somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?-২

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?- ২

ড. রফী‘ উওন্‌লা বাসীরী ইজীবুঈ
অনুবাদ : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

খ. তাদের আক্বীদা ও বিশ্বাস

১. আল্লাহর উপর ঈমান সম্পর্কে:

মুসলিম মাত্রই এটা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তা‘আলার উপর বিশ্বাস তিন দিক থেকে হতে হয়:

এক: সমস্ত সৃষ্টি জগতের সৃষ্টি করা, পালন করা, আইন দান, মৃত্যু ও জীবন দান এগুলো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই বিশেষত্ব।

দুই: অনুরূপভাবে যিনি সৃষ্টি করেন, লালন করেন, জন্ম মৃত্যু প্রদান করেন জীবন বিধান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন শুধু সে আল্লাহই যাবতীয় ইবাদত বা উপাসনার একমাত্র হক্কদার, অন্য কেউ এতে অংশীদার নয়। সুতরাং দো‘আ, মান্নত, কুরবানী, বিপদমুক্তি, সাহায্য ইত্যাদি তথা সর্বপ্রকার ইবাদতে একমাত্র তাঁকেই উদ্দেশ্য করতে হবে।

তিন: আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল কতৃক আল্লাহর জন্য নির্দিষ্টকৃত নাম ও গুণাগুণকে কোন প্রকার পরিবর্তন ও বিকৃত না করে তাঁর উপযোগী যেভাবে হবে সেভাবে তার জন্য তা সাব্যস্ত করা।

কিন্তু যদি কাদিয়ানীদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে তারা এ তিনটি বিশ্বাসেই মুসলিমদের আক্কীদা-বিশ্বাসের বিরোধিতা করছে। যেমন:

মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ‘শিরক ফির রাবুবিয়াত’ বা আল্লাহ তা‘আলার সাথে নিজেকেও সবকিছুর স্রষ্টা ও মালিক বলে দাবী করেছে। এ ব্যাপারে তার মতামত হলো: সে এ মর্মে ওহী বা বাণী পেয়েছে যে, তাকে বলা হচ্ছে:

“আমার যেমন আকাশ ও ভুমণ্ডলের মালিকানা রয়েছে তেমনি তা তোমারও।”[1]

এ কথা ঠিক রাখতেই সে তার উর্দু ‘তাওদীহুল মারাম[2] বইয়ে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক অক্টোপাস[3] এর সাথে তুলনা করেছে।

অনুরূপভাবে ইবাদত যে, শুধুমাত্র আল্লাহকেই করতে হবে তাতেও সে দ্বিমত পোষণ করেছে, বরং আল্লাহর সাথে তারও ইবাদত করার জন্য সে লোকদের আহবান করেছে’ যেমন: তার দাবী অনুযায়ী তার কাছে এই মর্মে বাণী এসেছে (!) যে:

“তোমার সাথে আমার সম্পর্ক হলো, তুমি আমার সাথে একীভূত, একই সূত্রে গ্রথিত...... আল্লাহ তোমার পবিত্রতা জপ করছে ..... আর যে কেউ আল্লাহর প্রকাশ্য রূপের[4] সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তার কাছে কোন মঙ্গল নেই।”[5]

আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণবাহী কুরআন-হাদীস কর্তৃক প্রমাণিত আল্লাহর নাম ও গুনাবলীসমূহ সম্পর্কে তার মতামত আরো জঘন্য। সে আল্লাহকে এমন কতেক নাম ও গুণে বিভূষিত করেছে যা কক্ষনো আল্লাহর (স্রষ্টার) শান এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। বরং তা কেবল বান্দার (সৃষ্টিজগতের) গুণই হতে পারে; যেমন সে বলছে “আল্লাহ .... তরবারী নির্মাতা।”[6]

আরও বলছে: “আমার রব চৌকিদারের মত আমার সামনে সামনে হাঁটে।”[7]

উপরন্তু সে সর্বেশ্বরবাদ (وحدة الوجود-Pantheism) বা জগতের সবকিছু এক, তথা সৃষ্টি জগত এবং স্রষ্টা একই বস্তুর দুইদিক, এ ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রবক্তা। তাই সে তার আরবী গ্রন্থ (الاستفتاء) তে তার দাবী মোতাবেক আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সময় আল্লাহ তা‘আলা নাকি তাকে বলছে (!) “তুমি আমার থেকে, আর আমি তোমার থেকে।”[8]

অন্য এক স্থানে আল্লাহকে তার মহৎ গুণাগুণের বিপরীত গুণে ভূষিত করেছে। যেমন: তার দাবী অনুসারে আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সময় তার কাছে নাকি এ মর্মে বাণী এসেছে যে, “তোমার সাথে আমার সম্পর্ক পিতা পুত্রের সম্পর্ক, তুমি আমার পুত্রতুল্য।”[9]

এতেই শেষ নয় বরং অন্য স্থানে বলছে তার কাছে নাকি ওহী এসেছে এই বলে যে, “হে আল্লাহর নবী! আমি তোমাকে চিনতে পারি নি।”[10]

এ হলো তাওহীদ বা একত্ববাদ সম্পর্কে কাদিয়ানীদের মোটামুটি সংক্ষিপ্ত বিশ্বাস।

প্রত্যেক মুসলিমকেই তাদের এ বিশ্বাস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানী হতে হবে। যাতে তারা কাদিয়ানীদের প্রকাশ্য কথা-বার্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধোকা না খায়; কারণ তারা প্রকাশ্যে শিরক থেকে মুক্ত থাকার অঙ্গিকার করে থাকে, কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা নবুওয়াতের দাবীদারের সব গ্রন্থই শির্কে পরিপূর্ণ।

২. ফেরেশতার উপর ঈমান সম্পর্কে:

ফেরেশতা জগত সম্পর্কে ভণ্ড নবুওয়াতের দাবীদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আক্বীদা ও বিশ্বাস হলো ফেরেশতা ও আল্লাহ একই বস্তু। তাই সে তার আরবী গ্রন্থ (حمامة البشرى) তে ফেরেশতাদের সম্পর্কে বলছে: “এদেরকে আল্লাহ তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ রূপে তৈরী করেছেন”[11]

এর থেকে বুঝলাম যে, সে ফেরেশতাদের অস্তিত্বই মানে না, বরং ফেরেশতা বলতে, আল্লাহর অঙ্গপ্রত্যঙ্গই বুঝে।

মোটকথা: মুসলিমদের অবশ্যই তাদের এই বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে হবে; আর জ্ঞানীদের জন্য ইঙ্গিতই যথেষ্ট।

৩. ঐশী গ্রন্থ সমুহের উপর ঈমান আনা সম্পর্কে:

ভণ্ড কাদিয়ানী তার আরবী গ্রন্থ (الاستفتاء) তে বলছে, “আল্লাহ .... আমার সাথে কথা বলেছেন যেমন তার রাসূলদের সাথে বলেছেন। .... আর আমি এই কালেমাসমূহের সত্যতার বিশ্বাস রাখি যেমন আল্লাহর অন্যান্য কিতাবের উপর রাখি” পৃষ্টা নং : ২২, ৮৬।

ফলে সে তার স্বহস্তে লিখিত বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন প্রবন্ধের সমষ্টি (تذكرة الوحي المقدس) বা ‘ঐশী বাণী স্মারক’ নামে যার নামকরণ করেছিল; সেটাকে আল্লাহর কাছ থেকে যথাযথ অবতীর্ণ অন্যান্য কিতাবাদীর সাথে তুলনা করেছে।

এটা প্রমাণ করতে গিয়ে তার অনুসারীরা সূরা আল-বাকারার আয়াত:

[وَٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ وَبِٱلۡأٓخِرَةِ هُمۡ يُوقِنُونَ ٤﴾ [البقرة: 4]

এর মধ্যকার (ٱلۡأٓخِرَةِ) শব্দের বিকৃত অর্থ (Distortion) করে বুঝতে চায় যে, (আখেরাত)[12] দ্বারা কাদিয়ানীর নবুওয়াতের কথা বুঝানো হয়েছে; অবশ্য তারা কুরআন হাদীসের অর্থ বিকৃত করার কায়দা কানুন তাদের পুর্বসূরী কাদিয়ানীর কাছ থেকেই নিয়েছে। ফলে যদি তার স্বহস্তে লিখা বিভিন্ন ভাষায় রচিত রচনাবলীকে ঐশী বাণী বলতে হয়, তবে কুরআনকেও বলতে হয় যে, মানুষের রচনা বা মানবের লিখা।[13] আল্লাহর কালাম নয়। (নাউযুবিল্লাহ)

৪. রাসূলদের উপর ঈমান আনা সম্পর্কে:

মুসলিমদের বিশ্বাস হলো যে, নবীগণ পবিত্র নসল ও নসব থেকে নির্বাচিত হতে হয়ে থাকেন, সুতরাং তাদের নসব এ কোন প্রকার ব্যাভিচারের নাম গন্ধও নেই কিন্তু গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মতে নবীদের আসল নসব পবিত্র হতে হবে এমন কোন কথা নেই, বরং সে তার উর্দু বই (কিসতিয়ে নুহ) তে মরিয়াম (আ) সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলছে, (সে তার গর্ভসহ বিবাহ বসতে বাধ্য হয়েছিল, কারণ তার স্বজাতীয় মুরব্বীরা তাকে বিবাহের জন্য পীড়াপীড়ি করছিল)[14]

তারপর তার নবুওয়াতের দাবীর দ্বিতীয় পর্যাযে সে যখন নিজকে ঈসা (আ) এর অনুরূপ বা স্বদৃশ্য (Analogous) বলে বর্ণনা করত, তখন বলত “ঈশার সদৃশ ব্যক্তি ঈশা থেকেও উত্তম”[15]

অতপর তার জীবনের তৃতীয় স্তরে যখন সে পূর্ণ নবুওয়াত দাবী করলো তখন সে স্পষ্টাক্ষরে নিজের নবুওয়াতের কথা বলতে নিরস্ত থেকে প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে না‘ত কসীদা লিখতে আরম্ভ করল, এ সমস্ত কসিদায় সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রশংসায় সীমালঙ্গন করতে লাগল। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই নাম ছিল, (মুহাম্মাদ, আহমাদ) সেহেতু সে এসব কসীদায় দ্বিতীয় নামটির ব্যবহার বেশী করে করতে লাগল; তবে এসব কিছুতে ধাঁধাঁ ও প্রহেলিকা এমন ব্যাপকহারে ব্যাবহার করতো যে, সে কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রশংসা করছে নাকি আহমদ (নিজ নাম এর শেষাংশ) এর প্রশংসা করছে তা অনেকেই বুঝতে পারত না।

অতপর সে সরাসরি আহমাদ দ্বারা নিজকে বুঝাবার এক চমৎকার পন্থা আবিস্কার করলো, এবং বললো “আমার এ জুব্বায় (পোষাকে) আল্লাহর নুর ছাড়া আর কিছুই নেই, আসহাবে সুফফা তোমার উপর দরুদ পাঠ করছে, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মহীয়ানরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু আহমাদ সে আত্ম প্রকাশ করেছে, সম্মোহনীরূপ নিয়ে”[16]

অনুরূপভাবে ধাঁধাঁর ব্যবহার সম্পন্ন হওয়ার পর এক সময় সরাসরি নবুওয়াতের দাবী করে বললো: “আমি যা কিছুই বলেছি, সেটা আমার রব এর পক্ষ থেকে যে আমার নিত্য সঙ্গী”[17]

তার অনুসারীরা তার নবুওয়াতের দাবীকে চাঙ্গা করতে সূরা আল-জুমু‘আ এর আয়াত (২-৩)

﴿هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلۡأُمِّيِّ‍ۧنَ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٢ وَءَاخَرِينَ مِنۡهُمۡ لَمَّا يَلۡحَقُواْ بِهِمۡۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٣﴾ْ [الجمعة: 2-3]

এর অনুবাদ করতে যেয়ে সম্পূর্ণ বিকৃত ভাবে (وَءَاخَرِينَ مِنۡهُمۡ لَمَّا يَلۡحَقُواْ بِهِمۡۚ) এর অনুবাদে এ কথা ঢোকালো যে, এর অর্থ হলো (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বার গোলাম আহমাদ এর রূপ নিয়ে আবার দুনিয়ায় আসবে।[18] এর চেয়ে বড় কুফরী আর কি হতে পারে?

যেখানে সে নিজকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ণজম্মের রূপ বলে দাবী করছে? [19]

মুসলিমরা এ ব্যাপারে যতটুকু সাবধান হয়েছে?

এ পুনর্জন্মবাদের এ বিশ্বাস হিন্দুদের থেকে ধার করা বুলি মাত্র।

৫. আখেরাতের উপর ঈমান সম্পর্কে:

প্রত্যেক মুসলিমই এটা বিশ্বাস করে যে, পরকাল আছে; যেখানে পাপ পূণ্যের বিচার হবে এবং প্রত্যেকের কাজ অনুযায়ী সে প্রতিফল ভোগ করবে, কিন্তু গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষন করে, সে ১৮৯৩ সর্বপ্রথম ১৩১১ হি মোতাবেক কেয়ামতের যে সমস্ত আলামত রয়েছে:

১. সেগুলোকে অস্বীকার করে। যেমন তার আরবী বই (حمامة البشرى) তে সূরা আ‘রাফ এর ১৮৭ নং আয়াত[20]

﴿يَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرۡسَىٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّيۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقۡتِهَآ إِلَّا هُوَۚ ثَقُلَتۡ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَا تَأۡتِيكُمۡ إِلَّا بَغۡتَةٗۗ يَسۡ‍َٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنۡهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨٧﴾ [سورة الأعراف: 187]

এর ব্যাখ্যা বিকৃত করতে গিয়ে শব্দটিকে (بَغۡتَةٗۗ) হিসাবে লিখে:[21] আয়াতের ভুল ব্যাখ্যায় গিয়ে বলে যে, (بغطة) শব্দটি দ্বারা প্রকাশ্যভাবে বুঝায় যে, কিয়ামতের যে সমস্ত আকাট্য প্রমাণ বা প্রকাশিত হবে বলে বলা হয়, তা কখনো অনুষ্ঠিত হবে না।[22]

এতো গেল তার প্রথম প্রদক্ষেপ, দ্বিতীয় স্তরে এসে ১৩১৮ হিজরী মোতাবেক ১৯০১ সালে সে সরাসরি পরকাল অস্বীকার করার জন্য প্রথমে শব্দের নম্বর হিসাব করে গানিতীয় কায়দায় বললো “আজকের দিনে কাল তার সর্বশেষ গুর্ণায়নে পৌঁছেছে, সূরা ফাতেহায় বর্ণিত ইহকাল এর নির্ধারিত সময় সাত হাজার চন্দ্র বছর এবং সূর্য্য বছর শেষ হতে চলেছে”[23]

এ কথার ব্যাখ্যায় তার ছেলে মাহমুদ বলে: “পরকাল মৃত্যুর পরেই শুরু হয়ে থাকে, মৃত্যু সময় থেকে পৃথক করে হাজার বছর পরে নির্দিষ্ট সময়ে পরকাল বলতে কিছু নেই”[24]

মোট কথা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী যখন দাবী করল যে, সেই হলো প্রতিশ্রুত মসীহ,[25] তখন থেকেই সে তার এ দাবীর সমর্থনে বলতে আরম্ভ করল যে, তার আবির্ভাবের পরবর্তী সময়টাই হলো কিয়ামত, আর এ ব্যাপারে তার যুক্তি হলো যে, প্রতিটি শব্দের গোপন একটা নম্বর রয়েছে। সেই শুধুমাত্র তা জানে আর সে অনুসারে হিসাব নিকাশ করে সে সিদ্ধান্ত নিয়াছে যে, ইহকালীন বয়স যত হবার কথা তা শেষ হয়ে গেছে তার আবির্ভাবের সাথে সাথেই; সুতরাং তার আবির্ভাবের পরবর্তী জীবনটাকে পরকালীন জীবন হিসাবে মানতে হবে। এভাবেই সে তার সমস্ত প্রচেষ্টা ইয়াহূদী নাসারাদের কিয়ামত সম্পর্কিত বিশ্বাস এর সাথে সম্পৃক্ত করতে চাইলো, কিন্তু যখন তার মারা যাওয়ার পরও দুনিয়ার অস্তিত্ব রয়ে গেল, তখন তার অনুসারীরা সেই বিশ্বাসটাকে নতুন করে সাজাবার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু হায়! তার সমস্ত পুস্তকাদী এব্যাপারে এত স্পষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণবহ যে সেটা কোন ব্যাখ্যাই গ্রহণ করছে না।

৬. তাকদীর বা ভাগ্যের উপর ঈমান আনা সম্পর্কে:

গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী অন্যান্য পাচঁটি রুকন এর মত এখানেও ভ্রষ্ট হয়েছে।

এ ব্যাপারে সে তার আরবী বই (الاستفتاء) তে বলছে যে, আল্লাহ নাকি তাকে প্রেমের ভান বা ছিনালি করে বলছে “হে আল্লাহর নবী! আমি তোমাকে চিনতে পেরেছিলাম না”[26] [না‘উযুবিল্লাহ]

এতে করে সে বুঝাতে চাইলো যে, আল্লাহ তার সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, এ জন্যই অনেক দেরীতে তাকে নবুওয়াতের খবর দিয়েছে। [না‘উযুবিল্লাহ]

এ সব দাবীর পিছনে যে রহস্যটা কাজ করেছে সেটা হলো, সে যে বারবার তার অবস্থান পরিবর্তন করত; সেটাকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা; কারণ সে কখনো নিজেকে বলতো প্রতিশ্রুত মসীহ, আবার কখনো বলতো: মাহদী, আবার ক্ষনিক পরেই বলতো, সে হলো মুজাদ্দিদ বা ধর্ম সংস্কারক, আবার কখনো বলতো, সে হলো নবী: আবার কখনো দাবী করতো যে, সে সমস্ত ধর্মের সংশোধনকারী।

সে যখন দেখলো যে, তার বিভিন্ন অবস্থান লোকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করবে, তখন দাবী করলো যে, আল্লাহ তাকে প্রথমে চিনতে ভুল করেছিল। [না‘উযুবিল্লাহ]

অনুরূপভাবে পূর্ববর্তী বইতেই সে বলছে যে, আল্লাহ তাকে বলছে “কোন কিছু করার ইচ্ছা করলে তখন তোমার শুধুমাত্র হও বলতে হবে, তাতেই তা হয়ে যাবে”[27]

সে এটাকে তার গ্রহনীয় প্রার্থনা হিসাবে বর্ণনা করে তার আরবী বই তে বলছে “কখনো কখনো আল্লাহ তার অমোঘ ইচ্ছাকে ত্যাগ করে তার বান্দার প্রার্থনা শুনেন”[28]

যাতে বুঝা গেল যে, তার মতে আল্লাহর অমোঘ ইচ্ছা পরিবর্তনশীল, সুতরাং সে তাকদীরের উপর ঈমান রাখার প্রয়োজন মনে করে না।

আমরা যদি তার এ বিশ্বাসের মূল খুজতে যাই তাহলে দেখতে পাবো যে, সে এ কথাগুলো মথি লিখিত সু সমাচার থেকে গ্রহণ করেছে, কারণ সেখানে ঈসা (আ) এর দিকে সম্পর্কিত করে বলা হয়েছে, তিনি নাকি তার সাথী পিটারকে বলেছেন “তুমি ধরাপৃষ্ঠে যা কিছু করবে তাই উর্ধ্বাকাশে গৃহিত হবে, আর ভূপৃষ্ঠে যাই সংগঠিত হবে, উর্ধ্বাকাশেও তাই ঘটবে)[29]

সুতরাং যদি তার শিক্ষা ইসলামী ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী না হয়ে অন্যান্য বিভিন্ন মতবাদ থেকে নেয়া হয়ে থাকে বা মন গড়া কিছু কার্যকলাপকে ধর্মের রূপে রূপায়িত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে, তা হলে কিভাবে বলা যাবে যে, তার অনুসারীদেরকে মুসলিমরা অনাহুত নিন্দা করে? আর কিভাবেই বা তাদেরকে আমরা মুসলিম বলবো? সুতরাং তারা যেখানেই থাকুক অবশ্যই নিন্দনীয় ও ধিকৃত।
--------------------------------------------------------------------------------

[1] . Ahmadiet Movement: Mirja Bashiruddin . p. 118

[2] . توضيح المرام পৃ.৬৮-৬৯

[3] . সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষ, যার আটটি শিং থাকে আর শরীর থাকে অত্যন্ত নরম।

[4] .প্রকাশ্যরূপ বলতে তার উদ্দেশ্য: সে আল্লাহর প্রকাশ্য রূপ হয়ে দুনিয়াতে আগমন করেছে।

[5] الاستفتاءপৃ. ৫, ২৮, ৮৮, ৮৯, ৯৪।

[6] . الاستفتاءপৃ.৪৬

[7] مواهب الرحمن পৃ.২৩

[8] . الاستفتاءপৃ: ৮১

[9] الاستفتاءপৃ: ৯১

[10] . الاستفتاءপৃ: ৯৫

[11] . حمامة البشرى পৃ: ২২১

[12] বস্তুত: আখেরাত দ্বারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনকেই বুঝানো হয়ে থাকে।

[13] .মূলত আখেরাত দ্বারা পরকাল বা হিসাব নিকাসের দিনকেই আরবীতে বুঝাতে হয়েছে।

[14] . কিসতিয়ে নূহ: পৃ: ২১

[15] . Our teaching- p.17

[16] . আল-ইসতেফতা: পৃ. ১৮. ৮৮. ৯৪

[17] . কসীদা-পৃ: ৬

[18] কুরআনের ইংরেজী অনুবাদ সূরা জুম‘আ দ্রষ্টব্য।

[19] আয়াতটির সরল অর্থ হলো: আল্লাহ বলছেন: (তিনি আল্লাহ যিনি অশিক্ষিত লোকদের মাঝে তাদের থেকে একজনকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াত পাঠ করবে কিতাব ও সুন্নাত শিক্ষা দিবে, যদিও তারা এর পূর্বে প্রকাশ্য ভ্রষ্টতায় ছিল। আর (তার দ্বারা আরও যারা দুনিয়াতে আসেনি (অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্ম) তারাও হেদায়াত প্রাপ্ত হবে। আর আল্লাহ হলেন প্রবল পরাক্রমশালী, বিজ্ঞময়, এই তাফসীরটাই সাহাবায়ে কেরাম এবং সলফে সালেহীন এর সর্বসম্মত মত: এখানে কারো কোন দ্বিমত নেই, আর আরবী ভাষার অনুবাদেও এর বাহিরে কিছু বুঝায় না,

সুতরাং কাদীয়ানীদের অনুবাদের সাথে এর কোন মিল নেই। বরং তাদের অনুবাদ এর সাথে আয়াতের কোন সম্পর্কেই নেই।

[20] .আয়াতটির অর্থ নিম্নরূপ: আল্লাহ বলেন “তারা আপনাকে প্রশ্ন করছে কিয়ামত কখন হবে? বলুন, এর জ্ঞান একমাত্র আমার রব এর কাছেই, তিনি ছাড়া অপরের কাছে তার সময় তিনি প্রকাশ করেননা, আকাশ ও জমীন এর জ্ঞান জানতে অপারগ হয়েছে, শুধু হঠাৎ করেই সেটা সংঘটিত হবে, তারা আপনাকে প্রশ্ন করছে, যেন আপনি এর সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন, বলুন, এর জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই অথচ অনেক লোকই সেটা জানেনা। সূরা আরাফ-১৮৭

গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী এ কিয়ামতের “হঠাৎ করে অনুষ্ঠিত হবার” কথা দ্বারা কিয়ামতের পূর্বে যে সমস্ত আলামত বের হবার ভবিষ্যদ্বাণী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে গেছেন, সেগুলিকে অস্বীকার করতে চেষ্টা করল।

[21] . যদিও আরবী ভাষায় এমন কোন শব্দ নেই।

[22] . (حمامة البشرى) পৃ: ২৮৩

[23] . إعجاز المسيح في تفسير أم الكتاب পৃ: ২৯

[24] . (الحركة الأحمدية), AHMADIATS. MOVEMENT.P.103.

[25] ইসা আলাইহিসসালাম এর অপর নাম, বা উপনাম, মুসলিমরা সবাই বিশ্বাস করেন যে, তিনি বায়তুল মোকাদ্দাস এর মিনারায় দাজ্জালকে হত্যা করার জন্য, আকাশ থেকে অবতরণ করবেন।

[26] . (الاستفتاء) পৃ: ৯৫

[27] .(الاستفتاء) পৃষ্ঠা : ৯৬

[28] . (سفينة نوح)পৃষ্টা: ২৪

[29] . মথি ১৬/১৯

চলব.........
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৫৯
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×