somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাশেদ আহমেদ শাওন
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ঝোঁক আছে লেখালেখিতে। চেষ্টা করি। অসম্ভব ভালো লাগে সবুজ প্রকৃতি, ভালবাসি প্রকৃতির প্রতিটি অনুষঙ্গ। আরও একটা জিনিস খুব-ই ভালো লাগে তা হলো পূর্ণিমার রাতে চাঁদের রুপালী আলো। মন চায় সে আলোতে হারিয়ে যেতে, বার বার ডুব দিয়ে গোসল করতে।এ

৬৫’র যুদ্ধে ‘অযোদ্ধা জাতির’ কলঙ্ক ঘোচায় বাঙ্গালিরা

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল ৬ সেপ্টেম্বর থেকে। এ যুদ্ধে বাঙ্গালি সেনাদের অসাধারণ ভূমিকা বারবার চেপে যেতে চেয়েছে পাকিস্তান



৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন পরামর্শে ভারত হঠাৎ করেই করাচি আক্রমণ করে বসে। এ সময় বাঙ্গালিসেনাদের প্রচ- আক্রমণের মুখে লাহোরের উপকণ্ঠে এসে থেমে যায় ভারতীয় বাহিনীর অগ্রযাত্রা। লাহোর প্রতিরক্ষার সেই যুদ্ধ ছিল আধুনিক যুগে বাঙ্গালি সেনাদের অংশ নেওয়া প্রথম সক্রিয় ও সর্বাত্মক যুদ্ধ। এর আগে বাঙ্গালিদের দেখা হতো নন-মার্শাল রেস (অযোদ্ধা জাতি) উদ্ভূত সৈন্য হিসেবে।

১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের ৮ টি ডিভিশনের মধ্যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট মাত্র ৪ টি ব্যাটেলিয়নের মাধ্যমে সংগঠিত ছিল। এর অধিনায়ক ছিলেন লে. কর্নেল আতিক হক। মাত্র এই ৪ টি ব্যাটেলিয়ন নিয়ে তিনি যুদ্ধে যে দক্ষতা দেখান তার জন্য যুদ্ধের পর পাকিস্তান বাধ্য হয় তাদের সর্বোচ্চ সামরিক পদক প্রদান করতে।

সে যুদ্ধে পরবর্তীতে বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থান পাওয়া প্রায় প্রত্যেক সমরনায়কই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, আবু তাহের, আবুল মনজুরসহ প্রত্যেকেই বীরত্ব দেখান। জিয়াউর রহমান ৪৬৬ জন সৈন্যের একটি বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। সেই বাহিনীই প্রথম ভারতীয় বাহিনীর সামনে পড়ে। তাজুল ইসলাম নামে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন এনসিও নিজের বুকে মাইন বেঁধে আগুয়ান ভারতীয় ট্যাংক বহরের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেন।

স্থলবাহিনীর পাশাপাশি বিমানবাহিনীতে কর্মরত সেনারাও ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে কৃতিত্ব দেখান। বাঙ্গালি বৈমানিক মোহাম্মদ মাহমুদুল আলমের নাম এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। একটি হীনবল এফ-৮৬ স্যাবর জঙ্গিবিমান দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে প্রথম মিনিটেই পাঁচটি ভারতীয় হকার হান্টার বিমান ভূপাতিত করে বিমানযুদ্ধের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা রেকর্ড গড়েন।

যার মধ্যে প্রথম চারটি ভূপাতিত করেন মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে। এটি আজ পর্যন্ত একটি বিশ্বরেকর্ড। পুরো যুদ্ধে তিনি মোট নয়টি ভারতীয় জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করেন।

পাকিস্তানে এখনো তিনি একজন জাতীয় বীর হিসেবেই পরিগণিত। ২০১৪ সালে তার নামে পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালী বিমানঘাঁটির নামকরণ করা হয়েছে ‘পিএএফ বেস এম এম আলম’। লাহোরের একটি প্রধান সড়কের নামও এম এম আলম রোড। ঢাকা মিউনিসিপালটি করপোরেশন ৬৫’র যুদ্বের পর তাকে ঢাকায় একটি বাড়ি উপহার দেয়।

আরেক বাঙ্গালি বৈমানিক সাইফুল আজমও বীরত্বের সাথে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাথে ডগফাইট করে একটি জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করেন। পরবর্তীতে সাইফুল আজম ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধেও অংশ নেন। সেখানেও তিনি ইসরাইলি বিমানবাহিনীর ত্রাসে পরিণত হন। তিনি যতগুলো ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করেন তা আজও রেকর্ড হয়ে আছে। আজ পর্যন্ত অন্য কেউ একা এতগুলো ইসরাইলি বিমান ধ্বংস করতে পারেনি। সাইফুল আজম বিশ্বের ২২ জন লিভিং ঈগলের একজন বলে বিবেচিত।

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ অমীমাংসিতভাবে সমাপ্ত হলেও এর কিছু সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য থেকে যায়। এই যুদ্ধের মাধ্যমেই বাঙ্গালিদের কপাল থেকে নন-মার্শাল রেসের কলঙ্ক মুছে যায়।

বাঙ্গালিদের নন-মার্শাল রেস বা অযোদ্ধা জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা শুরু হয় ব্রিটিশ আমলে। বাঙ্গালিদের বিদ্রোহ দমন করে রাখার জন্য ব্রিটিশরা অপপ্রচার চালাত, বাঙ্গালিরা কৃষিকাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে যতটা দক্ষ যুদ্ধে ততটাই অদক্ষ।

১৯৬৫ সালের যুদ্ধে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ বাঙ্গালি অফিসারই বীরত্ব পদক লাভ করেন। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক পদক হিলাল-ই-জুররাত লাভ করেন। জিয়ার ইউনিট তিনটি তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক পদক সিতারা-ই-জুররাত ও নয়টি চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক পদক তমঘা-ই-জুররাত অর্জন করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৪
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×