somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এবং নিয়ে যত কথা...

১৩ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এবং নষ্ট হয়ে গেছি আমি
তোমাদের ভালোবাসার গণ্ডি ছেড়ে কোন এক
অস্থির সীমানায়...
প্রতিজ্ঞা করিনি কোন দিন,
আজো করবো না তাই
তবুও বলছি আমি সত্যিই নষ্ট হয়ে গেছি।

চৈতের কাঠফাটা দুপুরে কোন মায়ের ভেজা গণ্ডে
যে হাতের পরশ জাগিয়ে তুলতো
শরতের নির্মেঘ আকাশ
চোখে শুভ্র কপোত
সে-হাতের স্পর্শে এখন নীরবে ঝরে যায়
যে কোন সুহাসিকা ফুল।
এই সে ক্লান্ত দৃষ্টি জানি না কেমন আমার
অথচ অনায়াসে থেমে যায়
আনমনা যে কোন পাখির গান
শিশুর হাসি... হয়তো কান্নাও;
তবুও হেঁটে যাই দিব্যি আমি
সবার চোখের ওপর দিয়ে
এক কালে যেখানে বেড়াতাম এমনি।

যখন কোন নারী
আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়
অবাক হই না মোটেও
শুধু বুকের ভেতর জমে ওঠে একটা অচিন বালুরচর-
অসংখ্য তৃষ্ণার্ত পাখিরা খুঁড়ে খুঁড়ে
চুষে নেয়
আশার উন্মাদ স্রোত
এবং কেউ আমার দিকে তাকালে-
অবাক হয়ে তাকালে
নিঃশ্বাসে নিমেষে জন্ম নেয় প্রচণ্ড কালবৈশাখ;
ইচ্ছে হয় চিৎকার করে বলি- দু’হাতে বুক চিরে বলি
এই দেখো এই দেখো নষ্ট আমি
কেমোন নষ্ট হয়ে গেছি!
অথচ নিশ্চল সমাধিস্থ সাধকের মতো
হয়তো তখন নিরেট স্বগতোক্তিই বেরিয়ে আসে-
আমি নষ্ট হয়ে গেছি
শুধু তোমরা ভালো থাকবে বলেই... #

(নষ্ট কাব্য/ অদৃশ্য বাতিঘর/ রণদীপম বসু )


আমার এখনকার বিষয় কিন্তু কবিতা নয়। কবিতাটা অনুষঙ্গ। বিষয় এবং। এই এবং শব্দটি নিয়ে আজ যে বিতর্কটি আকস্মিকভাবেই জেগে ওঠলো তার প্রেক্ষিতেই এই কথকথা।

বাক্যের শুরুতে এবং বসানো কতোটা যুক্তিযুক্ত ? আমার শ্রদ্ধেয় বস হঠাৎ করেই আমাকে ধরে বসলেন। যদিও আজকের সংঘটিত ঘটনায় উদ্দিষ্ট পাত্র আমি নই, আমার এক সিনিয়র কলিগ, তবু আমাকেই ধরে বসার প্রধান কারণ একটাই। মাঝে মাঝে আমি যে রাইট-আপগুলো তৈরি করি, তাতে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে একটা বাক্য শেষ করে পূর্ণযতি দাড়ি ব্যবহারের পর ফের আরেকটা বাক্য কখনো কখনো এবং দিয়ে শুরু করি। এবং তিনি আবার ওই দাড়িগুলো কেটে বাক্যের ব্যাকরণগত শুদ্ধতা পুনরুদ্ধার করে করে যখন আমার হাতে তা ফিরিয়ে দেন, আমার আর না মেনে উপায় থাকে না। কেননা ওগুলোর স্বাক্ষরকারী তো মূলত তিনিই হবেন। তাছাড়া বাংলার ছাত্র হিসেবে তিনি ভাষার উপর এরকম ধারাবাহিক অত্যাচার সহ্য করবেনই বা কী করে !

কিন্তু আজকে যখন আমার এক সিনিয়র কলিগও এবং ব্যবহারে একই কাজ করলেন, সম্ভবত রোগ সংক্রমণের সচলতা টের পেয়ে অফিসের শেষ মুহূর্তে একেবারে বেরিয়ে যাবার প্রাক্কালে বস সোজা চলে এলেন আমার ডেস্কের সামনে। সাথে ওই কলিগও আছেন। আমি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসপ্রিয় রসিক বসের সরাসরি প্রশ্ন, আপনি কি তাকেও শিষ্য বানিয়েছেন নাকি ?
কিছু বুঝে ওঠতে না পেরে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তাঁর দিকে। পেছনে কলিগটি মুচকি মুচকি হাসছে। বুঝলাম বিষয়টা সিরিয়াস হলেও নেতিবাচক কিছু নয়, ইতিবাচকই হবে। ভেতরে ভেতরে আশ্বস্তও হলাম।
এই অফিসে একমাত্র আপনিই বাক্যের শুরুতে এবং ব্যবহার করেন। কেন করেন ?
ইতোমধ্যেই আমি ভেতরে ভেতরে সাহস সঞ্চয় করে নিয়েছি। বললাম, স্যার, বাক্যে ব্যঞ্জনা সৃষ্টির জন্যে।
এবং কখন ব্যবহার করতে হয় জানেন ?
জী জানি। বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী দুটো শব্দ বা বাক্যকে সংযুক্ত করতে অন্যতম অব্যয় হিসেবে এবং ব্যবহার করা হয়।
তাহলে যতি চিহ্ণের পরে এবং ব্যবহার কি শুদ্ধ ? বসের পাল্টা প্রশ্ন।
আমি সবিনয়ে বললাম, স্যার, যতিচিহ্ণের পরে নতুন বাক্যের শুরুতে এবংটাকে তো অব্যয় হিসেবে ব্যবহার করছি না। ওটা তখন অন্যরকম একটা শব্দ। প্রতীকী অর্থ ধারণ করে।
যেমন ?
হতে পারে শেষপর্যন্ত, বস্তুত,তবু এরকম !
পাশ থেকে আরেকজন কলিগ ফোঁড়ন কাটলেন, বাক্যের প্রথমে এবং কবিতায় ব্যবহার হতে পারে, গদ্যে নয়।
বসও সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন, হা কবিতায়।
আমার তখন আত্মপক্ষ সমর্থনে শেষ চেষ্টা। স্যার, শব্দ ব্যবহারে এতোটা রক্ষণশীল না হয়ে ভিন্নমাত্রিক ব্যবহারে যদি বৈচিত্র্য ও ব্যঞ্জনা এনে ভাষাকে আরো অর্থপূর্ণ ও শ্রুতিমধুর করে তোলা যায়, তাহলে শুধু কবিতায় কেন, গদ্যেও এই ব্যবহার করা যায়। ইদানিং এরকম ব্যবহার তো পত্র পত্রিকায় সাহিত্যে হরদম চলছে !
তিনি সকৌতুকে না কি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছেন বুঝতে পারছি না। হয়তো কোন নমূনা উদাহরণ শুনতে চাচ্ছেন ভেবে আমি উপরোক্ত কবিতাটির প্রথম কয়েক চরণ আবৃত্তি করে শুনিয়ে দিলাম। তাঁর মুখে হাসি সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু গদ্যসাহিত্যের তেমন কোন উদাহরণ সে মুহূর্তে মাথায় এলো না।

তার আর প্রয়োজনও হলো না। এর আগেই শ্রদ্ধেয় বস হা হা করে হেসে ওঠলেন। সেই কলিগকে ইশারায় দেখিয়ে বললেন, এই জন্যেই তো এবার অনুমোদন দিয়ে দিলাম। হা হা হা !
এবং গট গট করে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
(১১/০৮/২০০৮)
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×