ডিবি কর্মকর্তারা দাবি করেন, জিজ্ঞাসাবাদে মেজবাহ বলেছেন, গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশে আসা লোকজনকে খাবার সরবরাহ করায় একটি হলের মসজিদের ইমামকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছিলেন দীপ ও তাঁর বন্ধুরা। এ জন্যই তিনি দীপের ওপর হামলা চালান।
উল্লেখ্য, গত ৫ এপ্রিল রাতে শহীদ স্মৃতি হলের মসজিদের ইমাম হলের বাবুর্চিদের দিয়ে খিচুড়ি রান্না করিয়ে মতিঝিলে অবস্থানরত হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের জন্য পাঠান। তখন দীপসহ কয়েক শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করেছিলেন। ওই রাতেই শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক দেলোয়ার হোসেনকে জানান। পরে ইমাম আব্দুল আলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
বুয়েট ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আমিনুল হক পলাশ বলেন, “ইমাম বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি ফেসবুক গ্রুপ ‘বুয়েটিয়ান’ এ কিছু শিক্ষার্থী দীপকে নিয়ে আজেবাজে লেখালেখি শুরু করে। ইমামের বরখাস্তের পিছনে দীপের হাত রয়েছে বলেও প্রচার চালাতে থাকে তারা। এ সময় অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে দীপকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। এরই এক পর্যায়ে গত ৯ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে নজরুল ইসলাম হলের ছাত্র দীপকে হলে ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে মাথায় ও পিঠে গুরুতর জখম হন দীপ। তখন তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর এস এম নজরুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, আরিফের মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। একজন শিক্ষার্থীকে আরেকজন শিক্ষার্থীকে এভাবে আঘাত করে মেরে ফেলতে পারে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আরিফের উন্নত চিকিত্সার জন্য তাঁকে ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং সে অনুসারে কাজও এগিয়েছিল। কিন্তু সকল রাজনীতির মাথায় থুথু মেরে আজ ভোর রাতেই দীপ চলে গেলেন অজানার দেশে।
স্কয়ার হাসপাতাল থেকে দীপের লাশ প্রথমে বুয়েট ক্যাম্পাসে নেয়া হয়। বেলা ১০টার দিকে এম এ রশিদ ভবনের সামনে তার প্রথম জানাযা হয়। জানাযায় বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দীপের বাবা ও ভাইসহ আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। জানাযার পর তার লাশ গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে পাঠানো হয়। পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার তারাবুনিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে দীপকে দাফন করা হবে।
বুয়েটের উপাচার্য রফেসর এস এম নজরুল ইসলাম আরও জানান, বুয়েটের নিজস্ব তদন্তেও দীপকে কুপিয়ে আঘাত করার জন্য মেজবাহকে দায়ী করা হয়। তদন্তের পর মেজবাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। এছাড়া ওই মসজিদের ইমামকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওদিকে মেজবার ভগ্নিপতি আশরাফুজ্জামান প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, তাঁরা আপাতত মেজবার মামলাটি নিয়ে আইনি লড়াইয়ে যাবেন না। তাঁদের আশঙ্কা, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের আইনি লড়াইয়ে গেলে আরও সমস্যায় পড়তে হবে। মেজবাহ বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন। আশরাফুজ্জামান বলেন, মেজবাহ এ ঘটনায় দুঃখিত। তবে তিনি (মেজবাহ) মনে করেন, দীপকে কুপিয়ে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি তাঁর (দীপের) প্রাপ্য ছিল।
বুয়েটে দোয়া ও মিলাদ:
আরিফ রায়হান দীপের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আগামী ৫ জুলাই ২০১৩, শুক্রবার বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ আসর দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
দীপের বাড়ি আমার ইউনিয়নে পাশের গ্রামে:
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামে আরিফ রায়হান দীপের গ্রামের বাড়ি। মাঝখানে মরা বলেশ্বর। ওপারে আমার বাড়ি। দীপের বাবার নাম আজম আলী। মায়ের নাম স্বপ্না বেগম। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আমার এলাকার অনেকেই বুয়েট থেকে পাশ করেছে। বুয়েটে একটা ছেলেকে পড়ানো যে কি পরিমাণ পারিবারিক ছাড় দিয়ে মা-বাবাকে ছেলের পড়ার খরচ যোগাড় করতে হয়, তা যাদের ছেলেমেয়েরা বুয়েটে না পড়ে তারা কোনোদিন বুঝবে না। গ্রামের একটি ছেলে বুয়েটে চাঞ্চ পাওয়া মানে শহরের হাজার হাজার সুবিধাভোগী ছাত্রছাত্রীদের মেধার জোড়ে হারিয়ে তবেই সেই সোনার হরিণ মেলে। দীপ তার মা-বাবা-র ইচ্ছে পূরণ করে সেই সোনার হরিণ ছিনিয়ে নিতে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল। আর আজ সেই দীপ নিভে গেল! এটা যে কি পরিমাণ কষ্টের আর বেদনার তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। মেজবাহ নামের যে ছেলেটি দীপকে কুপিয়েছিল, সেও বুয়েটের ছাত্র। তবে মৌলবাদীদের মন্ত্রে বখাটে এক অন্ধ। মেজবাহ বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও জাতে অন্ধ এক মৌলবাদী পিচাশ। ডিবি পুলিশের কাছে তার স্বীকারোক্তি থেকেই বোঝা যায়, আরেকজন মেধাবী ছাত্রকে কুপিয়ে সে মোটেও অনুতপ্ত নয়। কারণ, ধর্মের নামে রাজনীতির যে ভুল দর্শনে মেজবাহ অন্ধ সেই দর্শনের জোড়েই সে এখনো মনে করছে, যা করেছে ঠিক করেছে। মেজবাহ'র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। দ্রুত আদালতে এই নরঘাতকের যতো দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে ততো দ্রুত দীপের আত্মা শান্তি পাবে।
বাংলাদেশে রাজনীতি কোন পথে?
আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় এসেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে এই কথা বলে। কিন্তু তারা নানান তালবাহানা করে বিচার কার্য ঝোলাতে ঝোলাতে সাড়ে চার বছর পার করেছে। অবস্থা দেখে মনে হয় তারা আগামী নির্বাচনেও একই ধুয়া তুলে ভোট চাইতে যাবেন। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি কেন তারা বন্ধ করে না? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে তামাশা করা হচ্ছে? চার সিটি কর্পোরেশানের নির্বাচনে হারার পরেও আওয়ামী লীগের হুশ হয় নি। মানুষের বিবেকের যখন মৃত্যু হয় তখন নাকি তাদের কোনো হুশই থাকে না। বাংলাদেশের রাজনীতির বিবেকরে অনেক আগেই মৃত্যু ঘটেছে। গরিব মেধাবী ছাত্রদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে ক্ষমতায় যাওয়ার পুরানো থিউরি আর কাজ দেবে না। ধর্ম নিয়ে খেলাও কোন শুভ ফল বয়ে আনবে না।
শাহবাগের গণ-জাগরণ বিপ্লবের বিরুদ্ধে যখন জামায়াত শিবিরের ছদ্মনামে হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় সমাবেশ করতে আসল, তখন আওয়ামী লীগ বড় ধার্মিক সেই তামাশা প্রমাণ করতে অনেক নাটক করলো। ব্লগারদের আটক করলো। গণ-জাগরণ মঞ্চ ভেঙে দিল। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের কোনো রোমাও ছিড়তে পারে নাই। চার সিটির নির্বাচনে এক হেফাজত মাঠে নেমেই এতো উন্নয়নের জোয়ার সব ভাসিয়ে দিল। এখন গাজীপুরের নির্বাচন ৬ জুলাই। এক হেফাজতকে দলে ভেড়াতে আওয়ামী লীগের রাতের ঘুম হারাম এখন। আরে ভাই ভুল রাজনীতি করলে আরো অনেক পরাজয় অপেক্ষা করছে সামনে।
বিএনপি নিজেদের দুর্বলতা আড়াল করতে এতোদিন সরকার পতন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, তারেক জিয়ার কীর্তি, ইসলাম বাঁচাও, দেশ বাঁচাও অনেক প্রলাপ বকেছে। মানুষ বিএনপি'র আসল চেহারা চেনে। মানুষ সেই দুর্বিসহ শোষণ-শাসনের হাত থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু নরবরে মন্ত্রীসভা, সোনালী ব্যাংক কেলেংকারী, হল মার্ক কেলেংকারী, পদ্ম সেতু কেলেংকারী, রেলওয়ের কালো বিড়াল, ডেসটিনি মাল্টি বিসিনেস, প্রকাশ্যে বিশ্বজিৎ হত্যা, রানা প্লাজা ধ্বস, ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, দখল, খুন, ধর্ষণ, হামলা, দলীয় কোন্দল ইত্যাদি কয়েক শো কেলেংকারী যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বুড়িগঙ্গায় ডোবাবে, সেই সব কেলেংকারী কিভাবে চাপা দেবে তারা? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রেখে জনগণকে কি ভোদাই মনে করে আওয়ামী লীগ? জনগণের ভোট কি বাংলা লিংক দামে পাইছেন আপনারা?
বিএনপি'র সাংগঠিনক অবস্থা জাতীয় নির্বাচন মোকাবেলার মতো ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগের এতো এতো ব্যর্থতাই বিএনপি'র জন্যে সাপে-বর। আপনারা এখন আবার টিফকা চুক্তি করবেন আম জনতারে না জানিয়ে। সুন্দরবন ধ্বংস করতে ভারতের কাছে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবেন। বাংলাদেশটাকে কি তামাশা পাইছেন? কোই কোথাও তো শুনি না হরতালে বা হেফাজতের হামলায় অমুক মন্ত্রীর ছেলে মারা গেছে? তমুক বিএনপি নেতার ছেলে মারা গেছে? জয়ের উপর হামলঅ হয়েছে বা তারেক কোকোকে জনতা পিটিয়েছে? সাধারণ গরিব মানুষের ছেলেদের দিয়ে আর কতো আপনারা লাশের নষ্ট-ভ্রষ্ট রাজনীতি করবেন? আপনারা গ্রামের মেম্বার হবার যোগ্যতা নেই এমন লোককে মন্ত্রী বানাইছেন। দেশের ভাবমূর্তি তারা কিভাবে ভালো করবে? তাদের প্রথম যে যোগ্যতা দরকার, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দরকার, সেটাই তো নেই। ছাগল দিয়ে তো আর হাল চাষ হয় না রে ভাই। এখন অপেক্ষা এই নষ্ট রাজনীতির আম ছালা দুটোই যাওয়ার।
একটা ছোট্ট পরামর্শ:
সংবিধান সংশোধন করে দুইজন প্রধানমন্ত্রী বানানোর তকমা রেডি করেন। ছয় বছর পর পর সাধারণ নির্বাচন করার আই বানান। একজন প্রধানমন্ত্রী তিন বছরের বেশি দেশ শাসন করতে পারবে না এমন করুন। তাইলে আপনারা ভাগাভাগি করে ছয় বছর অন্তঃত নিশ্চিন্তে লুটপাট করতে পারবেন। জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা এখন আপনারা দুই রাজনৈতিক শিয়াল। হরতাল নিয়ে আপনারা সকালে যা বলেন বিকালে তা ভুলে যান। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারলে আরো বেশি হরতাল হবে এ বিষয়ে এখনই গ্রান্টি দেওয়া যায়।
আপনারা চুরি চামারি করেন। লুটপাট করেন। নিজেরা নিজেরা কামড়াকামড়ি করেন। কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু আপনারা প্রকাশ্যে জনগণ নিয়ে মিথ্যাচার করেন। বলেন, এটা জনগণে চায়। তামাশা পাইছেন? জনগণ শুধু শান্তি চায়। আর নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই যাচাই বাছাই করতে চায়। আপনারা পরিবেশটা আর নষ্ট কইরেন না। দোহাই আপনাদের। আর শত শত মায়ের কোল খালি করবেন না। একজন দীপ যে তার মায়ের কতো আদরের ধন ছিল তা আপনারা পুত্র না হারালে বুঝবেন না। বাংলাদেশে নষ্ট রাজনীতির আরেক বলি হল আমাদের গ্রামের ছেলে দীপের নিভে যাওয়া। এটা মেনে নেওয়া যায় না। দীপ হত্যার বিচার যে আগামী নির্বাচনের আড়ালে হারিয়ে যাবে তা এখনই বলে দেওয়া যায়। আপনারা বিচার টাও করতে পারেন না। ধিক আপনাদের নষ্ট রাজনীতিকে। শত ধিক আপনাদের রাজনীতি ব্যবসাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




