somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জননীর জরায়ুতে হাত দিয়েছে যারা... (রি-পোস্ট)

১৪ ই মে, ২০০৮ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জননীর জরায়ুতে হাত দিয়েছে যারা

এই বিপুলা প্রকৃতিকে নির্দয় নির্দ্বিধ রেপ করতে করতে বিপর্যস্ততার যে চূড়ান্ত অবস্থায় তাকে নিয়ে এসেছি আমরা, অর্থাৎ মানুষ নামের হিংস্রতম প্রাণীরা, এখন আর আঁতকে ওঠে কী হবে ! তার বিষাক্ত ছোবল তো খেতেই হবে আমাদের। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইকো সিস্টেম। তার নিজস্ব সাম্যতা বা ব্যালেন্স পুনরুদ্ধার করতে নিজকে সে পুনর্বিন্যস্ত করবেই। এটাই শাশ্বত। আর এই পুনর্বিন্যাসের উত্থান পতনে প্রকৃতির গায়ে বিচরণশীল উকুনের মতো পরজীবী প্রাণীগুলোর গড়ে তোলা কত শহর গুঁড়িয়ে যাবে, কতো সভ্যতা দেবে যাবে, কতো নদী ভেঙ্গে নতুন স্রোতস্বীর জন্ম হবে বা উত্তরের পাহাড়টা বিলীন হয়ে পশ্চিমে গজাবে নতুন পাহাড় ; হয়তো বা অদৃষ্টপূর্ব আরো কতো কিছুই ঘটতে পারে। এবং ঘটছেও।

সভ্যতার ধারাবাহিক উৎকর্ষতার উত্থানপর্বের এই তথাকথিত সন্তোষ পর্যায়ে এসেও মানুষ কি আদৌ পেরেছে এই মহাপ্রকৃতির ছোট্ট একটু অভিমানও নিয়ন্ত্রণ করতে ? তার ক্ষোভ বা রোষ তো অনেক পরের কথা। ধর্মের নামে ভণ্ডামি, সভ্যতার নামে অসভ্যামি করতে করতে এতোটাই আত্মদর্পি হয়ে গেছি যে, প্রকৃতির জরায়ুতে কর্কশ হাত রাখার আগেও একটিবারও ভেবে দেখছি না আমরা- শরীর নিংড়ানো শালদুধ খাইয়ে যে মা আমাদেরকে বেঁচে থাকার যোগ্য করে তুলেছেন, বড় করেছেন মাতৃত্বের অপত্য স্নেহে, বড় হয়ে আমরা সে মায়েরই রক্ত চোষায় উদ্যত হয়ে নিজেদেরকে কতোটা হিংস্র পিশাচ বানিয়ে তুলছি।

গা থেকে মাটির গন্ধ মুছতে মুছতে মহাকাশ জয়ের অমিত স্বপ্ন নিয়ে শিল্প-সভ্যতা গড়ে তুলছি আমরা। কৃষি ভিত্তিক সমাজ তো এখন বড্ড আদিম ! আহারে মানুষ, অতি চালাক আর বোকার মধ্যে কি কোন তফাৎ আছে ? প্রকৃতির সন্তান হারিয়ে যাচ্ছে এখন। আর শিল্পের সুযোগ্য সন্তানরা, দেরি করছো কেন, লৌহ তাম্র কাচের খাবার কই ? জলদি করো জলদি করো। তোমাদের যন্ত্র-জিহ্বায় আর চাল গম ভুট্টার স্বাদ মানানসই নয় ! আধা মানুষ আর আধা যন্ত্রের জগাখিচুরি চোখে মা’কে তো আর মা মনে হয় না। এই বিকৃত দেখার চেয়ে যন্ত্র হয়ে যাও জলদি ! ব্যথাময় মৃত্যুর চাইতে অন্তত কষ্টহীন ধ্বংস তো পাবে ! কিন্তু সেটাও কি হবে ? মহাপ্রকৃতি কোন বিকৃতি কি মেনে নেবে সহজে ?

সিডর আক্রান্ত এই বিপর্যস্ত বাংলা উপকূলে এবার আরো শক্তিশালী নার্গিসের হুঙ্কারে তটস্থ আমরা হাফ ছেড়ে বেঁচেছি ওটা ভিন্নমুখি হয়ে গেছে বলে। আসলে কি বেঁচে গেছি ? ওরাও কি আমাদেরই ভাই বোন নয় ? মৃতের হাহাকার দিয়ে মায়ানমার’কে ধ্বংসপুরি বানিয়ে থাইল্যাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া নার্গিস আগামীর জন্য ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত আর দুর্ভাবনা দেখিয়ে গেল, সেই আতঙ্কবোধ কাটাতে পারছি কই। এর আগ পর্যন্ত আবহাওয়াবিদদের বরাতে আমরা জানতাম জলভাগে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে ওঠে এলেই ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু নার্গিস এই সব সূত্র এলোমেলো করে দিয়ে বুঝিয়ে গেলো- প্রকৃতির রুদ্ররোষ এখনো মানুষের আয়ত্তের বাইরেই, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা-স্বাধীন।

ভিন্ন নামে আরো অসংখ্য সিডর নার্গিসের মুখোমুখি আমাদের হতে হবে, এবং হতেই থাকবো। জননীর জরায়ু ছোঁয়ার স্বেচ্ছাকৃত হঠকারিতার অনিবার্য পরিণাম সইতে সাধের এই মানুষ জাতি কি প্রস্তুত ?

অন্ধ হলেই কি প্রলয় বন্ধ থাকে !

(০৭/০৫/২০০৮)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×