somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই সেই বহুল আলোচিত জল্লাদখানা...!

১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই সেই বহুল আলোচিত জল্লাদখানা ! যাকে এখন সবাই জানে ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি ১৯৭১’ নামে। মিরপুর দশ নম্বর গোলচক্কর থেকে এগার নম্বরের দিকে কিছুটা আগালেই মিরপুর বেনারশি পল্লীর প্রথম গেট ধরে পাকা রাস্তাটা আধা কিলোতক যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, ঠিক সেখানেই একটা বড়সড় সাইনবোর্ডের কালো জমিনে সাদা সাদা বড় হরফে উপরোক্ত কথাটি চোখে পড়বে- ‘এই সেই বহুল আলোচিত জল্লাদখানা।’


পাশের ‘zaf’ চিহ্ণিত দালানটিই একাত্তরের সেই কুখ্যাত ‘পাম্পহাউজ’। যার কূপের সামনে একাত্তরের ঘৃণ্য আলবদর রাজাকাররা বহু নিরপরাধ বাঙালিকে ধরে এনে শিরচ্ছেদ ও হত্যা করে পাম্পহাউজের পানি ভর্তি কূপ-গহ্বরে নিক্ষেপ করতো। এলাকার বিভিন্ন স্থানে শহীদ হয়েছেন এমন আরো অনেকের লাশও টেনে এনে ফেলা হতো এখানে।


১৯৭১ সালে বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরের অনেকগুলো জায়গাই হয়ে উঠেছিলো বধ্যভূমি। এমনি দুটি স্থানে পরে ১৯৯৯ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর খননকাজ চালায়। স্থানীয়ভাবে এই জায়গা দুটি পরিচিত ছিল জল্লাদখানা ও নূরী মসজিদ বধ্যভূমি হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক বিগ্রেডের সহযোগিতায় এই জল্লাদখানা বধ্যভূমি থেকে ৭০টি মাথার খুলি ও ৫৩৭২টি অন্যান্য অস্থি উদ্ধার করা হয়।


আর নূরী মসজিদ বধ্যভূমি থেকে উদ্ধারকৃত খুলি ও হাড়গোড়ের সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল ছিন্ন জামা-কাপড়, ওড়না-শাড়ি-ফ্রক, জুতো স্যান্ডেল, মানিব্যাগ, তসবি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের অনেক জিনিস। তার কতক নমূনা এই জল্লাদখানা বধ্যভূমির মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য রাখা হয় সেই অভিশপ্ত কূপটির পাশে। এবং কূপটিকে সিমেন্ট বাধাই করে ভারী কাঁচ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে বর্বরতার স্মারক চিহ্ণ হিসেবে। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এই স্মৃতিভূমি আজো ফিরে ফিরে স্মরণ করিয়ে দেয় গণহত্যার শিকার প্রত্যেক শহীদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা।


এই শোকস্মৃতিকে ধরে রাখতে পাম্পহাউজ চত্বরে নির্মিত ‘জীবন অবিনশ্বর’ নামের স্মারক ম্যুরাল-ভাস্কর্যটির দিকে তাকালে থমকে যেতে হয় ! এর পরিকল্পনা ও নির্মাণে শিল্পী রফিকুন নবী ও মুনিরুজ্জামান। গোটা চত্বর জুড়ে শানবাঁধানো ফলকে অঙ্কিত রয়েছে এ যাবৎ খুঁজে পাওয়া দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমির তালিকা, বহু শহীদের নাম এবং বিংশ শতাব্দিতে ঘটে যাওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য বর্বর গণহত্যার তথ্য। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমি থেকে সংগৃহিত মাটি এনে কাঁচের আধারে সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে স্মৃতি হিসেবে।


জল্লাদখানা বধ্যভূমির গেট দিয়ে ঢুকেই মনে হবে গা শিন শিন করা কোন এক নিঝুমপুরীতে বুঝি পা রাখলাম ! এখানকার আবহটাই এমন যে, হাতে গোনা দর্শনার্থীরা এসে অজান্তেই কী এক নির্জন নীরবতার মধ্য দিয়ে ঘুরে ঘুরে এই ছোট্ট পরিসরের মধ্যেই এক শোকবিভোর উপলব্ধিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ মন্তব্য বইয়ে লিখে যান ইচ্ছেখুশি, অনেকেই মনের কথা মনে চেপেই ফিরে যান।


মুক্তিযুদ্ধের ন’মাসের রক্ত আর মৃত্যুর নদী পেরিয়ে স্বজন হারানোর আর্তি আর বিজয়োল্লাস যখন একাকার, তখুনি অকস্মাৎ যে ভয়াল বিষাদের ভারে গোটা জাতি স্তম্ভিত মুহ্যমান হয়ে পড়ে, তা হলো একের পর এক অসংখ্য বধ্যভূমির আবিষ্কার ! বর্বর নিষ্ঠুর কায়দায় পড়ে থাকা স্বজনের বীভৎস বিকৃত গলিত লাশের গন্ধে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে ! ভারী হয়ে উঠে জাতির হৃদয়, বিশ্ব মানবতার বিবেক হয়ে যায় স্তব্ধ ! সে ভার আর কখনো নামানো যায় নি এ জাতির বুক থেকে। দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত সবখানেই ওঠে আসে বধ্যভূমি আর বধ্যভূমি ! সোনার বাঙলাকে সত্যিই শ্মশান করে দিয়েছে ওরা !


এই সব ভয়াল গণহত্যার হোতা ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীরাই একদিন আবার এ জাতির হর্তাকর্তারূপে আবির্ভূত হতে দেখা গেলো। এক সাগর রক্ত আর লক্ষ লক্ষ মৃত্যু আর মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া লাল সবুজের পতাকা শোভিত হয়ে অপমানের পাশাপাশি এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের দ্বারা মহান জাতীয় সংসদও কলঙ্কিত হলো। যেসব ভণ্ড প্রতারক শাসকগোষ্ঠী এই স্তম্ভিত জাতির আর্তিকে তোয়াক্কাও না করে সেই বর্বর যুদ্ধাপরাধীদেরকে পূনর্বাসন পৃষ্ঠপোষকতা করে করে আবারো বিকৃত দানবে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে ইন্দন জুগিয়েছে, তারাও আজ সমান অপরাধী।


তাই আজ গোটা জাতির একটাই প্রত্যাশা, সব সহযোগীসহ একাত্তরের ওইসব মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদেরকে অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে হবে। এ জাতির কপাল থেকে লজ্জাকর কলঙ্কের দাগ মুছতে হলে একটাই পথ- একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই-ই চাই ! কেননা যতক্ষণ বিচার না হবে, আগামী প্রজন্মের কাছে বিশ্বমানবতার কাছে আমরাও যে ক্ষমার অযোগ্য পশুই থেকে যাবো..! মানুষ হতে পারবো না..!

(জল্লাদখানার আরো ছবি )
১৩টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×