somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চারুলতা-তৃতীয় পর্ব

১০ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







রাত তখন ১টা ২৭।বিদ্যুৎ চলে গেছে।এটা ঢাকা শহরের অধিবাসীদের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক একটি ঘটনা।বারান্দার ইজি চেয়ারটাতে বসে মৃদু দোল খাচ্ছে রাতুল।চাঁদের আলো বারান্দার গ্রীলে বাধা পেয়ে ছায়া ফেলেছে রাতুলের ওপর।হেডফোনটা কানে দিয়ে শুভমিতার শুধু তোমায় ভেবে ভেবে গানটা বার বার শুনছিলো সে।ততক্ষনে রাতুল বুঝতে পেরেছে যে,ফোনে তার সাথে একটি মেয়ের কথা হয়েছে একথা শুনলে সবাই এই বিষয়টা নিয়ে তার সাথে ঠাট্টা করবে।তার চেয়ে বিষয়টা আপাতত কাউকে না জানানোই বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে বলে তার কাছে মনে হলো।কল লগ থেকে সে আবার সেই অপরিচিতা মেয়েটির নম্বরে ফোন দিলো।সারাদিনের মত এবারও একটি মেয়ে কন্ঠ বলে দিলো যে কাঙ্খিত নম্বরটি বন্ধ আছে।পুনরায় গান শোনায় মন দিলো রাতুল।


হঠাৎ করেই একটা কল আসলো রাতুলের সেলফোনে।নম্বরটা চিনতে দেরী হলো না তার।কাঙ্খিত সেই নম্বরটি থেকেই ফোন এসেছে।মোবাইল ডিসপ্লের কোনায় সময় দেখাচ্ছে ১ টা ৫৩।সবুজ বাটনে চাপতেই সেই হতাশা আর আক্ষেপে ভরা মায়াবী স্বর ভেসে এলো রাতুলের কানে....................


হ্যালো!!!হ্যালো!!!! আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন???


রাতুল : হ্যা শুনতে পাচ্ছি।বলুন??কেমন আছেন আপনি?

ওপাশ থেকে: একটি ডানা কাটা পাখি যতখানি ভালো থাকে।জলের মাছ স্থলে যেমন ভালো থাকে, ঠিক তেমনি ভালো আছি।আপনার কথা বলুন।কেমন আছেন আপনি?

রাতুল : বন্ধ সিম কার্ড যেমন ভালো থাকে।পাসওয়ার্ড হারানো একাউন্ট যেমন ভালো থাকে, ঠিক তেমনি ভালো আছি আমি।

ওপাশ থেকে: আপনি কি ফান করছেন আমার সাথে?

রাতুল : দেখুন, আমি পূর্বেই আপনাকে বলেছি আমি সাহিত্যের দুর্বোধ্য ভাষা বুঝি না।তাই আমার ভাষায় আমার অবস্থান ব্যাক্ত করলাম।আপনি আবার কিছু মনে করেননি তো?

ওপাশ থেকে: না না।ঠিক আছে। আমি কিছু মনে করিনি।

রাতুল : তাহলে দয়াকরে আপনার নামটা বললে কৃতজ্ঞ থাকবো।

ওপাশ থেকে: মানে?

রাতুল : মানে হচ্ছে আমার পরিচয় তো আপনাকে দেয়া হয়েছে এখন আপনার নামটা জানতে চাচ্ছি।

ওপাশ থেকে: ও তাই না?আমাকে তবে ফোন বালিকা বলেই ডাকুন।

রাতুল: ইউ মিন কলগার্ল???

ওপাশ থেকে: ওহ.........আপনাকে নিয়ে আর পারা যাবে না।আমি বেলা।

রাতুল : টুইলাইট মুভির নায়িকা বেলা?

ওপাশ থেকে: তা আর হতে পারলাম কই? এডওয়ার্ড অথবা জেকব কেউই নেই আমার জীবনে।

রাতুল : তাহলে অন্জন দত্তের বেলা বোস?

ওপাশ থেকে: না তাও নই।আর আমার বাসায় তো ২৪৪১১৩৯ নেই।চাইলে ট্রাই করে দেখতে পারেন।

রাতুল : তবে ক্যাসিল এন্ড লিওন এর রানী ইসাবেলা।

ওপাশ থেকে: আমারতো কোন রাজ্য নেই।আর তাই আমি রানীও নই।

রাতুল : জাহাজ ইসাবেলা?

ওপাশ থেকে: সে তো আরও ২০০ বছর আগেই ডুবে গেছে।

রাতুল : রিকি মার্টিন এর গান বেলা?

ওপাশ থেকে: না।

রাতুল : তাহলে..........................

ওপাশ থেকে: আর বলতে হবে না।আপনি আমাকে চারুলতা বলে ডাকতে পারেন।

রাতুল : নামটা কি আপনার মা রেখেছিলেন?

ওপাশ থেকে: আপনি কিভাবে বুঝলেন?

রাতুল : একজন মা সবসময়ই তার সন্তান জন্মের অনেক পূর্বে সন্তানের জন্য সুন্দর একটি অর্থবহ নাম পছন্দ করে রাখেন।

ওপাশ থেকে: তাহলে চারুলতা বলেই ডাকছেন আমাকে?

রাতুল: অন্য কোন নামে ডাকলে যে আপনার পরিচয় ফুটে উঠবে না।




একসময় ভোরের আলো রাতের আঁধারকে দূর করে টিপ টিপ পায়ে এগিয়ে আসতে শুরু করে।ইতিমধ্যে সেদিনের মতো ইতি টানা হয় তাদের কথপোকথনের।অন্যরকম একটি ভালো লাগা কাজ করছিলো রাতুলের মাঝে।নেশার পরে নেশাখোরেরা যেমন মাতাল ভাব ধরে রাখতে চায় ঠিক তেমনি রাতুলেরও সেই ভালো লাগাকে ধরে রাখতে ইচ্ছে করছিলো।আজ অনেক কিছু জেনেছে সে চারুলতার ব্যাপারে।মেয়েটা সবসময় একাকীত্ব ফীল করে।তার মনের কথাগুলো ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য সে এখনো এমন একটি মানুষ খুঁজে পায়নি।কোনমতে সারাদিন কাটিয়ে দেয়ার পর যখন রাত আসতো,তার একাকিত্বের মাত্রা চরম আকার ধারন করতো।যন্ত্রনায় কাতর মন নিজের অজান্তেই কেঁদে উঠতো ওর।সেই একাকীত্ব লাঘবের পথ হিসাবে সে বেছে নিয়েছে একটি রংনাম্বারকে।




এভাবে প্রায় প্রতিরাতেই কথা চলতে থাকে দুজনের।একসময় দুজনের মাঝে ফোনেই চমৎকার একটি সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।সম্পর্কটা আপনি থেকে তুমিতে পরিবর্তিত হয়।তাদের সম্পর্কটা এতটাই আজব ছিলো যে তার কোন নাম ছিলো না।একে ভালোবাসাও বলা যায় না আবার বন্ধুত্ব বলে আখ্যা দিলেও কম হয়ে যায়।কিন্তু তা এতটাই গভীরতায় পৌছে ছিলো যে ফিরে তাকানোর কোন উপায় ছিলো না।


চারিদিকের সবকিছু বদলে যেতে থাকে রাতুলের।নতুন এক জগতের জাগতিক আনন্দ খুঁজে পায় সে।এক অচেনা মায়ার আপেক্ষিক বন্ধনে আবদ্ব হতে থাকে সে।নিজের ভিতরের সেই অমুল পরিবর্তন সে নিজেই লক্ষ করতো।পার্থিব বিষয়গুলো নিরস লাগতে থাকে তার কাছে।



রাতুলের এই পরিবর্তনগুলো ঈনিয়া লক্ষ্য করতে থাকে।এই ব্যাপারে অনেক বার কথা বলতে চাইলেও রাতুল এড়িয়ে যায় ওকে।বন্ধুদের আড্ডায় অথবা চায়ের টং দোকানে ভিরতে দেখা যেতো না রাতুলকে।আগের মত চান্ঞল্য আর ছেলেমানুষি ভাব হারিয়ে ফেলেছে ও।এই বিষয়গুলো ভাবিয়ে তোলে ঈনিয়াকে।ঈনিয়া মেয়েটার সাথে রাতুলকে দেখা করতে বললেও রাতুলের দিক থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।রাতুলের একটাই কথা যে, যেই দিনে চারুলতার সাথে প্রথম কথা হয়েছিলো সেই দিনে আগামী ১ বছর পরে দুজন দেখা করবে বলে কমিটমেন্ট করেছে।





৩ মাস পরের এক শনিবারের ঘটনা।তখনো পর্যন্ত চারুলতার সাথে প্রায় প্রতিরাতেই কথা হতো রাতুলের।সেদিন রাতে চারুলতার ফোননটা যথাসময়ের চেয়ে একটু দেরী করেই আসে।রাতুল কলটা রিসিভ করে............

হ্যালো!!!চারুলতা???


ওপাশ থেকে কোন কথা আসছে না,শুধু কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিলো।মহূর্তেই অজানা বিপদের আশংকায় বুকের ভিতরটার কাঁদতে লাগলো রাতুলের।মস্তিষ্কের নিউরন সেল গুলি উত্তেজনার ছটফট করতে লাগলো।সেদিনই প্রথম রাতুল বুঝতে পারলো যে চারুলতার সাথে তার সম্পর্কটা আসলে ভালোবাসারই সম্পর্ক।কাঁপা কাঁপা গলায় সে জিজ্ঞাসা করলো....................


কি হয়েছে তোমার?

চারুলতা: আচ্ছা আমি যদি পৃথিবীতে না থাকি অথবা তোমাকে ছেড়ে চলে যাই তাহলে কি তুমি কষ্ট পাবে?[কান্না জড়ানো কন্ঠে]

রাতুল: আমাকে খুলে বল কি হয়েছে তোমার?

চারুলতা: আমার প্রশ্নের উত্তরটা দাও।

রাতুল : আমি তোমাকে ভালোবাসি। এটাই চিরন্তন সত্য, এছাড়া অন্য কোন উত্তর আমার জানা নেই।

চারুলতা: তোমার কাছ থেকে এই কথাটা শোনার জন্য অধীর হয়ে ছিলাম।কিন্তু এই বিদায়ের লগ্নে তমার কাছ থেকে পাওয়া ঐ তিনটা শব্দই আমার জীবনের চরম স্বার্থকতা।আমিও তোমাকে ভালোবাসি।ভালো থেকো।পারলে ক্ষমা করে দিও...........।





লাইনটা কেটে গেলো।রাতুল কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না।শুধু চারুলতার শেষের কয়েকটি কথা মনে বারংবার বাজছিলো।চারুলতাকে ফোন করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন বলে জানায়।কয়েকবার চেষ্টা করার পরে ব্যার্থ হয়ে অজানা আশংকার কথা মনে করে রাতুল ডুকরে কেঁদে উঠে.................................।




[...............চলবে]



চারুলতা - প্রথম পর্ব


চারুলতা -দ্বিতীয় পর্ব



সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:০৩
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×