somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো ঐতিহাসিক পলাশী দিবস

২৪ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো ঐতিহাসিক পলাশী দিবস
------------------------------------------ ড. রমিত আজাদ

গতকাল ২৩শে জুন ২০১৪ ছিলো ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। দুশসাতান্ন বছর আগে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদী তীরে পলাশীর আমবাগানে নবাবের বাহিনীর মুখোমুখি হয় ইংরেজ বাহিনী। যুদ্ধের নামে এক ষড়যন্ত্রে শিকার হয়ে পরাজিত হন বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা।এই পরাজয়ের মধ্যদিয়ে অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য।

বাংলাদেশ থেকে লুটকৃত পুজিঁর সাহায্যে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব ঘটে। আর এককালের প্রাচ্যের স্বর্গ সোনার বাংলা পরিণত হয় শ্মশান বাংলায়, স্থান পায় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশে।

এ যুদ্ধের রাজনৈতিক ফলাফল ছিল ধ্বংসাত্মক ও সুদূরপ্রসারী। এ যুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাংলা ব্রিটিশদের অধিকারে চলে আসে। বাংলা অধিকারের পর ক্রমান্বয়ে ব্রিটিশরা পুরো ভারতবর্ষ এমনকি এশিয়ার অন্যান্য অংশও নিজেদের দখলে নিয়ে আসে।

পলাশী বিপর্যয়ের পর শোষিত-বঞ্চিত শ্রেণী এক দিনের জন্যও তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম বন্ধ রাখেনি। শুরু থেকেই প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় ব্রিটিশ শক্তি। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ফরায়েজি আন্দোলন, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা-কেন্দ্রিক আন্দোলন, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ইত্যাদি বিদ্রোহের মাধ্যমে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ বারবার তাদের অবস্থান জানান দিয়েছে। এ জন্যই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সাধারণ জনগণকেই একমাত্র প্রতিপক্ষ মনে করত। প্রায় ২০০ বছর ধরে তাদের আন্দোলন সংগ্রামের ফলে ব্রিটিশরা শেষ পর্যন্ত এ দেশ থেকে লেজ গুটাতে বাধ্য হয়।

জাতি এই দিনটি ও তার তাৎপর্য ভুলে যায়নি। গতকাল যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকার কনফারেন্স লাউঞ্জে সংঘটিত হয়েছে ঐতিহাসিক 'পলাশী দিবস' উপলক্ষে একটি শিক্ষামূলক আলোচনাসভা এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার অষ্টম বংশধর জনাব সৈয়দ গোলাম মোস্তফা ও নবম বংশধর নবাবজাদা আব্বাসউদ্দৌলা-কে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির উদ্যেক্তা ছিলো: “সেন্টার ফর মিলিটারী হিস্ট্রি, ঢাকা। আলোচনার বিষয় ছিল

“পলাশী-র শিক্ষা”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) এম নূর উদ্দিন খান, পিএসসি সাবেক মন্ত্রীও সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান । অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন “সেন্টার ফর মিলিটারী হিস্ট্রি”, ঢাকা-এর পরিচালক ড. এস আকরাম আলী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী ও লেখক ড. রমিত আজাদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেছিলেন জনাব রুহুল আমীন মল্লিক। বিশেষ দায়িত্ব পালন করেছিলেন জনাব ওয়ালিউর রহমান।

অনুষ্ঠানে আলোচকবৃন্দ ছিলেন, মেজর মাসুদুল হাসান, অধ্যক্ষ জি. এম. সালাউদ্দিন, পীরজাদা মির্জা মাহবুব সুলতান বেগ বাচ্চু, জনাব এরশাদ মজুমদার (সাংবাদিক), জনাব গোলাম মাওলা রনি (সাবেক এম. পি.), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক পিএসসি, প্রফেসর ডক্টর কে এম মহসিন (ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)

মেজর মাসুদুল হাসান তার বক্তব্যে বলেন, " রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দেয়ার স্বভাব আমাদের এখনো রয়ে গেছে। এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে।" অধ্যক্ষ জি. এম. সালাউদ্দিন বলেন, " ইংরেজরা ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আমাদের প্রিয় নবাবের চরিত্রে কলংক লেপন করতে থাকে এবং আমাদের মিথ্যা ইতিহাস শিখাতে থাকে। এই সবই ছিলো উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। এখন সময় এসেছে বাংলার সত্যিকারের ইতিহাস উদঘাটন করার।" পীরজাদা মির্জা মাহবুব সুলতান বেগ বাচ্চু বলেন, "সেই সিরাজউদ্দৌলা-মীরজাফর রাজনীতি এখনো চলছে। ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের সম্মান জানাতে হবে।" জনাব এরশাদ মজুমদার (সাংবাদিক) বৃটিশ শাসনের পূর্বে বাংলার ঐশ্বর্য্য ও বৃটিশ শাসনের সময় বাংলার দুরবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা করেন। জনাব গোলাম মাওলা রনি (সাবেক এম. পি.) দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, "এই অনুষ্ঠানে এসে আমি দিনটির গুরুত্ব আরো বেশী করে উপলদ্ধি করতে পারছি।" তিনি আরো বলেন, এটা উপরওয়ালার শুকরিয়া যে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বংশধররা বেঁচে আছেন। প্রবন্ধ পাঠকের সাথে সহমত ঘোষণা করে আমিও বলতে চাই যে এই পরিবারটিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হোক। জাপান যদি তাদের রাজবংশকে আড়াই হাজার বছর টিকিয়ে রাখতে পারে, ইংল্যান্ড যদি তাদের রাজপরিবারকে আটশত বছর ধরে রাখতে পারে, তাহলে আমরা কেন আমার নবাব পরিবারকে মর্যাদা দেব না? আমি ভবিষ্যতে আমার কলামে বিষয়টি নিয়ে লিখবো ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও তুলে ধরবো।" মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক পিএসসি, একজন সেনাপতি ও যুদ্ধবিশারদ হিসাবে পলাশীর যুদ্ধের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। এবং কিভাবে নানামূখী ষড়যন্ত্রে নিশ্চিত জয়ের যুদ্ধকে পরাজয়ে পরিণত করা হয়েছিলো তার বিষদ ব্যখ্যা করেন। প্রফেসর ডক্টর কে এম মহসিন (ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) একজন খ্যাতিমান ইতিহাসবেত্তা হিসাবে দিবসটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পলাশীর যুদ্ধ ও বৃটিশ শাসনামলের উপর দীর্ঘ সময় ক্লাস নিয়ে থাকেন যাতে ছাত্রছাত্রীরা ও দেশের মানুষ এর ঐতিহাসিক সত্যতা জানতে পারে।

আলোচনা সভা শেষে নবাব সিরাজউদ্দৌলার অষ্টম বংশধর জনাব সৈয়দ গোলাম মোস্তফা ও নবম বংশধর নবাবজাদা আব্বাসউদ্দৌলা-কে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

পরিশেষে প্রধান অতিথি লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) এম নূর উদ্দিন খান তার বক্তব্যে বলেন, "এই অনুষ্ঠানের প্রবন্ধ পাঠক একটি প্রাঞ্জল, বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। অন্যান্য বক্তারাও এত চমৎকার বলেছেন যে আমার অনেক জ্ঞানলাভ হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে না আসলে এই জ্ঞানার্জন করতে আমার হয়তো ছয়মাস লেগে যেত। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠান কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে এবং উপস্থিতি আশানুরূপ হয়নাই। তবে আমি মনে করি যে অনুষ্ঠানটি অনেক বড় জায়গায় অনেক বৃহৎ পরিসরে পালন করা উচিৎ। আমি আশা করবো ভবিষ্যতে দিবসটি আরো অনেক বড় পরিসরে পালিত হবে।"
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×