এই পর্বে এসে শিরোনামের পদ্ধতি একটু বদলে দিলাম যাতে করে শিরোনাম দেখেই একজন পাঠক এই পর্বে কি নিয়ে কি নিয়ে লেখা হল তা বুঝতে পারেন অনায়াসে। যাইহোক শিরোনাম দেখেই বুঝতে পারছেন যে এবার পেশাদার বা প্রফেশনাল ব্লগিং নিয়ে আলোচনা করবো। এ সম্পর্কে তেমন কোন সংজ্ঞা পেলাম না ইন্টারনেটে। তাই নিজের তৈরি সংজ্ঞা দিয়েই কাজ চালাতে হবে।
প্রফেশনাল ব্লগিং বলতে এমন ধরনের ব্লগিং বুঝি যা একজন লোকের পেশা হবে। পেশা সার্বক্ষণিক বা ফুলটাইম অথবা খণ্ড কালীন পা পার্টটাইম হতে পারে। মূল কথা হচ্ছে পেশা বা অর্থ আয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল ব্লগিং। নিজের ব্লগ থেকে আয় করুক বা কোন কোম্পানির ব্লগে চাকুরি করুক তাতে কিছু আসে যায় না। আয়ের পুরো বা একটা গুরুত্বপূর্ণ আসতে হবে এ খাট থেকে এটাই মূল কথা।
পেশাদার ব্লগিং এর সম্পূর্ণ ইতিহাস আমার নিজেরও জানা নেই। হয়তো একদিন কোন গবেষক তা একত্রিত করার উদ্যোগ নেবেন। তবে এই লিংকে সেই ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাওয়া যাবেঃ http://www.blogtyrant.com/make-money-blogging/ ব্লগিং এর ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্লগার হলে ডেরেন রাউজে (Darren Rowse)- তার ব্লগের লিঙ্কঃ http://www.problogger.net/
ডেরেন ২০০২ সালে শখের বশে ব্লগিং শুরু করলেও টাকা আয়ের জন্য সিরিয়াসভাবে চেষ্টা শুরু করেন অক্টোবর ২০০৩ থেকে। তার মাসিক আয় অনেক আগেই বাংলাদেশী টাকায় কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কোটিপতি ব্লগারদের নিয়ে ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছা আছে এ সিরিজ শেষ করার পর। তবে এ ধরনের কাজে যারা সফল হয়েছেন তাদের অনেকেই একদম সাধারন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। হয়তো অন্যদিকে সফল হলে এদিকে আসতেন না।
প্রথম দিকে যারা পেশাদার ব্লগার ছিলেন তাদের দুটি বড় সমস্যা ছিল। খুব ভাল ব্লগিং প্লাটফর্ম ছিলনা যেটিকে ইচ্ছামত কাস্টমাইজ করা যায়। WordPress আসার সাথে সেই সমস্যার সমাধান হয়। যদিও Blogger/Blogpost খুব জনপ্রিয় কিন্তু ব্লগের মাধ্যমে টাকা আয় করতে চাইলে বোধহয় WordPress এর তুলনা হয় না। আরও বড় সমস্যা ছিল টাকা আয় করা। গুগলের এডসেন্স এসে সেই সমস্যার সমাধান হয়। ২০০৬ সালে জেরেমি (http://www.shoemoney.com/ ) নামের এক ব্লগার ১ লক্ষ ৩২ হাজার ডলারের চেকের ছবি পোস্ট করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে পড়েন।
একটা প্রশ্ন অনেকে প্রায়ই করেন যে ব্লগিং করে মাসে কত টাকা আয় করা সম্ভব? এর আসলে কোন সঠিক উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। এটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। আপনি কোন বিষয়ের উপর লিখছেন তা একটা বড় ফ্যাক্টর। বলিউড, ক্রিকেট ইত্যাদির তুলনায় গাড়ি, গ্যাজেট, টাকা পয়সা বিষয় নিয়ে লিখলে আপনার আয় বেশী হবে। তাছাড়া প্রতিদিন কত লোক কোন দেশ থেকে আপনার ব্লগে আসছে তাও একটা বড় ফ্যাক্টর। আমেরিকা থেকে ভিজিটর বেশী হলে আয় বেশী হবে, বাংলাদেশ বা ভারত থেকে ভিজিটর আসলে তুলনামূলক ভাবে আয় কম হবে।
সফলতা যেমন রয়েছে, টাকাও যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি ব্যর্থতা ও হতাশাও রয়েছে। অনেকেইই মনে করেন যে এ লাইনে খুব সহজেই টাকা আয় করা যায়। যা মনে আসলো লিখলাম আর তারপর লোকে এসে পড়ে যাবে এবং কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আয় হবে। একটু ক্লিক করলেই টাকা। বাস্তবতা হল ঠিক এর উল্টো। ব্লগিং এর মাধ্যমে আয় করা প্রথম দিকে অনেকটা মরুভুমির মাঝে ফসল ফলানোর মতই কঠিন এবং কষ্টকর। আপনি সেলেব্রেটি হলে আলাদা করা। কিন্তু সাধারন মানুষ হলে আপনার লেখা কেন অন্যরা তাদের সময় ব্যয় করে পড়তে যাবে? তাছাড়া তারা আপনার লেখা খুজেই বা পাবে কিভাবে? একবার পড়ার আবার কেন আসবে? তাই যারা ব্লগিং এর মাধ্যমে সহজ আয়ের স্বপ্ন দেখেন তাদের হতাশ করতে হচ্ছে বলে দুঃখিত।
আমাদের দেশে শেয়ার মার্কেটে যেমন হাজার হাজার লোক গিয়েছিল স্বল্প সময়ে অল্প কষ্টে অনেক টাকা আয়ের চিন্তা করে ঠিক তেমনি ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডে হাজার হাজার মানুষ ব্লগিং এর মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক টাকা আয়ের জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিল।
এখানে আমার কাউকে হতাশ করার কোন ইচ্ছা নেই। তবে নামার আগে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে তারপর নামা উচিৎ। পেশাদার ব্লগিং অবশ্যই একটি বেশ আনন্দের কাজ। পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে এখানে, হুমায়ূন আহমেদের থেকেও বেশী লোক পড়বে আপনার লেখা এটাও অসম্ভব কিছু নয়। আর এমন এক ধরনের মানসিক তৃপ্তি পাবেন যা অন্য খুব কম পেশাতেই আশা করা যায়। তবে আবারো বলছি অমানুষিক কষ্ট করার মানসিকতা ও ধৈর্য থাকতে হবে এ লাইনে সফল হতে হলে।
বাংলাদেশে পেশাদার ব্লগারের সংখ্যা খুব কম। আমার মতে এর পেছনে দুটো কারণ রয়েছে। ইংরেজিতে দুর্বলতা অবশ্যই একটা বড় কারণ। যারা পেশাদার ব্লগিং-এ সাফল্য লাভ করেছেন তাদের ৯৯% ইংরেজিতেই লেখেন কারণ এ ভাষার বাজার অনেক বড়। আপনি ইংরেজিতে লিখলে পৃথিবীর সব দেশের লোকেরই পড়ার সম্ভাবনা থাকে কারণ আমাদের যুগে ইংরেজি আসলেই একমাত্র গ্লোবাল ল্যাংগুয়েজ বা বৈশ্বিক ভাষা। আমরা নিজেরাই সারাদিনে গুগোলে অনেক কিছুর জন্য ইংরেজিতেই সার্চ করি।
দ্বিতীয় যে সমস্যা তাহল বেশীর ভাগ কোম্পানি অনলাইনে বিজ্ঞাপনে বাংলা ভাষাকে সাপোর্ট করেনা। ফলে আপনার ব্লগ প্রতিদিন ১০,০০০ লোক পড়লেও বিজ্ঞাপন থেকে আয় করতে বেশ কষ্ট হবে। তবে অবস্থা বদলাচ্ছে। এখন অনেক কোম্পানি ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে এবং এই বদলে যাওয়া খুব দ্রুত হারে বাড়ছে। আমার জানা মতে কিছু কিছু কোম্পানির মার্কেটিং এর লোকেরা এলেক্সা র্যঙ্কিং এর উপর নিয়মিত নজর রাখেন।
বাংলাদেশ থেকে বাংলা ভাষায় পেশাদার ব্লগিং এর সুযোগ অনেক বাড়বে আগামি ১-২ বছরের মধ্যে। এমন আশাবাদের কারণ হল ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার উপর বিজ্ঞাপন দেয় এমন দুটি কোম্পানি বেশ ভালই এগিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি কোম্পানি G&R এর বিজ্ঞাপন তো আমরা সামু ব্লগেই দেখতে পাই। আরেকটি কোম্পানি হল আমাদেরএড। তাছাড়া ই-কমার্সের প্রসার বাড়ছে দিন দিন। আর বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত হারে। অর্থাৎ ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং অনলাইনে লেনদেন অনেক বাড়ছে আমাদের দেশে। ফলে বাংলা ভাষায় পেশাদার ব্লগ গড়ে উঠবে সময়ের চাহিদা ও প্রয়োজনে। আমার নিজের মত হল সেই দিন প্রায় চলে এসেছে এবং যারা ব্লগিং’কে পেশা হিসেবে নিতে চান তাদের উচিৎ এখন থেকেই প্রস্ততি নেয়া।
পরবর্তী পর্বে আমি ব্লগিং ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষা নিয়ে লেখার আশা রাখি। যারা পড়ছেন ও কমেন্ট করছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।