জননীর জরায়ুতে হাত দিয়েছে যারা... (রি-পোস্ট)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
জননীর জরায়ুতে হাত দিয়েছে যারা
এই বিপুলা প্রকৃতিকে নির্দয় নির্দ্বিধ রেপ করতে করতে বিপর্যস্ততার যে চূড়ান্ত অবস্থায় তাকে নিয়ে এসেছি আমরা, অর্থাৎ মানুষ নামের হিংস্রতম প্রাণীরা, এখন আর আঁতকে ওঠে কী হবে ! তার বিষাক্ত ছোবল তো খেতেই হবে আমাদের। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইকো সিস্টেম। তার নিজস্ব সাম্যতা বা ব্যালেন্স পুনরুদ্ধার করতে নিজকে সে পুনর্বিন্যস্ত করবেই। এটাই শাশ্বত। আর এই পুনর্বিন্যাসের উত্থান পতনে প্রকৃতির গায়ে বিচরণশীল উকুনের মতো পরজীবী প্রাণীগুলোর গড়ে তোলা কত শহর গুঁড়িয়ে যাবে, কতো সভ্যতা দেবে যাবে, কতো নদী ভেঙ্গে নতুন স্রোতস্বীর জন্ম হবে বা উত্তরের পাহাড়টা বিলীন হয়ে পশ্চিমে গজাবে নতুন পাহাড় ; হয়তো বা অদৃষ্টপূর্ব আরো কতো কিছুই ঘটতে পারে। এবং ঘটছেও।
সভ্যতার ধারাবাহিক উৎকর্ষতার উত্থানপর্বের এই তথাকথিত সন্তোষ পর্যায়ে এসেও মানুষ কি আদৌ পেরেছে এই মহাপ্রকৃতির ছোট্ট একটু অভিমানও নিয়ন্ত্রণ করতে ? তার ক্ষোভ বা রোষ তো অনেক পরের কথা। ধর্মের নামে ভণ্ডামি, সভ্যতার নামে অসভ্যামি করতে করতে এতোটাই আত্মদর্পি হয়ে গেছি যে, প্রকৃতির জরায়ুতে কর্কশ হাত রাখার আগেও একটিবারও ভেবে দেখছি না আমরা- শরীর নিংড়ানো শালদুধ খাইয়ে যে মা আমাদেরকে বেঁচে থাকার যোগ্য করে তুলেছেন, বড় করেছেন মাতৃত্বের অপত্য স্নেহে, বড় হয়ে আমরা সে মায়েরই রক্ত চোষায় উদ্যত হয়ে নিজেদেরকে কতোটা হিংস্র পিশাচ বানিয়ে তুলছি।
গা থেকে মাটির গন্ধ মুছতে মুছতে মহাকাশ জয়ের অমিত স্বপ্ন নিয়ে শিল্প-সভ্যতা গড়ে তুলছি আমরা। কৃষি ভিত্তিক সমাজ তো এখন বড্ড আদিম ! আহারে মানুষ, অতি চালাক আর বোকার মধ্যে কি কোন তফাৎ আছে ? প্রকৃতির সন্তান হারিয়ে যাচ্ছে এখন। আর শিল্পের সুযোগ্য সন্তানরা, দেরি করছো কেন, লৌহ তাম্র কাচের খাবার কই ? জলদি করো জলদি করো। তোমাদের যন্ত্র-জিহ্বায় আর চাল গম ভুট্টার স্বাদ মানানসই নয় ! আধা মানুষ আর আধা যন্ত্রের জগাখিচুরি চোখে মা’কে তো আর মা মনে হয় না। এই বিকৃত দেখার চেয়ে যন্ত্র হয়ে যাও জলদি ! ব্যথাময় মৃত্যুর চাইতে অন্তত কষ্টহীন ধ্বংস তো পাবে ! কিন্তু সেটাও কি হবে ? মহাপ্রকৃতি কোন বিকৃতি কি মেনে নেবে সহজে ?
সিডর আক্রান্ত এই বিপর্যস্ত বাংলা উপকূলে এবার আরো শক্তিশালী নার্গিসের হুঙ্কারে তটস্থ আমরা হাফ ছেড়ে বেঁচেছি ওটা ভিন্নমুখি হয়ে গেছে বলে। আসলে কি বেঁচে গেছি ? ওরাও কি আমাদেরই ভাই বোন নয় ? মৃতের হাহাকার দিয়ে মায়ানমার’কে ধ্বংসপুরি বানিয়ে থাইল্যাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া নার্গিস আগামীর জন্য ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত আর দুর্ভাবনা দেখিয়ে গেল, সেই আতঙ্কবোধ কাটাতে পারছি কই। এর আগ পর্যন্ত আবহাওয়াবিদদের বরাতে আমরা জানতাম জলভাগে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে ওঠে এলেই ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু নার্গিস এই সব সূত্র এলোমেলো করে দিয়ে বুঝিয়ে গেলো- প্রকৃতির রুদ্ররোষ এখনো মানুষের আয়ত্তের বাইরেই, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা-স্বাধীন।
ভিন্ন নামে আরো অসংখ্য সিডর নার্গিসের মুখোমুখি আমাদের হতে হবে, এবং হতেই থাকবো। জননীর জরায়ু ছোঁয়ার স্বেচ্ছাকৃত হঠকারিতার অনিবার্য পরিণাম সইতে সাধের এই মানুষ জাতি কি প্রস্তুত ?
অন্ধ হলেই কি প্রলয় বন্ধ থাকে !
(০৭/০৫/২০০৮)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=হিংসা যে পুষো মনে=

হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।
কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।
রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।