সতত লাশের মিছিল
--------- ড. রমিত আজাদ
যার লাশ আমি তাকে চিনি না,
তবুও এই শবযাত্রায় শরীক হয়েছি আমি।
বোবা মৃতদেহের ক্রন্দন শোনে না জিয়ন্ত কর্ণ,
তবুও সেই শোক ভেসেছে বর্ণহীন হাওয়ায়,
শোকার্ত মাতার মাতমে ভারাক্রান্ত
নির্মল পেরেশান আসমান অনন্ত।
বসবাসের অযোগ্য এই পল্লীতে
পরওয়াজ ভুলেছে পারিন্দা,
লাশের মিছিলে যুক্ত হচ্ছে লাশ,
বর্ধিষ্ণু নাগপাশ, জননীর দীর্ঘশ্বাস,
হেটে যাওয়া প্রতিবাদী ইনসান
টপ করে উঠে যায় খাটিয়ায়,
অতঃপর অপরের কাঁধে চড়ে
পৌঁছে যায় চিরস্থায়ী ঠিকানায়,
যেখানে মহাকালের স্বপ্নহীন নিদ্রায়
নিস্পন্দ হবে তার চঞ্চল হৃদস্পন্দন।
জানি এ জীবন অনন্ত নয়,
যেমন অনন্ত নয় নিটোল সৌন্দর্য যুগল ভুরুর।
অথবা রোশানাক পারভানা নাসরিন নার্গিস।
তবুও কে কামনা করে কাতেলের নিষ্ঠুর হাত?
কে বাসনা করে আখবর, অঘোষিত অপমৃত্যুর?
জীবনের খুন হয়ে ওঠে মউতের মাহতাব,
শমশের ঢেলে দেয় দরিয়ায় সোহরাব।
ছোট-খাট কিছু আশা, প্রেমিকার ভালোবাসা,
শিশুমুখে মধুকথা, উৎসবে কথকতা,
জন্মের মানে হলো, নির্ভয়ে বেঁচে থাকা।
শাহী তখতের রঙ্গালয়ের শোভিত সংলাপ,
পরিপাটি দরবারী জবানের আত্মম্ভরিতায়,
অকস্মাৎ ঘোষণা করে অস্তিত্বহীন মুক্তির প্রতিশ্রুতি।
প্রতারিত হয়োনা কওম, নির্বুদ্ধিতা সরলতা নয় জেনো।
চেয়ে দেখ লাশের গায়ে নকশা কেটেছে কত রঙের ক্ষত!
মউতের পরে যেন তার রোশনাই বেড়ে গেছে ঢের!
অতঃপর তারা নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে জমীনের কোলে,
অতঃপর ইন্তেজার দুসরা সখেদ দুঃসংবাদের,
আখেরে আরো কই বদনসিব শোবে তাহাদের পাশে,
গভীর মমতায় তাকে স্থান দেবে সাথে।
লাশের সাথে লাশের কথা হবে নিরাশার,
এরপর লাশগুলি লাশসভা করে
প্রানহীন হাত তুলে একজাই অভিশাপ দেবে তাই,
"একদিন জেনো তোমরাও লাশ হবে ঘাতকেরা,
যেমন হয়েছিলো লাশ অতীতের খল নায়কেরা।
সেদিন পাবে না স্থান আর নিষ্পাপ আমাদের পাশে,
দোজখের প্রদাহের দ্বার নিজেরাই খুঁজে নিয়ো ত্রাসে।"
(ছবি আকাশজাল থেকে নেয়া)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:১৪