somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাইগার্সদের ৭ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়!!!

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যখন বাসায় ফিরি তখন জয়ের জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৬৬ বলে ৮০ রান। হাতে ছিল ৮ ইউকেট। বন্ধুবর মঈনুল বিপ্লব ছোট্ট করে কমেন্ট দিলো, ধরা খাইতাছো নিকি!!! জবাবে আমি কনফিডেন্টলি বললাম, চান্স ৫০ ফিফটি। খেয়াল করলাম, ৪০তম ওভারে তাইজুল ইসলাম মাত্র ১টি রান দিয়েছিলেন। ওটাই ম্যাচ প্রেডিক্ট করতে আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছিল। টিএসসিতে বসে ম্যাচ হেরে যাচ্ছি, এমন একটি আশংকা নিয়েই শেষের ওভারগুলো বাসায় দেখব বলে চলে আসি।

৪১তম ওভারে ম্যাচের অবস্থা দাঁড়ালো জয়ের জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন ৬০ বলে ৭৭ রান। কিন্তু শাকিব আল হাসানের এই ওভারটি আসলে আজকের ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। ৪১তম ওভারে শাকিব মাত্র ৩ রান দিয়ে রহমত শাহ'র মূল্যবান ইউকেটটি তুলে নিলেন। মুশফিকের হাতে স্ট্যাম্প হবার আগে রহমত শাহ ৯৩ বলে করেছিলেন মূল্যবান ৭১টি রান।

৪২তম ওভারে তাইজুল ৮ রান দিলে জয়ের জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন পড়ে ৪৮ বলে ৬৬ রান। হাতে তখন ৭টি ইউকেট। ক্রিজে তখন অপর সেট ব্যাটসম্যান হাসমতুল্লাহ শহীদি। তাসকিন ৪৩তম ওভারে দিলেন ৯ রান। গ্যালারির দর্শকরা কিছুটা চিন্তিত। কিন্তু পরের ওভারে তাইজুল আবার দারুণভাবে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনলেন। ৪৪তম ওভারে তাইজুল ৮ রান দিলেও হাসমতুল্লাহ শহীদির মূল্যবান উইকেটটি নিলেন। হাসমতুল্লাহ শহীদি ১১০ বলে ৭২ রানের দারুণ একটি ফাইটিং ইনিংস খেলেছেন।

ম্যাচের ভাগ্য তখনো পেন্ডুলামের মত দুলছিল। কারণ মোহাম্মদ নবি তখনো দারুণভাবে ব্যাট করে আফগানদের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। ৪৪ ওভার শেষে আফগানদের তখন প্রয়োজন ৩৬ বলে ৪৯ রান। হাতে ৬টি উইকেট। ক্রিজে তখন মোহাম্মদ নবি। ৪৫তম ওভারে রুবেল দিলেন ১১ রান। আফগানদের স্কোর তখন ৪৫ ওভার শেষে ২২৮। হাতে তখনো ৪ উইকেট। ৪৬তম ওভারে ক্যাপ্টেন মাশরাফি আঘাত হানলেন শত্রু শিবিরে। আফগানদের স্কোর দাঁড়ালো ৪৬ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান। ২৪ বলে দরকার ২৮ রান। ম্যাচে তখন চরম উক্তেজনা। যে কেউ এই ম্যাচ জিতবে এমন অবস্থা।

এই সময় আবারো আফগানদের রানের টুটি চেপে ধরলেন শাকিব। শাকিব নিচের দশম ওভারে মাত্র ১টি রান দিয়ে ম্যাচে ফেরালেন বাংলাদেশকে। তখন থেকে বাংলাদেশ দল আবারো উজ্জীবিত। এরপরের ওভারে অর্থ্যাৎ ৪৮তম ওভারে তাসকিন তুলে নিলেন সেই ঐতিহাসিক জোড়া উইকেট। ম্যাচ ঝুকে গেল টাইগার্সদের দিকে। ৪৮ ওভার শেষে আফগানদের স্কোর ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন ১২ বলে ২১ রান। ৪৯তম ওভারে রুবেল শেষ বলে রশিদ খানের উইকেট তুলে নিলে আফগানদের অবস্থান দাঁড়ায় ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৩ রান।

অর্থ্যাৎ জয়ের জন্য শেষ ৬টি বলে প্রয়োজন ১৩ রান। বাংলাদেশের তখন প্রয়োজন শেষ দুটি উইকেট। ৫০তম ওভার করতে আসলেন তাসকিন। প্রথম বলে মিরওয়াইজ আশরাফ নিলেন ২ রান। আফগানদের তখন প্রয়োজন ৫ বলে ১১ রান। দ্বিতীয় বলেই তাসকিন এলবিডব্লিউ করে দিলেন মিরওয়াইজ আশরাফকে। আফগানদের দরকার আরো ১১টি রান। টাইগার্সদের দরকার মাত্র একটি উইকেট।

তাসকিনের তৃতীয় বলে লেগ বাই ১ রান। চতুর্থ বলে দৌলত জর্ডান নিলেন ২টি রান। আফগানদের প্রয়োজন ২ বলে ৮ রান। তাসকিন ৫ম বলটি ডট দিলেন। এবার আফগানদের দরকার ১ বলে ৮ রান। বাংলাদেশের দরকার একটি উইকেট অথবা একটি মাত্র ভালো বল। শেষ পর্যন্ত তাসকিনের শেষ বলে দৌলত জর্ডান শাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিলে অলআউট হয় আফগানরা। বাংলাদেশে জিতে যায় ৭ রানে।
ঠিক দশ মাস পর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমে টাইগার্সরা এক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ পর্যন্ত আফগানদের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে নিয়েই বুক উঁচিয়ে মাঠ ছাড়েন।

এর আর টসে জিতে ক্যাপ্টেন মাশরাফি প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। আকাশের অবস্থা বিবেচনা করেই ব্যাট করার সিদ্ধান্ত। কারণ আকাশে বৃষ্টির খুব ভালো আলামত ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ ৩০০ রানের মত আশা জাগিয়ে শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৮ রান তুলেছে এবং ৭টি উইকেট হারিয়ে আফগানদের মত ইনিংসের শেষ বলে অলআউট হয়। তার আগে তামিম ও মাহমুদুল্লাহ'র হাফ সেঞ্চুরি এবং শাকিব ও ইমরুলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটিংয়ের উপর ভর করে ২৬৫ রানের একটি ফাইটিং স্কোর করতে সক্ষম হয়। যদিও আমি আজকে ২৮০ রানের প্রেডিক্ট করেছিলাম। মনে হচ্ছিল টাইগার্সরা অন্তত ১৫টি রান কম করতে পেরেছে। আজকের ম্যাচেও সেই ১৫ রানের কারণেই এত এত টান টান উক্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

আগামী মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে নামার আগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তিনটি ওডিআই ও দুটি টেস্ট খেলবে। যার প্রথমটি আজ ৭ রানে জিতে নিল টাইগার্সরা। দশ মাস পরে ওডিআইতে মাঠে নেমে আবারো দর্শকদের মান রক্ষা এবং নিজেদের দারুণভাবে ম্যাচে ফেরার যে দৃশ্যায়ন আজ টাইগার্সরা করলেন, তাতে টাইগার্সদের জন্য হৃদয় নিড়ানো অভিনন্দন।

আজ সৌম্য সরকার একটি বল খেলে শূন্য রানে আউট হবার সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১ রান। সেই তলানি থেকে তামিম ও ইমরুল দারুণ একটি পার্টনারশিপ দিয়ে দলকে তুলে আনেন। তামিম একটু ছটফট না করলে আজকে সেঞ্চুরিটা আসতে পারতো। দলীয় সর্বোচ্চ ৮০ রান এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে। কিন্তু তামিম বল খরচ করেছেন অনেক। যা তামিমের স্বাভাবিক খেলার সঙ্গে মোটেও যায় না। ৯৮ বলে তামিম করেছেন ৮০ রান। মাহমুদুল্লাহও বলের চেয়ে রান কম করেছেন। দলীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২ রান করতে মাহমুদুল্লাহর লেগেছে ৭৪ বল। শাকিব ৪০ বলে করেছেন ৪৮ রান। এছাড়া ইমরুল কায়েস করেছেন ৫৩ বলে ৩৭ রান। চৌকশ ব্যাট বলের জন্য ম্যাচ সেরা শাকিব।

আফগানদের পক্ষে দৌলত জর্ডান ছিলেন সবচেয়ে সফল বোলার। তিনি ১০ ওভারে ৭৩ রান দিলেও নিয়েছেন ৪টি উইকেট। আফগান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বল করেছে রশিদ খান। দারুণসব গুগলিতে টাইগার্স ব্যাটসম্যানদের নাকানিচুবানি খাইয়েছেন এই তরুণ আফগান লেগ স্পিনার। ১০ ওভারে ৩৭ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। এরপর ভালো বল করেছেন মোহাম্মদ নবি। নবি ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে নিয়েছেন ২টি উইকেট। আজকের ম্যাচে আফগানদের ডেব্যু তরুণ বোলার নাভিন-উল হক মাত্র একটি উইকেট দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ান শুরু করলেন। ১০ ওভারে ৬২ রান দিয়ে নিয়েছেন মাশরাফি'র উইকেটটি। এটি নাভিনের ডেব্যু উইকেট।

বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন আইসিসি'র নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে নেমে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরেছেন। ১০ ওভার বল করে ৫৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। মূলত তাসকিনের দুই ওভারের দুই জোড়া উইকেট আজকের ম্যাচ জিততে টাইগার্সদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। ৪২ রানে মাশরাফি ২টি, ২৬ রানে শাকিব ২টি, ৬২ রানে রুবেল ১টি ও ৪৪ রানে তাইজুল ১টি উইকেট নেন। আফগানদের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন হাসমতুল্লাহ শহীদি ৭২ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭১ রান করেন রহমত শাহ।

টাইগার্সদের জন্য একাদশ গঠনে এখনো একটু খাপছাড়া ভাব রয়েছে। আমি সৌম্য সরকারকে ওয়ান ডাউনে নামানোর পক্ষে। তামিম ও ইমরুলকে দিয়ে ওপেন করানোর পক্ষে। পরের ম্যাচে আমি রুবেল ও তাইজুলের জায়গায় মোসাদ্দেক হোসেন ও সাইফুল ইসলামকে নেবার পক্ষে। সৌম্যকে আরো একটি ম্যাচ সুযোগ দিতে চাই। কারণ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যাতে সৌম্য ফর্মে ফিরতে পারে, সেই সুযোগটি দেবার জন্য। পাশাপাশি আজকে আমি সবচেয়ে বেশি হতাশ মুশফিকের উপর। মাহমুদুল্লাহ আউট হবার পর মুশফিকের কাছে যেটি আশা করেছিলাম, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবুও দিন শেষে টাইগার্সদের এই রুদ্ধশ্বাস কষ্টের জয় জয়ের ধারাকে টেনে নেবে এই প্রত্যাশা। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু ক্রিকেট।

.................................
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×