আসলে আমি বুঝতে পারিনি, মেয়েটি যে একজন .....।
ডিপ্লোমার শেষ পর্ব, গাজীপুর একটা ফেক্টরিতে ইন্টার্নশিপ চলছে। একদিন টাঙ্গাইল কলেজে গেলাম ফর্ম ফিলাপের উদ্দেশ্যে। যাহোক, ফেরার পথের কাহিনী শুনাচ্ছি আপনাদের।
টাঙ্গাইল থেকে মহাখালির বাসে চন্দ্রা এসে নামলাম। যেখান থেকে লেগুনা নামক অদ্ভুত যানে করে আসতে হবে গাজীপুর চৌরাস্তা। বাস থেকে নেমে অনেক গুলো লেগুনার মধ্যে স্বাস্থ্য ভাল দেখে একটাতে উঠে বসলাম। আমিই প্রথম, তারপর মধ্য বয়সী এক ভদ্রলোক। আর একজোড়া কপোত-কপোতী ওইথ দেয়ার টু চাইল্ড। আমি আর ঐ ভদ্রলোক টা পাচজনের কম্ভাইন্ড সিটের একপাশে বসেছিলাম। আমাদের সিটে আরো তিন জন বসবে, কিন্তু মনে হচ্ছিল আর মাত্র একজনের জায়গা বাকি। তারইপরে একটা পরিপাটি পোশাকের অষ্টাদশী মেয়ে এসে দাড়ালো। গায়ের পোশাক খুবই উজ্জল টাইটফিটিং, গায়ের রং শ্যামলা বর্ন চেহারাটা মিষ্টি, ওড়নাটা গলায় জুলানো। গাড়িতে উঠে মেয়েটি সবার দিকে একনজর দেখে আমাকেই বলল, একটু ঐদিকে যাবেন? আমি কথাটা কয়েক মাইক্রো সেকেন্ডে ভেবে নিলাম। একটা হাসি দিয়ে পাশে বসা লোকটাকে পাছা দিয়ে ধাক্কা মেরে, ওর জন্যে জায়গা করে দিলাম। দেখলাম মেয়েটাও হাসির মাধ্যমে আমাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে আমার পাশে বসে পড়লো।
গাড়ি ছেড়ে দেবার পর, মেয়েটি পা দিয়ে আমার পায়ে হালকা একটু ধাক্কা মারে।
আর আমাদের বিপরীতে বসা একটা কাপলকে দেখিয়ে বলে, "নাইস কাপল"।মেয়েটির এমন ব্যাবহারে সত্যিই আমি একটু লজ্জ্বা পেলাম।
মেয়েটির হাতের মধ্যম সাইজের সাইড ব্যাগটি ভালই ফুলে ছিল। হঠাৎ মেয়েটির ফোনে কল আসলে তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করার সময় আমার কৌতুহল মিটিয়ে নিলাম। দেখলাম আরো এক সেট কাপড় ও কিছু অগোছালো কসমেটিকস। আসলে, মেয়েটি যখন গাড়িতে এতো জায়গা থাকতেও আমার পাশে এসে বসলো, তাই একটু আগ্রহ দেখালাম আরকি। কখনো কোন মেয়েতো আমার সাথে এতোটুকুনও ..... যাহোক, হয়তো আমার চেহারার এই আবুইল্যা মার্কা কাটিং এর জন্যই।
মেয়েটির কানে একটি ইয়ারফোন লাগানো ছিল, ফোনটা তাতে কানেক্ট করে কথা বলছিল। কথা গুলো অনেকটাই এইরকম ছিল।
:- হ্যা বলেন।
:-...
:-আমি প্রায় চৌরাস্তার কাছাকাছি। লেগুনায়।
:-...
:-দেখেন আপনি একতো? নয়তো কিন্তু ফি বেশি লাগবে।
:-...
:- ওকে, নেমে ফোন দিচ্ছি।
মেয়েটির শেষের দিকের কথা গুলোই ছিল সন্দেহজনক।
কোনাবাড়ি থেকে একটু পরেই লেগুনায় একজন লোক উঠলে, আমি আছতে করে ডানে সরে গিয়ে, আমার ও মেয়েটির মাঝে লোকটিকে বসতে দেই।
গাড়ি ছেড়ে কিছু দুর আসার পর, খেয়াল করলাম মেয়েটি, মাঝে বসা লোকটির উপরের হাতলে ধরা হাতটির নিচ দিয়ে আমায় দেখছে! আমি যে ওর কথা বুঝে গেছি, সেটা মনেহয় ও বুঝেছে।
মাগরিবের আজান হয়ে যাচ্চে তখন, চৌরাস্তা থেকে অনেকটা দুরে লেগুনা নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে হেটে চৌরাস্তার দিকে আসছি, মেয়েটাও আমার ঠিক পাশাপাশি হাটছে। মেয়েটিই জিজ্ঞেস করলো,
:কি, বুঝে গেছেন, আমি যে খারাপ মেয়ে, তাইনা?
:কিন্তু, আপনাকে দেখে তো মনে হয় পড়াশোনা জানা মেয়ে।
:ইন্টার ফেল।
:আপনি কি কি করেন?
:ফোন আর ভিডিও স্কাইপ নয়তো ইমু।
বলতে বলতে মেয়েটি একটা ভিজিটিং কার্ড আমার হাতে ধরিয়ে দিল!
:তবে এখন কোথায় যাচ্ছেন?
:কিছু রেগুলার কাস্টমার আছে, ওদের সাথে মাঝে মধ্যে দেখা করতে হয় আরকি।
:রেট কত আপনার?
:কার্ডে লেখা আছে।
বলতে বলতে আমার হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে, বললো দাড়ান। কার্ডে উল্টো পিঠে হাতে একটা ফোন নম্বর লিখে দিয়ে বললো, আপনার জন্যে কিছু ছাড় আছে। ঐ গুলো দালালদের নম্বর, এইটা আমার নিজের।
কার্ডটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে, মোবাইল বের করে কাকে যেন ফোন দিলো।
মেয়েটি কথা বলা শুরু করার পর, আমি আবার হাটা শুরু করি। ও সেখানে দাড়িয়েই কথা বলছে। আমি বেশ কিছু দুর আসার পর পেছন ফিরে দেখি একটা ৩০-৩৫ বছর বয়সী লোক এসে মেয়েটির হাতে ধরে আবার উল্টো দিকে চলে গেল। ধিরে ধিরে ওরা লোকগুলোর ভিড়ে হারিয়ে গেল। আমিও হাতের কার্ডটা রাস্তার পাশের ড্রেনে ফেলে দিয়ে রাস্তা পাড় হয়ে জয়দেবপুরের দিকে চলে আসি আর মনে মনে ভাবি, হাইরে ....
কলগার্ল
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৪৭