somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি আসাদ চৌধুরীর অন্দরমহলে

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ দেশের শিল্প সাহিত্য জগতের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব কবি আসাদ চৌধুরী। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখাতেই তাঁর অবাধ বিচরণ। কবিতায় আত্মমগ্ন আসাদ চৌধুরী শিশু সাহিত্যে যোগ করেছেন ভিন্ন এক মাত্রা। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা ও বঙ্গবন্ধুর জীবনী লেখাতেও রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রেখেছেন বিশেষ অবদান। কর্ম জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন বাংলা একাডেমিতে। পেয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘একুশে পদক’। গুণী এই মানুষটির সাথে কথা হয় এ বছরের জুনে।


…………......পঞ্চাশ বছর ধরে কবিতার সাথে বাস- কীভাবে দেখেন বিষয়টা ?
আসাদ চৌধুরী : কবিতার মধ্য দিয়ে নিজেকে টুকরো টুকরো করে জানা যায়।আমার কাছে কবিতা এক ধরনের শক্তি। তাই কিছু বছর হল কবিতা নির্মাণ শিল্পের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পেরেছি বলে ভালোই লাগে।কবিতা লিখে বা পড়ে নিজেকে জানার চেষ্টা করি। এক ধরনের আত্ম-অনুসন্ধান বলা যায় ব্যাপারটাকে। আমি কবিতার গন্ধ শুঁকি , কবিতার চাষাবাদ করি। তবে নিজেকে কবি ভাবার চাইতে কবিতার একনিষ্ঠ পাঠক ভাবতেই পছন্দ করি।
……………..কবিতার নির্মাণে যেহেতু শ্রম ব্যাপারটা জড়িত আছে,তাই আপনাকে যদি একজন কবিতা শ্রমিক বলি!
আসাদ চৌধুরী : হ্যাঁ সেটা বলা যায়। তবে শ্রম ব্যাপারটার একটা আলাদা গুরুত্ব আছে।সভ্যতার পিছনে শ্রম, জীবনের পিছনে শ্রম, আমরা যে ভালো ভাবে বেঁচে আছি কিংবা বাঁচার চেষ্টা করছি-তার পিছনে শ্রম। সমাজ কোন দিনই টিকতো না ,যদি শ্রম না থাকতো। আর কবি মানেই তো শ্রমিক। কবি মানেই নির্মাতা। কবিরা সমাজ কাঠামো নির্মাণ করেন,স্বপ্ন নির্মাণ করেন। কবিতার শরীর নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। পুরো ঘটনাই একটা জটিল শ্রম সাধ্য ব্যাপার।

……........ কবিদের দায়বদ্ধতাটা তাহলে কার কাছে?
আসাদ চৌধুরীঃ কবি তো সমাজের সব চেয়ে সংবেদনশীল অংশ। কবিতা প্রতিবাদের একটা জোড়ালো প্লাটফর্ম । কবিরা তাই সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল গোষ্ঠী। সমাজের অনুভূতি ,মানুষের অনুভূতি সবই একজন কবি ধারন করেন।
……… ..সায়েন্স-টেকনোলজি আর কম্পিউটারের এই যুগে সাহিত্যের অবস্থান কতখানি মজবুত?

আসাদ চৌধুরীঃ সাহিত্যের আসলে স্থানচ্যুত কিংবা স্ব-ধর্মচ্যুত হবার আপাতত কোন আশঙ্কা নেই।পৃথিবীতে মানুষের যতদিন স্বপ্ন থাকবে,ভয় থাকবে ততদিন সাহিত্য থাকবে। যেদিন সব কিছু অনুভূতিহীন হবে, ভোঁতা হয়ে যাবে সেদিনই কেবল সাহিত্যের বিলুপ্তির প্রসঙ্গ আসতে পারে।
…………আমরা কি ধীরে ধীরে খানিকটা অনুভূতিহীন হয়ে যাচ্ছি না? আপনিই তো একটা জায়গায় বলেছেন ‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম ,এখন আছি অল্প”
আসাদ চৌধুরীঃ আসলে ৭১’ এর আগেই আমরা মানুষ ছিলাম।এখন অনেক ছোট হয়ে গেছি।তবে সমাজে এখনও অনেকেই আছেন যারা এই আন্তর্জাতিকবাদ আর বিশ্বায়নের যুগে নিজেকে বিশুদ্ধ রেখেছেন। ৭৫’ এর পর থেকেই আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোর যে অধঃপতন সেখান থেকেই আমাদের লোভ,হিংসা এসব প্রকট হয়েছে। আমাদের একটা সুন্দর সমাজ ছিল। যেখানে সবাই সবাইকে চেনার চেষ্টা করত।গাছের ডাব, মাচা ভর্তি আম একজন আরেকজনকে দিত। এসব আমরা দেখে এসেছি।
……….....এবার আপনার শৈশবে ফিরতে চাই ।
আসাদ চৌধুরীঃ আমার জন্ম বরিশালে হলেও শৈশবের অনেকটাই কেটেছে ঢাকায়। ঢাকা তখন কেবল একটা জন- নগরীতে পরিণত হচ্ছে। সেই ১৯৪৭।আমরা বুড়িগঙ্গায় গামছা দিয়ে মাছ ধরতাম। সদরঘাটে আমরা বেশ কয়েকদিন নৌকাতেই কাটিয়েছি।
………………… সেই ঢাকা আর এই ঢাকার ব্যাবধানটা কি চোখে দেখেন?
আসাদ চৌধুরীঃ পার্থক্য বোধহয় দুই সময়ের মানুষগুলোর মধ্যে । নগর নগরের জায়গাতেই আছে। কেবল আগের মানুষগুলো তাদের মতো করে নগরটাকে গড়তে চেয়েছিল আর এখনকার তোমরা তোমাদের মতো করে গড়তে চাও। একেক যুগের মানুষ একেক রকম। এখন মানুষ শুধু ছুটছে আর ছুটছে। টাকার জন্য ছুটছে, খ্যাতির জন্যে ছুটছে। আমরা সিনেমায় যেতাম,পার্কে বাদাম চিবাতাম এখনকার তরুনেরা কম্পিউটারে সেই সময় দিচ্ছে ,নানান কিছু ব্রাউজ করছে ।

…………………আপনার শিক্ষা জীবন বিষয়ে...

আসাদ চৌধুরীঃ আমি মোটেও ভালো ছাত্রদের তালিকায় ছিলাম না। ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।সেখানে সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলাম আখতারুজ্জামান ইলিয়াস,আব্দুল মান্নান সৈয়দের মতো মেধাবী সাহিত্যিকদের। এটা আমার অনেক বড় পাওয়া।
…………………….আপনার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে যদি বলতেন...
আসাদ চৌধুরীঃ আমার সৌভাগ্য যে আমি বাংলা একাডেমির মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেখানে নীলিমা আপার ( ড. নীলিমা ইব্রাহিম) সান্নিধ্য পেয়েছি। কয়েক বছর জার্মান বেতারে কাজ করেছি ,বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি দৈনিকে কাজ করেছি।এমনকি শিক্ষকতাও করেছি।

……………………শিশু সাহিত্যের প্রতি আপনার বাড়তি মনোযোগ কেন?…
আসাদ চৌধুরীঃশিশুদের আমার প্রচন্ড ভালোলাগে। ওদের সাথে কিছুটা সময় কাটালে নিজের বয়সটা খানিকটা কমে যায়। জীবনের শেষ লেখাটাও আমি শিশুদের জন্যে লিখতে চাই।
……………যদি জিজ্ঞেস করি ,-কেন লেখেন? আপনার কাছে ব্যাখ্যাটা কেমন?
আসাদ চৌধুরীঃ প্রতিদিন মানুষের সাথে মিশছি ,ঘুরছি, ফিরছি।নিজেকে ধীরে ধীরে জানছি। যতোই বয়স বাড়ছে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়ছে। সে সব তো আর আমার একার মধ্যে জমিয়ে রাখতে পারি না,তাই নিজেকে খানিকটা হালকা করার জন্যে লিখি। গল্প বলার একটা আকাঙ্ক্ষা আমাকে তাড়া করে।
………………জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেবটা মেলাতে গিয়েছেন কখনও?
আসাদ চৌধুরীঃ আমার জীবনের সবটাই প্রাপ্তি।এই যে হাসসি, ঘুরছি, প্রকৃতির সান্নিধ্য পাচ্ছি ,মানুষের কাছে আসতে পারছি।এসবই তো প্রাপ্তি। তবে আলাদা করে বলতে গেলে আমার জীবনের সর্ব শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি আমি ‘স্বাধীন বাংলা বেতারে কাজ করতে পেরেছি।আমার যোগ্যতা না থাকা শর্তেও আমি বঙ্গবন্ধুর জীবনী লিখেছি।সবই আনন্দের ,সবই প্রাপ্তির।আমার জীবনে কোন অপ্রাপ্তি নেই।
………………………….তরুণদের নিয়ে আপনার প্রত্যাশা ......।
আসাদ চৌধুরীঃ আমার কাছে নেক্সট জেনারেশনটা খুব ইম্পরট্যান্ট।ওরা একদিন দেশকে জানবে,বুঝবে ।আমার বিশ্বাস ওরা একদিন হাল ধরবে। তাই ওদের বেড়ে ওঠাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
……………এতো দীর্ঘ সময় কথা বলার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসাদ চৌধুরীঃ ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×