বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?- ৩
ড. রফী‘ উওন্লা বাসীরী ইজীবুঈ
অনুবাদ : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
গ. তাদের রীতি নীতি
১. কালেমায়ে শাহাদাত (لا إله إلا الله محمد رسول الله) সম্পর্কে তাদের মতামত:
আগেই বলেছি ইবাদতের ক্ষেত্রে কাদিয়ানী নিজকে আল্লাহর সাথে ইবাদতের জন্য আহবান করেছে এবং নিজকে আল্লাহর প্রকাশ্য রূপ বলে দাবী করেছে।[1]
অনুরূপভাবে অন্যস্থানে বলছে যে, “আল্লাহ নবীদের সাজে সজ্জিত হয়ে জগতে আগমন করেছেন” অর্থাৎ নবীরা পূজনীয় হবার ক্ষমতা রাখেন, অন্যস্থানে নিজকে মূসা (আ) এর সাথে তুলনা করে বলছে তার কাছে যে ওহী এসেছে তাতে আছে “তুমি উম্মতে মুহাম্মাদীয়ার জন্য মূসার মত”[2]
অর্থাৎ মূসা যেমন নতুন শরীয়ত নিয়ে এসেছিল তুমি তেমনি নতুন শরীয়ত নিয়ে প্রেরিত অনুরূপভাবে তুমি অন্যান্য নবীদের মত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
উপরোক্ত কথা দ্বারা ভণ্ড নবুওয়াতের দাবীদার নিজকে ইবাদত পাওয়ার যোগ্য বলে সাব্যস্ত করছে। অপরদিকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবর্তে তাকেই সমীহ ও সম্মানের অধিকারী মনে করার জন্য তার অনুসারীদের চেষ্টার কারণও উদঘাটিত হয়েছে।
এ জন্যই সে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুটো রূপ সাব্যস্ত করেছে, প্রথমরূপে আরবীয় মুহাম্মাদ আর দ্বিতীয় রূপে; অনারব আহমদ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, আর এটা প্রমান করার জন্য সে বাস্তবকে অস্বীকার করতেই এমন অসার তর্কে যেতেও দ্বিধা করে নি।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, কাদিয়ানীরা (لا إله إلا الله) (আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক উপাস্য নেই) এটাকেই অস্বীকার করছে; (محمد رسول الله) বা মুহাম্মাদ আল্লাহর বাসূল বা প্রেরিত পুরুষ, এটার সাক্ষ্য তাদের কাছে পাওয়া তো অনেক দূরের কথা। ফলে তারা ইবাদতের জন্য যেমন গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর ব্যক্তিত্বকে; তেমনি নবুওয়াতের জন্যও তারই সত্বাকে কল্পনা করবে এটাই স্বাভাবিক।
২. নামাজ কায়েম করা সম্পর্কে তাদের মতামত:
ইসলামের এ বিশেষ নিদর্শনের ব্যাপারে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী যে সব প্রকাশ্য বিরোধিতায় লিপ্ত তা হলো:
# তার মতে যারা মসজিদে থাকবে তাদের জন্য মুয়াজ্জিনের আজানের জওয়াব দেয়া মুস্তাহাব নয়।[3]
# আরবী জানা সত্বেও যে কোন ভাষায় নামাজ পড়লেই শুদ্ধ হবে।[4]
# মাহিলাদের উপর জুমা ওয়াজিব, জুমা ওয়াজিব হওয়ার জন্য দুইজন লোকই যথেষ্ঠ; এমনকি কোন লোক তার স্ত্রী ব্যতীত কাউকে না পেলে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে জুমা পড়া তার উপর ওয়াজিব।[5]
অনুরূপভাবে সে সুফীবাদে বিখ্যাত নিরবিচ্ছিন্ন অনবরত চল্লিশ দিনের নির্জন বাস বা বদ্ধ ঘরে একাকীত্বে থাকাকে মনে প্রাণে সমর্থন দেয়, এবং এটাকে বিরাট পূণ্যের কাজ বলে মনে করে”[6]
যদিও সে পরকালে বিশ্বাস করে না তবুও মানুষকে ধোকা দেবার নিমিত্তে সে তার বই (الوصية) তে তার অনুসারী যারা বেহেস্তি কবরস্থান (যা ‘কাদিয়ান’ নামক স্থানে অবস্থিত) সেখানে দাফন হবে তাদেরকে বেহেস্তের ওয়াদা প্রদান করেছে।[7]
সুতরাং গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী যদি তার অনুসারীদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রদর্শিত পথের বাইরে নতুন নতুন নিয়ম কানুন জারী করে, তা হলে তাদেরকে নিন্দা করা কি প্রত্যেক মুমিনের জন্য ওয়াজিব নয়? তাদের প্রকাশ্যরূপে মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে লোকদেরকে সাবধান করা কি জরুরী নয়?
প্রশ্ন হতে পারে : তারা তো, আমাদের মতই নামাজে হাত বেধে দাঁড়ায়, নিবিষ্ট মন নিয়ে নামাজ পড়ে। এমনকি সিজদায় যাবার সময় আগে হাত রেখে তারপর দুই হাটু স্থপন করে থাকেন।[8] আপনি বি বলতে চান তারা এটা তাদের মোনাফেকী?
উত্তরে বলবো : হ্যাঁ নি:সন্দেহে এটা তাদের মোনাফেকী।
আল্লাহ তা‘আলা বলছেন:
﴿۞لَّيۡسَ ٱلۡبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ قِبَلَ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلۡكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّۧنَ﴾ [البقرة: 177]
(মুখ পূর্ব পশ্চিম ফিরানোর মাঝে কোন সওয়াব নেই, সওয়াব হলো ঐ ব্যক্তির জন্য যে, ঈমান এনেছে আল্লাহ পরকাল, ফেরেস্তা, আল্লাহর কিতাবাদী এবং তার রাসূলদের প্রতি।)[9]
৩. যাকাত আদায় করা সম্পর্কে তাদের মতামত:
গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যাকাতকে নিজের মনগড়া ভাবে ফরয করেছে। কারণ সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে সমস্ত হাদীসে যাকাতের বিধান বর্ণিত হয়েছে সেগুলোকে অস্বীকার করেছে কারণ তার মতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসসমূহ কুরআনের বিরোধিত করছে। অনুরূপভাবে সে মনে করে যে, হাদীস লেখা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর অনেক যুগ পরে। সুতরাং তা গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। উপরন্ত সে মুসলিমদেরকে এই বলে আক্রমন করে বসলো যে, “যারা হাদীসের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয় তারা কুরআনের মর্যাদাহানি করে।”[10]
এ জন্যই সে তার প্রথম ফতোয়াতেই এই বলে আহবান করেছে যে, “তার মতের বিপরিত যত সহীহ বা বিশুদ্ধ হাদীস আছে তা বাদ দিতে হবে।”[11]
আর এজন্যই সে তার অনুসারীদের প্রত্যেক জীবিত লোকের উপর নির্দিষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা তাদের আয় থেকে মাসিক ১/১৬ অংশ বা ১/১০ থেকে শুরু করে ১/৩ অংশ পর্যন্ত সবাইকেই আন্দেলনের বাক্স এ আন্দোলনের স্বার্থে জমা দিতে হবে।[12]
অনুরূপভাবে সে তার অনুসারী প্রত্যেক মৃত্যু পথ যাত্রীর উপর ধার্য করেছে যে, যদি সে বেহেস্তি কবরস্থানের সৌভাগ্যে গৌরবাম্বিত হতে চায় তবে যেন তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির ১/১০ অংশ আন্দোলনের স্বার্থে দান করে যায়।[13]
তার এই নির্দেশ কাদিয়ানীদের উভয় গ্রুপ (কাদিয়ানী ও লাহোরী) এর মাঝে এখনো প্রচলিত রয়েছে।
এ সমস্ত কিছুর ফলে তারা: একদিকে নির্দিষ্ট পরিমান দান মনগড়াভাবে নিজেদের উপর ধার্য করলো, শরীয়ত এর হুকুমকে অস্বীকার করলো; অপর দিকে খৃষ্টানদের মত বেহেস্তের কেনা বেচার চেক হস্তান্তরের ন্যায় বেহেস্তি কবরস্থান বিক্রি করার অভিনব পদ্ধতি চালু করল।
একবার ইসলামে যাকাত বিধানের দিকে তাকানো যাক, দেখা যাবে সেখানে অত্যন্ত ইনসাফের সাথে তা গ্রহণ করা হয়ে থাকে, যেমন: যে সমস্ত ভূমিতে নিজ কষ্টে কৃষকরা ফসল ফলায় সেখানে ১/২০ অংশ, আর যেখানে কৃষকের কষ্ট ব্যতীত প্রাকৃতিক নিয়মে ফসল উৎপন্ন হয় সেখানে ১/১০ অংশ, বরং অন্যান্য সম্পদের উপর মাত্র ১/৪০ অংশ যাকাত ধার্য করা হয়েছে; যাতে ইনসাফ ও ন্যায়ের চরম উৎকর্ষতা ফুটে উঠেছে। এর সাথে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মতামতের কি কোন তুলনা চলে?
৪. রমজানের রোজা সম্পর্কে তাদের মতামত:
গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মতে রমজানের রোজা ভাঙ্গা প্রত্যেক মুসাফির ও রোগীর উপর ওয়াজিব, চাই কি তার সফর দীর্ঘ হউক বা সংক্ষিপ্ত হোক, রোগ বেশী হোক আর কমই হউক সর্বাবস্থায়ই রোজা ভঙ্গ করা ওয়াজিব। অনুরূপভাবে যারা ই‘তিকাফে থাকবে তাদের জন্য যে কোন দুনিয়ার কথা বলতে নিষেধ নেই, যেমনি ভাবে তারা ইচ্ছা করলে রোগীর দেখা শুনার জন্য বাহির হতে পারে।[14]
ফরজ রোজার ব্যাপারে উদাসীনতা স্বত্বেও সে সুফীদের থেকে ধার করে অনবরত ৮ মাস পর্যন্ত (১৮৭৫-১৮৭৬) নফল রোজা রাখার পদ্ধতি আবিস্কার করে।[15]
তার আরেক অনুসারী তার এ অন্তরীন থাকার ঘটনাকে ফলাও করে প্রচার করতে গিয়ে কিভাবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত সুফীদের নির্জনবাসে অবস্থান করে ধন্য হয়েছে তা বিস্তারিত বর্ণনা করেছে।[16]
বরং সে এ শরিয়ত গর্হিত কাজকে অশেষ পূণ্যের কাজ মনে করে বসেছে, এবং বলছে যে, সে এই নির্জন বাসের দ্বারা অদৃশ্যের পর্দাকে ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
আর এখান থেকে বের হবার পরই সে ১৮৭৬ সালে তার বানোয়াট বিভিন্ন ভাষার ভুলে পরিপূর্ণ বাক্যাবলীকে ওহী বলে দাবী করতে লাগল।[17]
সুতরাং তার অবস্থা থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে, সে শয়তানের মন্ত্রনাকে ওহী বলে চালাতে চেষ্টা করেছে। তা হলে প্রত্যেক মুসলিমকে তার শয়তানী থাবা থেকে সাবধান করা কি জরূরী নয়?
৫. হজ্জ সম্পর্কে তাদের মতামত:
কাদিয়ানীদের চতুর্থ খলিফা মীর্যা তাহের আহমদ তার এক জুম‘আর আরবী খোতবায় এই বলে দাবী করেছে যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আন্তরিক আকাংঙ্খা ছিল মক্কা মদীনায় কবরগুলিতে গিয়ে সেগুলির মাটি দ্বারা ধন্য হবে।[18] (তবে হজ্জ করবে এ জন্য নয়)
হজ্জের জন্য তার আকাংখা প্রকাশ না পাওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে তার মুখপাত্র (মৌলবী সায়ফী কাদিয়ানী তার ইংরেজী বই (ملفوظات المسيح الموعود) এ বলছে (যার পড়শী ক্ষুধার্ত থাকবে, ফকির থাকবে, তার জন্য হজ্জ করা হারাম, বরং গরিবের প্রতি সমবেদনা এবং পড়শীর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বকে ইসলাম ফরয হজ্জের উপর স্থান দেয়।)[19]
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে সে হজ্জ না করার জন্য শস্তা একটা যুক্তি দাড় করাতে চেষ্টা করেছে।
তবুও ১৩১১ হি: (মোতাবেক ১৮৯৩) সালে তার সাথীরা তাকে নিজে স্বয়ং হজ্জ পালন করতে বললে সে শস্তা দামের জবাব দিল (حتى يأذن الله)[20] অর্থাৎ তার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম হয় নি।
কিন্তু এতেও সে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ১৩১৫ হি: মোতাবেক ১৮৯৭ সালের দিকে তার আরবী বই (الاستفتاء) তে প্রহেলিকা এবং ধাঁধাঁর মত কিছু কথা বলে হজ্জের স্থান পরিবর্তন করতে উদ্বুদ্ধ করলো; তাই সে বলছে:
(আল্লাহ চায় তোমাদের গুনাহ ঝরে যাক তোমাদের জিঞ্জির খসে যাক এবং শুস্ক ভূমি থেকে শষ্য শ্যামল ভূমিতে তোমরা স্থানান্তরিত হও। কিন্তু তোমরা নিজদের দেহ কে পাপ পঙ্কিলে রাখতে সচেষ্ট, তোমাদের প্রিয় ভূমি থেকে দুরে থাকতে তোমরা সন্তুষ্ট, আমি তোমদেরকে প্রাচীন ঘরের দিকে ডাকছি, তোমরা সেখান থেকে মূর্তির দিকে ধাবিত হচ্ছো, কতক্ষন তোমরা এ বিড়ম্বনায় থাকবে? )[21]
এ সমস্ত ধাধা আর প্রহেলিকা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘কাদীয়ান’ নগরী, যেখানে মানুষ নামের জানোয়ারগুলো বাস করে। যেখানকার মুসলিমরা চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও অধম, যেমন সে নিজেই তার অন্য বইতে তা লিখছে। (তিনি অর্থাৎ আল্লাহ হিন্দুস্তানের দিকে তাকিয়ে এ (কাদীয়ান)কেই একমাত্র খিলাফতের কেন্দ্রস্থল হিসাবে পেলেন।[22]
এ সব কারণে তার অনুসারীদের যারা তখনো হজ্জে আগ্রহী ছিল তাদেরকে এই শর্ত আরোপ করতো যে, “হজ্জের জন্য বাধা-বিপত্তি দূরীভূত হওয়া দরকার”[23] তা হচ্ছে না বিধায় হজ্জ করা যাবে না। তার চেয়েও স্পষ্ট ভাবে নিজের অবস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে সে বলছে “নিশ্চয়ই আমিই হচ্ছি হাজরে আসওয়াদ বা কৃষ্ণ পাথর। যমিনের উপর আমাকে গ্রহণ যোগ্য করা হয়েছে আমার স্পর্শতায় সবার জন্য বরকত নিহিত।”[24]
কিন্তু এ সমস্ত ইশারা ইঙ্গিতে তার অনুসারীরা নিরস্ত না হয়ে মক্কায় হজ্জ করার জন্য আগ্রহ দেখায়; অথচ তাদের নবী তার উর্দু বই (دافع البلاء)[25] তে বলছে, “আমি তাকে অবতীর্ণ করেছি কাদিয়ানের নিকটে”।
অনুরূপভাবে আরও স্পষ্টভাবে অন্য স্থানে বলছে “আর আল্লাহ তার কাদিয়ানের ঘরকে নি:শঙ্ক ভয়হীন হারামে পরিণত করেছেন .... অথচ এর আশে পাশে মানুষের উপর ছিনতাই হচ্ছে।[26]
বন্ধুরা !
কাদিয়ানীর এ সব প্রহেলিকা বাদ দিয়ে একবার কুরআনের বাণীর দিকে তাকান দেখবেন সেখানে কোন প্রহেলিকা বা ধাঁধাঁর ব্যাবস্থা করা হয়নি, যা বলা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে মানুষের শান্তি ও মুক্তির জন্য বিবৃত করা হয়েছে। সূরা আল-বাকারাহ এর ১৯৬ নং আয়াতের দিকে তাকান, দেখবেন যেখানে বলা হয়েছে “তোমরা আল্লাহর জন্যই হজ্জ এবং উমরা পূর্ণ করে আদায় করো।”[27]
তাহলে কাদিয়ানীদের বিরোধিতার কারণ আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে আমরা আরও দেখতে পাই গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী স্পষ্টাক্ষরেই বলছে “আমি এ সবগুলিতে স্বাতন্ত্র বোধ করছি। সুতরাং তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে নামাজের স্থান বানাও।”[28]
এর উপর টীকা লিখতে গিয়ে সে লিখছে “আমাকে ইবরাহীম নামে নামকরণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে আমাকে আদম থেকে খাতেমুর রাসূল মুহাম্মাদ পর্যন্ত সমস্ত নবীর নামে নামকরণ করা হয়েছে।”[29]
এসব কিছু বলার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই; আর তা’ হলো, এ কথা বলা যে, হাজরে আসওয়াদ এবং তাকে ইবরাহীম নামকরণ করার কারণে মাকামে ইবরাহীমে যে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হতো তা পড়তে হবে সে যেখানে অবস্থান করছে সেখানে অর্থাৎ কাদিয়ানে।
তবে তারকথা (খাতেমুর রাসূল) দ্বারা সে বুঝাতে চাচ্ছে নবীদের মোহর বা আংটি; মুসলিমরা যা বিশ্বাস করে যে, (খাতেমুর রাসূল) অর্থ শেষ নবী এটা তার উদ্দেশ্য নয়।
কারণ সে নবুওয়াতের অভিনব নতুন ব্যাখ্যা সংযোজন করেছে, তার মতে নবুওয়াত দ্বারা “আল্লাহ কর্তৃক অধিক আলাপ সম্ভাষন”[30] করাকেই বুঝায়।
সুতরাং তার (খাতেমুর রাসূল) দ্বারা অর্থ নেয়, উৎকৃষ্ট নবী; যদিও আরবী ভাষায় এর অর্থ হলো শেষ নবী। কিন্তু তারা এ অর্থ করতে নারাজ; কারণ এতে করে তাদের প্রতিষ্ঠাতার নবুওয়াতের দাবী করাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলতে হয়।
সবশেষে আমার অনুরোধ আমরা যেন তাদের তৎপরতায় প্রতারিত না হই। আর এ জন্যই মুসলিম যুবকদেরকে তাদের প্রতিষ্ঠানে, হাসপাতালে এবং প্রচার প্রপাগান্ডা থেকে দুরে রাখার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি।
সাথে সাথে অনুরোধ করব আমরা যেন আমাদের প্রতিটি সমাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের ব্যাপক প্রসার ঘটাই; কারণ যেখানেই সুন্নাতের ব্যাপক প্রসার হয়েছে সেখান থেকে এসব বাতিল মতবাদ তিরোহিত হয়েছে। পক্ষান্তরে যেখানেই মুসলিমরা সুন্নাতে রাসূল থেকে দুরে সরে এসেছে সেখানেই বাতিল দানা বেঁধে উঠেছে। কারণ কাদিয়ানী নিজেই তার নবুওয়াতের দাবীর উৎস হিসাবে ঐ অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক অজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর কথা বলেছে, এ ব্যাপারে সে তার বইতে বলছে “তুমি মুসলিম যুবকদের দেখবে যে তারা ইসলামী আচার অনুষ্ঠান ত্যাগ করেছে, সুন্নাত ত্যাগ করেছে, দাড়ী কামিয়েছে, মাটি পর্যন্ত কাপড় পরিধান করছে, মোচ লম্বা রাখছে, খৃষ্টানদের যাবতীয় রসম রেওয়াজ তাদের মন মগজ দখল করে আছে।”[31]
পরিশেষে সবাইকে এ, ফেৎনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য আবারো অনুরোধ জানিয়ে শেষ করছি।
ওমা তাওফিকী ইল্লা বিল্লাহ
সমাপ্ত
--------------------------------------------------------------------------------
[1] .( الاستفتاء) পৃ: ৯৪
[2] . (الاستفتاء) পৃ: ৮৯
[3] .(ملفوظات المسيح الموعود) সংগ্রহও গ্রন্থনা: আহমাদীয়া জামাতের মুখপাত্র নুর মুহাম্মাদ নাসিম সায়েফী কাদীয়ানী পৃ: ১০, ফতোয়া নং ৪ দ্র:
[4] . (ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ১৩, অনুবাদ, ১৩,১৮, ২০, পৃ: ১৯ এর ২৩ অনুচ্ছেদ।
[5] . (ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ৩৫ =৫৭, ও পৃ: ৩৭ অনু: ৬২ ।
[6] . AHMADIATS. MOVEMENT.P.39. الأحمدية ولادة جديدة للإسلام পৃ. ৩৫, ৩৬, (ইংরেজি সংস্করণ)
[7] . (الوصية) পৃ: ৫০, ইংরেজী সংস্করণ।
[8] এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
[9] . সূরা বাকারা: আয়াত নং ১৭৭।
[10] .(حمامة البشرى ) পৃ: ১, ১১৬, ১৮৬।
[11] .(ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ৮, ফতোয়া নং ১,ইংরেজী সংস্করণ
[12] . (الحركة الأحمدية) মীর্যা বশিরুদ্দিন মাহমুদ পৃ: ১৩১ ইংরেজী সংস্করণ।
[13] . (الوصية) গোলাম আহমাদ কাদীয়ানী পৃ: ৪১,৫৫।
[14] . (ملفوظات المسيح الموعود، لمولوي صائفي القادياني) পৃ: ৪০, ফতোয়া নং ৬৯; ও পৃ: ৪২ ফতোয়া নং, ৭১ ও পৃ. ৪৩ ফতোয়া নং ৭২।
[15] . حضرة أحمد পৃ: ৫ (ইংরেজী সংস্করণ)
[16] .(الحركة الأحمدية) পৃ: ৩৫, (ইংরেজী সংস্করণ)
[17] .( الاستفتاء) পৃ: ৩০.৩১।
[18] (حب العرب إيمان) পৃষ্টা: ১৩৫
[19] (ملفوظات المسيح الموعود) পৃ: ৩৮, ফতোয়া ৬৪ (ইংরেজী সংস্করণ)
[20] (حمامة البشرى) পৃ: ১২
[21] (الاستفتاء) পৃ: ৪০-৪১
[22] . (الاستفتاء) ২৮, ১২
[23] . (تعليمنا) পৃ: ১৪ ইংরেজী সংস্করণ।
[24] .( الاستفتاء) পৃ: ৪৫
[25] . (دافع البلاء) পৃ: ১৬
[26] . (الاستفتاء) পৃ: ১৯
[27] . সূরা বাকারা আয়াত নং : ১৯৬
[28] . (الاستفتاء) পৃ: ৯১
[29] . (الاستفتاء) পৃ: ৯১ (টীকা দ্রষ্ঠব্য)
[30] (الاستفتاء) ১৮ (টীকা)।
[31] .(الاستفتاء) পৃ: ৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





