somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অর্ক এক সপ্তাহের জন্য গ্রামের বাড়ী যাবে, এই খবরটা শোনার পর থেকেই ঊর্মির ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগতে থাকে। এই শহরে ও সাতটা দিন থাকবেনা; তার মানে মন চাইলেই ওকে দেখা যাবেনা। এমনিতেও যে মন চাইলেই দেখা যায় তা নয়; তবুও সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ওই সাতদিন সেই সম্ভাবনাটুকুও যে নেই। আরো দুটো দিন আছে অর্ক এই শহরে। ঘড়ির কাঁটা সময় কমায়, আর ঊর্মির ভেতরটা আরো অস্থির হতে থাকে। রাগ লাগে ওর নিজের ওপরেই। আরে, অর্ক তো আসবে আবার। এত অস্থিরতা তবে কেন?- নিজেকে নিজে বোঝায়। তবু মন কেন যেন শান্ত হয়না। অর্ককে দেখতে ইচ্ছে করে ওর খুব। মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয় “তোমাকে সি-অফ করতে আসবো আমি।”

রাত আট’টায় অর্ক’র বাস ছাড়ার কথা কলাবাগান থেকে। সে দুই ঘন্টা হাতে রেখে বাসা থেকে বের হয়। মনটা অদ্ভুত এক ভালো লাগায় ভরে আছে। ঊর্মি আসবে। মেয়েটাকে দেখলেই ভেতরটা কেমন স্নিগ্ধতায় ভরে যায়। এত মায়া মায়া মুখ। বিশেষ করে চোখদুটো; মনে হয় সবসময় কাজল দেয়া। যদিও অর্ক জানে ঊর্মি কাজল দেয়না। ঊর্মির চোখের দিকে তাকালেই অর্ক’র মনে হয় অনেক অ-নে-ক কথা ওখানে, যা ও বুঝতে পারেনা। ঊর্মিকে ওর সবসময় দেখতে ইচ্ছে করে। কতটা ভালোবাসে ঊর্মিকে সে, মেয়েটা জানবেনা কোনদিন। অর্ক’র মধ্যে প্রকাশটা মাত্রাতিরিক্ত কম। ঊর্মির ম্যাসেজ পেয়ে কি পরিমাণ খুশি সে হয়েছে ঊর্মি জানেনা। ঊর্মির উন্মাতাল ভালোবাসার ঢেউয়ে ভাসতে ভীষণ ভালো লাগে অর্ক’র। ভীষণ সেন্টিমেন্টাল মেয়ে। কথায় কথায় কষ্ট পাবে। আবার একটু আদরেই বিড়ালের মত কোল ঘেঁষে থাকবে। অদ্ভুত একটা মেয়ে। ঊর্মির কথা ভাবতে ভাবতেই ঊর্মির ফোন।

"কেন বকছো তুমি আমাকে?" ঊর্মি একটু আহ্লাদ মিশ্রিত ঝাঁঝ নিয়ে বলে।
"বকবো কেন?"
"ভীষন জোরে একটা কামড় লাগলো ঠোঁটে।" হাসে ঊর্মি।
"সত্যি?" অর্ক’তো ওকেই ভাবছিলো। ভাবনার কারণে কামড়? এটা হয় নাকি? ভাবে ও মনে মনে।
"সত্যি নয়তো কি?"

অর্ক সিগনালে আটকে আছে। এখনো দেড় ঘন্টা বাকী আট’টা বাজতে। কলাবাগান পৌঁছাতে বড়জোর আর এক ঘন্টা লাগবে। ঊর্মির সাথে কথা বলতে শুরু করলে সময় গড়িয়ে যায় কি করে বোঝেনা অর্ক। এমনিতে এতক্ষণ ফোনে কারো সাথে কথা বলা অসম্ভব। অথচ ঊর্মির সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায়। ভালো লাগা বাড়তেই থাকে। কথার ডালি ফুরোয়না।

"আচ্ছা শোন...আমি না আসবোনা।" ঊর্মি বলে।
"মানে?"....ধাক্কার মত লাগে অর্ক’র। "তুমি কি জানোনা আমি অপেক্ষা করছি?!" অভিমান নিয়ে মনে মনে বলে অর্ক।
"আসলে আমার মনে হচ্ছে তোমাকে সি-অফ করতে আসলে আমার বেশি খারাপ লাগবে। খালি খালি লাগবে।"
"হুম"। ছোট্ট করে বলে অর্ক। "আর তোমাকে না দেখলে যে আমার ভেতরটা খালি হয়ে যাবে। আমার বুকের নদীতে খরা পড়বে। ঢেউ হবেনা সে নদীতে আগামী সাত-টা দিন"...অর্ক মনে মনে বলে।

ঊর্মি চুপিচুপি হাসে। বোঝে ও, অর্ক চাচ্ছে ও যাক। কিন্তু মুখ ফুটে একবারও বলবেনা ছেলেটা "তুমি আসো, তোমাকে আসতেই হবে।" আশ্চর্য! ভালোবাসতে পারবে কিন্তু বলতে পারবেনা। শুনতে চায় ঊর্মি অর্ক’র এমন পাগল করা ডাক।

হঠাৎ ঘড়ি দেখে ঊর্মি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে "ফোন রাখো। আমি বের হবো।"
"কোথায় যাবে?"
"দেখি.....মন কোথায় নিয়ে যায়" বলে খিলখিল করে হেসে ওঠে।

ওর এই হাসিতেই অর্ক বুঝে যায় ঊর্মি আসছে। মনটা আবার কাশফুলের স্নিগ্ধতায় ভরে ওঠে। কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনে অর্ক "আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম।" শ্রীকান্তের কণ্ঠে এই গান শুনলে মনে হয় গানটা শুধুই ঊর্মির জন্যে।

অর্ক কলাবাগান পৌঁছে যায় সোয়া সাতটায়। ফোন দেয় ঊর্মিকে। জ্যামে পড়েছে। অর্ক পৌঁছে গেছে শুনে ঊর্মি অস্থির হয়। ফোনে কথা বলতে গিয়েই দেরী হয়ে গেল। ঊর্মি নিজেও বেশিক্ষণ ফোনে কথা বলতে পারেনা। কিন্তু অর্ক’র সাথে কোন সমস্যাই হয়না। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলার পরেও মনে হয় অনেক কথা বাকী রয়ে গেলো। রিক্সা ছেড়ে দিয়ে প্রায় দৌঁড়াতে শুরু করে ঊর্মি। ১৫ মিনিটের মাথায় পৌঁছে যায়। অর্ক রাস্তার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে গিয়ে পেছন থেকে "হাহ্" শব্দ করে হালকা ধাক্কা দেয় অর্ককে। অর্ক একটুও চমকায়না দেখে গাল ফুলানোর ভঙ্গী করে ঊর্মি।

"চমকালেনা কেন? তুমি তো দেখোনি আমাকে।"
"কে বলে দেখিনি? তুমি আমার আশে-পাশে থাকলেই আমি টের পাই।" দুষ্টু হাসি অর্ক’র ঠোঁটে।
"কচু"। "তোমার গাড়ী এক ঘন্টা লেট করবে তো?"
"ওমা! সেকি! লেট কেন করবে?"
"বাহ্! আধ ঘন্টা তোমার সাথে থেকে পোষাবে?"
"হাহাহাহাহাহাহাহা"। শব্দ করে হাসে অর্ক। খুব ভালো লাগছে ওর। মেয়েটা ওকে পাগলের মত ভালোবাসে। বোঝে অর্ক। ও নিজেও কি ভালোবাসেনা!!! ঊর্মির মাঝেই যে ওর বসতি!! অর্ক’র হাসি ঝনঝন করে বাজতে থাকে ঊর্মির বুকের মধ্যে। মন খারাপ হতে থাকে।

যথাসময়ে গাড়ী চলে আসে। অর্ক গাড়ীতে উঠে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। ঊর্মি চুপচাপ দাঁড়িয়ে। খুব একটা তাকাতে পারেনা অর্ক’র দিকে। ওর চোখ উপচে পড়ছে অশ্রুজলে। সেটা দেখাতে চায়না অর্ক’কে। “আবার কবে দেখবো তোমাকে সোনা?” মনে মনে বলে।

"কিছু কি বাকী রয়ে গেল বলা!" ঊর্মির মধ্যে অস্থিরতাটা আবার ফিরে আসে। একদম শেষ সময়ে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নেয় অর্ককে। যেন মুখটা গেঁথে নেয় হৃদয়ে।

আনমনে হাঁটতে থাকে ঊর্মি আর ম্যাসেজ লিখতে থাকে। ম্যাসেজ লিখতে লিখতেই রাস্তা পার হতে থাকে। "Have a safe journey." কথাটা লিখে Send button প্রেস করে বাঁ-দিকে চোখ পড়তে না পড়তেই হেডলাইট এর চোখ ধাঁধানো আলোয় ওর চোখদুটো ঝলসে যায়; পরমুহূর্তেই সবকিছু অন্ধকার।

ঊর্মি’র ম্যাসেজ পেয়ে অর্ক’র মনে হয় আরো অনেক কিছুই লিখতে চেয়েছিলো মেয়েটা। অর্ক ম্যাসেজ লেখে ঊর্মিকে "তুমি সন্ধ্যারও মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা; আমি আপন মনেরও মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা"। ম্যাসেজটা লিখে ও নিজেই একটু লজ্জা পায়। এভাবে ঊর্মিকে ও কখনো বলেনা। আজ কেন বলতে ইচ্ছে করছে? আর কিছু না ভেবে ম্যাসেজটা পাঠিয়ে দেয়। অনেক্ষণ কোন রিপ্লাই না পেয়ে অর্ক ভাবে হয়তো বাসায় পৌঁছে গেছে। ফ্রেশ হয়ে তারপর রিপ্লাই করবে। অপেক্ষা করতে থাকে অর্ক। পরপর আরো কয়েকটা এসএমএস করে, যা ওর স্বভাব-বিরুদ্ধ। একটার রিপ্লাই না পেলে অর্ক কখনোই সেকেন্ড এসএমএস করবেনা। কিন্তু আজ কেমন করছে মনটা। অর্ক বোঝেনা ওর ভেতরের অস্থিরতার কারণ। বিষণ্ন লাগতে শুরু করে। ইচ্ছে করে ঢাকা ফিরে যেতে.....ইচ্ছে করে ঊর্মি’র কাছে যেতে। বাস শহর ছেড়েছে। আজ আকাশে অজস্র তারা। হয়তো প্রতিদিনই থাকে। শহুরে আলোর ভিড়ে এই স্নিগ্ধ আলো নজরে আসেনা। "তুমি সন্ধ্যারও মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা; আমি আপন মনেরও মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা; তুমি আমারি তুমি আমারি...মম শূন্য গগন বিহারী"........শ্রীকান্তের কণ্ঠ বাজতে থাকে অর্ক’র হেডফোনে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:০৩
৪৯টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×