somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম স্কুলে যাবার দিন

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(প্রথমেই বলে রাখি আত্বজীবনীর ভঙ্গীতে লেখা হলেও আমার নিজের জীবনের কাহিনীর সঙ্গে বড় জোর ১০% মিল আছে। হয়তো এটা গল্প কিংবা অনেকের ইতিহাস।)
বয়স ৬ বছর হতে আর মাস তিনেক বাকি অপুর। এখনো স্কুলে যায়নি দেখে আত্মীয় স্বজন অনেকেই অবাক হয়। না তার মা-বাবা মূর্খ নয় বা তারা তাকে স্কুলে পাঠাতে চান না এমনও নয়। অপু নিজে স্কুলে যেতে চায় না তাও কিন্তু নয়। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
অপুর বাবা চাকুরী হারিয়েছেন বছর দুয়েক আগে। ছোট খাট একজন কেরানি ছিলেন এক ছোট প্রেসে। সময়টা ১৯৭৯ সাল। ঢাকা শহরে তখন বোধহয় ১৫-২০ লক্ষ লোক বাস করতো এবং চাকুরির বাজার খুব সীমিত ছিল। তার বাবা আইএ পাস করার পর অনেকদিন ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডে একটা প্রেসে চাকুরী করছিলেন কিন্তু ২ বছর আগে প্রেসটা বন্ধ হয়ে যায়। মালিক মারা যাবার পর তার ২০ বছরের ছেলে এটি চালাতে না পেরে বন্ধ করে দিয়ে মেশিন পত্র বিক্রি করে দেয়। এরপর ২ বছর ধরে ধার করে তাদের সংসার চলছে। দেশের বাড়ি যশোরে কিন্তু তাদের কোন জমি নেই। তাই দেশের বাড়ি যাওয়া বা না যাওয়া একই কথা।
তাই ছেলের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তা করার কোন উপায় নেই। তার থেকেও বড় দুশ্চিন্তা হল অপুর বোন শিলাকে নিয়ে। বয়স মাত্র ৩ এবং অসুখ বিসুখ লেগেই আছে। যাই হোক গল্প শিলাকে নিয়ে নয় তাই এ প্রসঙ্গ আপাতত বন্ধ থাকুক। অপুর মা বা বাবার নামও জানার দরকার নেই। তাদেরকে সবাই অপুর বাবা আর অপুর মা হিসেবেই চেনেন, ডাকেন। তারা সমাজের তুচ্ছ মানুষ, সাহেব তো নন। তাদের নাম দিয়ে আমরা কি করবো। অপুর মা ম্যাট্রিক ফেল।
যা বলছিলাম, অপুর স্কুলে পড়ার কথা। অবশ্য স্কুলে না পড়লে কি হবে অপুর মা স্বপ্ন দেখেন ছেলে অনেক লেখাপড়া করবে, একদিন বড় চাকুরী করবে। জর্জ ব্যারিস্টার না হোক কোন প্রেসের ম্যানেজার তো হতে পারবে, না হয় কোন কোম্পানির ছোট অফিসার। তাই ছেলের তিন বছর বয়স থেকেই প্রতিদিন ছেলেকে ১ ঘণ্টা হলেও পড়ান। তার স্বপ্ন আরও জোরালো হয় এ দেখে যে এই ছেলে অন্যদের মত নয়। না, তার মাথা খুব ভাল তা নয়। কিন্তু খুব শান্ত এবং বই নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও বা পেন্সিল খাতা নিয়ে লিখতে কোন অরুচি নেই। বরং অমৃতের মত লেখাপড়া গিলে যেন। পত্রিকা পেলে বানান করে পড়ার চেষ্টা করে, এমনকি কাগজের ঠোঙ্গা পেলেও বসে পড়ে।
বড় খালা অবশ্য বলেছিলেন যে এ ছেলের কোন সমস্যা আছে না হলে এরকম করে কেন। অবশ্য বলবেনই না কেন! তার নিজের ছেলে তো মাত্র ১৪ বছর বয়সে সিগারেট, স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখা, একই ক্লাসে তিন বছর থাকা, হকি স্টিক দিয়ে হকি না খেলে মারামারির অভ্যাস প্রায় সব কিছুই রপ্ত করতে পেরেছে। রাস্তায় মেয়েদের দেখে শিষ দেবার দক্ষতা এখনো অর্জন করতে পারেনি।
এর মধ্যে অপুর বড় চাচা একদিন খবর দিলেন যে একটু দূরে স্বামীবাগে একটা সরকারী স্কুল রয়েছে। সেখানে পড়তে তেমন টাকা লাগে না। কিন্তু অপুর মা তাতে খুশী হতে পারে না। তার খুব ইচ্ছা কিন্টারগার্ডেন স্কুলে পড়ুক তার ছেলে। অবশ্য কিন্টারগার্ডেন স্কুল কি তা তিনি বোঝেন না। শুধু বোঝেন সেখানে বাংলার থেকে ইংরেজি বই বেশী পড়তে হয়। পাশের বাসার আকরাম সাহেবের ছেলে তানভীর সেখানে পড়তে যায়। স্কুলটা পল্টনে কি জানি নাম- লিটল জুয়েলস। বেতন মাসে ৫০ টাকা আর বছরের প্রথমে ৫০০ টাকা দিতে হয় ভর্তির জন্য। অপুরা যে এক রুমে ভাড়া থাকে তার ভাড়া ২০০ টাকা মাসে।
অপুর বাবা গত ২ বছরে অনেক কিছুর চেষ্টা করেছেন। এমনকি ঔষধের দোকানেও কাজ করেছেন এবং এখনো করছেন। বেতন যা পান তা বেকার থাকার সঙ্গে খুব একটা পার্থক্য নেই। তার একটাই গুন রয়েছে- মানুষের সঙ্গে খুব ভদ্র ব্যবহার করেন। তাই তাকে সবাই ধার দেয় এবং ধার ফেরত চাইবার বদলে উল্টো আবার নতুন করে ধার দেয়। কালে ভদ্রে দু-একজন যে ভেজাল করে না তা নয়। তখন অপুর মা-বাবা দুজনেই চলে যান নিজ নিজ পক্ষের একটু বড় লোক আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে। যাই হোক কোন মতে চলে যায় জীবন।
ডিসেম্বর মাসের ২০ দিন পেরিয়ে গেছে। ক্লাস শুরু হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি। না লিটল জুয়েলসে পড়া হবে না। ধার করে নাহয় ভর্তি করা গেল কিন্তু তারপর মাসে মাসে বেতন কিভাবে চালানো যাবে?
অপুর মার মন ভেঙ্গে গেল। এমন সময় তার বড় বোন একটা সুখবর নিয়ে এল। নারিন্দাতে একটা কিন্টারগার্ডেন স্কুল খোলা হয়েছে। প্রথম ব্যাচে ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে। নতুন স্কুল তাই ছাত্র তেমন পাচ্ছে না। বেতন মাত্র ২০ টাকা আর ভর্তি ১০০ টাকা। লিটল জুয়েলস এর মত এত ভাল নয় কিন্তু তারপরও কিন্টারগার্ডেন বলে কথা। বড় খালা এটুকু বলেই ক্ষান্ত হল না আরও বলল, “আমার ছেলের তো আর লেখাপড়া হবে না। এই নে ১০০ টাকা রাখ। কাল তুই আর আমি মিলে ছেলেটাকে ভর্তি করে দিয়ে আসি।“ তারপর কি মনে করে বড় খালা আরও ১০০ টাকা দিল, প্রথম ৩ মাসের বেতন হয়ে যাবে।
অপুর মা যেন হাতে চাঁদ পেলেন। তার বড় বোনের স্বামীর একটা রেশনের দোকান আছে। একটু কিপটে স্বভাবের তবে বৌকে কিছুটা ভয় পান। যাইহোক পরদিন সকাল ১০ টার দিকে দু বোন মিলে স্কুলে গেলেন। সেখানে গিয়ে শুনতে পেলেন যে যে ভর্তি হবে তাকে আনতে হবে, পরীক্ষা দিতে হবে। শুনে অপুর মা ভয় পেলেন। পরিক্ষায় টিকবে তো। না টিকলে কি হবে?
ছেলেকে আনতে গিয়ে এরকম দুশ্চিন্তা তার মনে আর আল্লাহকে ডাকা শুরু করলেন, দোয়া দরূদ পড়তে থাকলেন। ছেলেকে আনতে গিয়ে আরেক সমস্যায় পড়লেন। অপুর মাত্র ২ টা হাফপ্যান্ট আর ২ টা শার্ট এবং সবকটাই নোংরা। এক জোরা চামড়ার স্যান্ডেল থাকলেও তা ছেড়া, স্পঞ্জের স্যান্ডেলই সম্বল। এখন অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। তাই ময়লা শার্ট আর প্যান্ট আর স্পঞ্জের স্যান্ডেল পড়িয়েই ছেলেকে স্কুলে নিয়ে গেলেন। অবশ্য এবার রিকশায় গেলেন- ভাড়া ১ টাকা।
স্কুলে ঢুকে গেলেন হেড মিস্ট্রেস এর রুমে, “আপা, আমার ছেলে খুব শান্ত। ওকে নিয়ে দেখেন। এরকম শান্ত আর ভাল ছেলে পাবেন না।“
সেখানে বসা আরেক টিচার কড়া গলায় বললেন, “উনি আমাদের হেড মিস্ট্রেস। উনাকে আপনি আপা বলছেন কেন? উনাকে ম্যাডাম বলবেন।“
যাই হোক হেড মিস্ট্রেস ম্যাডাম পরিস্থিতি শান্ত করে বললেন, “আপনি আর আপনার বড় বোন বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করুন। আমরা ছেলের পরিক্ষা নেব এখন।“
অপুর মা বাইরে এসে আরও বেশী দোয়া পড়তে লাগলেন ও আল্লাহ্‌কে স্মরণ করতে থাকলেন। অবশ্য তার এত ভয় পাওয়ার দরকার ছিল না। নতুন স্কুল, এমনিতেই ছাত্র পায়না। ভর্তি একটা ঢং ছাড়া কিছু নয়। এর মাধ্যমে আসলে একটা গিমিক তৈরি করা- এটা যেন তেন স্কুল নয়।
অপুর মা আর বড় খালা বাইরে যাবার পর ম্যাডাম তাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো, কিছু শব্দ দেখিয়ে উচ্চারণ করতে বলল। এগুলো তার কাছে খুবই সহজ। সে অনায়াসে উত্তর দিল এবং এতে ম্যাডাম এবং আরেকজন টিচার খুব খুশী হলেন। ১০ মিনিট পর মা ও খালা আসলে ম্যাডাম বললেন, “আপনার ছেলে লেখাপড়ায় খুব মনযোগী। ওর যত্ন নেবেন। লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে বলে আমার মনে হচ্ছে। আর আমাদের স্কুলে ভর্তির সঙ্গে প্রথম মাসের টাকাও দিতে হয়। পাশের রুমে যান। আর আমাদের ক্লাস শুরু হবে একুশে জানুয়ারি থেকে।“
টাকা তারা সঙ্গেই এনেছিলেন। ভর্তির টাকা পরিশোধ করে দিয়ে বাসায় ফিরে দেখেন ঔষধের দোকানের এক পিচ্চি কর্মচারী এসে অপুর বাবার খোঁজ করছে, “ভাইজান কোই। হ্যায় দোকানে যায় নাই কেন।“ অপুর মা শুনে অবাক। প্রতিদিনের মত ৯ টার দিকে তার স্বামী কাজে বেরিয়ে গেছে। এখন বাজে দুপুর প্রায় ২ টা। তাহলে কোথায় গেল। খুব দুশ্চিন্তা হতে লাগলো। তখন মোবাইল ফোন তো দূরের কথা, টিএন্ডটি ফোন তাদের পাড়ায় মাত্র ২ জনের বাড়িতে। আর ফোন কোথায় করবে কার কাছে করবে।
ডিসেম্বর মাসের শেষের দিক। বিকেল ৫ টা মানে প্রায় সন্ধ্যা। যাক ভাগ্য ভাল অপুর বাবা ৬ টার দিকে ফিরে এলেন। হাতে তার মিষ্টি, বাজারের পাটের ব্যাগে চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস। এসব দেখে অপুর মার প্রচণ্ড রাগ হল। তার স্বামীর এরকম বদ অভ্যাস রয়েছে। টাকা ধার করে মাঝে মধ্যে বাজার থেকে এরকম মাছ মাংস নিয়ে আসে।
কিছুটা বিরক্তি চেপে বলল, “এসব ছাই পাশ কিনে টাকা নষ্ট না করে মেয়েটাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তো পারতেন। আর ঔষধের দোকান থেকে রহমত এসে জানাইয়া গেছে যে আপনি দোকানে যান নাই। সারা দিন কোই আছিলেন।?”
“ঔশধের দোকানে আর কাল থেকে যাবো না। এই চাকরি আর করবো না।“
“কি, আমাদের কি না খাওয়াইয়া মারতে চান।“
“না, খুব ভাল খবর আছে। আমার কাকরাইলে একটা প্রেসে চাকরি হয়ে গেছে। মাসে ৮০০ টাকা বেতন। কাল থেকেই কাজ শুরু।“
এরপর তিনি তার স্ত্রীকে যা জানালেন তা সংক্ষেপে বলছি। আগের প্রেসের মৃত মালিকের ছেলের সঙ্গে রাস্তায় সকালে হটাত দেখা হয়ে গেলে ঐ ছেলে তাকে কাকরাইলে বন্ধুর প্রেসে নিয়ে যায়। বন্ধুর বাবাও সদ্য মারা গেছে। বন্ধু কাউকে খুঁজছিল যার প্রেসে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এবং প্রেস চালাতে পারবে। অপুর বাবার সঙ্গে কথা বলে বন্ধুর খুব ভাল লাগে এবং নিজে থেকেই ৮০০ টাকা বেতন দেবার কথা বলে। হয়তো ১০০০ টাকা বা ১২০০ টাকা চাইলেও সেই বন্ধু রাজি হয়ে যেত কিন্তু অপুর বাবা ভয়ে আর দরাদরি করেন নি। ঔষধের দোকানে সারা দিন রাত কাজ করে ২০০ টাকা আসে। ৮০০ টাকা মানে কারো কাছে হাত পাতা লাগবে না।
কাকরাইল একটু দূর হলেও বাসে চার আনা লাগে আর প্রেসের কাজ তিনি ভাল বোঝেন, ভাল পারেন। তার নতুন মালিকের কথা হল অপুর বাবা হবেন এই প্রেসের মালিক ছাড়া আর সবকিছু- ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার, কেরানি সব। তাকে কর্মচারীদের চালাতে হবে, পার্টির সঙ্গে দাম দর করতে হবে, লেনদেন করতে হবে, কাগজ-কালি সব কিছু কেনাকাটা করতে হবে। অবশ্য বাইরে গেলে বাস ভাড়া রিকশা ভাড়া যা লাগে তা তিনি পাবেন। মালিক শুধু একটাই কাজ করবেন। তার অনেক পরিচিত লোকজন আছে, নিয়মিত ছাপার কাজ আনা ব্যাপার না তার কাছে।
এসব শুনে অপুর মার মনে হল আল্লাহ্‌ তাকে দুদিনের মধ্যে আকাশের চাঁদ সূর্য দুটোই দিয়ে দিয়েছে। মনের আনন্দে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করা শুরু করলেন।
দেখতে দেখতে জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ এসে গেল। মা তার ছেলেকে প্রতিদিন ১ ঘণ্টার বদলে ৪ ঘণ্টা করে পড়াতে লাগলেন। বেশীর ভাগ দিনই বাবার সঙ্গে দেখা হয় না। সেই সকালে চলে যান আর ফেরেন রাত ১১ টার দিকে। মাঝে মধ্যে রোববারেও চলে যান (তখন ছুটির দিন ছিল রোববার এখনকার মত শুক্রবার নয়।)
পরের দিন অপু প্রথম স্কুলে যাবে। তার বড় খালা ইতিমধ্যেই স্কুল ড্রেসের ব্যবস্থা করেছেন- লাল প্যান্ট আর সাদা শার্ট। পাঁচ টাকা দিয়ে ব্যাজও কিনতে হয়েছে আর বাটার নীল রঙের হকি বুট নামের জুতা। বড় খালাই সব দিয়েছেন। এমনকি সেই কিপটে খালুও আপত্তি করেন নি। তারও ভাল লেগেছে এই ভেবে যে নিজের ছেলে মানুষ হল না- এই ছেলেটি জীবনে ভাল কিছু করুক।
পরদিন সকাল ৭ টার মধ্যে মা তার ছেলেকে এই শীতের মধ্যে গোসল করিয়ে স্কুল ড্রেস ও সোয়েটার পড়িয়ে রেডি করে ফেলেন। বাবার ইচ্ছা ছিল প্রথমদিন ছেলের সঙ্গে স্কুলে যাবার কিন্তু প্রেসে অনেক কাজ। মালিক আজকাল এক ঘণ্টার বেশী প্রেসে থাকেন না। এমনকি মাঝে মধ্যে টাকা পয়সায় হিসেব নিতেও ভুলে যান। তাই সব কাজ তাকেই সামলাতে হয়। দু-একজন কর্মচারী তার উপর বিরক্ত হয়- ব্যাটা নতুন এসে মালিকের থেকেও বড় মালিক সেজে বসেছে। তবে অপুর বাবার ব্যবহার খুব ভাল বলে ১০ জনের মধ্যে ৭ জন কর্মচারীই তার ভক্ত বনে গেছে, তাকে ওস্তাদ মানে, সব কথা শোনে।
বড় খালা আসার পর দু বোন মিলে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যায়। নার্সারিতে সকাল ৮ টা থেকে ক্লাস শুরু এবং শেষ হবে ১১ টায়। ক্লাসে প্রায় ৩০ জন ছেলে মেয়ে। অপু ঢুকে পেছনের দিকে বেঞ্চে জায়গা পায়। সে আবিষ্কার করে প্রায় ১৫ জন ছেলে মেয়েই কাঁদছে কারণ মা-বাবা তাদের ক্লাসে রেখে বাইরে চলে গেছে। টিচারের নাম ময়না। ময়না টিচার সবে আইএ পাশ করে স্কুলের চাকরিতে ঢুকেছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। বকা দেবে নাকি বুঝাবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ৩০ মিনিট চলে গেল একই অবস্থা। ১৫ জনের দেখাদেখি আরও ১০ জন যোগ দিয়েছে কান্না কাটির দলে।
এখানে কাঁদার কি আছে অপু বুঝতে পারছিল না। ময়না টিচারকে তার খুব ভাল মনে হল- সবাইকে আদর করছে। যাক এক ঘণ্টা পার হলে কান্নাকাটি শেষ হয়ে গেল। দেড় ঘণ্টা পর টিফিন ২০ মিনিটের জন্য। অপুর মার কোন ধারণা ছিল না টিফিন কি জিনিস। অনেক ভোরে উঠে রুটি আর আলুভাজি আর একটা হাসের ডিম ভেজে ছেলেকে খেতে দিয়েছে। তারপর আবার দুপুরে বাসায় নিয়ে খাওয়াবে। তবে ওয়ারী থেকে নারিন্দা হেটে এসেছিল বলে অপুর তখন কিছুটা খিদে পেয়েছে। কি আর করার। তার যেহেতু টিফিন নেই তাই চুপ করে বেঞ্চে বসে থাকলো।
টিফিনের পর আরেকজন টিচার এলেন। তিনি একটু রাগী- নিজের নাম পর্যন্ত বলতে ভুলে গেলেন। অবশ্য এখন আর কেউ কাঁদছে না। তবে সবাই ভয়ে আছে এই টিচারকে। তার হাতে একটা কাঠের স্কেল। অবশ্য প্রথম দিন বলে হয়তো কাউকে স্কেলের বারি দেননি তবে সামনে যে স্কেলের ব্যবহার হবে তাতে কারো মনে সন্দেহ রইলো না। তিনি ইংরেজি পড়ান এবং এ, বি, সি, ডি এ ফর এপেল, বি ফর ব্যাট ইত্যাদি বলতে থাকলেন আর ছাত্ররা তাকে অনুসরণ করে তাই পুনরাবৃত্তি করতে থাকলো।
ছাত্র কম এবং গার্জিয়ান কম বলে স্কুলের উঠানে সব গার্জিয়ান এসে বসে আছে ছুটির আগে থেকে। এটাই উঠান, এটাই খেলার মাঠ। যারা অপেক্ষা করছে তারা সবাই মহিলা এবং তরুণী হলেও অপুর মা কারো সঙ্গেই ভাব জমানোর চেষ্টা করলেন না। তাদের বেশ ভুষা দেখে তিনি বুঝলেন যে তারা যথেষ্ট ধনী এবং অপুকে এ স্কুলে পড়ান মানে গরীবের ঘোড়া রোগের মত। তার আর দ্বিতীয় দিন এখানে আসার ইচ্ছা নেই কিন্তু ছেলের জন্য আসতে হবে।
অবশ্য তার এ দুঃখ বোধ তার ছেলের মধ্যে সংক্রামিত হয়নি। একেতো ৬ বছরের বাচ্চা তার উপর দুই ক্লাসের দুই টিচারই তাকে পছন্দ করেছেন। একদিকে সে কান্না কাটি না করে শান্ত ছিল আর অন্যদিকে সে লেখাপড়া পারে তা দুজন টিচারই ধরতে পেরেছেন। তাই এ স্কুল তার অনেক ভাল লেগে গেল একদিনেই।
২৪টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×