somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমেন্দ্র মিত্র ও তার কবিতা

৩০ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪ - ১৯৮৮) একজন বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক । শুধু তাই নয় তিনি বাংলায় বিজ্ঞানকল্পকাহিনী এবং থ্রিলার রচনা করেতন । তাঁর সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় চরিত্র ঘনাদা ।
প্রেমেন্দ্র মিত্র ভারতের বারানসিতে জন্বাম গ্রহন করেন । তার বাবা ছিলেন রেলওয়ের কর্মকর্তা আর তার ফলশ্রুতিতে তিনি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন বাবার সাথে । তিনি ছিলেন কলকাতার স্কটিশচার্চের শিক্ষার্থী । আর নানা পেশার পর তিনি শেষ অবধি দিক্ষণ কলিকাতার সিটি কলেজে শিক্ষকতা করেন ।
তিনি অনেক বাংলা সাময়িকী আর সংবাদপত্র সম্পাদনা করেছেন । তার মধ্যে কল্লোল, কালি কলম, বাংলার কথা, বঙ্গবাণী, সংবাদ ইত্যাদি ।

তাঁর লেখা ১৯২২ সালে প্রবাসীতে প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ।

১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে ঢাকা থেকে কলকাতায় এসে গোবিন্দ ঘোষাল লেনের একটি মেসে থাকার সময় ঘরের জানলার ফাঁকে একটি পোস্টকার্ড আবিষ্কার করেন । চিঠিটা পড়তে পড়তে তাঁর মনে দুটো গল্প আসে । সেই রাতেই গল্পদুটো লিখে পরদিন পাঠিয়ে দেন জনপ্রিয় পত্রিকা প্রবাসীতে । ১৯২৪ সালের মার্চে প্রবাসীতে 'শুধু কেরানী' আর এপ্রিল মাসে 'গোপনচারিণী' প্রকাশিত হয় । সেই বছরেই কল্লোল পত্রিকায় 'সংক্রান্তি' নামে একটি গল্প বেরোয় । এরপর তাঁর মিছিল এবং পাঁক নামে দুটি উপন্যাস বেরোয় । তাঁর প্রথম কবিতার বই 'প্রথমা' প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে । ততদিনে তাঁর ছোটোগল্পের তিনটি বই বেরিয়ে গেছে । 'পঞ্চশর', 'বেনামী বন্দর' আর 'পুতুল ও প্রতিমা' । তার উল্লেখযোগ্য সৃস্টি চরিত্র "মেজোকর্তা" যে কিনা বিখ্যাত ভূত শিকারী ছিল । তার রহস্যোপন্যাস পাঠক প্রিয় ছিল ।
তিনি চলচ্চিত্র পরচালক হিসেবেও কাজ করেছেন ।

চলচ্চিত্র জগৎ

পথ বেঁধে দিল, রাজলক্ষ্মী (হিন্দি), নতুন খবর, কালোছায়া , কুয়াশা তাঁর পরিচালিত ছবি । এছাড়াও তিনি বহু সিনেমার কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও উপদেষ্টা ছিলেন ।

গ্রন্থ তালিকা

কবিতা
প্রথমা
সম্রাট
ফেরারী ফৌজ
সাগর থেকে ফেরা
হরিণ চিতা চিল
কখনো মেঘ
অনন্য
খুদা ওয়াহিদ

উপন্যাস

পাক
মিছিল
উপনয়ন
আগামীকাল
প্রতিশোধ
কুয়াশা
পথ ভুলে
প্রতিধ্বনি ফেরে
মনুদ্বাদশ
পিপড়াপুরাণ
মঙ্গলবিরি

ছোট গল্প সমগ্র
পঞ্চসর
বেনামী বন্দর
পুতুল ও প্রতিমা
মৃত্তিকা
অফুরন্ত
ধুলি ধুসর
মহানগর
জলপায়রা
শ্রেষ্ঠ গল্প
নানা রঙে বোনা
নির্বাচিত



হাওয়া বয় সনসন
তারারা কাঁপে ।
হৃদয়ে কি জং ধরে
পুরনো খাপে !

কার চুল এলোমেলো
কিবা তাতে আসে গেল!
কার চোখে কত জল
কেবা তা মাপে?

দিনগুলো কুড়াতে
কত কি তো হারাল
ব্যথা কই সেই ফলা-র
বিধেঁছে যা ধারালো!

হাওয়া বয় সনসন
তারারা কাঁপে ।
জেনে কিবা প্রয়োজন
অনেক দূরের বন ।
রাঙা হলো কুসুমে, না
বহ্নিকাপে?
হৃদয় মর্চে ধরা
পুরনো খাপে!!

ফ্যান

নগরের পথে পথে দেখেছ অদ্ভুত এক জীব
ঠিক মানুষের মতো
কিংবা ঠিক নয়,
যেন তার ব্যঙ্গ-চিত্র বিদ্রূপ-বিকৃত !
তবু তারা নড়ে চড়ে কথা বলে, আর
জঞ্জালের মত জমে রাস্তায়-রাস্তায়।
উচ্ছিষ্টের আস্তাকূড়ে ব'সে ব'সে ধোঁকে
আর ফ্যান চায়।

রক্ত নয়, মাংস নয়,
নয় কোন পাথরের মতো ঠান্ডা সবুজ কলিজা।
মানুষের সত্ ভাই চায় সুধু ফ্যান;
তবু যেন সভ্যতার ভাঙেনাকো ধ্যান !
একদিন এরা বুঝি চষেছিল মাটি
তারপর ভুলে গেছে পরিপাটি
কত-ধানে হয় কত চাল;
ভুলে গেছে লাঙলের হাল
কাঁধে তুলে নেওয়া যায়।
কোনোদিন নিয়েছিল কেউ,
জানেনাকো আছে এক সমুদ্রের ঢেউ
পাহাড়-টলানো।

অন্ন ছেঁকে তুলে নিয়ে,
ক্ষুধাশীর্ণ মুখে যেই ঢেলে দিই ফ্যান
মনে হয় সাধি এক পৈশাচিক নিষ্ঠুর কল্যাণ ;
তার চেয়ে রাখি যদি ফেলে,
পচে পচে আপন বিকারে
এই অন্ন হবে না কি মৃত্যুলোভাতুরা
অগ্নি-জ্বালাময় তীব্র সুরা !
রাজপথে এই সব কচি কচি শিশুর কঙ্কাল--মাতৃস্তন্যহীন,
দধীচির হাড় ছিলো এর চেয়ে আরো কি কঠিন ?

জং

হাওয়া বয় সন সন
তারারা কাঁপে।
হৃদয়ে কি জং ধরে
পুরানো খাপে।
কার চুল এলোমেলো।
কি বা তাতে এলো গেলো !
কার চোখে কত জল
কে বা তা মাপে ?

দিনগুলি কুড়োতে
কত কি তো হারালো।
ব্যথা কই সে ফলা-র
বিঁধেছে যা ধারালো !

হাওয়া বয় সন সন
তারারা কাঁপে।
জেনে কি বা প্রয়োজন
অনেক দূরে বন
রাঙা হ'ল কুসুমে, না,
বহ্নিতাপে ?
হৃদয়ে মরচে-ধরা
পুরানো খাপে।

পাখিদের মন

নির্জন প্রান্তরে ঘুরে হঠাত্ কখন,
হয়তো পেতেও পারি পাখিদের মন।
আর শুধু মাটি নয় শ্স্য নয়,
নয় শুধু ভার,
আর-এক বিদ্রোহী ধিক্কার--
পৃথিবী-পরাস্ত-করা উজ্জল উত্ ক্ষেপ।
আজো এরা মাঠে-ঘাটে মাটি খুঁটে খায়,
মেনে নেয় সব কিছু দায় ;
তবু এক সুনীল শপথ
তাদের বুকের রক্ত তপ্ত করে রাখে।
জীবনের বাঁকে বাঁকে, যত গ্লানি যত কোলাহল
ব্যাধের গুলির মতো বুকে বিঁধে রয়,
সে-উত্তাপে গ'লে গিয়ে হ'য়ে যায় ক্ষয়।
শুধু দুটি তীব্র তীক্ষ্ণ দুঃসাহসী ডানা,
আকাশের মানে না সিমানা।
কোনোদিন এ-হৃদয় হয় যদি একান্ত নির্জন,
হয়তো পেতেও পারি পাখিদের মন
--আর এক সূর্য-সচেতন।


সাপ

প্রথম সাপটা দেখবে নিথর পাথর সন্মোহিত,
কোন সে আদিম অন্ধ অঘোর অন্বেষণের দ্বিধা
আঁধার-ছোঁয়ানো ছায়া-বিদ্যুত হেনে খোলে কুণ্ডলী!

তারপর সাপ অনেক দেখবে
কেঁপে-ওঠা শরবন।
কাঁটা-দেওয়া ঘাস সভয়ে শুনবে
গোপন সঞ্চারণ,
---শোনা না-শোনার সীমানার শুধু স্তব্ ধতা শিহরিত |

সব শেষে এক সাহসী সকাল
গহন অতল থেকে,
হিমেল হিংসা ছেঁকে নিয়ে এসে
রোদ্দুরে মেলাবে কি?
ছন্দে মেলাবে ঘৃণা-পিচ্ছল বিবরের
সরীসৃপের বিষফণা আর পাখিদের নীল মুক্তি!

কাগজ বিক্রী

হাঁকে ফিরিওলা--- কাগজ বিক্রী,
পুরানো কাগজ চাই!
ঘরের কোণেতে সঞ্চিত যত
তাড়াগুলি হাতড়াই |
পুরানো কাগজ চাই |
বহুদিন ধরে জঞ্জাল বাড়ে
সের দরে বেচি তাই |
কেমন করিয়া একটি তাহার
হঠাত্ নজরে পড়ে,
দেখি সমুদ্রে যাত্রী-জাহাজ
কোথাও ডুবিল ঝড়ে |
হঠাত্ নজরে পড়ে,
আবার কোথায় মানুষের মাথা,
বিকাল খুলির দরে |

নিরুদ্দেশ কে সন্তান লাগি
ঘোষিছে পুরস্কার,
মৃত্যুঞ্জয় অমৃত কারা
রিছে আবিষ্কার |
ঘোষিছে পুরস্কার,
পলাক খুনে লুকায়ে কোথায়
চাই যে হদিস্ তার |

কোন সে বধুর বুকের আগুন
ভিতর করিয়া খাক্,
অবশেষে লাগে বসনে তাহার,
পুড়ে গেল সাতপাক |
ভিতর করিয়া খাক্,
কোন্ সে গিরির গরল অনল
ঘটাল দুর্বিপাক |

হারানো তারিখ ফিরে আসে ফের
পুরানো কাগজ পড়ি ;
আমার নয়নে সহসা পোহায়
সে দিনের বিভাবরী |
পুরানো কাগজ পড়ি,
রাখিল ধরনী সেই দিনটির
পায়ের চিহ্ন ধরি |

সে পদচিহ্ন কোথায় মিলাল
তারপর নাহি খোঁজ!
মানুষের ঘরে সকলের বড়
উত্সব নওরোজ |
তারপরে নাহি খোঁজ ;
যাত্রী জাহাজে ডুবিল যে, বুঝি,
তারো ঘরে আজি ভোজ |

রক্তে ছোপান অশ্রুতে ভেজা
পুরাতন যত খাতা,
সব জঞ্জাল আজিকে, হলেও
রঙীন সুতোয় গাঁথা |
পুরাতন যত খাতা,
তাতে কোন্ দিন কি দাগ লাগিল
কে বৃথা ঘামায় মাথা |

হাঁকে ফিরিওয়ালা, কাগজ বিক্রী,
পুরানো কাগজ চাই |
ঘর ভরি যত মিছে জঞ্জাল
জমাবার নাই ঠাঁই |
পুরানো কাগজ চাই ;
আদর যহার ফুরালো, তাদেরে
সের দরে বেচ ভাই


কথা

তারপরও কথা থাকে;
বৃষ্টি হয়ে গেলে পর
ভিজে ঠাণ্ডা বাতাসের মাটি-মাখা গন্ধের মতন
আবছায়া মেঘ মেঘ কথা;
কে জানে তা কথা কিংবা
কেঁপে ওঠা রঙিন স্তব্ধতা।

সে কথা হবে না বলা তাকে:
শুধু প্রাণ ধারণের প্রতিজ্ঞা ও প্রয়াসের ফাঁকে ফাঁকে
অবাক হৃদয়
আপনার সঙ্গে একা-একা
সেই সব কুয়াশার মত কথা কয়।
অনেক আশ্বর্য কথা হয়তো বলেছি তার কানে।
হৃদয়ের কতটুকু মানে
তবু সে কথায় ধরে!

তুষারের মতো যায় ঝরে
সব কথা কোনো এক উত্তুঙ্গ শিখরে
আবেগের,
হাত দিয়ে হাত ছুঁই,
কথা দিয়ে মন হাতড়াই
তবু কারে কতটুকু পাই।

সব কথা হেরে গেলে
তাই এক দীর্ঘশ্বাস বয়,
বুঝি ভুলে কেঁপে ওঠে
একবার নির্লিপ্ত সময়।

তারপর জীবনের ফাটলে-ফাটলে
কুয়াশা জড়ায়
কুয়াশার মতো কথা হৃদয়ের দিগন্তে ছড়ায়
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১০ রাত ২:৩০
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাগতম ইরান

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

ইরানকে ধন্যবাদ। ইসরায়েলকে দাত ভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য।

হ্যাঁ, ইরানকে হয়তো এর জন্য মাসুল দেওয়া লাগবে। তবে, কোন দেশ অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপে করবে আর সেদেশ বসে থাকবে এটা কখনোই সুখকর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×