সরকার বাহাদুরের হাতে আছে তথ্য প্রযুত্তি আইন। কথা একটু ত্যারা ব্যাকা হলেই সেই আইনে হয়ে যাবে কঠিন শাস্তি!! কিন্তু লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার এই বাণিজ্যিক হিরিকে আমার কোনো সায় নেই। আসাদুজ্জামান নূর সাহেবরা অনেক বড় সমাজ সচেতন সংস্কৃতসেবী। ওনারা চেতনা নিয়ে ব্যবসা করতে ভারী পারদর্শী। কিন্তু তাই বলে একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়েও ব্যবসায় নামতে হবে? আর সেই হুজুগে সরকার বাহাদুরও সায় দেবে এটা ভেবে মনে হচ্ছে, আসলে এই দেশে ব্যবসা আর হুজুগ এই দুইটা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলেই আপনার বাড়ি গাড়ি বিলাসী জীবনযাপনে আর কোনো সমস্যা হবার কথা নয়।
গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের জন্য কারা এই বিদেশি ভূতের আমদানি করল তা খতিয়ে দেখার সময় এখন। গিনেস একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। তাদের নিশ্চয়ই বিমানের আসা যাওয়ার টিকিট, পাঁচ তারকা হোটেলে বিনা পয়সায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি এই আয়োজকদের করতে হয়েছে। কিছু নামি-দামি তারকা শিল্পীদের জন্য একই রঙের পোষাক বানাতে হয়েছে। কিছু চা-কফি-হুইস্কি-খিচুরির পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে। কিছু লোককে কিছু নগদ নারায়নও দিতে হয়েছে। ব্যানার ফ্যাস্টুন টুপি পতাকা বানাতে কিছু খরচ গুনতে হয়েছে। নষ্ট রেডিওর মত কিছু নষ্ট সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করতে হয়েছে। মঞ্চ সায়মানা বানাতে কিছু খরচ গেছে। আয়োজকদের কিছু উপরি পকেট খরচের ব্যাপার আছে। সব মিলিয়ে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের ব্যবসাটা নূর সাহেব বেশ ভালোয় ভালোয় করতে পারলেন। এমন চেতনাধারী একজন মানুষকে সংস্কৃত মন্ত্রী হিসেবে পেয়ে আজ থেকে জাতির গর্ব করা উচিত।
ইসলামী ব্যাংক থেকে মাত্র তিন কোটি টাকা নেওয়ার ব্যাপারটা না হয় নাইবা বললাম। এমন হুজুগে একটি রেকর্ডের পেছনে যখন একটি রাষ্ট্রও সরাসরি অংশগ্রহন করে, তখন বুঝতে হবে এই রাষ্ট্রের কোথাও কোনো নাটবল্টু একটু ঢিলা আছে। যে রাষ্ট্রে এখনও প্রায় তিন কোটি মানুষ দু'বেলা খাবার পায় না। যে রাষ্ট্রে এখনও প্রায় লাখ লাখ লোক বস্তিতে নিপিড়িত জীবনযাপন করে, যে রাষ্ট্রে এখনও প্রায় সারা দেশের যাতায়াত ব্যবস্থার অবস্থা ভঙ্গুর, যে রাষ্ট্রের রাজধানী ঢাকায় এখনও কেবল যানজটের কারণে হাজার হাজার শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়, সেই রাষ্ট্র কিনা গিনেস বুকে নাম লেখাতে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাইল! আহা দেখার মত দৃশ্য বটে।
গোটা মাস প্রচার বিজ্ঞাপন করা হল ২৬শে মার্চ সকাল ১১টায় লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে। এত বড় একটা অনুষ্ঠান, সেই অনুষ্ঠানের সময় জ্ঞান কত স্লো রে জব্বার!!! মাত্র ২০ মিনিট স্যার!! সঙ্গে ছাতা নেওয়া যাবে। বেশ ভালো কথা। এইবার ছাতা বন্ধ করার জন্য মহান ঘোষকদের সে কী আকুতি, না দেখলে বোঝানো যাবে না। ছোটবেলা থেকে আমরা রোজ স্কুলে ক্লাশ শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত গাইতাম। নড়াচড়া পর্যন্ত করা যেত না। আর এরা দেখি জাতীয় পতাকা নাড়িয়ে পারলে নৃত্য করে!!! একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় কী কী করা যাবে না, এই বোধটুকু এখনো যারা শিখতে পারেনি, তাদের নিয়ে মহান নূর সাহেবরা একটা মস্তবড় রেকর্ড গড়লেন। আহা মরি মরি।
বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর প্রধান কাজ হল খারাপ মালকেও ভালো বলে প্রচার করে লোকজনকে তা ধরিয়ে দেবার একটা প্রাণান্ত চেষ্টা। সোজা বাংলায় যাকে বলে খপ্পরি। ধাপ্পাবাজি করেই এরা পরের টাকায় পোদ্দারি দেখায়। কিন্তু একটি দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর কিছু বিষয় থাকে যেমন মানচিত্র, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় দিবস, যেগুলো সেই দেশের মানুষ মাত্রই অন্তরে তা সগর্বে লালন করেন। তা নিয়ে যখন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ব্যবসা করার চিন্তা করেন, তখন বোঝা যায় এরা আসলে কারা!!! এরা আসলে চেতনার নামে একদল মুতসুদ্দি। ধর্ম ব্যবসায়ীদের চেয়ে এরা কোনো অংশে কম নয়। চেতনা ব্যবসায় এরা হাত পাকিয়ে এখন জাতীয় বিষয় নিয়ে ব্যবসা করার নতুন আইডিয়া বের করছে।
এদের ঘোমটার আড়ালের আসল চেহারা বোঝার কোনো উপায় নেই। কারণ এরা বড়ই ধুরন্দর টাইপের। এদের কথাবার্তায় কারো বোঝার উপায় নেই এরা কিসের মধ্যে কিসের ব্যবসা খুঁজে পান।
মাত্র একশো কোটি টাকা খরচ করে কে কত ব্যবসা করলরে কামাইল্যা!!! হেইডা মুই কইতে পারতাম না। মুই তো লাইনে খাঁড়ানোর আগেই কারবার শ্যাষ স্যার!! কস কি হারামজাদা, তুই না আজ ছুটি নিছিলি? স্যার, ছোডো মুহে এট্টা বড় কতা কমু? ক, কি কইতে চাস? স্যার, সোনার বাংলা নিয়ে ব্যবসা কিন্তু অনেক দিন ধইরাই চলতাছে। তয় মাইনষে খালি বড়োডা নিয়েই প্যাচাল পারে। হ বুঝছি, এখন তুই কামে হাত লাগা। আইজ মোর চালানই উঠতো না...
লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত!!! চালানই উঠতো না!!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?
অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।

১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।