somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু সাত পাহাড়ের সাতকাহন : ৭ম চুড়া লুকুডং বা থিনদলতে ।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


থিনদলতে পাড়া থেকে চুড়ায় যাবার সময় এরকম একটা ভিউ পাওয়া যায় থিনদলতে পাহাড় বা লুকু ডং এর । থিনদলতে - একটা গাছের নাম । ছোট ছোট পাতা । প্রথম যখন পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় এখানে, বর্তমান কারবারীর বাবার আমলে, ছোট ছোটা পাতার এই গাছটি প্রচুর পরিমানে ছিল এখানে। আর থিনদলতে গাছের নাম অনুসারে এই পাড়ার নামও হয়ে যায় থিন্দলতে পাড়া ।

বান্দরবন - রাঙামাটির সীমানা ধরে মাথা উচুকরে দাড়িয়ে থাকা ৩০০০ ফুটের লম্বক্র - থিন্দলতে রেঞ্জ, দু-দুটি প্রমিনেন্ট ৩০০০ ফুটের পিক আছে এটাতে । আর কম প্রমিনেন্স এর এক বা একাধিক সাবসিডিয়ারী পিকও আছে এটাতে । এ হিসেবে ট্রেকারদের কাচে বেশ আকর্ষণীয় এই অঞ্চলটি । এর সবচেয়ে উচু চুড়াটি দেশের সপ্তম চুড়া, উচ্চতা হিসেবে। আশে পাশের পাড়ার লোকেরা একে ডাকে 'লুকু' নামে, লুকুডং । তবে থিনদলতে পাড়ার লোকেরা একে থিনদলতে ত্ল্যাং নামেও ডাকে আবার লুকুডং ও বলে ।

থিনদলতে পাড়া থেকে সামিট পর্যন্ত আমাদের গাইড ছিল পাড়ার কারবারী , তার ঘরেই আমরা ছিলাম রাতের বেলা । একটা জায়গায় গিয়ে সে আমাদের বলল এটাই চুড়া , আমাদের আগে আসা বিডি-এক্সপ্লোরারের ফাহিম - এর সামিট বোতল খোজ করলাম । গাইড বলল জুমে আগুন ডেওয়াতে সব পুড়ে গেছে । আমারা রিডিং পেয়েছিলাম ৩১২০ ফুটের মত । কিন্তু সেটা ছিল আসল রিডিং থেকে বেশ কিছুটা কম । ভোর সকালেই ফাহিমকে কল দিলাম ওর ঘুম নষ্ট করে। বেচার আমাডের রিডিং শুনে অবাকই হল । আশা পাশের ভিউ জানতে চাইল । আমরা ঘন মেঘের কারণে একটু দূরের কিছুও দেখতে পাচ্ছিলাম না!


লুকু ডং বা থিনদলতে থেকে দেখা ক্রায়ক্কং, ৩০০০ ফুটের চেয়ে বেশী উচ্চতার একটা চুড়া ।


শেষ পর্যন্ত ফাহিম এসএম এস করে ওর সামিটের কো-অর্ডিনেট জানাল । ল্যাটিচিউড দেখলাম আমাদের থেকে কম । শেষ তিন ডিজিট আমাদের ছিল ৬২০, আর ওর ৬১১ ! মানে আরো দক্ষিণে যেতে হবে । পাহাড়ে এই সমস্যাটা খুবই প্রকট - তৈরী ট্রেইল না থাকলে গাইডরা প্রায় ই একটা সুবিধাজনক জায়গায় নিয়েই সামিট দাবী করা বসবে । যোগী/ কনদুকেও একই কাজ করেছিল । যাইহোক দক্ষিণে এগুতেই দেখলাম নেমে যাচ্ছে , তাও এগিয়ে গেলাম । একটু এগিয়ে গেলে দেখলাম সামনে একটা উচু যায়গা দেখা যাচ্ছে । আমি চেচিয়ে উঠলাম ঐ যে সামিট ! এরপরের পথটা ছিল সহজ, প্রায় সমতল জায়গায় হালকা বাশ ঝাড় ঠেলে এগিয়ে যাওয়া । আমারা রিডিং পেয়েছিলাম ৩১৩৯ থেকে ৪১ ফুট । ইট্রেক্স সামিট জিপিএস এ ।



সামিটে গিয়ে আগের টিমের সামিট বোতল খুজতে গিয়ে কিছুটা খুড়ে ফেললাম, একটা বোতলও পেলাম , আর সেটাতে পেলাম ফাহিমের চিঠিও !



কিভাবে যাবেন : প্রথমেই বান্দরবন থেকে বাসে করে চলে যাবেন রুমা বাজার । সেখানে গাইড ঠিক করে তাকে নিয়ে আর্মি ক্যাম্প ও থানায় রিপোর্ট করতে হবে । সেখান থেকে পায়ে হেটে/চাদের গাড়ী করে বগা লেক। বগা লেক থাকে কেওক্রাডং ৩ ঘন্টার পথ । কেওক্রাডং দুভাবে যাওয়া যায় থিনদলতে পাড়া । কেওক্রাডং থেকে পুবদিকে নেমে গেলে সুংসাং পাড়া, দেড়/দুই ঘন্টার পথ । আর বেশ কিছুটা দক্ষিনে গিয়ে পূব দিকে নেমে গেলে থাইক্কং পাড়া তিন ঘন্টার পথ। সুংসাং পাড়া বা থাইক্কং পাড়া দুজায়গা দিয়েই যেতে পারবেন থিনদলতে পাড়া , ৪/৫ কিংবা ৬ ঘন্টার পথ ।
আর থিনদলতে পাড়া থেকে চুড়া মাত্র ঘন্টাখানেকের পথ ।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফুটের -ও বেশী উচ্চতায় থিনদলতে পাড়া, যাবার সময় সোজা পশ্চিমে দেখা যায় মজার পাহাড় কপিতাল, একেবারে টেবিলের মত দেখতে , মাথাটা সমান করে কাটা !


কপিতাল : ইষ্ট ফেস।

আমরা যাওয়ার সময় গিয়েছিলাম থাইক্কং পাড়া দিয়ে । সেখান ঠেকে সোজা নীচে প্রায় হাজার ফুটের বেশী নেমে গেলে রেমাক্রি খাল ( আসলে নদী, ক্যানেল বা খাল মানব সৃষ্ট হয় ) রেমাক্রী মুলত সাংগু নদীর একটা উপনদী । কোন নদী চলার পথে ভাগ হয়ে গেলে সেটাকে বলে শাখা নদী , আর নদী চলার পথে অন্য কোন নদী এসে মিশলে সেটাকে বলে উপনদী। রেমাক্রী খাল(!) অনেকটা পথগ পেরিয়ে দক্ষিণে রেমাক্রী বাজারের কাছে গিয়ে সাংগুতে পতিত হয়েছে। রেমাক্রির প্রতি কোন ফেসিনেশন বা মোহ থাকলে এই পথে যেয়ে দেখতে পারেন। ঘন গাছ-গাছালি ঢাকা রেমাক্রি নদীর হাটু জল বা আরো কম পনিতে নেমে একে নিয়ে চলা অনেক অনেক অভিযানের কাহিনী, আশে পাশের ভু-বৈচিত্র মনে থাকলে কিছুটা আবেগ তাড়িত হতেই পারেন ।

ফিরতি পথে আমার নিয়েছিলাম সুংসাং পাড়ার ট্রেইল । সেটাতে রেমাক্রি পার হতে হয় না , তবে রেমাক্রীতে পতিত হওয়া ছোট ছোট ঝিরি পার হয়ে যেটে হয় । আশে পাশে ঝিরি গুলোতে বেশ কিছু ঝরণাও আছে, ক্লান্তি আর সময়ের চাপ থাকায় সেগুলো দেখার চেষ্টা করিনি। তবে রেমাক্ড়ির সমন্তরাল চলার সময় দূরে নীচে দেখা পেলাম ত্লাবং বা জোড়া ঝরনা যেটাকে অনেকেই হালে 'ডাবল ফলস' বলে (!)



এক্সপ্লোর করার ইতিহাস :বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান করে যতটুকু জানতে পেরেছি ২০০৮ এর দিকে নেচার এডভেঞ্চার আর নর্থ আলপাইনের অভিযাত্রীরা একটা যৌথ অভিযান পরিচালণা করে দেশের প্রায় ১৬টি শীর্ষ চুড়া অনুসন্ধান বা আরোহনের উদ্দেশ্যে ।। প্রবীণ ট্রেকার শ্রদ্ধেয় হক ভাই -এর বর্ননা অনুসারে দুই দলের পক্ষথেকে অন্যান্যদের মধ্যে আজিজ ও রাফা ছিল সে অভিযানে ।এর পর ফাহিম (অামার জানামতে তিনিই আমাদের দেশেরসবচেয়ে বেশী পিক প্রথম পরিমাপ করেন) এটি পরিমাপ করেন ও সামিট লেটার রেখে আসেন । পরবর্তী সময় ট্রাভেলারস অব বাংলাদেশের জাকিউও এটি আরোহন করেন । তবে বাংলা ট্রেকে জাকিউলের পোষ্ট করা তথ্য অনুসারে তাদের তাদের লেটিচিউড এর মিনিট ছিল ৫৪.৬২৬ , যেটা মুল সামিট থেকে বেশ কিছুটা দূরে।




এর আগে একটা পোষ্ট-এ লিখেছিলাম দেশের সাতটি সর্বোচ্চ চুড়ায় গিয়ে মাপামাপির ঘোষণা । বাংলাদেশের শীর্ষ সাতটি পর্বতশৃংগ জরিপ, কেওক্রাডং ৪র্থ ! এখন ভাবছি সাতটি পাহাড়ের -ই কিছু কিছু বর্ণনা আর আমাদের অভিযানের কিছু কাহিনী সবার সাথে শেয়ার করব ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×