somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের সবচেয়ে কষ্টসাধ্য চুড়া জ-ত্লং অভিযানের ইতিহাস ।

০২ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কথা হচ্ছিল নিতীশ দা'র সাথে, বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ চুড়া আরোহনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন আগ্রহ ভরে। নিতিশ ডা আর ডাক্তার বিজয়-ই অভিযাত্রী হিসেবে বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ চুড়া প্রথম আরোহণ করেন । উচ্চতায় ২য় হলেও দেশের ট্রেকিং কমুনিটিতে এটি সবচেয়ে কষ্টসাধ্য চুড়া হিসেবে বিবেচিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে নিতিশদা'রা এটাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া মনে করে-ই উঠেছিল । নিতীশ দা'র কথা মত সেটা ২০০৫ এর ঘটনা । প্রসংগত একটা কথা বলে রাখি সেযুগে ইন্টারনেট আর গুগুল আর্থ-গুগুল ম্যাপের এতটা প্রসার ঘটেনি। ঘরে বসে আজকালের মত নাসার এসআরটিএম (SRTM : Shuttle Radar Topography Mission ) ডেটা , রাশান টপো ম্যাপ, ইউ এস টপো ম্যাপ এসব পাওয়ার ব্যবস্হা ছিল না । সে সময় বিভিন্ন ম্যাপ পত্র ঘেটে নিতিশ দা খুজে পেলেন মদক মুয়াল নামের একটা চুড়া , যেটা মায়ানমার সীমান্তে অবস্হিত ।

বান্দরবনে ট্রেকিং এ অভিজ্ঞ নিতীশদা । এরপরও যে কারো জন্যই লোকেশনটা স্পেসিফিক ভাবে পয়েন্ট করা, ট্রেকিং রুট ফাইনাল করা - সাপ্লাই আর লোকাল গাইডের জন্য কাছাকাছি গ্রাম বা লোকাকয়ের অবস্হান জানা বা কমপক্ষে 'পাড়া'র নামটা জানা - এগুলো একটা বড় চ্যালেঞ্জ । এসকল বিষয়েই আরো বিস্তারিত জানার জন্য সাধ্যমত খোজ খবর চালালেন নিতিশ দা । একজন আর্মির স হায়তা পেয়েছিলেন তিনি এ বিষয়ে । অথচ জ-ত্লং বা মদক মুয়াল মিশণে - এই আর্মি-ই সবচেয়ে প্যারা দিয়েছিল ওনাদের টিম কে ।

যাই হোক জ-ত্লং এর মুখস্ত রুট এখন দলিয়ান পাড়া দিয়েই প্রতিষ্ঠিত । দলিয়ান পাড়ায় পৌছানোর পর আর্মি জেরা, অস হযোগিটা আর হুমকি ধামকির মুখে পড়েন ওনারা । প্রত্যন্ত পার্বত্য এলাকায় আর্মি - বিডিআর এর কাছ থেকে এ জাতীয় আচরণ পেয়ে পুরাণো ট্রেকাররা অনেকটাই অভ্যস্ত । যাই হোক আর্মি ওনাদের আগে বাড়তে দিতে চায়নি , আর ওনারাও নিজেদের মিশনে অনড় ছিলেন । শেষ পর্যন্ত লালরিং কার্বারী ওনাদের সাহায্য করেছিল জ-ত্লং অভিযানে ।

নিতিশ দা আর ডা: বিজয়ের অভিযানের কাহিনী এই লালরিং এর কাছে থেকেই আমি নিজে শুনেছি দলিয়ান পাড়ায় । সুতরাং সাক্ষ্য প্রমাণের মাপকাঠিতেও ওনাদের অভিযানের ঘটনা উৎরে যায়, কারো আপত্তি করার কিছু নেই । ম্যাপে মদক মুয়াল লেখা হলেও এই পাহাড় চুড়ার কাছাকাছি থেকে জ-ত্লং নামে একটা ঝিরি নেমে এসেছে , স্হানীয়রা এই ঝিরির নামে এটাকে জ-ত্লং নামেই ডাকে ।

যাই হোক নিতীশ দার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ২০০৫ আর ২০০৮ মোট দুইবার জ-ত্লং গিয়েছিলেন ওনারা। ২০০৬-৭ এর দিকে নেচার এডভেঞ্চার ক্লাব থানচি দিয়ে সাকা যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তখন নিতিশ দার সাথে পরিচয় হয় নেচার এডভেঞ্চারের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের সাথে । সাজ্জাডের কাছ থেকেই প্রথম ' জ-ত্লং' চুড়ার নামটা জানতে পারি । ( গুগুলে ভৌগলিক ভাবে উচু যায়গাটা সম্পর্কে জানতাম , তবে নাম জানা ছিল না ) তবে তার চেয়ে বড় বিষয় ছিল আমার কাছে নিতিশ দা'র মত একজন অভিজ্ঞ ট্রেকার সম্পর্কে জানতে পারা । যাই হোক জ-ত্লং আর নিতিশ দা সম্পর্কে ট্রেকিং কমুনিটির অনেকেই জানতে পেরেছে সাজ্জাদের মাধ্যমেই । ( ফেসবুকে শেয়ারিং এর যুগ তখনও শুরু হয় নি ) একেক টা অভিযান আর অভিযাত্রী সম্পর্কে জানতে হলে সে যুগে অনেক অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হত !

ডি-ওয়ের ফ্লাই ওভার দা পিক : বাংলাদেশের অনেক অনেক মৌলিক এক্সপ্লোরের স্হপতি ' ডি-ওয়ে ' ফ্লাই ওভার দা পিক প্রযেক্ট হাতে নেয় ২০১১ তে । চকোরিয়া থেকে বান্দরবেনে ঢুকে মিরন্চা রেঞ্জ পার হয়ে লামা - আলি কদম হয়ে চিম্বুক রেঞ্জের সবচেয়ে উচু চুড়া ক্রিসতং সামিট করা ছিল প্রজেক্টের প্রথম ফেজ । কিন্তু প্রজেক্ট - এর মুল আকর্ষণ ছিল বান্দর বনের রেন্জ গুলো একে একে ক্রস করে একেবারে মায়ানমার সীমন্ত পর্যন্ত গিয়ে দেশের সবচেয়ে দুরূহ চুড়াটা সামিট করা । ক্রিসতং সামিটের পর তাই ডি-ওয়ে টিম পূব দিকে নেমে যায় সাংগু নদীর দিকে। সেখান থেকে ট্রেক করে এগিয়ে যায় দলিয়ানের দিকে ....

( আগামী পর্বে সমাপ্ত )
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×