ব্লগিং ও ইংলিশ রাইটিং: ব্লগিং এর ২০ বছর (ছয়)
এবারের পর্বে টাকা পয়সা বাদ দিয়ে ব্লগিং ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষার উপর নজর দেব। ইংরজি ভাষার দুর্বলতা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বছর ধরে চলে আসা একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। এর জন্য আমি মূলত তিনটি বিষয়কে দায়ী করবঃ
ভয়
লজ্জা
অনুশীলন বা চর্চার অভাব
এই তিনটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলার আছে বলে মনে হয় না কারণ আমাদের প্রায় সবাই জীবনে ইংরেজি শিখতে গিয়ে কমবেশি এই সমস্যাগুলোয় ভুগেছি। এই তিনটি সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য ব্লগিং হতে পারে আদর্শ মাধ্যম। আমরা এখানে সবাই লিখছি মনের আনন্দে এবং স্বাধীনতা নিয়ে। এই ধরণের আনন্দ এবং স্বাধীনতা আর কোথাও কি আছে? লিখতে গিয়ে ভুল করলেও এখানে কোন সমস্যা নেই- শাস্তি পেতে হবে না। আর যারা মুখচোরা ও লাজুক প্রকৃতির শান্ত মানুষ তাদের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ব্লগ হতে পারে সবচেয়ে সেরা জায়গা। আপনি ঘরে বসে কম্পিউটার দিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মনের আনন্দে আপনার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন। এজন্য লজ্জিত বা শঙ্কিত হবার কিছু নেই। আর প্র্যাকটিস বা অনুশীলনের জন্য ব্লগের থেকে আসলে ভাল কোন মাধ্যম নেই। কারণ আপনি যাই লিখছেন কেউ না কেউ পরছে এবং কমেন্ট লিখছে। এবং তাও করতে পারছেন একেবারে বিনা পয়সায়। অর্থাৎ ব্লগিং এর জন্য আপনার বাড়তি কোন টাকা খরচ করতে হচ্ছে না।
তারপরেও মনে হতে পারে যে যেখানে আমি ইংরেজি একেবারেই পারি না। একটা বাক্য লিখতে গিয়ে দুইটা ভুল করি, অনেক শব্দই জানি না আর সর্বোপরি অনেক কিছুই পরে বুঝি না সেখানে আমার ব্লগিং এর মাধ্যমে ইংরেজির মত একটি বিদেশী ভাষায় উন্নতি কিভাবে সম্ভব।
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আগে আমাদের মাতৃভাষা কিভাবে শিখেছি তা বুঝতে হবে। আমরা জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের চারপাশে অনেক বাংলা শব্দ ও বাক্য ভেসে উঠে। এক-দেড় বছরের মধ্যে প্রথম শব্দ উচ্চারন করি এবং পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে আমরা বড়দের মত করে ভাষা বলতে, বুঝতে ও কথোপকথনে পাল্টা উত্তর দিতে পারি। তাই লক্ষ্য করলে দেখবেন যে একেবারে অশিক্ষিত ভিক্ষুকও আমার ও আপনার মত বাংলা বলতে পারে। আমরা হয়তো বলি “আমি ভাত খাব” আর সে বলে “আমি ভাত খামু। কিন্তু কখনোই সে বলে না “খামু ভাত আমি” অথবা “ভাত আমি খামু”। অর্থাৎ ভাষা আত্মস্থ করার জন্য আমাদের মস্তিষ্কে এমন কিছু একটা রয়েছে যার মাধ্যমে একজন একেবারে অশিক্ষিত লোকও আমার ও আপনার মত করে বাংলা ভাষা বলতে ও বুঝতে পারে।
অশিক্ষিত লোকও বাংলা ভাষা বলতে ও বুঝতে পারে কারণ সে সব সময় এই ভাষা চর্চা বা ব্যবহার করে যাচ্ছে। ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রেও তাই একই কথা খাটে। আমরা যত বেশী এর চর্চা বা অনুশীলন করব তত বেশী ব্যবহারে দক্ষ হব। তাই আমাদের দরকার এমন একটি মাধ্যম যা আমাদেরকে অনুশীলন করার সুযোগ এনে দিবে। আমি কখনোই এ কথা বলতে চাচ্ছিনা যে ব্লগিং হতে পারে ক্লাসরুম শিক্ষার বিকল্প বা ক্লাস ওয়ান টু এর বাচ্চাদের দিয়ে ব্লগিং দিয়ে শুরু হয়ে যাক।
আমার মতে ক্লাস সিক্স থেকে শিক্ষক ও অভিভাবকদের নজরাধিন রেখে ব্লগের চর্চা শুরু হতে পারে। আর ক্লাস নাইনে এসে সেই নজরদারির আর প্রয়োজন হবে না। এই সামু ব্লগে দেখতে পাচ্ছি কোন কোন ব্লগার নবম বা দশম শ্রেণীতে পরে এবং যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্লগিং করছে। ব্লগিং এর মাধ্যমে যেই স্কিলটির সবচেয়ে বেশী উন্নতি সম্ভব তা হচ্ছে ইংলিস রাইটিং স্কিল। ব্লগিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর জন্য কোন টেকনিক্যাল জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। যাদের জিমেইল আছে ব্লগার বা ব্লগ স্পটে তাদের একটু ব্লগ খুলতে দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে। এটি চালাতেও কোন টেকনিক্যাল জ্ঞানের প্রয়োজন পরে না। আপনি যত খুশী লিখতে পারেন এবং এর জন্য আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না।
আমাদের দেশে দুর্ভাগ্যবশত ইংরেজি শিক্ষকরা গ্রামারের দিকে এবং শুদ্ধতার দিকে বেশী নজর দেন। কিন্তু ভাষার ব্যবহার ও অনুশীলনের দিকে তেমন নজর দেন না। যে ক্লাসে ১০০ জোন ছাত্র থাকে সেই ক্লাসে ক্লাস ওয়ার্কই বলেন বা হোম ওয়ার্কই বলেন ঠিক মত চেক করতে পারেন কিনা সন্দেহ। অপরদিকে ব্লগিং এর মাধ্যমে কোন ছাত্রকে যদি তার পছন্দের বিষয় নিয়ে লেখার নেশা একবার ধরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে সে এক মাসের মধ্যে এত ইংরেজি শব্দ ও বাক্য লিখতে পারবে যা এক বছরেও ক্লাস ওয়ার্কই বলেন বা হোমওয়ার্ক এ হয় না।
ব্লগে কিছু লোক গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে এসে আপনার লেখা পড়বেই। তাদের কেউ কেউ আপনার লেখা পরে আবার কমেন্টও করবে। আর ব্লগে ইংরেজি লেখার আরেকটি ভাল দিক হচ্ছে লেখার সঙ্গে ছবি ও ভিডিও যোগ করা যায়।
ব্লগিং এর মাধ্যমে ইংরেজি লেখা উন্নতি করার জন্য নিজের কয়েকটি পরামর্শ অনুসরণ করতে পারেনঃ
প্রতিদিন অন্যান্য ইংরেজি ব্লগে কমেন্ট করুন
নিয়মিত লিখুন এবং আপনার আগ্রহের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্লগ পড়ার চেষ্টা করুন
ছোট ছোট প্যারাগ্রাফ দিয়ে লেখার অভ্যাস করুন
পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা ওয়েব সাইটের নিউজ বা রিপোর্ট পরে সেগুলো নিজের ভাষায় ইংরেজিতে লেখার চেষ্টা করুন।
প্রতিদিন মাত্র ১০০ শব্দ দিয়ে ইংরেজিতে লেখার চেষ্টা করুন এবং দেখবেন যে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই দিনে ভুল হোক শুদ্ধ হোক ৫০০ থেকে ১০০০ শব্দ ইংরেজিতে লিখতে পারছেন।
প্রতিদিন একই কাজ করে গেলে কয়েক মাসের মধ্যে সে কাজে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এটি বুঝতে গবেষণার দরকার নেই বা বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই। সাধারণ কমন সেন্স খাটানোই যথেষ্ট।
পরবর্তী পর্বে আমি ব্লগিং কিভাবে ইংরেজি পড়া, বোঝা ও বলায় সাহায্য করতে পারে সে বিষয় নিয়ে লিখবো।