য দেবেন।

(চলবে)

সক্রেটিসের এ্যাপোলজি – পর্ব ৭
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×