somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চারুলতা-চতুর্থ পর্ব

২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে।এই সপ্তাহে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে নতুন একটি মাস এসেছে। চারুলতার সাথে কোনো যোগাযোগই হয়নি রাতুলের এই এক সপ্তাহে।প্রতিটা দিন প্রতিটা মহুর্ত ধূসর আর বিবর্ণ কেটেছে।বারবার চারুলতার বলা শেষ কথাগুলো মনে পড়ছিলো রাতুলের।সেই কথাগুলোর অর্থ এখনও পরিষ্কার নয় ওর কাছে।চারুলতা কেন হঠাৎ এমনটা বললো তাও রাতুলের মাথায় খেলছে না।


দুপুরে খাওয়ার সময় মা জানতে চেয়েছিলেন কি হয়েছে।মলিন একটা হাসি দিয়ে কিছুই হয়নি বলে শুধু ঘার নেড়েছিলো রাতুল।একয়টাদিনে ক্লাসেও যায়নি। সারাদিন ঘরেই একাকী সময় পাড় করেছে।মোবাইলে কারও ফোন রিসিভ করেনি,যদি চারুর ফোন এসে ফিরে যায়।


পিসিতে অবসকিউরের মাঝ রাতে চাঁদ যদি আলো না মিলায় গানটি লাউডে দিয়ে বিছানায় এসে শুয়েছে রাতুল।বিকেল বেলায় ঘুমের অভ্যাস নেই ওর।ডান হাতটা চোখের উপর রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলো।হঠাৎ টের পায় ওর বুকের উপর কিছু একটা।চোখ থেকে হাত সরিয়ে দেখে ঈনিয়া ওর হ্যন্ড ব্যাগটা বুকের ওপর রেখেছে।উঠে বসে রাতুল,


রাতুল : কিরে, তুই কখন আসলি?

ঈনিয়া: এইমাত্র এলাম।তোর কোন খবর নাই কেন?ইউনিতে আসছ না,কল করলে ধরতাছিস না।তোর প্রবলেম কি?লাইলি কি ছ্যাকা দিছে নাকি?

রাতুল: ফাজলামি রাখ।কেন আসছস সেইটা আগে বল।কোন দরকার?

ঈনিয়া: ফাজলামোর কি আছে?আর কোন দরকার ছারা বুঝি তোর সাথে দেখা করা যাবে না?তা তোর লাইলির কি খবর?

রাতুল : ঢং করবি না।কেন আসলি সেটা আগে বল?

ঈনিয়া: ভার্সিটি থেকে সোজা তোর বাসায় চলে এলাম।
তোরে দেখতে আসছি।সব ঠিক আছে তো?ইউনিতে আসতেছিস না কেন?

রাতুল: শরীরটা ভালো না।এই সেমিষ্টারে গ্যাপ দিব।

ঈনিয়া: তুই কি কোন কারনে ডিপ্রেশনে ভুগতেছিস?

রাতুল : আমাকে দেখে কি তেমন মনে হচ্ছে?

ঈনিয়া: হুম।অনেক সিক হয়ে গেছিস।তোর লাইলির কি খবর?

রাতুল: এসব রাখ, কি খাবি বল?

ঈনিয়া: কিছুই খাবো না।

রাতুল : তুই এত ভদ্র হইলি কবে?সারাদিন তো খাই খাই করা তোর স্বভাব।তুই বস,ফ্রিজে মিষ্টি আছে নিয়া আসতেছি।

ঈনিয়া: অই মিথ্যা বলবি না।আমি এখন কিছুই খাবো না।তোকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরতে ইচ্ছে করতেছে।চল আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসবি।

রাতুল: না আমার ভালো লাগছে না,তুই একা যেতে পারবি না?

ঈনিয়া: তোর মত বেহুদা পোলা আমি জীবনেও দেখি নাই।থাক তুই তোর লাইলির স্বপ্ন নিয়া।সলা ফার্মের মুরগী হইয়া যাইতাছস।



চলে যায় ঈনিয়া।গানটা এতক্ষন পস করা ছিলো।প্লে তে দিয়ে বারান্দায় যেয়ে সিগারেটের আগায় আগুন জ্বালায়।বেলা পড়ন্ত।সূর্যের লাল রং আকাশের বুকে থাকা মেঘের গায়ে পড়ে সারা আকাশটা ছেয়ে ফেলেছে।ধর্মভীরু লোকেরা যাকে হাসান হোসাইনের রক্ত বলে আখ্যা দেয়। এমন আকাশ দেখলে মন খারাপ হয়।পায়রার ঝাক উড়ে যায়।চারুলতার কথা মনে পড়ে।বুকের ভেতর চাপা একটা যন্ত্রনা ভর করে।ইচ্ছে করে বুকটা চিড়ে সেগুলো বের করে দিতে।ভালোবাসায় ছেলেদের এমন যন্ত্রনার খবর অনেক মেয়েই হয়তো রাখে না।চরুলতাও হয়তো বুঝতে পারে না,নাহলে এমন কষ্ট রাতুলকে আঁকড়ে ধরবে কেন?



রাতের অনেকটা সময় নির্ঘুম থাকা হচ্ছে রাতুলের।মা আজ বললো চোখের নিচে কালো দাগ পরে যাচ্ছে।সেই নিয়ে চিন্তা নেই ওর।রাতগুলো না হয় একটি মেয়ের জন্যই থাক।ইজিচেয়ারে বসে অন্ধকার দেখছিলো রাতুল।হঠাৎ করেই একটি ফোন আসে মোবাইলে।চমকে উঠে রাতুল।ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে দেখে বন্ধু তপুর নাম। রেড বাটনটায় চেপে দেয় রাতুল। কিছুক্ষন পরে আবার ফোন।বিরক্তিভরা চোখে আবারো ডিসপ্লের দিকে তাকায় রাতুল।চারুলতার নম্বার।মহুর্তে সমস্ত বক্ষে শিহরন জেগে উঠে।দ্রুত কল রিসিভ করে,

রাতুল: হ্যালো চারু?হ্যালো?

চারুলতা: এত ব্যাস্ত হচ্ছ কেন?হ্যা আমিই তোমার চারু।


চারুলতার কথা শুনে প্রান ফিরে পায় রাতুল।আজ অনেক সজীব আর চঞল মনে হচ্ছে চারুর গলার স্বর।আগের মত বিষন্নতা নেই।নেই জীর্নতার আধিপত্য।কেমন যেন পাল্টে গেছে সব।


রাতুল: তুমি ঠিক আছো তো? একয়দিন যোগাযোগ করনি কেন?আমি তোমায় নিয়ে কতটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম তুমি জানো?

চারুলতা: হ্যা জানি?তমি কি সত্যি আমাকে অনেক ভালোবাসো?

রাতুল: তোমাকেতো সেদিনই বলেছি।আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না।একটু খুলে বল,তুমি এমনটা কেন করেছিলে?

চারুলতা: জানো আজ নিজেকে দারুন সুখি বলে মনে হচ্ছে।জীবনে এই প্রথম কোন মানুষ পেলাম যে আমাকে সত্যিই কেয়ার করে।আমি কখনো পরিবারের কাছ থেকে এতটা পাইনি।ছোটবেলা থেকেই একাকিত্ব ছিলো আমার সঙ্গী।আমি কখনও কারো সাথে মন খুলে কথা বলতে পারিনি।কিন্তু তোমাকে পাওয়ার পর আমি নিজেকে তোমার মাঝে খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি তোমার কাছ থেকে ভালোবাসি শব্দটা আদায় করার জন্য আর তার গভীরতা যাচাই করার জন্য এমনটা করেছি।আমার উপর রাগ হওনিতো আবার?

রাতুল: তুমি জানো কতটা ছটফট করেছি আমি একয়টা দিন?মৃত্যু যন্ত্রনায় মানুষ যেমন কষ্ট পায় আমিও প্রতিটা ক্ষন তেমন কষ্ট পেয়েছি।তোমারকি একটা বারও আমার এ যন্ত্রনা অনুভব হয়নি?

চারুলতা:তুমি হয়তো জানো না,একয়টা দিন আমি শুধু তোমাকেই না নিজেকেও অনেক কষ্ট দিয়েছি।আমার স্বত্তা প্রতিক্ষনে তোমাকে আবেদনে ব্যাকুল ছিলো।আমিযে সত্যিই তোমার জন্যে ব্যাকুল হয়েছিলাম।

রাতুল: অই শোন এত রোমান্টিক কথা কইছি আবেগে পইরা।আমার মাথা পুরাই গেছে।তুমি আমার সাথে দেখা করবা কবে?

চারুলতা: তোমার সাথে তো আমার কমিটমেন্ট করাই আছে।যেদিন আমাদের প্রথম কথা হয়েছিলো তার ঠিক একবছর পরে।

রাতুল: ঐ এত দেরী আমার সহ্য হইবোনা।আমি এতদিন অপেক্ষা করতে পারমু না।চলো কমিটমেন্ট ভাইঙ্গা ফালাই।

চারুলতা: তুমি এখনো ছেলেমানুষি ছারতে পারলে না।আমি কিন্তু কমিটমেন্টের ব্যাপারে অটল।ঠিক এক বছর পর দেখা হবে।মাত্রতো ৩ মাস ২৭ দিন হলো।

রাতুল: আরে তুমি দিন মাসে হিসাবও রাখা শুরু করছো?আমিতো ভাবছিলাম সময়গুলো চুরি কইরা তোমার সাথে দেখা করবো।



পুনরায় কথা চলতে থাকে দুজনের।চারুলতাকে অনেক হাসিখুসি আর প্রানোচ্ছল আবিষ্কা করে রাতুল।এর ক্রেডিট রাতুলকে দিতেও কার্পণ্য করে না চারু।আবারো সময় চলে যায়,কেটে যায় দিন।প্রান ফিরে পায় রাতুলও।

টিপ টিপ পায়ে অনেকটা সময় হারিয়ে যায়।দ্রুত দিন কেটে যায়।ঘনিয়ে আসে তাদের দুজনের কমিটমেন্টের সেই দিন।যেই দিনটির জন্য রাতুলের অপেক্ষা।সেই অপেক্ষার বাকী আর মাত্র পাঁচটি দিন।এই দিন কয়টা রাতুল কিভাবে কাটাবে ভেবে অদ্যপান্ত পায় না।সেই শুভক্ষনের প্রতিক্ষায় একটি বছর আর কতনা লালিত স্বপ্ন।

কিন্তু সেই প্রতিক্ষীত দিনটি রাতুলকে যে কতক্ষানি যাতনা দিবে সেকি রাতুল জানতো?

[চলবে.............]





চারুলতা - প্রথম পর্ব

চারুলতা -দ্বিতীয় পর্ব

চারুলতা-তৃতীয় পর্ব



সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৫:২৭
৪২টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×