somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের পর্যটন সেক্টর ও ই-কমার্স

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডেইলি স্টার পত্রিকার এক রিপোর্টে দেখতে পেলাম যে ২০০৬-২০১০ এই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ১৫ লক্ষ ২৯ হাজার পর্যটক বাংলাদেশে এসেছিল এবং এর মাধ্যমে আমাদের দেশের ৪১ কোটি ডলার (বৈদেশিক মুদ্রা) আয় হয়। এই পরিসংখ্যান নিয়ে তর্ক বিতর্ক যাই থাকুক না কেন এটিকে সত্য ধরে নিয়ে এই পোস্টটির বাকি আলোচনা এখানে করছি।


ডেইলি স্টারের ওই রিপোর্টে এও দেখতে পেলাম যে ২০১১-১২ অর্থ বছরে পর্যটন খাঁতে প্রমোশন ও ব্র্যান্ডিং করার জন্য ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। এই অর্থ কিভাবে ব্যয় হয়েছিল তা বলতে পারব না তবে এটুকু জানি যে ইন্টারনেটে বা অনলাইনে বাংলাদেশের পর্যটন সেক্টরকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারি পর্যায়ে তেমন কোন বড় মাপের উদ্যোগ এখনো আমার চোখে পড়েনি।

বাংলাদেশে পর্যটন সেক্টর অত্যন্ত সম্ভাবনাময় সেক্টর হতে পারে। আমাদের দেশের একদিকে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন পুরো পার্বত্য এলাকা, সিলেট, কক্সবাজার, সুন্দরবন, কুয়াকাটা ইত্যাদি। পাহাড়পুরে ছিল নবম শতাব্দীতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কম নয়। তাই প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক এই দুই দিক দিয়ে বাংলাদেশে রয়েছে দেখার মত অনেক কিছু। প্রতিবছর সুন্দরবনে বন বিবির পূজা ও পূথি পড়া সম্পর্কে আমাদের বাংলাদেশের বেশীরভাগ লোকই অবগত নয়।
পর্যটন সেক্টরে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হল এই খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এখনো তেমন হয়ে উঠেনি। পর্যটনের উপর তেমন কোন ভাল ওয়েবসাইট নেই আমাদের। ইউটিউবে ভিডিওর সংখ্যাও সীমিত। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হোটেল ও মোটেল গুলোতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বুকিং রিজার্ভেশন ও মুল্য পরিশোধের মত বিষয় গুলোতে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। সর্বোপরি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে বই পুস্তক, ছবি, প্রাচীন কাল থেকে চলে আশা হস্ত শিল্প, আঞ্চলিক ইতিহাস ইত্যাদি নিয়ে ভাল মানের ওয়েবসাইটের অভাব আমরা কম বেশী সকলেই অনুভব করি।
বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটনের উপর ওয়েবসাইট গড়ে তোলা খুব বেশি হয়তো কঠিন নয় কিন্তু এই মুহূর্তে তা খুব একটা লাভজনক নয়। এজন্য ই-কমার্স এর আরও অনেক বেশি প্রসার হওয়া দরকার। একটা ভাল ওয়েবসাইট বানালাম ও তথ্য, ছবি এবং ভিডিও দিলাম। কিন্তু এরপর এটিকে চালিয়ে নিতে হলে নিয়মিত আয় লাগবে। এজন্য দরকার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল, ট্রাভেল এজেন্ট, রেন্ট-এ-কার ধরনের প্রতিষ্ঠানের বুকিং এর ব্যবস্থা যেখানে ওয়েবসাইটের মালিক ৫-১০% কমিশন পাবেন।
দ্বিতীয়ত টুরিস্ট গাইড বলতে আমাদের দেশে মূলত ইংরেজি জানা লোককে বোঝায়। কিন্তু একটি এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে অনেক টুরিস্ট গাইডই অবগত নন। এটা বোধহয় অনেক ক্ষেত্রে বিদেশীদের নিরুৎসাহিত করে ঢাকার বাইরে ঘুরে বেড়াবার সিদ্ধান্ত নেবার বেলায়।
বাংলাদেশে গবেষণার জন্য অনেক কিছু আছে। ঢাকার ব্রাহ্ম সমাজ, বাংলাদেশের মাড়ওয়ারি সম্প্রদায়, পাল আমল এর স্থাপত্য, সুন্দরবনের বনবিবি- এমন অনেক কিছুই আছে যা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। এজন্য আমাদের উদ্যোগী হতে হবে এবং বিদেশীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে যদি কোন একটা বিষয় বা অঞ্চলকে জনপ্রিয় করা যায় তবে তা বিদেশীদের কাছে তুলে ধরা অনেক সহজ হবে। এজন্য যে খুব বেশি অর্থের বিনিয়োগ করা দরকার তা নয়। ইউটিউব ও ফেসবুকে কয়েকটি আকর্ষণীয় ভিডিও হাজার হাজার লোকের কাছে পোঁছতে পারে।
তারপরও পর্যটন সেক্টরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আশাবাদী কারণ মানুষ এদেশের মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্তন্ত কক্সবাজারে এখন শীতের সময় অনেক লোকের সমাগম হচ্ছে। দেশের মাথাপিছু আয় যত বাড়বে ঘুরে বেড়ানোর আকাঙ্ক্ষা ও সামর্থ্য তত বাড়বে। ৩০-৩৫ বছর আগে চা ছিল এদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রধান খাত। আর এখন চায়ের চাহিদা এত বেড়ে গেছে যে আমরা তা আমদানি করছি।
পর্যটন খাতে আইসিটি প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কয়েকটি সুপারিশ ও পরামর্শ এখানে তুলে ধরছি।
১. ইংরেজি ভাষায় বাংলাদেশের পর্যটন সেক্টরের উপর একটি বড় আকারের ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা দরকার যেখানে এদেশের ৪৬০ টি উপজেলার অন্তত ১,০০০ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ইংরেজিতে বিস্তারিত তথ্য থাকবে।
২. ইউটিউব ও ফেইসবুকের জন্য ১০০০ টি ৫-১০ মিনিটের ভিডিও তৈরি করতে হবে। প্রতিটি ভিডিও’র বাংলা ও ইংরেজি দুইটি ভাষার ভার্শন থাকবে।
৩. সরকার, ব্যাংক গুলো এবং বিকাশের মত মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস গুলোর সমন্বিত সহায়তায় যেসব স্থানে পর্যটক বেশী যায় সেসব স্থানের হোটেল মোটেল গুলোতে অনলাইনে বুকিং এবং টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৪. বাংলাদেশের পর্যটন সেক্টরের উপর একটি অনলাইন ডিরেক্টরি তৈরি করতে হবে এবং তা প্রতি বছর আপডেট করতে হবে।
৫. পর্যটন বোর্ড ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলে পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি বিশেষ নাম্বারের মাধ্যমে হেল্প লাইন চালু করতে হবে। ওই নম্বরে কল করলে বা এসএমএস করলে নিকটস্থ থানার পুলিশ সাথে সাথে সেই এসএমএস বা কল পেয়ে পর্যটকের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।
৬. বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহি পণ্য নিয়ে একটি ই-কমার্স ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে যেখানে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে সেই পণ্য গুলো কেনা যাবে। এ ধরনের উদ্যোগ প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে হতে পারে।
৭. ব্যক্তিগতভাবে আমি গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরের সঙ্গে নানাভাবে যুক্তি আছি এবং ভালমতই জানি যে হঠাৎ করে সবকিছু বদলে যাবে না। তবে পর্যটন সেক্টরে ই-কমার্সের ছোঁয়া লাগলে অনেক কিছুই অনেক দ্রুত বদলে যাবে।
শেষ কথা হল অবশ্যই বাংলাদেশের পর্যটন সেক্টরের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবার মান আরও বাড়াতে হবে। তবে একই সঙ্গে আইসিটি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ যুগে বিদেশীদের কাছে দেশের আকর্ষণীয় স্থান গুলোকে তুলে ধরে সবচেয়ে কার্যকরী ও সস্তা মাধ্যম হল ইন্টারনেট। আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় কোটি টাকা খরচ করে আমেরিকা বা ইউরোপে গিয়ে ১ টা দেশে রোড শো করার। কিন্তু আমরা চাইলেই কোটি টাকা খরচ করে ভাল একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরি করতে পারি সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য।
বাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে ওয়েবসাইটঃ
http://www.visitbangladesh.gov.bd
http://tourismboard.gov.bd
লেখাটির ইংরেজি ভার্সন ই-কমার্স এর উপর আমার ব্লগে প্রথম প্রকাশিত হয়েছে।
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×