somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন , একাকীত্ব আর কথোপকথন

০৯ ই জুন, ২০১০ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১.

- এইটা কি নদী ।
- এইটা হলো বংশী নদী , যার কথা তোমারে বলছিলাম ।
- ওরেব্বাস এত সুন্দর ?
নৌকায় বসে পরলাম , পা ঝুলিয়ে দিলাম পানিতে , আহ!নদীর পানি ,ভাবটাই অন্যরকম লাগছে , ঘাটের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম , যেখানে পৌছালেই পাব সেই কাঙ্খিত গ্রাম , রূপনগর গ্রাম ! যার জন্য আমি ছুটে এসেছি শহরের সব ব্যস্ততা ফেলে । পাক্কা ২০ মিনিট পর নৌকা ঘাটে ভিড়ল. আমি এক লাফে নৌকা থেকে নেমে পরলাম কাদা মাটিতে । পা টা একেবারে কাদায় ডুবে গেল ।
- ওই দাড়ায়া থাকবা নাকি ? বাড়ি চল , খাওয়া দাওয়া করে গ্রাম দেখতে বের হব ।
- আচ্ছা চল ।
ঘাটের পারেই বাড়ি । যেতে বেশিক্ষণ লাগলো না ।

২.

এত বিশাল খোলা মাঠ ? আমি দিলাম এক দৌড় । যত দৌড়াচ্ছি গতি আরো বাড়ছে , ছুটছি ছুটছি ...... এক সময় ডিগবাজি খেয়ে শুয়ে পরলাম । হাপাচ্ছি , এত ভালো লাগছে বলার মতো না । কতদিন দৌড় দেই না , আজ মনের আনন্দ নিয়ে দৌড়ালাম । উপরে আকাশ , মেঘহীন বিশাল আকাশ , আমার চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে , মুখের দুই পাশে হাত এনে জোরে একটা চিৎকার দিলাম ,

ওওওওওওওওওওওওওওওওও .

তৃপ্তি হলো না , এইবার দাঁড়ালাম আবার চিৎকার

আআআআআআআআআআআআআআ .

অসম্ভব একটা অস্থির অনুভুতি লাগতেছে । কি করব কি করব , খোলা মাঠে বন্য একটা অনুভুতি , দিলাম আবার দুই তিনটা ডিগবাজি ।
- ওই , ব্যথা পাবি তো ।
- তুমি ? এতক্ষণ কই ছিলা ?
- লগেই ছিলাম , তুই যে দৌড় লাগাইলি আমি কি আর এত পারি ?
- ও , লও আবার দৌড় লাগাই ।
- আরে নাহ , তুই এত বান্দর শহরে তো বুঝি নাই ।
- হেহে আরো দেখবা , লও আবার দৌড় লাগাই । এইবার খালি গায়ে দৌড়ামু ।
আমি এবার আমার শরীরের বাঁধন খুলে ফেললাম , একটা দমকা হওয়া ধাক্কা দিয়ে গেল আমার মুক্ত গায়ে । আহ! এই অনুভব কি আর শহরে পাওয়া যায় ? দিলাম আবার দৌড় ।

৩.

- এই খাল পার হমু কেমনে ? নৌকা তো নাই ।
- তাইত দেখতাছি , নে প্যান্ট গুটা. হাইটা পার হমু ।
- যাওয়া যাইবো ?
- যাইবো যাইবো । বেশি পানি নাই তো ।
খাল পার হলাম , প্রায় ঠ্যাং পর্যন্ত পানি । আমার খালি ভয় লাগছিল কখন না জানি জোঁক কামড় দেয় । সামনে দেখলাম বড় ভাই কি অনায়াসে পার হইতাছে আর আমি কাপতেছি । এক সময় উল্টায় পরে গেলাম । পুরা শরীর ভিজে গেল , আমার অবস্থা দেখে বড় ভাই হেসে দিল , আমিও দিলাম । মজাই আলাদা । পুরা গোসল হয়ে গেলাম ।
.

৪.

রাতে ঝুম বৃষ্টি পরলো । একটা খড়ের ঘরের নিচে দাড়ালাম ।
- আমরা দাঁড়ায় আছি ক্যান ? চল ভিজতে ভিজতে যাব ।
- না ঠান্ডা লাগব ।
- আরে ধুর লাগলে লাগব ।
রাতে বৃষ্টির ভিতর ভিজতে ভিজতে হাটছি । আমি ইচ্ছা মতো পাগলামি করতেছি , বান্দরের মতন লাফাইতেছি , আবার উল্টা পাল্টা গান গাইতাছি ।
ইয়া ঢিস ঢিসা ঢিসুম ,
ওরে বৃষ্টি আরো নাম কইরা ঝুম ।
আরো পাগলামি করতে করতে বাড়ির উঠানে পা দিতে গেলাম আবার উল্টায়া , এইবার ভাবি দিল হেসে । কাদা মাইখা আমার অবস্থা এক্কেরে সেই রকম ! আমি একটু লজ্জা পেলাম , ভাবি গামছা এনে দিয়ে বলল
- যাও গোসল দিয়া আস বান্দর পোলা ।

৫.

একলা দাঁড়িয়ে আছি , গ্রামের নিঝুম রাত , সামনে কলকল বয়ে চলা বংশী নদী উপরে তারা ভরা আকাশ , আহ! কত সুন্দর , আমি এইরকম আকাশ কতবার দেখতে চেয়েছি ,কতবার চেয়েছি এই নিস্তব্ধ পরিবেশ , কিন্তু শহরে কি আর এই আকাশ দেখা যায় ? মগ্ন হয়ে দেখতে থাকি । একটা ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করলো ,মোবাইলটা বের করে মেসেন্জারে লগিন করি , ফ্রেন্ড টা আছে , নক করলাম , চ্যাট করলাম , ধুর ওর মতো কাঠখোট্টার লগে কথা বলে মেজাজ গরম করতে ইচ্ছা করলো না ।

৬.

বাড়ির বারান্দায় এসে বসলাম । বসে আছি , শুনশান নিরব
রাত , সামনে বাঁশঝার আর জোনাকির ঝিঁ ঝিঁ শব্দ , কি যে অসাধারণ ! আমার সেই স্বপ্নরানী যদি এখানে আমার সাথে থাকত ! নিরবতায় বুদ হয়ে গেলাম , হঠাৎ কানে কানে কে যেন বলে ওঠে,
- সোহান একা একা কি কর ?
- তুমি ? কিভাবে এলে ?
- তুমি আমাকে ভাবছিলে , তাই পথ ভুলে এসেছি ।

আবেগী এমন রাতে ,
ভুল করে এই পথে ,
এসে যদি ফিরে যাও -
আমায় না পেয়ে ,
তাই আমি বসে আছি দরজার ওপাশে .


- তাই ? তোমার বসে থাকা তাহলে স্বার্থক ! এই যে আমি এলাম ।
- হুম এসেছ কিন্তু বাস্তব নও , স্বপ্নে , আমি জাগনা স্বপ্ন দেখতেছি তোমাকে ।
- তুমি বেশ মজা করে বলোতো ।
- হুম ।
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ।
- আচ্ছা একলা এই রাতে আছ ভয় করে না ?
- করে একটু একটু , তবে ভালো লাগাটা আরো বেশি ।
আরো কিছুক্ষণ একা কেটে যায় , আমি আমার প্রিয়তমার নিস্তব্ধতা উপভোগ করি , যদিও জানি সে অপরবাস্তব !
-সোহান অনেক রাত , আমি চলে যাই , তুমি থাক , বেশি রাত জেগোনা , ঘুমিয়ে পরো ।
- আর একটু থাকলে কি হয় ? ভালই তো লাগছে ।
- কিন্তু বেশিক্ষণ যে থাকা যায় না সোহান , কল্পনা বেশিক্ষণ থাকে না ।
- তাইলে আস ক্যান ? না আসলেই পারো ।
- তুমি আর আমায় কল্পনা কোরো না , আমিও আর আসবো না ।
- হু , করুম না , তুমিও আর আইস না , যাও ভাগো ।
- এরকম তো কতই বললে ।
স্মিত হেসে সেই রুপিনী চলে যায় , আমি তার চলে যাওয়া দেখি । অজান্তেই বুকে একটা চিন চিনে ব্যথা জেগে ওঠে ।

চলে যাওয়া সেই পথে ,
ঝিরি ঝিরি বাতাসে .
আমার এই মন কাঁদে
তোমায় না পেয়ে .
তাই আমি বসে আছি দরজার ওপাশে .


আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি যদি আবার আসে , নাহ আসে না , একবারের বেশি কখনো সে আসে নি , তাই এই মনোমুগ্ধকর রাতেও আর আসবে না ।

আমি ঘুমিয়ে পরি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১২:১৪
১৭৯টি মন্তব্য ১৮২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×