somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

# উল্টো-স্রোতের কুল-ঠিকানা: সর্বগ্রাসী অপ-‘বাদ’ বনাম একজন আরজ আলী ... [০৩]

১৩ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কী সেই প্রশ্ন

বিষয়ের মধ্যে বিষয় খুঁজে না পাওয়াটাই বোধ করি দর্শনের একটি বহুল আলোচিত বিষয় বা চিরায়ত দার্শনিক জটিলতাও। কথাটা হেঁয়ালিপূর্ণ মনে হলেও হাস্যকর নয় কিছুতেই। কেননা চলতে ফিরতে আমরা আমাদের সাদাসিধে যাপন প্রণালীর মধ্যেও এরকম দার্শনিক হাপরে পতিত হই মাঝেমধ্যেই। একটা সংবেদনশীল ও গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে হয়তো আলোচনা করতে হবে, চিন্তাসূত্র গাথার প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে ভাবতে বিষয়ের এতো অগুনতি ডালপালা গজিয়ে যায় যে শেষপর্যন্ত কোথা থেকে কীভাবে শুরু করতে হবে তা নির্বাচন করাটাই একটা জটিলতর সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। যেখান থেকে শুরু করলে সুরাহার খুব সুন্দর একটা উপায় হয়তো বের হয়ে আসতে পারতো, সেটা না হয়ে ভুল পথে পা দিয়ে আষ্ঠেপৃষ্টে পেঁচিয়ে নিজেকে হতবিহ্বল করে তুলছি। হয়তো মাঝপথে ক্ষান্ত দিয়ে ফের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে হচ্ছে। এবং আবারো ওই একই সমস্যা; কোত্থেকে শুরু করবো? অর্থাৎ অন্বিষ্ট বিষয়ের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান যে অসংখ্য বিষয়ের সমাহার, তা থেকে উপযুক্ত বিষয়টিকে নির্বাচন করা বা তুলে আনাটাই মূলত একটা সম্ভাব্য সহজ প্রক্রিয়ার জটিল প্রারম্ভ-সূচক হয়ে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কেন এমন হয়? এর যথাযথ উত্তর হয়তো এটাই যে- যথাযথ প্রশ্নটি করতে পারছি না আমরা। কেন পারছি না? হয়তো প্রশ্ন করার উপায়টাই জানা নেই আমাদের, তাই।

জগতের সমস্ত উত্তরই না কি নিহিত থাকে উৎক্ষিপ্ত প্রশ্নের মধ্যেই। বলা হয়ে থাকে যিনি প্রশ্ন করতে জানেন, উত্তর তাঁকেই এসে ধরা দেয়। এবং প্রতিটা উত্তর হয়ে ওঠে ফের আরেকটা প্রশ্নের নিয়ামক সূত্র। এমনি করেই প্রশ্ন-উত্তর-প্রশ্ন-উত্তর-প্রশ্নের এই যে পর্যায়ক্রমিক বুনন প্রক্রিয়া, সেই সূচনা লগ্ন হতে কালক্রমে বয়ে বয়ে মানব-সভ্যতার অবারিত চিন্তা-জগতে তা-ই আজ সর্বব্যপ্ত হয়ে এক দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকেই কি দর্শন বলে? দর্শনের সংজ্ঞা নিরূপনের চাইতে বরং দর্শনের সাথে পরিচিত হওয়াটাই বোধ করি অধিকতর সহজ উপায়।

দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে দর্শন বিষয়ক কয়েকটি প্রশ্ন করা, অনাদিকাল ধরে যে সব প্রশ্ন করে আসছে মানুষ। এবং সম্ভবত মানুষের আদি দার্শনিক প্রশ্নগুলোর মধ্যে দু’টো প্রশ্নই অত্যন্ত মৌলিক- মানুষ কী, পৃথিবীটা কোথা থেকে এসেছে? কেবল এ দু’টো প্রশ্নই মানব সভ্যতার আদি দর্শনের ভিতটাকে গড়ে দিয়েছিলো বিপুলভাবে। পৃথিবীতে খুব সম্ভব এমন কোন সংস্কৃতি নেই যেখানে এ প্রশ্ন দু’টো উত্থাপিত হয় নি। এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই আদি মানবগোষ্ঠীর কল্পনাশক্তির সৃজনক্ষমতায় চমৎকার সব দৃষ্টান্ত হয়ে আছে হাজারো দেব-দেবী বিষয়ক পৌরাণিক কাহিনীর মায়াবী জগৎগুলো। মানুষের কল্পনা-ক্ষমতা যে কতো অফুরন্ত হতে পারে তার সাক্ষাৎ প্রমাণ পেয়ে যাই আমরা এগুলো পাঠ করলে। এখন প্রশ্ন আসে, কল্পনা কী? সমকালীন বাস্তবতায় যে প্রশ্নের উত্তর সাধারণত মেলে না তাকে কিছু উদ্ভাবনীমূলক ধারণাসৃষ্ট কাহিনী পরম্পরায় সাজিয়ে উত্তর খোঁজার আপাত স্বস্তি-প্রয়াসই কল্পনা। তাহলে প্রশ্ন চলে আসবে, ধারণা কী? এমনি করে সূত্র থেকে সূত্র ধরে একটার পর একটা প্রশ্নের তোরণ পেরিয়ে এক অনির্দিষ্ট তথা অভূতপূর্ব গন্তব্যের দিকে এই যে আপাত অনিশ্চিৎ ছুটে যাওয়া, এটাকে কী বলবো আমরা? কেউ কেউ বলেন ‘যুক্তি’। পৃথিবী কী করে সৃষ্টি হয়েছে? যা ঘটে তার পেছনে কি কোন ইচ্ছা বা অর্থ রয়েছে? মৃত্যুর পরে কি জীবন রয়েছে? কীভাবে জীবন যাপন করা উচিৎ আমাদের? এরকম হাজারো প্রশ্নের সংগতিকে অসংখ্য যুক্তি আর যুক্তিহীনতা দিয়ে যে যার মতো ধারণ করেছে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ভিত্তিক আদি মানবগোষ্ঠীর স্বকল্প গড়া উপাখ্যানগুলো। কালে কালে একদিন সভ্যতার মধ্যযুগে এসে তা থেকেই উৎপত্তি হয়ে গেলো ‘ধর্ম’ নামক বিচিত্র এক জটিল তত্ত্ব বা অদ্ভুত ধারণার। আর তখনি প্রশ্ন ওঠে, ধর্ম কি যৌক্তিক, না অযৌক্তিক?


চলবে.....
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×