somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি!

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল রাতে কলকাতা থেকে ফেরার পর আজ ছিল এবারের অমর একুশে বইমেলায় আমার প্রথম দিন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার প্রধান অংশে পামট্রি'র নিচে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম লেখক বন্ধুরা। হঠাৎ একজন পুলিশ সদস্য এসে বললেন, এখানে একসঙ্গে সাত-আট জন দাঁড়িয়ে গল্প করা যাবে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা স্বাধীন বাংলাদেশের অংশ যদি হয়, তাহলে বইমেলার শেষপর্যন্ত এখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেব। তার আগে বলুন, কে এই নিয়ম চালু করেছে? এখানে আমরা সবাই লেখক। লেখকরা বইমেলায় একত্রে আড্ডা দিতে পারবে না, এটা কে চালু করেছে বলুন?

পরে কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, লেখক ও সাংবাদিক নজরুল কবীর, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান ও অন্যরা আমাকে থামিয়ে দিয়ে, পুলিশ সদস্যের সঙ্গে মোস্তফা খুব সুন্দর করে কথা বলে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এখানে সবাই লেখক দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু পুলিশ সদস্য তখন কিছুটা বিব্রত!

হায় রে অমর একুশে বইমেলা! সরকার কী একুশের বইমেলা পুলিশ দিয়ে করাবে? নাকি এটা লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও বইপ্রেমীদের বইমেলা?

বইমেলার মাঠে একজন আহমাদ মোস্তফা কামাল যেখানে দাঁড়ায়, সেখানে আট দশজনের ভিড় হবে এটাই স্বাভাবিক। একজন নজরুল কবীর যেখানে দাঁড়ায়, সেখানে ভিড় হবে এটা একেবারেই নরমাল ব্যাপার। একজন স্বকৃত নোমান যেখানে দাঁড়াবে, সেখানে ভিড় লাগবে এটাই স্বাভাবিক চিত্র। এমন কি একজন রেজা ঘটক বইমেলায় উপস্থিত হওয়া মানে সেখানে জটলা লাগবে, বন্ধুদের আড্ডা হবে, এটাই তো স্বাভাবিক চিত্র।

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর অমর একুশে বইমেলায় লেখকদের আড্ডায় পুলিশ নাক গলায়, এটা কোন রাষ্ট্রে বসবাস করছি আমরা? আমরা কী স্বাধীন রাষ্ট্রের জনগণ? আমাদের কী সার্বভৌমত্ব আছে? সরকারের আচরণে কিন্তু বিসর্জনের অনেক গন্ধ টের পাওয়া যায়। এখনই এসব শক্ত হাতে কন্ট্রোল করতে না পারলে দেশটা যে মৌলবাদের হাতেই ছেড়ে দিয়ে এই সরকার বিদায় নেবে তা কী আর মুখ ফুটে বলতে হবে!

আমি বইমেলার মাঠের ভেতরে কোনো পুলিশ দেখতে চাই না। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রবেশ পথে সবাইকে চেক করুক। লেখকদের যেখানে পুলিশের নিরাপত্তা দেবার কথা, সেখানে পুলিশ এসে লেখকদের আড্ডায় নাক গলাচ্ছে, তাও অমর একুশে বইমেলায়? এ কোন দেশে বসবাস করছি, দয়াল? রক্ষা কর!! ধরণী দ্বিধা হও!

বাংলা একাডেমি'র লিটল ম্যাগাজিন প্রাঙ্গন ঘুরে আমার মনের অবস্থা খুব খারাপ। লিটল ম্যাগ চত্বরে বিক্রি হচ্ছে বাংলা বাজারের সস্তা কপি-পেস্ট পাইরেসি বই। শিশুদের বই, চোরাই বই! এসব কী? লিটল ম্যাগ চত্বরে কী এসব বই বিক্রি হবার কথা? আমি লিটল ম্যাগ চত্বর ঘুরে বাংলা একাডেমি'র পরিচালক ডক্টর সরকার আমিনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। পরে ডক্টর সরকার আমিন লিটল ম্যাগ চত্বর ঘুরে ওইসব স্টলকে মৌখিকভাবে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছেন। কয়েকজন সেই নোটিশ পেয়ে কিছু বই লুকিয়েছে। ডক্টর আমিন আমাকে বলেছেন, আগামীকাল আবার দেখলে ওইসব স্টল বন্ধ করে দেবেন।

এ বিষয়ে আমি লিটল ম্যাগ চত্বরের দায়িত্বে থাকা স্বকৃত নোমানের সঙ্গেও কথা বলেছি। নোমান বলেছেন, আজ আমরা মৌখিকভাবে নোটিশ দিয়েছি। আগামীকাল ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি আগামীকাল লিটল ম্যাগ চত্বর আবারো ঘুরে দেখব, এই বেহাল দশার কী হাল হলো! লিটল ম্যাগ কর্নারে সাম্প্রতিক ও সপ্তবর্ণ ছাড়াও উন্মুক্ত প্রাঙ্গনের ১২টি স্টলের ২৪টি ছোট কাগজ গোটা লিটল ম্যাগ চত্বরের পরিবেশ দূষণের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী। আমরা প্রাণের লিটল ম্যাগ কর্নারে এসব বস্তাপচা আবর্জনা দেখতে চাই না। আশা করি একাডেমি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন!

এ বছর ডক্টর সরকার আমিন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় যাবার কারণে লিটল ম্যাগ চত্বরে ছোটকাগজের ব্যানার ছোটকাগজের লেখক-সম্পাদকরা নিজেরাই লাগিয়েছেন, যা খুবই দৃষ্টিকটু একটা জগাখিচুরি অবস্থা হয়েছে। প্রতি বছর বাংলা একাডেমি থেকে লিটল ম্যাগ কর্নারে ব্যানার ছাপিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এবার তার ব্যতিক্রম হওয়ায় যে যার ইচ্ছেমত সাইজের ব্যানার লাগিয়েছে। যা গোটা লিটল ম্যাগ কর্নারের সৌন্দর্য্যকে মারাত্মকভাবে দূষিত করেছে। আশা করি, বাংলা একাডেমি ভবিষ্যতে বিষয়টির প্রতি সদয় নজর দেবেন।

আজ আমি কেবল বইমেলায় চক্কর দিয়েছি। ভিজিট করেছি আমার তিন প্রকাশনার স্টল বিদ্যাপ্রকাশ, শ্রাবণ ও সব্যসাচী। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস 'বসনা'। এটি বসনিয়ার যুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও যুদ্ধকালীন জীবন ব্যবস্থার এক ঐতিহাসিক দলিল। মজিবর রহমান খোকা ভাইকে খুব মিস করেছি। খোকা ভাই সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় বিদ্যাপ্রকাশের স্টলে কিছুটা ছন্দপতন টের পেলেও স্টলে ভিড় ছিল, কিন্তু মোহিত ভাইকে (লেখক মোহিত কামাল) না পেয়ে হতাশ হয়েছি। শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে 'ফিদেল দ্য গ্রেট কমরেড'। এটি কমরেড ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র ৬৩৮বার হত্যা প্রচেষ্টার চক্রান্ত ও প্রসঙ্গগুলো নিয়ে। আর সব্যসাচী থেকে প্রকাশ পাবে আমার গল্প সংকলন 'গল্পেশ্বরী'। এটি হয়তো ১৪ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় আসবে, তেমনটি জানিয়েছেন প্রকাশক শতাব্দী ভব।

আমার প্রথম দিনের বইমেলায় অনেক বন্ধু কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রকাশক, পাঠক ও ভক্তদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আড্ডা হয়েছে কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, লেখক ও সাংবাদিক নজরুল কবীর, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, গাণ্ডীব সম্পাদক তপন বড়ুয়া, দ্রষ্টব্য ও করাতকল সম্পাদক কামরুল হুদা পথিক, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি ও সম্পাদক নীল সাধু, কবি শাফি সমুদ্র, শিল্পী ও প্রকাশক শতাব্দী ভব, শিল্পী শাকিলা চয়ন, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, প্রকাশক রবীন আহসান, কথাসাহিত্যিক মণিকা চক্রবর্তী, কবি অনার্য আদিম, লেখক ও ফটোজার্নালিস্ট শাহাদাত পারভেজ, কবি শামসুদ্দিন হিরা, কবি মাহমুদুল হাসান মাসুম, কবি দাউদ আল হাফিজ, কবি মাহবুবা ফারুক, কবি ও নির্মাতা দিলদার হোসেন, কবি রনি অধিকারী, শিশু সাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন, প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার, কবি সরকার আমিন, শিল্পী ও কবি সিলভিয়া নাজনীন, সাংবাদিক সঞ্জয় ঘোষ, কবি শিল্পী নাজনীন প্রমুখের সাথে।

বইমেলায় আমার অনেক প্রিয় মুখের সঙ্গেই দেখা হয়েছে। জ্যোতি ও মণি দম্পতি। আজ মণি'র মা, শাশুড়ি ও খালা শাশুড়ির বই প্রকাশিত হয়েছে। ওনাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় হয়েছে। ওনাদের বই দেখলাম। দেখা হয়েছে তানভীর গং, জয় অ্যান্ড কোং, শতাব্দী সানজানা, আয়ুশী ঘোষ, দোস্ত আফসানা অ্যান্ড গং, কবি ইকবাল, টুম্পা ধর, শিমুল আহমেদ তুলা ভাবী, শামীমা আপাসহ অনেকের সাথে।

বইমেলা ছুটির দিন ছাড়া শুরু হচ্ছে বিকাল তিনটায়। আর বইমেলা শেষ হচ্ছে রাত আটটায়। কেবল ছুটির দিন মেলা শুরু হচ্ছে সকাল ১১টায় আর শেষ হচ্ছে রাত সাড়ে আটটায়। আজকে বইমেলায় সকালে ছিল শিশু প্রহর। আমি সকালে যেতে পারিনি বলে ছোট্ট বন্ধুদের মিস করেছি।

বন্ধুরা, বই মেলায় আসুন। বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। বই কিনে কেউ কোনোদিন দেউলিয়া হয়নি!
জয়তু অমর একুশে বইমেলা।

বি.দ্র. ছবিতে যে বই দেখা যাচ্ছে এসব বই কী লিটল ম্যাগ চত্বরে বিক্রি হবার কথা? বাংলা একাডেমি জবাব চাই!

......................................
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭




সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×