somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।০৮। আসন: শবাসন।

২৫ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


# শবাসন (Shavasana)

ইয়োগা চর্চাকারীমাত্রই জানেন যে, যোগাসনের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ও দুর্বোধ্য আসন হচ্ছে শবাসন (Shavasana)। অথচ মজার বিষয় হলো, এই শবাসনকেই অনেকে অত্যন্ত সহজ একটি আসনাবস্থা হিসেবে ধারণা করে নিতে কেন যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তা বোধগম্য নয়।

যোগ-কুশলীদের মতে আসন অভ্যাসের প্রতি পর্যায়ে একবার করে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।ইয়োগার কোন একটি আসন বার কয়েক সম্পূর্ণ অভ্যাসের পর পরই শবাসনের মাধ্যমে দেহমনের বিশ্রাম দেয়া যোগব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। এভাবে একটি যোগাসন অভ্যাসের পর প্রয়োজনমতো একবার ৩০সেঃ থেকে ৪৫সেঃ শবাসনে বিশ্রাম নিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। বরং অন্য কোন আসনের প্রকৃতি অনুযায়ী দেহের বিশেষ কোন অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গে রক্তসঞ্চালন সাময়িক রুদ্ধ বা প্রচুর রক্ত চালিত করার ফলে যে ভিন্নতা প্রয়োগ করা হয়, তাকে পূর্বাবস্থার উন্নততর স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া হিসেবে শবাসনের চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শব অর্থ মৃতদেহ। মৃত ব্যক্তির যেমন তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর কোন কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তেমনি শবাসন অবস্থায় অভ্যাসকারীর দেহের কোন অংশে তার কোন কর্তৃত্ব থাকবে না। মৃত ব্যক্তির মতো আসনচর্চাকারীকেও কিছুক্ষণের জন্য বাস্তব জগৎ থেকে দূরে সরে যেতে হবে। ব্যক্তি আর ব্যক্তিতে থাকবে না। সমস্ত চিন্তা-ভাবনা থেকে মনকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে রাখতে হয়।



প্দ্ধতি:
দু’হাত শরীরের দু’পাশে মেলে রেখে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের তালু উপর দিকে এবং পায়ের পাতা দু’পাশে একটু হেলে থাকবে। অথবা যেভাবে ভালো লাগে সে ভাবেই রাখুন। এবার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল করে দিন। দেহের প্রতিটি জোড়া ও মাংসপেশী আলগা করে দিন। শরীরের কোন অংশে কোনরকম জোর থাকবে না। মন শান্ত, ধীর, চিন্তাশূন্য করে মৃতের মতো কিছুক্ষণ পড়ে থাকুন। শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ সরল ও মন্থর থাকবে। মনে রাখতে হবে, বাস্তব জগৎ থেকে আপনি এখন দূরে আছেন। মনটাকে শিথিল করে অনুভব করুন, আপনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো এখন আর আপনার নেই, কোথায় আছে তাও জানেন না আপনি। এ আসন অবস্থায় যদি ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে বুঝতে হবে আসনটি ঠিকমতো অভ্যাস হচ্ছে।

অনেকের মতে পা থেকে শুরু করে এক এক করে শরীরের এক একটি অংশ শিথিল করে এনে তারপর মাথা শিথিল করতে হবে। প্রক্রিয়াটি আসলেই কঠিন এবং দুর্বোধ্যও। তবে যার কাছে যেভাবে সহজ ও স্বাভাবিক মনে হবে সেইভাবেই করা উচিৎ। আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মনকে চিন্তাশূন্য করে দেহকে শিথিল করে দেহ ও মনকে কিছুক্ষণ সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেয়া, তা সে যেভাবেই হোক।



উপকারিতা:
শবাসন অসম্ভব উপকারী একটি আসন। দীর্ঘ সময় বা শ্রমসাধ্য কাজের পর অথবা অনিদ্রার পর কিছু সময় এই আসনটি করলে দেহ ও মনের সমস্ত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়ে যায়। নতুন জীবনীশক্তি, উদ্যম ও কর্মপ্রেরণা ফিরে আসে। যাদের অত্যধিক শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করতে হয়, তাদের আসনটি অবশ্যই করা উচিৎ। মন ও স্নায়ুতন্ত্র প্রয়োজনমতো বিশ্রাম না পেলে স্নায়বিক দুর্বলতা, বধিরতা, দৃষ্টিহীনতা প্রভৃতি নানা কঠিন রোগ হতে পারে। এমনকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলাও অস্বাভাবিক নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের এ আসনটি ‘মৃত সঞ্জীবনী’র মতো কাজ করে বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় অত্যধিক পড়াশুনার পর এই আসনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে অবসাদ, ক্লান্তি দূর হয়ে শুধু যে নতুন উদ্যম ফিরে আসে তাই নয়, স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়। প্রায় সব আসন অভ্যাসের পর কিছুক্ষণ শবাসনে বিশ্রাম নিতে হয়। কারণ, অন্যান্য আসন অবস্থায় শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে প্রচুর রক্ত চলাচল করে। তারপর শবাসনে বিশ্রাম নিলে রক্ত চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং হৃদরোগীদের জন্য আসনটি অবশ্য করণীয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের দু’মাস আগে থেকে এবং প্রসবের পর অন্ততঃ দু’মাস দিনে কিছু সময় শবাসনে বিশ্রাম নেয়া উচিৎ।



অতএব যুগপৎ অত্যন্ত সহজ এবং কঠিন এ আসনের যথাযথ অনুশীলন যে কারোর নিজের জন্যেই নিয়মিত ও অবশ্যচর্চিত হওয়া উচিৎ নয় কি !
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব:[০৭] [**][০৯]
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০০৯ রাত ৮:৫৭
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×