somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদের কেবল্ টিভির ডিশ লাইন ব্যবসা বনাম নৈতিকতা

০২ রা অক্টোবর, ২০০৮ রাত ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ঈদের ঠিক আগের দিনটাতে টিভির কেবল্ লাইনটা হঠাৎ অফ হয়ে গেলো। টিভি অন করতেই মনিটরে শুধু ঝিরঝিরি। হয়তো সাময়িক যান্ত্রিক ত্রুটি হবে ভেবে গা করি নি। তা ছাড়া এমনিতেই আমি লেখালেখি আর কম্পিউটার নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকি যে টিভির সামনে খুব একটা বসা হয় না। তাই কোন্ চ্যানেলে কবে কী অনুষ্ঠান এসব সূচিটুচিরও ধার ধারি না। হঠাৎ করে রিমোট হাতে নিয়ে এতোগুলো চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভালো কোন অনুষ্ঠান খোঁজার বিরক্তির চেয়ে বিজ্ঞাপন আর ভাঁড়ামোর বিড়ম্বনা আরো বেশি। তা ছাড়া জেন্যুইন দর্শক যিনি, বাচ্চার স্কুল বন্ধের সুবর্ণ সুযোগটাকে যথোপযুক্ত কাজে লাগানোর মহতি ইচ্ছা নিয়ে নাইওরী হয়েছেন। অতএব আমার তো টিভিমুখো হবারই কথা না।

কিন্তু ঈদের লম্বা বন্ধের সুযোগে চাকুরেরা যখন পইপোটলাসহ ঢাকা ছেড়ে বাড়িঘরমুখো হচ্ছেন, ছোট্ট ভাইটা সে সুযোগে উল্টো ঢাকামুখি। গতকাল এসে হাজির। বাড়ির হাউকাউ গইগ্যাঞ্জামের চেয়ে ঢাকাতে ক’টা দিন নিরিবিলিতে ঈদের স্পেশাল অনুষ্ঠানগুলো তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা যাবে। আর ফাঁকে ফাঁকে ফাঁকা হয়ে যাওয়া ঢাকা শহরটাকে নিরুপদ্রবে ইচ্ছেখুশি ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে। কিন্তু প্রথম পরিকল্পনাতেই ধাক্কা খেয়ে ভাই আমার রীতিমতো তটস্থ। আট ঘণ্টা পেরিয়ে গেলো লাইন তো ঠিক হচ্ছে না !

এমন নয় যে বিল বাকি। সংশ্লিষ্ট মাসের ডিশের বিল কেবল অপারেটররা শুরুতেই অগ্রীম নিয়ে যায়। অতএব বিষয়টা কী তা বোঝার জন্য আশেপাশের ফ্ল্যাটগুলোতে খোঁজ খবর নিতে লাগলাম। খুবই পরিতাপের বিষয়, আমাদের পুরনো লাইনের সব গ্রাহকরাই বুড়ো আঙুল চুষছেন। অথচ নতুন চালু হওয়া সেদিনের অপারেটর লাইনটা ঠিকই বহাল তবিয়তে চালু এবং আগের চাইতেও নাকি রঙ বেশি ছড়াচ্ছে। আহারে, নতুন চালু করার সময় কতো সুযোগ সুবিধা অফার করেছিলো এরা ! তখন কেন যে লাইনটা পাল্টালাম না ! আফসোস হচ্ছে। আমাদের অপারেটরের নম্বরে মোবাইল কল করছি, লাইন বিজি এবং রিং বাজলেও ফোন ধরছে না। বিষয় কী ? শেষপর্যন্ত সন্ধ্যের পর বাসা থেকে বেরোলাম। বেশ কিছুদূর হেঁটে তাদের অফিসে গিয়ে দেখি দোকানের সাটার নামানো এবং প্রতিটা পয়েণ্টে ইয়া বড়ো বড়ো তালা ! মাথাটা উষ্ণ হয়ে উঠছে। আশেপাশের দোকানগুলোতে খোঁজ নিলাম, এরা কোথায় ? গতকাল থেকে কর্মচারিদের ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে, তাই কেউ নেই।
নেই মানে ! আমি তো রীতিমতো হতবাক ! আসার পথেই তো অন্য কেবল অপারেটরদের অফিসগুলো খোলা এবং সক্রিয় দেখে এলাম। অথচ এদেরটা বন্ধ ! কিছুতেই হিসাব মিলছে না। এখন এই ঈদের তুমুল সময়টাতে এসে যখন তাদের সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা সেনসেটিভলি খুব গুরুত্ব দাবি করছে, তখনই কিনা এরা নেই ! এ কেমন এদের ব্যবসা, আর কী রকমই বা এদের ব্যবসা পলিসি, বুঝতে পারছি না। তাদের পরিচালকের নম্বরেও বারবার রিং করলাম। শুধুই নো আনসার !

ব্যর্থ অসন্তোষ নিয়ে ফিরে এসে দেখি বাসার সামনে হল্লা। সামনের লাইটপোস্টের গায়ে মই লাগানো। শহরের ডিশ লাইন সরবরাহ ব্যবস্থাটা রাস্তার লাইট পোস্টগুলোকে অবলম্বন করে গড়ে উঠা বলে মোড়ে মোড়ে লাইট পোস্টের গায়ে কেবলের কম্বাইন্ড সংযোগ পয়েণ্ট তৈরি করা। আমার বাসার সামনেও তা-ই। মইয়ের চূঁড়ায় দাঁড়িয়ে কর্মরত লোকটিকে ভেতরে ভেতরে বহু আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি কোন লাইনের লোক ? নীচে দাঁড়ানো অন্য একজন আবছা আলো থেকে জবাব দিলো, আমরা ... ... কেবলের। মানে আমাদেরটা নয় ! আবারো আশাহত হলাম। অথচ এই এরা যখন নতুন লাইন বসায়, আকর্ষণীয় সুযোগ ও রেট অফার করলেও পুরনো লাইনটা পাল্টাই নি শুধু নৈতিকতা নামের কী অদ্ভুত একটা বিষয়কে মাথায় রেখে ! চলমান লাইনে যেহেতু কোন সমস্যা নেই, কোন অজুহাত ছাড়াই পুরনোদের সাথে কোনরূপ জয়জিজ্ঞাসা না করে হুট করে লাইন পাল্টে নেয়াটা তখন আমার কাছে খুবই অনৈতিক মনে হয়েছিলো। এখনো যখন খুব যুক্তিসঙ্গতভাবেই আশেপাশের ফ্ল্যাটের লোকজন ঝটপট নিজেদের লাইনগুলো পাল্টে নতুন লাইনের সংযোগ দিয়ে টিভিগুলো সচল করে নিচ্ছে, আমাকেও করে দেবে কিনা জানতে চাইলে এবারও আমি ইতিবাচক কোন সাড়া দিতে পারলাম না। বললাম, আগে তাদের সাথে আলোচনা করে না নেয়াটা অনৈতিক হয়ে যায় না ?
থাকেন আপনার নৈতিকতা নিয়ে, বলেই লোকগুলো চলে গেলো।
আমি বিষণ্ন মনে ঘরে ফিরে এলাম। নীরব ছোট্ট খালি বাসায় হাসিখুশিপ্রিয় ভাইটির মুখে রাজ্যের হতাশা।

একটা মাসের রোজার সংযম শেষে আগামীকাল পবিত্র ঈদ। চারদিকে আনন্দের কোলাহল। ছোট ভাইটার জন্য জমে উঠা কষ্টটা বুকে চেপে দোতলার বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। কাচের জানলা ডিঙিয়ে এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে পাশের ফ্ল্যাটের টিভিটাতে সচল রঙের ঝলকানি। ফ্ল্যাটের ভদ্রলোকও, যিনি একটু আগেই লাইন পরিবর্তন করিয়েছেন, বোধ করি তাঁর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তিনি আমাকেই পর্যবেক্ষণ করছেন। চোখে চোখ পড়তেই বিজয়ীর মতো একটা অচেনা হাসি ছুঁড়ে দিয়ে রুমে ঢুকে গেলেন। আর আমি তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই হাসির অর্থ উদ্ধারের কসরত করে যাচ্ছি...।
(০১/১০/২০০৮)
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×