somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতভ্রমণঃ সারচু টু লেহ

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কিলং টু সারচু এর পর থেকে


'Monsters University' মুভিটা দেখেছেন? মুভির একদম শুরুর দিকে দেখা যায় একটি শামুক উর্ধশ্বাসে ছুটছে; সে কিছুতেই ভার্সিটির প্রথম ক্লাসে লেট হতে চায় না! পরের দেড় ঘন্টায় তার আর কোন দেখা নেই। মুভির শেষে নামপর্বও যখন শেষের পথে তখন দেখা যায় বেচারা ক্লাসে পোঁছেছে। কিন্তু ততদিনে স্কুল-ইয়ার শেষে গ্রীষ্মের বন্ধ চলে এসেছে।


কখনও নোয়েলকে হাঁটতে দেখেছেন? ওর পা সামনের দিকে আগানোর চেয়ে আড়াআড়ি চলতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করে (সহজ ভাষায়- ও একটু চ্যাগায়া হাঁটে)। ও হচ্ছে আমাদের গ্রুপের শম্বুক। আমি মোটামুটি নিশ্চিত সে হাঁটার সময় কদম গুনে গুনে পরিসংখ্যানের টালি করে।... এক, দুই, তিন, চার কদম ফেলার সময় মনে মনে উলম্ব চারটা রেখা টানে...... এরপর পাঁচ নম্বরটা ফেলার সময় মনে মনে আড়াআড়ি একটা দাগ দিয়ে টালি পূর্ণ করার তৃপ্তি নেয়...... এরপর কিছুক্ষণ জিরিয়ে নতুন টালি শুরু করে।


২৫.০৭.১৪ (দুপুর)


আহাম্মকের মত ক্যামেরাটা নোয়েলের হাতে দিয়ে দৌঁড়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছি। সারচু পৌঁছানোর আনন্দে তখন সাতপাঁচ চিন্তাও করিনি। বিশাল সমতল পার হয়ে জুনাম নদীর তীরের রক ফরমেশনের দিকে ছুটেছি সবাই। অপেক্ষা নোয়েলের। একটা গ্রুপ-ছবি তুলবো বলে সবাই যখন সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছি তখন বহু দূরে আণুবীক্ষণিক একটা আকৃতির নড়াচড়া দেখতে পেলাম। নোয়েল সবে আড়মোড়া ভেঙ্গে রওনা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কালের দীর্ঘায়ন শুরু হয়ে গেল... রাস্তা আর শেষ হয়না। ধৈর্য্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে সে যখন নদীর তীরে পৌঁছালো ততক্ষণে একে একে বাকিরা ফেরার পথ ধরেছে। ঝটপট কয়েকটা ছবি তুলে গাড়ির পথ ধরলাম।


বহু ক্রোশ দূরের গাড়িটার পাশে নোয়েলকে খুঁজে পান কিনা দেখুন তো!



জুনাম নদী, সারচু

লাদাখে পৌঁছে গেছি! সারচুতে হীমাচল প্রদেশকে বিদায় জানিয়ে এখন আমরা জম্মু-কাশ্মীর প্রদেশে। কিন্তু এই কাশ্মীরের সাথে তো এতদিনের কল্পনার কাশ্মীরের কোন মিল নেই! কাশ্মীর মানেই চিন্তা করতাম সবুজ পাহাড়ের কোল বেয়ে বয়ে চলা কলকলে পাহাড়ী নদী, তার দুপাশে রংবেরঙের ফুলের বাগান, সেই বাগানে ঘুরে বেড়ানো কাশ্মীরি কোন অপ্সরী। তার বদলে পেলাম শুধু দুটো রঙের ছড়াছড়ি- ধুসর আর কালো। দিগন্তবিস্তৃত মরুপ্রান্তরের দু-একটা জায়গায় সামান্য কিছু সবুজ মাথাচাড়া দেয়ার চেষ্টা করে ক্ষান্ত দিয়েছে। পাহাড়ী নদীর অবস্থাও মুমূর্ষু...... আর কাশ্মীরি অপ্সরী নাহয় কল্পনাতেই থাকলো...


কিলং থেকে মাত্র শখানেক কিলোমিটার আসতেই দুপুর হয়ে গেল


আত্মা শুকিয়ে গেল যখন দেখলাম ক্যামেরা চার্জ শেষের ওয়ার্নিং দেয়া শুরু করলো। মেমোরীকার্ডের অবস্থাও বেশী সুবিধার না! আয়াজের ক্যামেরারও একই অবস্থা। অন্যদিকে গ্রুপের একমাত্র ডিএসএলআর-ধারী রাবা অল্টিচিউড সিকনেসে কাবু হয়ে শুয়ে আছে পেছনে। আর সর্বশেষ ক্যামেরার মালিক আদিব ট্যুরের মাঝপথে এসে জানান দিয়েছে তার উচ্চতাভীতি আছে। বিশ্বাস করুন- তখন এমনও সময় গিয়েছে যখন অবচেতন মন এই প্রার্থনা করছিল, সামনের পথটা যাতে আর সুন্দর না হয়। বলা বাহুল্য, দোয়া কবুল হলোনা। রাস্তা চমকের পর চমক দিয়ে চললো।

চোখ ঝলসানো ধূসর দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম বিখ্যাত গাটা লুপে। রাস্তাটা যেন গাড়িচালকদের জন্য স্থূল এক রসিকতা। একটা পাহাড়ের গায়ে ২১ টা হেয়ারপিন বাঁক! পাহাড়ের ঢালের সাথে খাপ খাওয়াতে রাস্তায় দিতে হয়েছে একের পর এক জিলেপীর প্যাঁচ। দেখে মনে হয় পেন্সিল দিয়ে খামখেয়ালি করে আঁকিবুঁকি করা হয়েছে পাহাড়ের গায়ে। পনের হাজার তিনশো ফুট চূঁড়ায় উঠে গেলে একসাথে দেখা যায় সবগুলা লুপ। দৃশ্যটা কারো জন্য রক্ত হীম করা, আবার কারো জন্য অ্যাড্রেনালিনের জোয়ার বয়ে আনার মত!


গাটা লুপ; মোট ২১ টা লুপের রাস্তা


গাটা লুপের মাঝামাঝি জায়গা


গাটা লুপের উপরে এসে পেয়ে গেলাম আমাদের আজকের পথের দ্বিতীয় পাস নাকি লা’র দেখা। উচ্চতা সাড়ে পনের হাজার ফুটের মত। বাতাসে উড়ছে বর্নিল ‘প্রেয়ার ফ্ল্যাগের’ সারি। হীমালয়ের সব সুউচ্চ পাসেই দেখা যায় এসব ‘প্রেয়ারফ্ল্যাগ’। তিব্বতীয়ান বুদ্ধিজমের অনুসারীদের বিশ্বাস- এসব প্রার্থনা পতাকা আশপাশের এলাকায় শান্তি-সমৃদ্ধি বয়ে আনে। নাকিলা’য় নেমে দূরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়েই বুকটা ভরে গেল। এখানে স্রেফ মেঘের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেয়া যাবে দিনের পর দিন। তুমুল বাতাসের তোড়ে এত কাছ দিয়ে মেঘের টুকরাগুলো ভেসে যাচ্ছিলো যে তাদের ছায়াগুলোও বেশী বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলো না। গাড়িতে ফেরার আগে বোবা হয়ে দেখলাম কিছুক্ষণ এই আলোছায়ার খেলা।


প্রেয়ার ফ্ল্যাগ


নাকি লা


কয়েক কিলোমিটার এগিয়েই ‘লাচুলাং লা’। উচ্চতা সাড়ে ষোল হাজার ফুটেরও বেশী। আকাশটা এখানে ঠিক আমাদের শরতের আকাশের মত। পার্থক্য শুধু বিশালতায়। সবকিছুই এখানে যেন অতিরঞ্জিত! আকাশটা যেন একটু বেশীই বড়; তার রঙটা যেন একটু বেশীই নীল; মেঘগুলোও যেন একটু বেশীই সাদা। সমুদ্রের সামনে গেলে যেমন তার বিশালত্বে নিজেকে তুচ্ছ মনে হতে থাকে এখানেও ঠিক একই অনুভূতি হয়।


লাচুলাং লা

লাদাখের মাঝে যদি আমাকে পছন্দের একটা রাস্তা বাছাই করতে বলা হয়, আমি চোখ বন্ধ করে বলবো লাচুলাং লা’র পরের রাস্তাটার কথা। মনে হল যেন কোন ওয়েস্টার্ন মুভির সেটে ঢুকে পড়েছি! এই রাস্তায় চোদ্দ সিটের ট্রাভেলার্স কে মানায় না, তেজী ঘোড়ায় চড়ে ধুলোর মেঘ উড়িয়ে ছুটে চলা কোন কাউবয়কেই বেশী মানায়। ক্লিন্ট ইস্টউডের পাঁড় ভক্ত......তাই ঝট করে ঠোঁটে কল্পনার সীগার ঝুলিয়ে কাউবয় সেজে নিলাম কিছুক্ষণ। একটু পরেই অবশ্য কল্পনার সীগারটা নিভিয়ে বাস্তবের অ্যাজমা ইনহেলারগুলা বের করে নিতে হল; অক্সিজেনের বড় সংকট!


Wild West না, লাদাখ


রাস্তায় আলগা পাথরের চোখ রাঙ্গানি

পথেপথে বোবা করে দেয়ার মত রক ফরমেশন। চাইলেই ইচ্ছেমতো রকফেস কল্পনা করে নেয়া যায়। ক্যামেরার চার্জের শেষটুকুও নিংড়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছি।


রক ফরমেশন

গাড়ির উইন্ডশিল্ডে রক্ত হিম করা ল্যান্ডস্কেপ। ড্রাইভারের স্রেফ একটা ভুলই এটাকে আমাদের শেষ ট্যুর বানিয়ে দিতে পারে।


উইন্ডশিল্ডে যে পথ অপেক্ষা করছিলো।

বিশাল উতরাই শেষে পছন্দসই একটা জায়গা বেছে কিছুক্ষণের বিরতি দেয়া হল। উষরভূমি যেন ডেকে উঠলো, “এসো, নিজেদের ব্ল্যাডার নিংড়ে আমাকে সিক্ত করে যাও”। প্রকৃতির এই করুণ আহ্বানে সাড়া না দেয়ার মত পাষাণহৃদয় আমরা নই!


ব্ল্যাডার খালি করতে ব্যস্ত সবাই। ঠিক এই জায়গাটার ছবি একটা বইয়ের মলাটে দেখেছিলাম লেহ'র কোন দোকানে


ক্যানিয়ন

শেষ দুপুরের দিকে পৌঁছে গেলাম ‘পাং’ এ। দীর্ঘসময় পর এই প্রথম জনমানবের দেখা পেলাম। কয়েকটা তাঁবু নিয়ে অস্থায়ী এই বসতি। কাছেধারে আর কোন জনপদের দেখা মিলবে না। তাই দুপুরের খাবার টাও এখানেই সারতে হবে। লম্বাটে একটা তাঁবুতে ঢুকে পড়লাম। মুখে বলিরেখার বাহার নিয়ে বসে আছেন এক বৃদ্ধা। দোকানের মালিক কমবয়সী এক মহিলা; সম্ভবত বৃদ্ধার মেয়ে। চেহারায় তিব্বতী ছাপ। চারপাশের রুক্ষ পরিবেশ তার চেহারাতেও বেশ ভালোই প্রভাব ফেলেছে। নইলে এককালে মহিলা যে খুব সুন্দরীদের একজন ছিলেন এ ব্যপারে সন্দেহ নেই। হাস্যোজ্বল মানুষটার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হল। মহিলা ভাঙ্গা হিন্দিতে কথা বলেন; কিছু কিনলে খুব সুন্দর করে থ্যাঙ্ক ইউ বলেন (বান্দরবানের শৈলপ্রপাতের দোকানী সেই সুন্দরীকে মনে পড়ছে... যার সাথে স্রেফ কথা বলতে গিয়ে দেড়শো টাকার বেহুদা জিনিস কিনে ফেলেছিলাম...)। মহিলা নিজেও ভালো হিন্দি পারেনা দেখে সুযোগ বুঝে ঝেড়ে দিলাম হিন্দি সিনেমার কিছু ডায়লগ।


পাং

এতদূর আসার পর জানতে পারলাম রাহুল ভাই কেন আমাদের খাওয়ার সময় পালিয়ে যান। উনি পিওর ভেজিটেরিয়ান। মাছ- মাংস তো বহু দূরের কথা, ডিমও ছুঁয়ে দেখেন নি কখনও! আদিত্য বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “হ্যাঁ, গঞ্জিকা ভেজই বটে!”। গঞ্জিকার ব্যাপারে গুরু আদিত্য সিং যখন মুখ খুলেছে তখন বাকিদের চুপ থাকাই শ্রেয়।


খাবারের ব্যাবস্থা- চাওমীন, রুটি, ডিমভাজী, ম্যাগী নুডলস। খাবারের দাম অস্বাভাবিক রকম বেশী। যত উত্তরে যাচ্ছি ততই দুর্মূল্যের জগতে প্রবেশ করছি। সব আইটেম ভাগাভাগি করে কোনমতে পেট শান্ত করলাম। খাবার শেষে শরীরটা যেন হাল ছেড়ে দিতে থাকলো। অর্ধেক পথ এসেছি সবে, সন্ধ্যা নামতে কয়েক ঘন্টা মাত্র বাকি। মনের মধ্যে একটুখানি ভয় ভর করছিলো বৈকি! আমরা তখনো জানতাম না আমাদের ভাগ্য অচিরেই সুপ্রসন্ন হতে চলেছে। আবার শুরু হল চলা।


লাদাখকে কেন ছোট-তিব্বত বলা হয় তা কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারলাম। পাং এর একটা চড়াই শেষে এসে পড়লাম বিশাল এক মালভূমিতে। জায়গাটার নাম ‘মোর/মুরে প্লেনস’। দেখে কে বলবে দিগন্তবিস্তৃত এই সমতল ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে পনের হাজার ফিট উচ্চতায়! প্রথমদর্শনেই জায়গাটার প্রেমে পড়ে গেলাম সবাই। টানা ৪০ কিঃমিঃ সমতল রাস্তা। কোথাও কোথাও একেবারে তীরের মত সোজা চলে গেছে মাইলের পর মাইল। রাহুল ভাইয়ের ট্রাভেলার্স যেন এতক্ষণে প্রাণ ফিরে পেল। গতি বাড়িয়ে ছুটলো সময়ের ল্যাগ পুষিয়ে নিতে। উত্তেজনায় জানালা খুলে শরীরের অর্ধেক বের করে দিয়ে ছবি তুলতে লাগলাম। চারপাশে যতদূর চোখ যায় শুধু খোলা ময়দান। হঠাৎ হঠাৎ দেখা মেলে চরে বেড়ানো ঘোড়ার দল বা যাযাবরদের পশুপালের। পাহাড়গুলো বহু দূরে দূরে। মাঝে মাঝে রাস্তার কোন অংশ ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু এটা নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাতে হচ্ছে না। মাঠের মধ্যে দিয়েই দিব্যি গাড়ি নামিয়ে দেয়া যাচ্ছে।


মোর প্লেনস। টানা চল্লিশ কিলোমিটারের সুখ

মোর প্লেনসের এত এত সুখের মাঝে একমাত্র দুঃখ হয়ে দেখা দিল গাড়ির সাউন্ড সিস্টেমটা। সেই শীমলা যে জিনিসটা এত বিনোদন দিয়ে এসেছে, এদ্দুর এসে হঠাৎ সেটা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। অল্টিচিউড সিকনেস এমনিতেই মাথায় চাপ ফেলে রেখেছে, তার উপর একই প্যাথেটিক পাঞ্জাবী গান (সেটার দৈর্ঘ্যও সম্ভবত মিনিট দশেক হবে) রিপিট দিয়ে শুনিয়ে শুনিয়ে ধৈর্য্যের ভয়াবহ পরীক্ষা নিলেন রাহুল ভাই।

এদিকে রাস্তা আবার খারাপ হওয়া শুরু হয়েছে। সমস্যা শুধু ভাঙ্গা রাস্তা বা রাস্তার ঢালই না, অক্সিজেন-স্বল্পতার কারণে ট্রাভেলার্সটাও তার পুরোটা নিংড়ে দিতে পারছে না। বেশ কিছুক্ষণ ভোগান্তির পর অবশেষে চড়লাম আজকের শেষ পাস ‘তাংলাং লা’ তে (‘লা’, ‘লা’ শুনতে শুনতে যাদের মাথা ধরে গেছে তাদের বলে রাখি, তিব্বতী ভাষায় পাসকে ‘লা’ বলা হয়।)। আমাদের রাস্তায় এটাই সর্বোচ্চ বিন্দু। দৃষ্টি ঠেকানোর মত আর কোন চুঁড়া নেই এ তল্লাটে। তবে সমস্যা হচ্ছে চোখ মেলে রাখাটাই! বাতাস যেন উঠিয়ে নিয়ে যেতে চায়। বাতাসের তোড়ে যেটুকু অক্সিজেন পাওয়ার কথা সেটুকুও নেওয়া যায়না। সাড়ে সতের হাজার ফিটের এই পাসকে দাবি করা হয় পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মোটরেবল পাস বলে। যদিও এ নিয়ে বিতর্কের কোন শেষ নেই তবুও এই দাবির প্রতি জোরালো সমর্থন জানালাম আমরা। ব্যাপারটা সত্য হলে আমাদের গল্পের ঝুড়িটাই তো ভারি হচ্ছে... মুহাহা!......


তাংলাং লা

তাংলাং লা পার হয়ে এবার শুধু নামার পালা। উতরাইয়ের শুরুটাও বিশেষ সুবিধার না, অনেকটা গাটা লুপের মতই। কিন্তু ক্রমশ রাস্তা ভালো হতে শুরু করলো। উচ্চতা কমার সাথে সাথে শরীরও ফুরফুরে হতে থাকলো।


তাংলাং লা'র উতরাই

উপসী গ্রামে পৌঁছানোর আগে একটা নদী পার হতে হল। রাহুল ভাই জানালো এটাই সিন্ধু নদ! নামটা শুনেই শিহরিত হলাম... এটাই সেই সিন্ধু (ঋকবেদের প্রার্থনাসঙ্গীতে বাকি সকল পৌরণিক নদীকেই স্ত্রী-লিঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করা হলেও কেবল সিন্ধুকে পুং-লিঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এজন্যই সিন্ধু “নদ” )! তিব্বতের মালভূমিতে জন্ম নিয়ে হিমালয়ের গ্লেসিয়ার গলা পানিকে সঙ্গি করে লাদাখ, বালতিস্তান, পাকিস্তান হয়ে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে এই জলধারা। আর যাওয়ার পথে বাঁচিয়ে রেখেছে কত না সভ্যতা!


উপসী পৌঁছে মনে হল বহুদিন পর সভ্য জগতে ফিরলাম। আশপাশের সবুজ রঙ চোখে শান্তির পরশ বোলালো... কত যুগ পর যে এই রঙটা দেখলাম! এখান থেকে লেহ পর্যন্ত দারুণ রাস্তা। প্রাচীন ব্যাবসায়ীদের চলার একটি পথ এই উপসী থেকে চলে গেছে তিব্বতের দিকে। লেহ’র আগের শেষ পুলিশ চেকপোস্টটাও এখানে।


খরস্রোতা সিন্ধুর পাশে শেষবারের মতো যাত্রাবিরতি দেয়া হলো কিছুক্ষণ- শফিকের অনুরোধে। সত্যি বলতে, বিরতিটা আমাদের সবারই খুব দরকার ছিল। তবু ভাবটা এমন ধরলাম যে, ‘এই শফিকটা না!......এত্ত মেয়েলীও কেউ হয়!...’। ফুসফুস ভরে ভরে শ্বাস নিচ্ছি। আদিব ইমোশনাল হয়ে গিয়ে অক্সিজেনের নাম বদলে ‘সেক্সিজেন’ করার প্রস্তাব উত্থাপন করলো......আমরাও সশব্দে বিল পাস করে দিলাম।


সিন্ধু এবং উপসী




নদের গর্জন শুনতে শুনতে পাহাড়ে সন্ধ্যা নামতে দেখলাম। ঘড়িতে সময় তখন প্রায় আটটা। ভ্রমণের ষোলতম ঘন্টায় দূর থেকে দেখা গেল 'শে' প্যালেসের ধ্বংসাবশেষ। জায়গায় জায়গায় তিব্বতী বুদ্ধিস্টদের সমাধীস্থল, স্বাধীন তিব্বতের দাবি নিয়ে পতাকা, দালাই লামার ব্যানার-পোস্টার। আর আরো দূরে দেখা যাচ্ছে সেই বহু আরাধ্য লেহ- লাদাখের রাজধানী। রাস্তার উপরের ফলকে লেখা আছে স্বাগতবাণী- ‘জুলে’।




*** নোটগুলাতে নিজের তোলা ছবির পাশাপাশী রাবা, আয়াজ, আদিব সবার কাছ থেকেই ছবি নিয়েছি একগাদা করে। আলাদা আলাদা করে কার্টেসি দিলাম না আর :)

***অল্টিচিউডসিকনেস নিয়েও মানালী-লেহ হাইওয়েতে অনেকগুলো ভিডিও করেছিল রাবা। তার থেকে মাত্র কয়েকটা কম্পাইল করে ওর বানানো দারুণ একটা ভিডিও দেখে নিতে পারে এখানে [yt|https://www.youtube.com/watch?v=0A6qW49U4yY
* মূল লেখা এখানে

এরপরের লেখাঃ ভারতভ্রমণঃ লেহ

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:৫১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×