১.
- এইটা কি নদী ।
- এইটা হলো বংশী নদী , যার কথা তোমারে বলছিলাম ।
- ওরেব্বাস এত সুন্দর ?
নৌকায় বসে পরলাম , পা ঝুলিয়ে দিলাম পানিতে , আহ!নদীর পানি ,ভাবটাই অন্যরকম লাগছে , ঘাটের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম , যেখানে পৌছালেই পাব সেই কাঙ্খিত গ্রাম , রূপনগর গ্রাম ! যার জন্য আমি ছুটে এসেছি শহরের সব ব্যস্ততা ফেলে । পাক্কা ২০ মিনিট পর নৌকা ঘাটে ভিড়ল. আমি এক লাফে নৌকা থেকে নেমে পরলাম কাদা মাটিতে । পা টা একেবারে কাদায় ডুবে গেল ।
- ওই দাড়ায়া থাকবা নাকি ? বাড়ি চল , খাওয়া দাওয়া করে গ্রাম দেখতে বের হব ।
- আচ্ছা চল ।
ঘাটের পারেই বাড়ি । যেতে বেশিক্ষণ লাগলো না ।
২.
এত বিশাল খোলা মাঠ ? আমি দিলাম এক দৌড় । যত দৌড়াচ্ছি গতি আরো বাড়ছে , ছুটছি ছুটছি ...... এক সময় ডিগবাজি খেয়ে শুয়ে পরলাম । হাপাচ্ছি , এত ভালো লাগছে বলার মতো না । কতদিন দৌড় দেই না , আজ মনের আনন্দ নিয়ে দৌড়ালাম । উপরে আকাশ , মেঘহীন বিশাল আকাশ , আমার চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে , মুখের দুই পাশে হাত এনে জোরে একটা চিৎকার দিলাম ,
ওওওওওওওওওওওওওওওওও .
তৃপ্তি হলো না , এইবার দাঁড়ালাম আবার চিৎকার
আআআআআআআআআআআআআআ .
অসম্ভব একটা অস্থির অনুভুতি লাগতেছে । কি করব কি করব , খোলা মাঠে বন্য একটা অনুভুতি , দিলাম আবার দুই তিনটা ডিগবাজি ।
- ওই , ব্যথা পাবি তো ।
- তুমি ? এতক্ষণ কই ছিলা ?
- লগেই ছিলাম , তুই যে দৌড় লাগাইলি আমি কি আর এত পারি ?
- ও , লও আবার দৌড় লাগাই ।
- আরে নাহ , তুই এত বান্দর শহরে তো বুঝি নাই ।
- হেহে আরো দেখবা , লও আবার দৌড় লাগাই । এইবার খালি গায়ে দৌড়ামু ।
আমি এবার আমার শরীরের বাঁধন খুলে ফেললাম , একটা দমকা হওয়া ধাক্কা দিয়ে গেল আমার মুক্ত গায়ে । আহ! এই অনুভব কি আর শহরে পাওয়া যায় ? দিলাম আবার দৌড় ।
৩.
- এই খাল পার হমু কেমনে ? নৌকা তো নাই ।
- তাইত দেখতাছি , নে প্যান্ট গুটা. হাইটা পার হমু ।
- যাওয়া যাইবো ?
- যাইবো যাইবো । বেশি পানি নাই তো ।
খাল পার হলাম , প্রায় ঠ্যাং পর্যন্ত পানি । আমার খালি ভয় লাগছিল কখন না জানি জোঁক কামড় দেয় । সামনে দেখলাম বড় ভাই কি অনায়াসে পার হইতাছে আর আমি কাপতেছি । এক সময় উল্টায় পরে গেলাম । পুরা শরীর ভিজে গেল , আমার অবস্থা দেখে বড় ভাই হেসে দিল , আমিও দিলাম । মজাই আলাদা । পুরা গোসল হয়ে গেলাম ।
.
৪.
রাতে ঝুম বৃষ্টি পরলো । একটা খড়ের ঘরের নিচে দাড়ালাম ।
- আমরা দাঁড়ায় আছি ক্যান ? চল ভিজতে ভিজতে যাব ।
- না ঠান্ডা লাগব ।
- আরে ধুর লাগলে লাগব ।
রাতে বৃষ্টির ভিতর ভিজতে ভিজতে হাটছি । আমি ইচ্ছা মতো পাগলামি করতেছি , বান্দরের মতন লাফাইতেছি , আবার উল্টা পাল্টা গান গাইতাছি ।
ইয়া ঢিস ঢিসা ঢিসুম ,
ওরে বৃষ্টি আরো নাম কইরা ঝুম ।
আরো পাগলামি করতে করতে বাড়ির উঠানে পা দিতে গেলাম আবার উল্টায়া , এইবার ভাবি দিল হেসে । কাদা মাইখা আমার অবস্থা এক্কেরে সেই রকম ! আমি একটু লজ্জা পেলাম , ভাবি গামছা এনে দিয়ে বলল
- যাও গোসল দিয়া আস বান্দর পোলা ।
৫.
একলা দাঁড়িয়ে আছি , গ্রামের নিঝুম রাত , সামনে কলকল বয়ে চলা বংশী নদী উপরে তারা ভরা আকাশ , আহ! কত সুন্দর , আমি এইরকম আকাশ কতবার দেখতে চেয়েছি ,কতবার চেয়েছি এই নিস্তব্ধ পরিবেশ , কিন্তু শহরে কি আর এই আকাশ দেখা যায় ? মগ্ন হয়ে দেখতে থাকি । একটা ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করলো ,মোবাইলটা বের করে মেসেন্জারে লগিন করি , ফ্রেন্ড টা আছে , নক করলাম , চ্যাট করলাম , ধুর ওর মতো কাঠখোট্টার লগে কথা বলে মেজাজ গরম করতে ইচ্ছা করলো না ।
৬.
বাড়ির বারান্দায় এসে বসলাম । বসে আছি , শুনশান নিরব
রাত , সামনে বাঁশঝার আর জোনাকির ঝিঁ ঝিঁ শব্দ , কি যে অসাধারণ ! আমার সেই স্বপ্নরানী যদি এখানে আমার সাথে থাকত ! নিরবতায় বুদ হয়ে গেলাম , হঠাৎ কানে কানে কে যেন বলে ওঠে,
- সোহান একা একা কি কর ?
- তুমি ? কিভাবে এলে ?
- তুমি আমাকে ভাবছিলে , তাই পথ ভুলে এসেছি ।
আবেগী এমন রাতে ,
ভুল করে এই পথে ,
এসে যদি ফিরে যাও -
আমায় না পেয়ে ,
তাই আমি বসে আছি দরজার ওপাশে .
- তাই ? তোমার বসে থাকা তাহলে স্বার্থক ! এই যে আমি এলাম ।
- হুম এসেছ কিন্তু বাস্তব নও , স্বপ্নে , আমি জাগনা স্বপ্ন দেখতেছি তোমাকে ।
- তুমি বেশ মজা করে বলোতো ।
- হুম ।
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ।
- আচ্ছা একলা এই রাতে আছ ভয় করে না ?
- করে একটু একটু , তবে ভালো লাগাটা আরো বেশি ।
আরো কিছুক্ষণ একা কেটে যায় , আমি আমার প্রিয়তমার নিস্তব্ধতা উপভোগ করি , যদিও জানি সে অপরবাস্তব !
-সোহান অনেক রাত , আমি চলে যাই , তুমি থাক , বেশি রাত জেগোনা , ঘুমিয়ে পরো ।
- আর একটু থাকলে কি হয় ? ভালই তো লাগছে ।
- কিন্তু বেশিক্ষণ যে থাকা যায় না সোহান , কল্পনা বেশিক্ষণ থাকে না ।
- তাইলে আস ক্যান ? না আসলেই পারো ।
- তুমি আর আমায় কল্পনা কোরো না , আমিও আর আসবো না ।
- হু , করুম না , তুমিও আর আইস না , যাও ভাগো ।
- এরকম তো কতই বললে ।
স্মিত হেসে সেই রুপিনী চলে যায় , আমি তার চলে যাওয়া দেখি । অজান্তেই বুকে একটা চিন চিনে ব্যথা জেগে ওঠে ।
চলে যাওয়া সেই পথে ,
ঝিরি ঝিরি বাতাসে .
আমার এই মন কাঁদে
তোমায় না পেয়ে .
তাই আমি বসে আছি দরজার ওপাশে .
আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি যদি আবার আসে , নাহ আসে না , একবারের বেশি কখনো সে আসে নি , তাই এই মনোমুগ্ধকর রাতেও আর আসবে না ।
আমি ঘুমিয়ে পরি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১২:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



