somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিকম্প আতংক

১৫ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকম্প আতংক
--------------- রমিত আজাদ

কয়েকদিন যাবৎ ভূমিকম্প আতংকের কথা শুনতে পাচ্ছি। এই প্রসঙ্গে পুরাতন একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো। ২০০৫ সালের কথা। আমি তখন মস্কোতে কর্মরত। আমার এক রুশ বন্ধু ছিলেন। তিনি পেশায় একজন প্রোগ্রামার। আমাদের কোম্পানীর সফটওয়্যার তৈরী করে দিতেন। সপ্তাহে দু'একবার আমাদের অফিসে আসতেন। সেই সূত্র ধরে তাঁর সাথে আমার পরিচয়। পেশাগত সম্পর্ক হলেও তাঁর সরলতা, ভদ্রতা ও বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাবের কারণে তাঁর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। একদিন তিনি আমাকে বললেন, "আসছে সামারে কি আপনি মস্কোতে থাকবেন?" আমি বললাম, "হ্যাঁ, থাকবো।" তিনি বললেন, "না থাকলে হয়না? ছুটিটা বাইরে কোথাও কাটান।" আমি বললাম, "কেন?" তিনি বললেন, "মস্কোতে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা আছে।" আমি যখন সিঙ্গল ছিলাম তখন এইসব কথা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না, কিন্তু সংসারী হওয়ার পর থেকে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পাই। তাই উদ্বেগের সাথে জানতে চাইলাম, "তাই? কে বলেছে? কিসের উপর ভিত্তি করে বলেছে?" (এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের চুলচেরা পূর্বাভাসের বৈজ্ঞানিক কোন পন্থা আবিষ্কৃত হয়নি এটা আমি জানি, বরং এখনো এই বিষয়ে একটা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তা হলো পশুপাখীদের ই.এস.পি. ক্ষমতার উপর নির্ভর করা ও তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখা) বন্ধুটি বললো, "একজন পাদ্রী টিভিতে বলেছেন।" আমি বললাম, "পাদ্রী মশায়ের এহেন ধারনার ভিত্তি কি? লোকেই বা তা বিশ্বাস করছে কেন? বাউমুনস্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট হয়ে তুমিই বা এসব অবৈজ্ঞানিক মতামতে বিশ্বাস করছো কি করে?" তিনি বললেন, "মস্কো অনাচারে ভরে গিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাস মনযোগ দিয়ে পাঠ করলে দেখা যায় যে, যখনই কোন সমাজ অনাচারে ভরে যায়, তখনই সেখানে কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে। সবকিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকেনা।" এবার আমার ধাক্কা খাওয়ার পালা। মস্কো যে অনাচারে ভরে গিয়েছে তা তো আমি নিজের চোখেই দেখছি। আর ইতিহাস বই-এ নিজেই পড়েছি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনপদের উপর নেমে আসা দুর্যোগের কথা। এরপর সাইকোলজিকাল কারনে পুরো সামারটা খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। তবে পুরো সামার পার হয়ে যাওয়ার পরও কোন ভূমিকম্প হলো না। একটি অশুভ সময় পার করতে পেরেছি ভেবে মনে মনে খুশি হলাম। সামার শেষে বন্ধুটি আবার অফিসে এলো। তার পরনে টি শার্ট, জিনসের প্যান্ট আর পায়ে বাংলাদেশী স্টাইলে একটা চামড়ার চপ্পল। চপ্পল দেখে অবাক হলাম, এভাবে চপ্পল পড়ে কাউকে কখনো অফিসে আসতে দেখিনি, তাছাড়া তাঁকেও অনেকটা বিধ্বস্ত মনে হচ্ছিলো। তাঁকে দেখে একগাল হেসে আমি বললাম, "বন্ধু কই? সামার পার করলাম, ভূমিকম্প তো হলোনা?" বন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে বিষাদগ্রস্ত কন্ঠে বললো, "আমার জীবনে সেই ভূমিকম্প হয়েছে।" আমি বিস্মিত কন্ঠে বললাম, "তার মানে?" তিনি ভারাক্রান্ত কন্ঠে উত্তর দিলেন, "আমার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।" একটা ভালো ধাক্কা খেলাম। কয়েক মাস আগে আমি তাঁকে স্ত্রী ও শিশুপুত্রসহ দেখেছিলাম একটি মেট্রো স্টেশনে। খুব সুখী পরিবার মনে হয়েছিলো। তাদের মধ্যে এরকম একটা ঘটনা ঘটবে আশা করিনি। বুঝলাম, ভূমিকম্প বিষয়টি সিম্বলিক, এটা মানুষের জীবনে নানা ভাবেই আসতে পারে!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এরা কিভাবে দেশ ধ্বংস করার মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে?

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৮ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:৫৮

নরসিংদীর কোন এক উপজেলার বাসিন্দা ফোন দিয়ে বলল আজ ১৫ দিন তাদের উপজেলার মানুষ ১৫ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পায়নি।

বিএনপি আমলে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের দূর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতো। ডেইলী ষ্টার... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবহেলা

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৮ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০২

অনেক দিন ধরে কবিতার শব্দগুলো
আমার কাছে এসে কানে-কানে বলে,
তোমার কবিতার পাতায় আমি নেই
অথচ এভাবে কী তোমার জীবন চলে!

আমি বলি শূন্য থাকুক কবিতার খাতা
তাকে ভেবেই তো দিন রাত কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই "কম্পিটিটিভ" লেখা পড়ায় আপনার ছেলে পিছিয়ে!

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ০৮ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৫৬

লেখাপড়া নিয়ে সাধারণ মানুষের থেকে আমার ভিউটা বেশ ভিন্ন। আমি আমার সন্তানদের উপরে লেখা পড়া নিয়ে হুদাই চাপ তৈরী করতে নারাজ।



২০২২ এ আমার ছেলেকে স্কুলে নিয়ে গেলাম। তাকে কেজিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজও ভারতীয় বি.এস.এফ. বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে গুলি চালিয়েছে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৯


ছোটখাটো ইস্যু হলেই ক'দিন পরপরই বাংলাদেশের সীমান্তে নির্বিচারে মানুষকে গুলি করছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বি.এস.এফ.। এই বিষয়গুলো বারবার ঘটার পরেও সরকার প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ কেন নিচ্ছে না তা আমার বোধগম্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন সীমান্তে বিএসএফ কেন গুলি করে না?

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮



বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে ঢুকে আজকেও ১ জন বাংলাদেশী নাগরিককে গুলি করেছে বিএসএফ; রংপুর এলকার সীমান্তে এই ঘটনা ঘটেছে; নিউইয়র্কের ব্লগার ইফতেখার ভিডিওসহ পোষ্ট দিয়েছেন। পোষ্টে তিনি গত ৫২... ...বাকিটুকু পড়ুন

×