somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী - বিদায়

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





চির বিদায় নিলেন কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী
------------------------------- ড. রমিত আজাদ

কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও এনবিসি জানায়, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার অসুস্থতার কারণে সম্প্রতি মোহাম্মদ আলীকে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফনিক্স শহরের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, এছাড়া তিনি দীর্ঘকাল পারকিনসন্স রোগেও ভুগছিলেন। হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

খ্যাতিমান এই মুষ্টিযোদ্ধার জন্ম ১৭ জানুয়ারি ১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিলে। অলিম্পিক লাইট-হেভিওয়েট সোনা বিজয়ী হয়ে তিনি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কাড়েন। তারপর এই মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধার সফলতা দিন দিন বাড়তে থাকে। তিনি তিনবার ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন ( ১৯৬৪, ১৯৭৪ এবং ১৯৭৮ সালে)। ১৯৬৪ সালে ইসলামী সংগঠন নেশন অব ইসলামে যুক্ত হন মোহাম্মদ আলী এবং ১৯৭৫ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। উনার পূর্ব নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে (Cassius Marcellus Clay), ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মোহাম্মদ আলী।

তিনি ১২ বৎসর বয়স থেকে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। ২২ বৎসর বয়সে ১৯৬৪ সালে তিনি হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন, তদানিন্তন চ্যাম্পিয়ন মুষ্টিযুদ্ধের আরেক মহারথী সনি লিস্টনকে পরাজিত করে। ১৯৬৭ সালে তিনি বাধ্যতামূলকভাবে মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এই অস্বীকৃতির কারণ ছিলো উনার ধর্মীয় বোধ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিয়েতনাম নীতির বিরোধিতা। এই কারণে উনাকে গ্রেফতার করা হয় ও উনার খেতাব কেড়ে নেয়া হয়। পরবর্তী চার বৎসর তিনি আর বক্সিং লড়াই করতে পারেননি, অথচ এইটি ছিলো একজন ক্রীড়াবিদ হিসাবে উনার জীবনের পীক পার্ফরমেন্স-এর বয়স। আলী আদালতে মামলা করেন ও ১৯৭১ সালে ইউ.এস. সুপ্রীম কোর্ট উনার উপর আনীত অভিযোগ তুলে নেয়। মোহম্মদ আলীর এই দৃঢ়তা উনাকে পরবর্তি প্রজন্মের আইকন-এ পরিণত করে।

তিনি বেশ কয়েকটি ইতিহাসখ্যাত লড়াইয়ে অংশ নেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলী-সনি লিস্টন লড়াই, আলী-জো ফ্রেজিয়ার লড়াই, আলী-জর্জ ফোরম্যান লড়াই, আলী-ইনোকী লড়াই, আলী-ল্যাড়ি হোমস লড়াই। তিনি সর্বমোট ৬১টি লড়াই করেন এর মধ্যে ৫৬টিতে জয়লাভ করেন ও ৫টিতে পরাজিত হন। নক আউট করে জয়ী হন ৩৭টিতে। ল্যাড়ি হোমস-এর সাথে উনার লড়াইটি হয়েছিলো একেবারে ভাটা বয়সে, সেই লড়াইয়ে তিনি পরাজিত হলেও হোমস নিজের বড়াই না করে বারবার বলছিলেন 'আলী ইজ গ্রেট!'

তিনি এমনই কিংবদন্তিতে পরিনত হন যে একাধিক মার্কিন রাষ্ট্রপতি উনার সাথে সাক্ষাৎ করেন।







একজন সফল ও জনপ্রিয় খেলোয়াড় হিসাবে তিনি বিভিন্ন দেশও সফর করেন।


বিটলস গ্রুপের সাথে মোহম্মদ আলী


মস্কোতে মোহম্মদ আলী

তিনি ১৯৯৬ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা নগরীতে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মশাল জ্বালিয়েছিলেন।



তিনি চারবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সর্বশেষ স্ত্রীর নাম ইয়োলান্দা উইলিয়ামস। পূর্ববর্তি স্ত্রীর নাম ছিলো ভেরোনিকা আলী। উনার নয়জন সন্তান রয়েছে, এদের মধ্যে কন্যা লায়লা আলীও পিতার মত মুষ্টিযোদ্ধা হয়েছিলেন।

১৯৭৮ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী মুষ্টিযোদ্ধা মোহম্মদ আলী সপরিবারে বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় বিশ্বব্যাপী তার সুনাম, তিন-তিনবার হেভিওয়েট বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন হয়ে খ্যাতির তুঙ্গে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের জনগণ তার প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা অনুভব করত, তিনি মুসলমান হয়েছিলেন বলে। এসময়, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাঁকে আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ সফর করার। তিনি সানন্দে রাজী হন। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র, যেটির মাত্র উদ্ভব হয়েছে বিশ্ব মানচিত্রে। পৃথিবী যাকে ভালো করেই চেনেই না। ১৯৭৪ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিসিন্জারের বক্তব্যে বাংলাদেশ এসেছিল ‘বটমলেস বাস্কেট’ হিসাবে। এরপর তার পরিচয় একটি হতদরিদ্র রাষ্ট্র হিসাবে। সেই দেশ সফর করতে রাজী হবেন মোহম্মদ আলীর মত জীবন্ত কিংবদন্তি তা কেউ ভাবতেই পারেনি। কিন্তু তিনি আমাদের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ রক্ষা করেছিলেন। তার অনিন্দসুন্দরী স্ত্রী ভেরোনিকাকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছিল।

এয়ারপোর্টে জনতার ঢল নেমেছিল তাঁকে দেখতে ও অভ্যর্থনা জানাতে। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে খোলা জীপে করে যখন তিনি শহরের দিকে যাচ্ছিলেন চারিদিকে শুধু ধ্বনি উঠছিল, 'ইয়া আলী, ইয়া আলী'। আমেরিকা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, একটি দেশে তার এতটা জনপ্রিয়তা দেখে তিনি নিজেও বিস্মিত হয়েছিলেন। তিন দিন তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। সরকার তাকে আতিথেয়তার সর্বচ্চো করেছিলেন। তাকে কক্সবাজারে এক খন্ড জমিও উপহার দেয়া হয়। পুরো তিন দিন রেডিও-টিভিতে আলীর সম্মানে একটি গান বাজত, ' ... আলী বলে আমি কালো পাহাড়, এসো লড়বে যদি,..।' আলী যেখানেই যেতেন তার চারদিকে জনতার ঢল নামত। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিনি ছিলেন। সেখানে উনি সকালে গেটের সামনে হাটাহাটি করতেন ও লোকজনের সাথে কথা বলেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, "যদি কেউ স্বর্গ দেখতে চাও বাংলাদেশ ঘুরে আসো"

১৯৯৯ সালে বিবিসি এবং স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড মুহাম্মদ আলীকে স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি অথবা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় ঘোষণা করে।

উনার বিখ্যাত উক্তি, -- "প্রজাপতির মত ভাসো, মৌমাছির মত হুল ফোটাও."


কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
১। Click This Link
২। Click This Link
৩। https://www.youtube.com/watch?v=9-NKvCj5uUM
৪। https://www.youtube.com/watch?v=OLpQQA9eEBU

মোহম্মদ আলী-র বাংলাদেশ সফরের কিছু ছবি (Some photoes of Bangladesh visit of Mohammad Ali):














সিলেটের মালনিছড়া গলফ ক্লাবে মোহম্মদ আলী ও ভেরোনিকা আলী, ১৯৭৮ (ছবি কার্টেসী: মহিউদ্দিন আহমেদ)

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৪:৫০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×