somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিনের হিমু!!! সেফ হয়ে প্রথম পোস্ট। আশাকরি মিস্টিটা পেয়ে যাবেন!!!

১১ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-“তুইতো ডাক্তার হতে পারবি নারে, গাধা। ফেল, ফেল”।
বলেই জিভটাকে অদ্ভুত ভাবে বের করে ঠোঁটটাকে চেটে নিলেন। তারসাথে অমায়িক একটা হাসিও ফ্রী দিলেন, মহামান্য রেজিস্টার স্যার। আমি রোগীর পার্শ্বে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। জর্জ সাহেব তাহলে ফাঁসির আদেশ দিয়েই দিলেন। ফাঁসীর আসামীদের শেষ ইচ্ছা থাকে। আমারও আছে। কিভাবে এমন সুন্দর কায়দা করে ঠোট চেটে নিতে হয়, শিখে নিতে হবে। বলব নাকি? বলতে পারলাম না। শুধু মাথা নেড়ে বললাম,
-হুঁম।
কার্ডিওলজী ওয়ার্ড ফাইনাল দিলাম। ফেল মারিনি। পালস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য পাশের রিলিজ স্লিপ দিয়েছে। ব্যাপারটা মন্দ না। একমাসের যবনিকা ঘটল এই “হৃদ-প্রোকষ্ঠে”। কাল থেকে চর্ম ও যৌন বিভাগে ক্লাশ হবে । অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়ে ছিল এই পুর্নস্থানে।
নতুন রোগী এসেছে। পরনে ছেড়া লুঙ্গি। এই হাড়কাঁপানো শীতের মাঝেও পরনে একটা ফুলহাতা শার্ট। আমি রোগের ইতিহাস নিতে গেলাম। রোগী ইতিহাস দিবেনা। আমি অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু কাজ হয়না। ভাঙ্গব কিন্তু মচকাবনা টাইপের। একটু হেসে বললাম,
-আপনার সাথে কি আমার বাপ-দাদার জমি নিয়ে বিরোধ ছিল?
রোগীতো বিস্মিত। মনে হয় বুঝতে পারল আমি রাগ করেছি। তারপর যা বলল, তা মোটামুটি এইরকম।
রাতে মাথার নিচে বালিশ রেখে ঘুমিয়েছিল।ঘুম থেকে উঠে দেখে বালিশ হাওয়া। তিনি নাকি বালিশটা বাড়ী থেকে এনেছিলেন। সেটায় তার একমাত্র সম্বল।
এবার আমি বিস্মিত। এতোদিন চুরি হত রোগীর মোবাইল,টাকা-পয়সা,নব-জাতক। এখন চুরি হচ্ছে বাঁলিশ। কি অদ্ভুত! কি অদ্ভুত!
কার্ডিওলজী ডাক্তারদের হতে হয় নরম-সরম। বিনয়ে গলে যাবে আর-কী। জী হুজুর,জী হুজুর টাইপের। রোগী বলবে,
-ডাক্তার সাহেব।
ডাক্তাররা বলবে,
-জী হুজুর। বলুন, আপনার জন্য কি করতে পারি?
-আমার পিশাপ বন্ধ হয়ে গেছে। ক্যাথেটার করে দেন।
এমনিতেই রোগীরা হার্টের কঠিন কঠিন রোগ নিয়ে আসে। উত্তেজিত হলেই ভয়ংকর ব্যাপার ঘটবে। ধুপধাপ পড়বে আর ধমাধম মরবে। নেপলিয়নের ডিকশনারীতে “ইমপসিবল” কথাটা ছিলনা, আর আমাদের স্যারদের নেই “বিনয়”। স্যারেরা এক একটা জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। রোগী আসলেই প্রাথমিক চিকিৎসা হওয়ার কথা। কিন্তু অবাক কান্ড!
শুরু হয় রাম ধমকে। রাবনের ভাগটা থাকে রোগীর আত্মীয় স্বজনের জন্য। আমার পরিচিত ডাঃ চিশতী ভাই অবশ্য অন্য কথা বলেন,
-বুঝলি রাজীব, হার্ট ফেইল করা রোগী আসলে প্রথমে রাম ধমক দিবি। হাতে নাতে ফল। দেখবি ভয়ে রোগীর হার্ট আবার বিট মারা শুরু করছে। রোগী বেঁচে গেল, তুইও বেঁচে গেলি।
-আমি কেন বাঁচলাম দাদা?
-বুঝলি না? রোগীরা মারা গেলে, তাদের আত্মীয়রা ডাক্তাদের যে মাইর দেয়া শুরু করেছে, সেইটা থেকে।
চিশতী ভাইয়ের জ্ঞানের সীমা-পরিসীমা দেখে আমি আঁবিভুত,চমৎকৃত।
আজকে আমার পরীক্ষার নির্ধারিত রোগীটাতো কেঁদেকুঁদে একাকার। কাঁদে আর বলে,
“সুইসাইড করব, সুইসাইড করব”।
কারন কি? রোগীর বাবাকে কার্ডিওলজীর সার্ভিস মামারা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চেয়েছে। কি উদ্ভট কর্মাকান্ড! রোগের হিস্টরী দিচ্ছেনা। তাই আমি সান্ত্বনা দিচ্ছি।
তখনিই পার্শ্বের রোগী “ অ,ভাই, অ,ভাই” চিৎকার করে ডাকছে। গেলাম। জিজ্ঞাসা করার আগেই বলে,
-ভাই, আমি শিক্ষিত মানুষ। মেট্রিকে দুইটা লেটার নিয়ে পাশ করেছি। সরকারী হাসপাতালে আসি না। সর্দি-কাশি হলেই মাদ্রাজ-সিঙ্গাপুর যাই...
-এখানে কেন এসেছেন? বিরক্তি আর আটকাতে পারলাম না।
-হার্ট এটাক মেরেছিলাম-রে ভাই। তাই আসতে হলো। সিঙ্গাপুরতো আর বাথরুম না, পেটে মোচড় দিলেই দৌড়াব। জানেনই তো মেলা দূর।
-এখন কি সমস্যা?
-সমস্যা তো ভাই খুবই জটিল। মনে হয় আর বাঁচব না। ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়ে এসেছি।
-আহা! আপনি কি বুঝতে পারছেন না, আমি কি বলছি? ঝটপট সমস্যা বলুন।
-কি আর বলব ভাই! হাতের চামড়া উঠে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই হার্টের ফেল মারার জন্য। আর মনে হয় বাঁচব না। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ...
আমি হাত দেখলাম। স্বাভাবিক আছে। শীতের পর বসন্ত আসলে গাছের পাতা ঝরে যায়। তেমনি মানুষের হাতের শুষ্ক চামড়াও উঠে যায়। বৃক্ষ আর মানব প্রজাতির মাঝে নতুন একটা মিল খুজে পেলাম। কিন্তু ইঁবলিশ সাহেব কানের কাছে। তাকে অবজ্ঞা করার শক্তি পাই কোথা থেকে? বললাম,
-আপনার তো বিবর্তন হচ্ছে, ভাই। এই রোগের চিকিৎসা “ডারউইন” ছাড়া আর কেউ পারবে না।
-বুঝি নাই, ভাই। খোলাশা করে বলেন দেখি।
-আমাদের পুর্বপুরুষ এসেছে বানর থেকে। দেখেন না, বানর আর মানুষ দেখতে একরকম।
-তাইতো, তাইতো। আমি শিক্ষিত মানুষ। মেট্রিকে দুইটাতে লেটার পেয়েছি। আমিও শুনেছি। আপনি সঠিক।
-কিন্তু সমস্যাটা কি জানেন?
-কি ভাই?
-আপনার পূর্ব পুরুষ এসেছে স্বর্প থেকে। স্বর্প খোলস বদলায়, আপনার হাতও বদলাচ্ছে। আপনি শিক্ষিত মানুষ। মেট্রিকে দুই সাবজেক্টে লেটার পেয়েছেন।একটু ভেবে দেখেন, বুঝবেন।
রোগী এবার পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মানুষের ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মুখের অন্যরকম মায়া আছে। এই মায়া আমাকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। বন্ধন কাটতে হলে চলে যেতে হবে। আমিও চলে গেলাম। লেকচার গ্যালারীতে যেতে হবে। নতুন লেকচার ক্লাশ শুরু হবে। ক্লাশ করব কিনা আরেকবার ভেবে নিতে হবে।
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×