somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে |১৬| আসন: ধনুরাসন।

০৪ ঠা জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


# ধনুরাসন (Dhanurasana):
আসন অবস্থায় দেহটা অনেকটা ধনুকের মতো দেখায় বলে আসনটির নাম ধনুরাসন (Dhanurasana)|

পদ্ধতি:
সটান উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা দু’টো হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে পায়ের পাতা যতদূর সম্ভব পিঠের উপর নিয়ে আসুন। এবার হাত দু’টো পেছনদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে দু’হাত দিয়ে দু’পায়ের ঠিক গোড়ালির উপরে শক্ত করে ধরুন এবং পা দু’টো যতদূর সম্ভব মাথার দিকে টেনে আনুন। বুক, হাঁটু ও উরু মেঝে থেকে উঠে আসবে। শুধু পেট ও তলপেট মেঝেতে থাকবে। এবার উপরদিকে তাকান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে এবং ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এরপর হাত-পা আলগা করে আস্তে আস্তে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। একটু বিশ্রাম নিয়ে আসনটি ২/৩ বার করুন। প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


উপকারিতা:
এ আসন মেরুদণ্ডের হাড়ের জোড় নমনীয় রাখে। মেরুদণ্ড-সংলগ্ন স্নায়ুমণ্ডলী ও তার পাশের পেশী সতেজ ও সক্রিয় রাখে। বুকের পেশী ও পাঁজরের হাড় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং বুক সুগঠিত করে। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তলপেটের উপর দেহের সমস্ত ভার পড়ে বলে ঐ অঞ্চলের পেশী, স্নায়ুজাল সবল ও সক্রিয় থাকে এবং পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, প্লীহা, যকৃৎ খুব ভালো কাজ করে। যাদের বুক বয়স অনুযায়ী সরু ও অপরিণত, তাদের এ আসনটি অবশ্য করা উচিৎ। আসনটি অভ্যাসে দেহের মধ্যভাগের অপ্রয়োজনীয় মেদ দূর হয়, মনের চঞ্চলতা দূর করে এবং স্বভাবে ধৈর্য্য বৃদ্ধি করে। কোন স্ত্রী-রোগ বা পেটের রোগ সহজে আক্রমণ করতে পারে না।

ধনুরাসনের সঙ্গে পদহস্তাসন ও শশঙ্গাসন অভ্যাস রাখলে কোনদিন লাম্বার স্পন্ডিলোসিস বা স্লীপড্‌ ডিস্ক জাতীয় কোন রোগ হতে পারে না।

নিষেধ:
যাদের হৃদযন্ত্রে বা গলদেশের ভেতরে কোন রোগ আছে, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আসনটি করা উচিৎ নয়।

# পূর্ণ-ধনুরাসন (Purna-Dhanurasana)


পদ্ধতি:
প্রথমে ধনুরাসন ভঙ্গিমায় বসুন। এবার হাত দু’টো আস্তে আস্তে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে দু’হাত দিয়ে দু’পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। এখন পায়ের পাতা দু’টো টেনে এনে মাথার ব্রম্‌হতালুর উপর রাখুন। কনুই ভেঙে সামনের দিকে আসবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এরপর আস্তে আস্তে হাত-পা আলগা করে, শুয়ে বিশ্রাম নিয়ে আসনটি ২/৩ বার করুন। শেষে প্রয়োজন মতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

উপকারিতা:
আসনটিতে ধনুরাসনের সব উপকার আরো ভালো ও কম সময়ে পাওয়া যায়।

নিষেধ:
ধনুরাসনের নিষিদ্ধতা এ আসনটিতেও মেনে চলতে হবে।


# আকর্ণ-ধনুরাসন (Akarna-Dhanurasana)


পদ্ধতি:
সামনে পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। বাঁ পা হাঁটু থেকে ভেঙে ডান উরুর উপর রাখুন। এবার বাঁ হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন এবং বাঁ পায়ের পাতাটি বাঁ কানের কাছে টেনে নিয়ে আসুন। এখন ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল স্পর্শ করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে এবং এ অবস্থায় ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ থাকুন। এরপর হাত-পা ছেড়ে দিয়ে বসে বিশ্রাম নিন। এভাবে হাত পা বদল করে আসনটি কয়েকবার (চারবার) করুন। প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


এ আসনকেই একটু ভিন্নভাবেও করা যেতে পারে। সামনে পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসে বাঁ পা হাঁটু থেকে ভেঙে ডান উরুর উপর রাখুন। এবার ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন এবং বাঁ পায়ের পাতাটি ডান কানের কাছে টেনে নিয়ে আসুন। এখন বাঁ হাত দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল স্পর্শ করুন এবং কোমর থেকে শরীরের উপরাংশ একটু বাঁকিয়ে মোচড় দিয়ে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এভাবে হাত-পা বদল করে আসনটি কয়েকবার করুন। প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


উপকারিতা:
আসনটি বিশেষ করে হাত, পা ও পিঠের দু’পাশের পেশী এবং স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে। উরু ও কোমরের সন্ধিস্থলের নমনীয়তা অক্ষুণ্ন রাখে, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আসনটি অভ্যাস রাখলে বাত বা সায়টিকা কোনদিন হয় না, আর থাকলেও অল্পদিন অভ্যাসে ভালো হয়ে যায়।

এ আসন মেয়েদের জন্য বিশেষ উপকারী। আসনটি বস্তিপ্রদেশের ও উরুর সন্ধিস্থলের পেশী ও স্নায়ুজাল সুস্থ ও সক্রিয় রাখে। ফলে কোন স্ত্রী-রোগ হতে পারে না এবং সন্তান প্রসবের সময় দৈহিক কোন বাধার সৃষ্টি হয় না।

# ধনুরাসনের বৈচিত্র্য:
এই ধনুরাসনটি আসলেই একটি বিচিত্র আসন। এর মূলানুগ চর্চা ছাড়াও প্রায়োগিক চর্চায় এ আসনের বহু বিচিত্র রূপ দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু আসন নিচে দেখানো হলো।

@ এক পদ ধনুরাসন (Eka Pada-Dhanurasana)


@ উর্ধ্ব-ধনুরাসন (Urdhva-Dhanurasana)


@ এক পদ উর্ধ্ব-ধনুরাসন (Eka Pada Urdhva-Dhanurasana)


@ এক হস্ত উর্ধ্ব-ধনুরাসন (Eka Hasta Urdhva-Dhanurasana)


@ পদাঙ্গুষ্ঠ ধনুরাসন (Padangustha-Dhanurasana)


@ দণ্ডায়মান ধনুরাসন (Dandayamana-Dhanurasana)


@ অর্ধ-ধনুরাসন (Ardha-Dhanurasana)


[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব:[১৫] [**][১৭]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১২:০৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×