somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চারুলতা -দ্বিতীয় পর্ব

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ততক্ষনে সকাল হয়ে গেছে।সূর্যের তীক্ষ্ণ সরু একটা আলো ৬০ ডিগ্রি কোনে জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে রাতুলের চোখে এসে জ্বালাতন করছিলো।ঘুম থেকে আচমকা জেগে উঠে চারিদিকে কেমন যেন নীরব আর নিস্তদ্ব লাগছিলো ওর।মা আজ বাসায় নেই।ওর মামার বাড়িতে গিয়েছে নানুকে দেখতে।সময় দেখার জন্য বালিশের নিচে হাতরে মোবাইলটা খোঁজার চেষ্টা করছিলো রাতুল।না মোবাইলটা সেখানে নেই।অনেক খোঁজাখোঁজির পর দেখা গেলো সেটা খাটের নিচে পড়ে আছে।

মোবাইলটা হাতে নিতেই ওর গতরাতের সেই মেয়ের কলটার কথা মনে পড়লো।কে হতে পারে সে?আমার চেনা কেউ?তাহলে তো চিনতেই পারতাম।যাইহোক মেয়েটার গলা কিন্তু খুব মিষ্টি।খুব পরিচিত বলে মনে হয়।সে কি আমাকে চিনে?

এই ধরনের অনেক প্রশ্ন খেলতে লাগলো রাতুলের মনে।গত রাতের ঘটনাটা মেনে নিতে পারছিলো না সে।চোখ পড়লো কম্পিউটারের দিকে।গত রাতের মুভি দুইটা ডাউনলোড হয়েছে।এর মানে কাল লোডশেডিং হয়নি।

বারান্দায় দাড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো সে।বাজেটে সিগারেটের দাম একদফা বেড়েছে।সকালের এই সিগারেটটা অনেকের জন্যই উপাদেয় হয়।এই সিগারেট নিয়ে নানা মানুষের নানান মতবাদ।কারো বাসি পেটে ভালো লাগে।আবার কারও ভরা পেটে।কারও বসে খেতে ভালো লাগে আবার কারও হাঁটতে হাঁটতে।কারও চায়ের প্রয়োজন হয় কারও নয়।কারও ফেভরিট বেনসন আবার কারও গোল্ডলিফ।কেউ ধুয়া ভিতরে নেয় আবার কেউ নেয় না। কেউ প্রফেশনাল আবার কেউ ভাব দেখানোর জন্য।সবার সব ধরনের চাহিদা মেটায় একটা সিগারেট।

যাইহোক,প্যাকেটের শেষ সিগারেটের শেষ টান দিলো রাতুল।অনেকেই এটাকে সুখটান বলে আখ্যায়িত করে।বারান্দা দিয়ে খালি প্যাকেটটা ফেলে দিলো ও।একটা শৈল্পিক ভংগিতে ঘুরতে ঘুরতে নিচে পড়ছে ওটা।আর একটু হলেই পাশের এপার্টমেন্টের টাকওয়ালা লোকটার মাথায় পড়তো।সময় দেখলো রাতুল।১২ টা ১৯।ক্লাসের জন্য দেড়ি হয়ে গেছে।নির্ঘাত দুইটা ক্লাস মিস্‌।কোন মতে তৈরী হয়ে টেবিলের কাছে এসে দাড়ালো।মা নাস্তা রেডী করেই গিয়েছিলেন।চার পিছ ব্রেডের মাঝে দুইটা ডিমের অমলেট ঢুকিয়ে ডাবল স্যান্ডউইচ বানিয়ে খেতে খেতে বেড়িয়ে গেলো।রাস্তায় যাওয়ার পথে মানুষগুলো অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো ওর দিকে।রাতুলের মনে হলো তার সেই অনন্য রেসিপি খাওয়ার জন্য সবাই জিহ্বা সামাল দিচ্ছে।

বড় রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে একটা রিকশা ডাকলো।রিকশাওয়ালা ২০ টাকা ভাড়া ডিমান্ড করলো।ওঠে পড়লো রাতুল।মোবাইল বের করে ফোন দিলো ঈনিয়া কে.........................

ঈনিয়া: হ্যালো! কে?

রাতুল: অই শোন ঢং করবি না।কে মানে?আমার নাম্বার তোর সেভ করা নাই?

ঈনিয়া: রাতুল!!! তুই আমাকে ফোন করবি ভাবতেই পারি নাই।আমাকে হঠৎ কিভাবে মনে পড়লো?ও তোর তো আবার টাকা কাটতেছে।কলটা কেটে আমি ফোন দেবো?

রাতুল: দেখ আগেই বলছি কাহিনী করবি না।এমনিতেই প্যাচে আছি।তুই কই দোস্ত বলতো?

ঈনিয়া: আমি ভার্সিটিতে আছি।তুই নাকি আজ ক্লাসে নাই।কই তুই?কি প্যাচে পরছস?

রাতুল: ফোনে বলা যাবে না।তুই থাক আমি ২০ মিনিটে মধ্যে হাজির হইতাছি।

ঈনিয়া: ok দোস্ত, bye

রাতুল: ok then,তুই থাকিস কিন্তু।


সামনে একটা টং দোকান দেখিয়ে রিক্সা ভিড়াতে বললো রাতুল।রিক্সাওয়ালা বামে চাপিয়ে দিলো।

রাতুল: মামা, তুমি সিগারেট খাও?

রিক্সাওয়ালা: মামা,মাঝে মাঝে খাই।

রাতুল: কোনটা খাও?

রিক্সাওয়ালা: মামা, আগে নেভী খাইতাম।অহন ষ্টার খাই।


রাতুল ভার্সিটিতে গেলো ঠিকই কিন্তু ক্লাসে এটেন্ড করলো না।ঈনিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো।রাজু এসে পিছন থেকে বললো ,"কি মামা ,কি করতাছো?ক্লাসে আইলানা যে?সব ঠিক তো?"

রাতুল: আরে রাজু তুই?বন্ধু, তোর জন্যই অপেক্ষা করতেছি।একটা কথা আছে।

রাজু: বলো কি তোমার কথা?তোমার লাইগ্যা তো দুনিয়া কুরবান।

রাতুল: বয়ান লইছ না।শোন গতকাল রাতে আমার মোবাইলে পুরাই আজিব একটা কল আসলো।একটা মেয়ের কল।ভয়েসটা পুরাই জোস্ ।কিন্তু নাম বলে নাই।আর হঠাৎ লাইন কাট মারছে।ব্যাপারটা কি বলতে পারবি।

রাজু: ও , এই কাহিনী?মামা শেষ পর্যন্ত তুমিও পল্টিতে পরলা।মাই্য়্যা মাইনসের ক্যারফায় যে পরছে তার আর রক্ষা নাই।যাইহোক তোমার একটা গতি হইবো তাইলে।লাগে রাহো।

রাতুল: অই তুই যা আমার সামনে থাইক্যা।চাইলাম একটা সলুশন উল্টা বকবক শুরু করলি।যা দূরে গিয়া মর।

রাজু: ভালো, সুন্দর,অহনই ভাই ব্রাদার পর কইরা দিলা।মাত্র তো একটা কল আইছে।এতেই এই অবস্থা।

রাতুল: অই তুই যাবি?


এদিকে ঈনিয়া ক্লাস শেষে বেরিয়ে এসেছে। রাতুলকে দেখেও না দেখার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো ও।রাতুল পিছন থেকে ডাকতেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো ঈনিয়া।রাতুল কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো,"কিরে রাগ করছিস?"

ঈনিয়া: না । কেন?

রাতুল: তাইলে মুখটা কুমড়ার মত ফুলাইয়া রাখছস কেন?একটু রিলাক্স হ।

ঈনিয়া: আমার ব্যাপার সেটা।তোর মাথা ব্যাথা কেন?যা নিজের চরকার তেল দে।

রাতুল: দেখ জ্ঞান দিবি না।রাগ করছস কেন?

ঈনিয়া: আমি রাগ করছি তোরে কে বলছে?

রাতুল: আমি তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড না,তোর চেহারা দেখলেই আমি বুঝি তোর কি হইছে।এখন রাগ করছস কেন সেইটা বল?

ঈনিয়া: কত যে বুঝ সেইটা আমি ভালোই জানি।আর বলতে হবে না।তুই আমাকে মরজিনা পাগলনি বলছস কেন?

রাতুল: ও...................এই কথা।নে সরি বললাম।চল রিকশা করে ঘুরি?আইসক্রিম খাবি?

ঈনিয়া: আজ হঠাৎ এত দরদ?ঘটনা কি খুলে বল।কোন কারন তো নিশ্চই আছে।নইলে আমাকে নিয়ে রিকশায় চড়ার লোকতো তুই না।


রাতুল একটা রিকশা ডাকলো।রিকশার বামপাশে বসতে গেলে ঈনিয়া রাতুলকে বাধা দিলো।ছেলেদের নাকি রিকশায় ডানদিকে বসতে হয়।রাতুল মেয়েদের প্রতি কতটা উদাসীন ছিলো সেটা এই বিষয়গুলোতে তার অজ্ঞতাই প্রমাণ।যাইহোক পথে রাতুল ঈনিয়াকে আগের রাতের ঘটনা খুলে বললো।ঈনিয়া ব্যাপারটাকে নেহাৎ মজার ভেবে রাতুলকে ভয় দেখাবার জন্য একটা গল্পও বানিয়ে বলে ফেললো।গল্পটা ছিলো এমন,

ঈনিয়ার নাকি এক দুঃসম্পর্কের মামা ছিলো।তারও নাকি রাতে এমন ফোন আসতো।কিন্তু সেই ফোনটা একটু আজিব টাইপের ছিলো।ফোনে যে মেয়েটে কথা বলতো তার কথা নাকি শুধু সেই মামাই শুনতে পেতো।অন্য কেও রিসিভ করলে কোন কথা শুনতো না।ওর মামা সেই মেয়েটা প্রেমে পড়ে যায়।একসময় সেই ফোনটা আসা বন্ধ হয়ে যায়।আর বেচারী মামা নাকি তখন থেকে পাগল হয়ে যায়।


কাহিনী শুনে রাতুল কতক্ষন থ মেরে রইলো।রাতুলের নিরবতা দেখে ঈনিয়া হেসে ফেললো।হ্যা ঈনিয়া এতক্ষন মজা করছিলো।রাতুল তখন বুঝতে পারলো যে এই ঘটনাটা নিয়ে সবাই ঠাট্টা করবে।তার চেয়ে বিষয়টা আপাতত গোপন রাখাই ভালো।


[চলবে.................]




চারুলতা-১ম পর্ব





সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ২:৪০
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×