গ্রামীনফোন কাস্টমারকেয়ার, সেকেন্ড টোকেনটা ফেলে থার্ড টোকেনটা নিয়ে এসে বসলাম আমি, আমার ছেলেমানুষি কর্মকান্ডে গার্ডটা কিছুটা বিরক্ত, বিরক্ত হলেও কিছু করার নাই। একটা পারটিকুলার কাউন্টারে যেতেই হবে আমাকে.. টোকেনটা উল্টিয়ে নম্বরটা দেখে নিলাম, টোকেন নম্বর ৫০।
-৫০ হাজার, ৫০ হাজার টাকার মত আছে আমাদের আকাউন্টে। ফ্লাশব্যাকের মত সকালে বলা শুভ্রর কথা গুলো মনে পরে গেল আমার।
-শ্রাবনের বিয়ে হল একবছর হয়ে গেছে শুভ্র, এখন বাদ দে, লাইফটা কারো জন্য থেমে থাকে না।
-শুভ্র হাসল, হেসে সিগনেচার করা শুরু করল চেকবইটাতে, শ্রাবন আর শুভ্রর জয়েন্ট একাউন্ট ছিল একটা, কথা ছিল সুখের দিনগুলোতে কিছু টাকা জমা হবে একাউন্টে, সুখের দিনগুলো চলে যায়, স্মৃতিগুলো থেকে যায়... কি মনে করে জমা স্লিপগুলো উল্টানো শুরু করলাম আমি। প্রতিটা জমা স্লিপের পিছনে কিছু কথা লেখা-
২৩ জুন -তোমার engagement উপলক্ষে ৫০০ টাকা জমা দিলাম, মাসের শেষ, তাই বেশি কিছু দিতে পারলাম না।
২৫ জুন- আজ তোমার বিয়ে, ভালো থেকে শ্রাবন।
১৪ই আগস্ট- তোমার জন্মদিন, ৬য় বছরে প্রথম তোমাকে উইশ করতে পারলাম না, মোবাইল বন্ধ, ফেসবুক একাউন্টটাও ডিএক্টিভ করা. হ্যাপি বার্থডে শ্রাবন।
৬ই জানুয়ারী- তোমার নতুন ফেসবুক প্রফাইল খুজে পেলাম আজকে, তোমার হাসবেন্ডের টাইটেলের সাথে ম্যাচ করে নাম রাখা প্রফাইলের, হাসবেন্ডের সাথে তোলা সেলফিগুলো দেখেও ভালো লাগল। ভালই আছ তুমি..
-তুই এখনও টাকা জমা দিস একাউন্টে? শ্রাবনের সইগচেনার ছাড়া এই টাকা তুলতে পারবি না এইটা জেনেও একাউন্ট টাকা জমা দিস তুই?
- শুভ্র আবারও হাসে, হেসে কিছু না বলে চুপ করে থাকল।
- এখনই যখন ভালবাসতি বিয়ে কেন করলি না শ্রাবনকে? ও তোকে ছেড়ে যায় নি। কেন ফিরায় দিলি ওরে?
- আব্বু মানে নাই, কিছুতেই মানে নাই, চাইলে বিয়ে করতে পারতাম হয়ত, বাসা থেকে বের হয়ে যেতে হত.. ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলে আমি, অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়, ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দিতে হয়..পালিয়ে বিয়ে করলে ছোট বোনটাকে বিয়ে দিতে প্রবলেম হত। সাহস করতে পারি নাই আমি। জানিস শ্রাবনের খুব শখ ছিল একটা পার্লের নেকলেসের, ৫০ হাজার টাকায় নেকলেস হবে কিনা আমি জানি না, শুধু জানি ও এখন আমাকে চিটার ভাবে, বাস্টার্ড ভাবে, কাওয়ার্ড ভাবে..
টোকেন নম্বর ৫০, উঠে দাড়ালাম আমি। হ্যা এই কাউন্টারেই যেতে হবে আমাকে।
গ্রামীনফোনে শ্রাবনের ডেস্কে রেখে আসা চেকবইটাতে ও সিগনেচার করেছিল কিনা আমার জানা নেই, জানা নেই জমা স্লিপগুলো ও একবার পড়ে দেখেছিল কিনা, আমি শুধু জানি বাস্টার্ড শুভ্রর ডেস্কে একটা ছোট মাটির ব্যাংক আছে, শুভ্রর ভাষায় দু:খ ব্যাংক। প্রতিদিন রাতে এই দু:খ ব্যাংকে কিছু চিরকুট জমা পরে, এই চিরকুটের কথা শ্রাবনরা জানে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৬