"বারাক ওবামা একজন খ্রিষ্টান। তিনি নিয়মিত প্রার্থনা করেন।" হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে এভাবেই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একজন ধর্মভীরু খ্রিষ্টান হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। আর কেনইবা করবে না। রাজনীতি বলে কথা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাজনীতি শব্দটা যে ধর্মের ওপর ভর করেই চলছে। স্রষ্টা বোধ হয় ধর্মকে রাজনীতিবিদদের জন্য একটা নিয়ামত হিসেবেই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
গ্রাউন্ড জিরোতে মসজিদ নির্মানের পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি শুরু হওয়া মার্কিন রাজনীতি সম্পর্কে বোধকরি সবাই কমবেশি অবগত। আমি আর ওইদিকে যাচ্ছিনা। এই ঘোরপাকের রাজনীতিতে ওবামা সাহেবের দোষ একটাই। তিনি সরল মনে মসজিদ নির্মানের সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু মিস্টার প্রেসিডেন্টের জানা ছিলনা এর এর পরিণতি কি হতে পারে। যাই হোক, পরিণতিটাতো আমরা দেখলাম। মনেপ্রানে খিস্ট্রান হওয়া সত্ত্বেও তাকে নাকে খত দিয়ে আবারো নতুনভাবে খিষ্ট্রান হতে হলো। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এর চেয়ে জঘন্য ও অসম্মানের কাজ এই দুনিয়াতে দেখিনা। যখন একজন আস্তিককে তার আস্তিকতা প্রমানের জন্য আরেকজন আস্তিকের কাছে নাকে খত দিতে হয়। আস্তিকতার প্রমানতো কেউ দিলে স্রষ্টার কাছে দিবেন। আরেকজন আস্তিকের কাছে কেন?
এগুলো অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা। কথা হচ্ছিল মসজিদ রাজনীতি নিয়ে। মার্কিন মুলুকে ডেমোক্র্যাটরা মূলত উদারপন্থী হিসেবে বিবেচিত হয়। আর সেই উদারপন্থী দলের উদারপন্থী প্রেসিডেন্টকেও যখন কট্টরপন্থার কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পন করতে হয় তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ না হয়ে পারিনা।
এ ঘটনা আমাকে এতটা হতাশ করতনা যদি আমি এ ধরনের আচরণ কোনো স্বৈরশাসককে করতে দেখতাম। কারণ তারা মসজিদ-মন্দির-গির্জার রাজনীতি করেই ক্ষমতায় টিকে থাকেন। উদাহরণ দিতে আমাদের বেশিদূর যেতে হবেনা। আমাদের দুই স্বৈরশাসক এর চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। এরশাদ সাহেব তো সকল মসজিদ-মন্দিরের পানি-বিদ্যুত বিল মাফ করে দিয়ে মহান কাজ করেছিলেন। আবার তিনি নাকি মাঝে মধ্যে খোয়াব দেখতেন, আল্লাহ তাকে আগামী জুমায় অমুক মসজিদে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মসজিদ রাজনীতির চূড়ান্ত পর্যায়। আরেকজনতো শুধু মসজিদ নয়। মসজিদের মুসল্লীদেরকেও ছাড়েন নি। যার পরণতি আমরা এখনো ভোগ করছি। রাজাকারদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তখনকার মসজিদ-মুসল্লী রাজনীতিরই ফল।
শুধু মার্কিন মুলুক কিংবা আমাদের দেশই নয়। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও আমরা দেখেছি। রাম মন্দির-বাবরী মসজিদ নিয়ে রাজনীতির চূড়ান্ত পর্যায়টা আমরা নব্বই দশকেই দেখেছি। এখনো চলছে।
এগুলো গেল রাজনৈতিকভাবে ধর্ম ব্যবহারের বিভিন্ন কলাকৌশল। এরা নিজেদেরকে ধর্মীয় রাজনীতিক হিসেবে পরিচয় দেননা। সুযোগ বুঝে রাজনীতিতে ধর্মের সদ্ব্যবহার করেন।
সমাজে আরেক দল আছেন। যারা সরাসরি ধর্মীয় লেবাসে রাজনীতি করেন। এদের ক্ষতিকর দিকগুলো আমাদের সবারই জানা। তাই এখানে ওগুলোর অবতারণা করে পাঠকমনে বিরক্তির উদ্রেক ঘটাবো না।
ধর্ম শুধুমাত্র রাজনীতির জন্য আসেনি। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য যারা ধর্মের আশ্রয় নেন। বোধকরি, খোদ স্রষ্টার কাছেও তারা সবচেয়ে ঘৃনার পাত্র।