somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত" গ্রন্থ পর্যালোচনা

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাহিলিয়াতের পরিচয়
অনেকের মনে কঠিন প্রশ্নের উদ্রেক করবে- জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতা-সংস্কৃতির এই চরম উৎকর্ষের যুগকে, বস্তুগত উন্নতি-অগ্রগতির বিস্ময়কর সময়কে ‘জাহিলিয়াত’ আখ্যায়িত করা ধৃষ্টতা নয় কি? অনেকের ধারণা- জাহিলিয়াত বলতে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর আগমনের পূর্বে আরবের তৎকালীন অবস্থাকে বুঝায়। যা কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পুনরায় তা প্রত্যাবর্তন করতে পারে না। উত্তরে বলব, ‘জাহিলিয়াত’ শব্দটিকে প্রচলিত অর্থের উপর নির্ভর করা হয়নি। বরং জাহিলিয়াতকে একটি পরিভাষা হিসাবে ব্যাবহার করা হয়েছে।

জাহিলিয়াত মানেই জ্ঞান-বিজ্ঞান, সভ্যতা-সংস্কৃতি বিরোধী নয়। কুরআনুল কারীম কখনোই বলেনি যে, আরবরা জাহিলিয়াতের মধ্যে নিমজ্জিত ছিল এইজন্য যে, তারা জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যা জানত না। অথবা তারা বস্তুগত উৎপাদনে পশ্চাদপদ রয়ে গিয়েছিল। বরং ইতিহাস অন্বেষণ করলে দেখা যায়, তদানিন্তন আরবরা জাহিল বা মূর্খ ছিলনা, তারা নানা তত্ত্ব ও তথ্যের ধারক-বাহক ছিল। তারা পশ্চাদপদ বা প্রগতিবিরোধী ছিল না। বরং তারাও সভ্যতা সংস্কৃতির ধ্বজাধারী ছিল, ছিল মুল্যবোধসম্পন্ন। তারা নানা গুণে গুনান্বিত ছিল- মহানুভবতা, সাহসিকতা, নীর্ভিকতা, মর্যাদাবোধ এবং ভাল কাজের জন্য সাড়া জীবন দান করার মত মহৎ গুণ তাদের মধ্যে ছিল। অথচ আল্লাহ তায়ালা সে যুগকে জাহিলিয়াত বলে উল্লেখ করেছেন। বস্তুত জাহিলিয়াত হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট ভাবধারা-সারনির্যাস। তা বিভিন্ন রুপ ধারণ করতে পারে। তা নির্দিষ্ট সময় ও ভূখন্ডের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে না। তা নির্ধারিত হয়ে থাকে পরিবেশ-পরিস্থিতি, সময়কাল ও স্থানের অবস্থার প্রেক্ষিতে। কুরআনুল কারীমের ভাষায় জাহিলিয়াত হচ্ছে একটি মানসিক অবস্থা, যা আল্লাহর দেয়া হেদায়েতকে পুরোপুরি অস্বীকার করে। যা আল্লাহর দেয়া বিধানানুযায়ী বিচার-ফায়সালা করতে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। তা কথিত জ্ঞান-বিজ্ঞান, সভ্যতা সংস্কৃতি ও বিপুল বস্তুগত উৎপাদনের বিপরীত কিছু নয়। যেহেতু বর্তমান যুগ আল্লাহর নাযিল করা বিধানানুযায়ী মানব জীবনের পুনর্বিন্যাস করতে, বিচার-ফায়সালা করতে অস্বীকার করছে, সেহেতু এ যুগকে ‘জাহিলিয়াত’ আখ্যায়িত করা বাস্তবসম্মত ও অধিক যুক্তিযুক্ত।

ইতিহাসের পাতায় জাহিলিয়াত
প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) এর যুগ থেকেই ইসলাম ও জাহিলিয়াতের দ্বন্দ চলে আসছে। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রত্যেক যুগেই মানব সভ্যতা দুটি ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। এ দুটি ধারার বাইরে তৃতীয় কোন ধারায় মানব সভ্যতা পরিচালিত হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। আর তা হচ্ছে- ইসলাম ও জাহিলিয়াত। কোন সমাজব্যবস্থা পরিচালিত হবে- হয়তো ইসলাম অনুযায়ী অথবা জাহিলিয়াত অনুযায়ী। মানুষের চিন্তাধারা হয়তো হেদায়েত হবে অথবা গুমরাহী হবে। প্রত্যেক নবী রাসুলগণের (আ.) সময়েও মানুষ দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। একপক্ষ নবীগণের তাওহীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ইসলামে প্রবেশ করেছে। বাকীরা তাওহীদকে অস্বীকার করে জাহিলিয়াতের ধারক ও বাহক হয়েছে।

ইসলামের মৌলিক আকিদা অপরিবর্তনীয়। আর তা হচ্ছে- আল্লাহই একমাত্র উপাস্য, তিনিই মাবুদ, দাসত্ব করতে হবে কেবল তারই। তবে শরিয়ত বা বাস্তব জীবনের কর্মবিধান মানুষের প্রবৃদ্ধি ও বিবর্তনের সাথে সাথে তৎকালীন প্রেক্ষাপট ও চাহিদানুযায়ী পরিবর্তিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) পর্যন্ত এসে ইসলামী শরিয়ত পরিপুর্ণতা ও স্থিতি লাভ করেছে। মানব সভ্যতার সর্বশেষ বিবর্তন পর্যন্ত এ শরিয়ত বলবৎ থাকবে। জীবনের সুক্ষ্ম ও খুটিঁনাটি বিষয়ে পুর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ইসলামী শরিয়তে। মানব সভ্যতার সকল বিবর্তন ও সকল ভূ-খন্ডের জন্য তা পুর্ণ সামঞ্জস্যশীল ও চাহিদা পূরণে সক্ষম।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইউরোপ, আমেরিকা তথা পশ্চিমা সভ্যতার একক আধিপত্য রয়েছে। প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও তাদের প্রচারিত ভাবধারা, চিন্তাধারা, সংস্কৃতি, আকিদা-বিশ্বাস ও মূল্যবোধ সারা পৃথিবীতে বিজয়ী ও সর্বধিক প্রভাবশালী হয়ে আছে। ইউরোপ-আমেরিকার পুরো ইতিহাসই জাহিলিয়াতের ইতিহাস। ইউরোপের পূর্বে ছিল গ্রীক জাহিলিয়াত এবং তারপরই রোমান জাহিলিয়াত। তারপর ছিল মধ্যেযুগীয় বিকৃত ধারণা সম্বলিত জাহিলিয়াত। বস্তুত গ্রীক জাহিলিয়াত ও রোমান জাহিলিয়াতই হচ্ছে বর্তমান ইউরোপীয় সভ্যতা সংস্কৃতির মুল উৎস ও ভিত্তি। তবে একথাও বাস্তব সত্য যে, আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতার নবজাগরণের মূলে রয়েছে ইসলামী সভ্যতার বিরাট অবদান। একথা স্বয়ং ইউরোপীয় সভ্যতার উৎসমূহ অকপটে স্বীকার করেছে। ইসলাম থেকে ধার করা সভ্যতা ইসলামের স্বতন্ত্র তাওহীদি ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জাহিলিয়াত হিসাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এবং তা গ্রীক ও রোমান সভ্যতার প্রাথমিককালীন পৌত্তলিকতার দিকে ফিরে গিয়েছে। আচ্ছন্ন করে নিয়েছে খ্রিস্টীয় ভাবধারা।

মূল গ্রন্থঃ বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত, সাইয়েদ মুহাম্মাদ কুতুব, অনুবাদঃ মাওলানা মু. আব্দুর রহীম (রহঃ)

চলবে.....
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×